ঋগ্বেদ ১০।০৬৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৬৫
বিশ্বদেব দেবতা। বসুকর্ণ ঋষি।
১। অগ্নি, ইন্দ্র, বরুণ, মিত্র, অৰ্যমা, বায়ু, পূষা, সরস্বতী, আদিত্যগণ, বিষ্ণু মরুৎগণ, বৃহৎ স্বর্গ, সোম, রুদ্র, অদিতি, ব্ৰহ্মণম্পতি, ইহারা সকলে পরস্পর মিলিত আছেন।
২। ইন্দ্র ও অগ্নি, ইহারা শিষ্টপালন কৰ্ত্তা, ইহারা যুদ্ধের সময় একত্র হইয়া নিজ ক্ষমতাধারা শত্ৰুদিগকে তাড়াইয়া দেন এবং প্রকাও আকাশ আপন তেজে পরিপূর্ণ করেন। ঘৃতযুক্ত সোমরস তাহাদিগের বল বাড়াইয়া দেয়।
৩। সেই মহৎ অপেক্ষাও মহৎ ও অবিচলিত ও যজ্ঞবৃদ্ধিকারী দেবতা দিগের উদ্দেশে আমি যজ্ঞ অবগত হইয়া স্তবসমূহ প্রেরণ করিতেছি, যাহারা সুশ্রী মেঘ হইতে জল বর্ষণ করেন, সেই পরম বন্ধু দেবতাগণ আমাদিগকে ধন দান করিয়াশ্রেষ্ঠ করুন।
৪। সেই দেবতারা সকলের নায়কস্বরূপ সূর্যকে এবং আকাশস্থ গ্রহ নক্ষত্রাদিকে এবং দ্যুলোক ও ভূলোক ও পৃথিবীকে নিজবলে স্বস্থানবর্তী করিয়া রাখিয়াছেন। তাঁহারা ধনদানকারী ব্যক্তিবর্গের ন্যায় উত্তম দান করিয়া মনুষ্যদিগকে শ্রেষ্ঠ করিতেছেন । মনুষ্যদিগের নিকট ধন প্রেরণ করেন, একারণ তাহাদিগকে স্তব করা হইতেছে।
৫। মিত্র ও দাতাবরুণকে হোমের দ্রব্য নিবেদন কর। তাহারা দুই জন রাজার রাজা, তাহারা কখন অমনোযোগী হয়েন না, তাহাদিগের ধাম উত্তম রূপে সংধারিত হইয়া অত্যন্ত দীপ্তি পাইতেছে। এই দ্যাবাপৃথিবী তাহাদিগের নিকট যাচকের ভাবে অবস্থিত আছেন।
৬। যে গাভী অপ্রার্থিত হইয়া পবিত্রস্থান যজ্ঞে আগমন করে, যে দুগ্ধ দানপূর্বক যজ্ঞকর্ম সম্পন্ন করে। সেই গাভী আমার প্রস্তাব মতে দাতাবরুণকে এবং অন্য অন্য দেবতাকে হোমের দ্রব্য দান করুন এবং দেবতার সেবক যে আমি, আমাকে রক্ষা করুন।
৭। যাহারা নিজ তেজে আকাশ পূর্ণ করেন, অগ্নিই যাহাদিগের জিহ্ব’, যাহারা যজ্ঞের বৃদ্ধি করেন, তাহারা আপন আপন স্থান বুঝিয়া যজ্ঞস্থানে বসিতেছেন। তাহারা আকাশকে উন্নত করিয়া জল নির্গত করিয়াছেন এবং যজ্ঞ সৃষ্টি করিয়াআপনাদিগের শরীর ভূষিত করিয়া দেন।
৮। দ্যাবা ও পৃথিবী ইহারা সৰ্ব্বস্থান ব্যাপিয়া আছেন, ইহারা সকলের মাতা পিতৃস্বরূপ, সকলের পূর্বে জন্মিয়াছেন, উভয়েরই স্থান এক; উভয়েই যজ্ঞস্থানে বাস করেন। উভয়ে একমনা হইয়া সেই মহীয়ান্ বরুণকে ঘৃতযুক্ত দুগ্ধ দিতেছেন।
৯। মেঘ আর বায়ু, ইহারা বৃষ্টি বর্ষণকারী জলের ভাণ্ডার ধারণ করেন। ইন্দ্র ও বায়ু, বরুণ, মিত্র, অর্য্যমা, ইহাদিগকে এবং অদিতিসন্তান দেবতাদিগকে এবং অদিতিকে আহ্বান করিতেছি। যাঁহারা পৃথিবীতে, বা আকাশে, বা জলে থাকেন, তাহাদিগকেও ডাকিতেছি।
১০। হে ঋভুগণ! যে সোম দেবতাদিগের আহ্বানকর্তা ত্বষ্টা ও বায়ুর নিকট তোমাদের মঙ্গলের জন্য গমন করে; অপিচ বৃহস্পতি ও বৃত্রনিধনকারী সুবুদ্ধি ইন্দ্রের নিকট গমন করে, ইন্দ্রের প্রীতি প্ৰদ সেই সোমকে আমরা ধনের জন্য যাচ্ঞা করি।
১১। সেই দেবতারা পুণ্যকর্ম ও গাভী ও অশ্ব উৎপাদন করিয়াছেন, বৃক্ষলতা ও বনতরু এবং পৃথিবী ও পৰ্বতদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন, সূর্যকে আকাশে আরোপিত করিয়াছেন; তাহাদিগের দান অতি চমৎকার, তাহারা পৃথিবীতে উৎকৃষ্ট উৎকৃষ্ট কার্য সম্পন্ন করিয়াছেন।
১২। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা ভুজ্যুকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছিলে, বধ্রিমতী নাম্নী রমণীকে পিঙ্গলবর্ণ এক পুত্র দিয়াছিলে, বিমদ ঋষিকে সুরূপা ভাৰ্য্যা আনিয়া দিয়াছিলে এবং বিশ্বক ঋষিকে বিষ্টাপূনামক পুত্র দান করিয়াছিলে।
১৩। অস্ত্রধারিণী ও বজ্রের ন্যায় নির্দোষযুক্তা দৈববাণী এবং এক পাদ অঙ্গ এবং আকাশে ধারণকর্তা, ও নদী ও সমুদ্রের জল এবং তাবৎ দেবতা ইহারা সকলে আমার বাক্য শ্রবণ করুন। আর নানা ভাব ও নানা চিন্তা যাহার সঙ্গে সঙ্গে থাকে, সেই সরস্বতীও শ্রবণ করুন।
১৪। যাহাদিগের সঙ্গে নানা ভাব ও নানা চিন্তা বিদ্যমান আছে, যাহা দিগের উদ্দেশে মনু যজ্ঞ করিয়াছেন, যাঁহারা অমর, যাহারা যজ্ঞ উত্তমরূপ জানেন, যাহারা সকলে একত্র হইয়া হোমের দ্রব্য গ্রহণ করেন, যাহা সকল অবগত আছেন, সেই সকল দেবতাগণ আমাদিগের সমস্ত স্তব এবং উত্তমরূপে নিবেদিত অন্ন গ্রহণ করুন।
১৫। বশিষ্টবংশসদ্ভূত এই ঋষি অমর দেবতাদিগকে বন্দনা করিয়াছেন। সেই দেবতারা সমস্ত ভুবন আয়ত্ত করিয়ারাখিয়াছেন। তারা আমাদিগকে অদ্য উৎকৃষ্ট ধন দান করুন। হে দেবতাগণ! তোমরা মঙ্গল বিধানপূর্বক আমাদিগকে সর্বদা রক্ষা কর।