কর্ণ – ৭

কর্ণ খুব দান করে চলেছেন। দিনের পর দিন তাঁর দানের পুণ্য বেড়েই চলেছে। এদিকে পাণ্ডবদের বনবাস বারো বচ্ছর পুরে তেরো বচ্ছরে পড়ি পড়ি। বনবাসের দিন যত শেষ হয়ে আসছে, পাণ্ডব-কৌরব দুই পক্ষই মানসিকভাবে ততই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই প্রস্তুতির ছায়া পড়েছিল দেবলোকেও। ইন্দ্র, সূর্য—এঁরা কীরকম দেবতা জানি না, তবে মহাভারতের পটভূমিতে এই দেবতাদের সঙ্গে মর্ত্যলোকের মাখামাখি যথেষ্ট ছিল বলেই মর্ত্য-নারীর গর্ভে উৎপন্ন আপন আপন পুত্রের জন্য দেবসমাজেও কিঞ্চিৎ চিন্তাভাবনা দেখা দিল। অর্জুনকে বাঁচানোর জন্য স্বয়ং দেবরাজের মনোবাসনা টের পেয়ে গেলেন দেব দিবাকর। ভগবান সূর্য বুঝলেন, কর্ণের দানব্রতের সুযোগ নিয়ে ইন্দ্র ব্রাহ্মণের রূপ ধরে হরণ করবেন তাঁর সহজাত কবচ এবং কুণ্ডল, যা থাকলে কর্ণের মৃত্যু নেই। দেবরাজের অভিপ্রায় জেনে সূর্য নিজেই ব্রাহ্মণের রূপ ধরে দেখা দিলেন কর্ণের স্বপ্ন-শয়নে। সূর্য বললেন—তোমার ভালর জন্য বলছি বাছা। দেবরাজ ইন্দ্র ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে তোমার কাছে আসবেন কবচ এবং কুণ্ডল যাচনা করার জন্য। তিনি জানেন যে, দানের সময় তুমি কাউকে ফেরাও না—ন প্রত্যাখ্যাসি কস্যচিৎ। কিন্তু তুমি যেন বাপু ইন্দ্র ঠাকুরকে তোমার কবচ আর কুণ্ডল দিয়ে দিয়ো না। তুমি তোমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবে ইন্দ্রকে কবচ আর কুণ্ডলের ব্যাপারে বিমুখ করতে কিংবা তাঁর দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে।

নিজের ঘরের লোক বলে সূর্য ইন্দ্রের স্বভাব জানেন। সূর্য ভাবলেন ইন্দ্রের ঈপ্সিত বস্তুগুলি যদি পর পর সাজিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে হয়তো বা তিনি তাঁর উদ্দেশ্য থেকে সরে যেতেও পারেন। সূর্য বললেন—ইন্দ্র যখন ভিক্ষে চাইবেন, তুমি তখন হিরে-জহরতের লোভ দেখাবে, লোভ দেখাবে মদমত্ত যুবতী কামিনীদের। তা ছাড়া ঋগ্‌বেদের প্রথম সারির দেবতা তিনি, গরু-ঘোড়াও তাঁর ঈপ্সিত হতে পারে, তুমি সেগুলোও একবার বলে দেখো—রত্নৈঃ স্ত্রীভিস্তথা গোভিধনৈ-র্বহুবিধৈরপি। আসল কথা কী জান, তোমার এই কবচ আর কুণ্ডল যদি একবার দিয়ে দাও, তা হলেই তোমার পরমায়ু শেষ। যতদিন ও দুটি তোমার সঙ্গে আছে, ততদিন তুমিও আছ। ও দুটি হারালে যুদ্ধক্ষেত্রে আর তুমি শত্রুর অবধ্য থাকবে না। তাই বলি, যদি বাঁচতে চাও কর্ণ, তা হলে অমৃতের ভাণ্ড থেকে উঠে-আসা ওই কবচ আর কুণ্ডলটি তোমায় বাঁচিয়ে রাখতেই হবে—তস্মাদ্ রক্ষ্যং ত্বয়া কর্ণ জীবিতং চেৎ প্রিয়ং তব।

সূর্য ব্রাহ্মণের বেশে দেখা দিয়েছিলেন কর্ণের স্বপ্নশয্যায়। যে মানুষ সারাজীবন কলঙ্ক বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন, তিনি এক ব্রাহ্মণবেশীর মুখে তাঁর জীবনের দাম শুনে ভারী পুলকিত হলেন। তাঁর বেঁচে থাকার জন্য, শুধু তাঁর বেঁচে থাকার জন্য এমন মমত্বময় দুশ্চিন্তা তিনি কারও মধ্যে দেখেননি, এমনকী তাঁর মায়ের মধ্যেও নয়, যিনি তাঁকে জন্ম দিয়ে ভুলে গেছেন। এই মমত্বটুকুর জন্য কর্ণ সব দিতে পারেন। বিশ্বসংসারের বিচিত্র বন্ধনের রূপ দেখে ব্যক্তি-মানুষের যেমন ক্কচিৎ এমন কল্পনা আসে যে, এই মুহুর্তে আমি মরে যেতে পারি, ঠিক তেমনি এই মুহুর্তে তাঁরই জীবনের জন্য এক ব্রাহ্মণবেশীর এত ভাবনা জেনে কর্ণেরও বুঝি মনে হল—এই মমতার বিকল্পে আমি মরতেও পারি। কিন্তু তার আগে জেনে নেওয়া দরকার কে এই ব্রাহ্মণবেশী। কর্ণ বললেন—কে আপনি ব্রাহ্মণ, আমার ওপর এত মমতা দেখাচ্ছেন—দর্শয়ন্ সৌহৃদং পরম্। সূর্য বলতে পারলেন না—আমি তোমার বাবা। তিনি তাঁর দেবলোকের মাহাত্ম্য অক্ষুন্ন রেখে, যেন ভক্তের কাছে ভগবান এসেছেন, এমনি এক অবগুণ্ঠনে কর্ণকে জানালেন—আমি সহস্রাংশু সূর্য। তোমার ওপর করুণাবশত এতক্ষণ যা বলেছি তুমি তাই কোরো।

প্রতিদিন সহস্র মানুষের বৈদিক স্তুতিবাদে যিনি দেবতার পদবী লাভ করেছেন, সেই সূর্যের পক্ষেও বোঝা সম্ভব নয় তাঁর আপন সন্তানের যাতনা কতখানি। যিনি শৈশব থেকেই পিতৃমাতৃপরিচয়হীন, সূতপুত্র বলে সর্বত্র লাঞ্ছিত তাঁর কাছে মরণের থেকে যশই বেশি প্রার্থনীয়। এতদিন কুরুকুলের রাজবাড়িতে আপন শক্তি এবং প্রতিভায় তিনি যা পেয়েছেন, তা তাঁর প্রাপ্য, কিন্তু প্রার্থনীয় নয়। বরঞ্চ রাজবাড়ির রাজনীতির কলুষতায় যশের বদলে তাঁর কলঙ্ক জুটেছে। আজ তিনি যশ চান, কারণ যশই হল সেই দুগ্ধশুভ্র বস্তু, যা তাঁর জন্মের গ্লানি, জীবনের সব লাঞ্ছনা সমস্ত কিছু ধুয়ে মুছে দিতে পারে। কর্ণ মরণের ভয় তুচ্ছ করে সূর্যকে বললেন—আপনি আমার ভালর জন্য যা বলেছেন, তা আমি বুঝি। কিন্তু আমি যদি সত্যি আপনার প্রীতিভাজন হই, তা হলে আমার দাননিষ্ঠায় আপনি আমায় বাধা দেবেন না—ন নিবার্যো ব্ৰতাদ্ অম্মাদ্ অহং যদ্যস্মি তে প্রিয়ঃ। আজকে যদি পাণ্ডবদের কারণে দেবতাদের রাজা ইন্দ্রদেব ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে ব্রাহ্মণের বেশ ধরে স্বয়ং আসেন আমার দুয়োরে—হিতার্থং পাণ্ডুপুত্ৰাণাং খেচরোত্তম ভিক্ষিতুম্—তা হলে আমি কবচ এবং কুণ্ডল দুটিই দেব, অবশ্য দেব। আমাকে যে দিতেই হবে।

মহাভারতের এই অংশে, কর্ণের মনের ভাবটা পরিষ্কার বুঝেছিলেন কালিদাসের পূর্বজন্মা এক মহাকবি—ভাস। তিনি লিখেছেন- কর্ণ একটুও বঞ্চিত বোধ করছেন না। কেননা, সহস্র বৈদিক যজ্ঞে মুনি-ঋষিদের আহুতি আর স্তুতিবাদে যে দেবতাকে মাথায় তুলে রাখা হয়েছে, যিনি স্বয়ং হাজারো দৈত্য-দানবের নিহন্তা বলে চিহ্নিত, ঐরাবতের মতো দেবহস্তী চালনা করতে করতে যাঁর হাতে কড়া পড়ে গেছে, সেই দেবরাজ যদি অর্জুনের মতো ত্রিভুবনজয়ী পুত্রের প্রাণ বাঁচাতে কর্ণের কাছে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে আসতে পারেন, তা হলে তিনি বুঝবেন তিনিই তাঁকে কৃতার্থ করেছেন, কর্ণ একটুও বঞ্চিত নন—ময় কৃতার্থঃ খলু পাকশাসনঃ। আসল কথা, স্বর্গের দেবতার হুকুম তামিল করে করে যেখানে মর্ত্যের মানুষ কৃতার্থ বোধ করে সেই দেবতা যদি মন্দারগন্ধী স্বর্গপথ ছেড়ে মর্ত্যের ধূলিতে নেমে এসে ভিক্ষা চান মানুষের কাছে, তাঁকে কর্ণ ফেরাবেন কী করে? তাও কী, অর্জুনের প্রাণের জন্য তাঁর কাছে ভিক্ষা। এক্ষেত্রে যাচনাবৃত্তি দেবরাজের দেবত্ব হানি করে আর কর্ণের দানবৃত্তি কর্ণের চরিত্র উজ্জ্বল করে—তন্মে কীৰ্ত্তিকরং লোকে তস্যাকীৰ্ত্তিৰ্ভবিষ্যতি। এত বড় সুযোগ ছাড়বার বিলাসিতা কর্ণ দেখাতে পারেন না, কেননা কর্ণই অর্জুনকে করুণা করতে চান চিরকাল। অতএব প্রগাঢ় আত্মতৃপ্তিতে, নিরুচ্চার আনন্দে কর্ণ স্বপ্নের অতিথিকে বললেন—আমাকে বারণ কোরো না প্রভু! আমি ইন্দ্রকে কবচ-কুণ্ডল দুইই দেব। কেননা আমার মতো মানুষ, যে মানুষ প্রাণের গ্লানিতেই ভূগেছে চিরকাল, সেই আমার মতো মানুষের কাছে প্রাণরক্ষার তাগিদ নেই কোনও—মদ্‌বিধস্য যশস্যং হি ন যুক্তং প্রাণরক্ষণম্। তা ছাড়া মরণ যখন হবেই, সে মরণ যশের সঙ্গে যুক্ত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। ভিক্ষার জন্য এলে আমি দেবরাজকে ফেরাব না, কারণ এই ভিক্ষাই আমার কীৰ্ত্তি অক্ষয় করে তুলবে।

কর্ণ তাঁর শিক্ষার শুরু থেকে দিগ্‌বিজয় পর্যন্ত যা করে এসেছেন, তা কীর্তির জন্যই করে এসেছেন ; কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর ; যে পথে তিনি এতকাল চলছিলেন তাতে কীর্তি আসে না, আসেনি, বরং অকীর্তি এসেছে। আজ সব শুধরে নেবার দিন। দ্বিতীয়ত অর্জুন। ক্ষমতায়, বুদ্ধিতে, সম্মানে সব ব্যাপারে অর্জুন তাঁর চেয়ে খাটো হোক, এই তো চেয়েছিলেন কর্ণ। আজ যখন পুত্রের প্রাণের জন্য অর্জুনের পিতা নিজের স্বরূপ ভাঁড়িয়ে তাঁর কাছ থেকেই তাঁর জীবন ভিক্ষে চাইবেন, তখন কর্ণ ভাববেন—আমি সব ছলনা জেনেও আমার দেহরক্ষার বর্ম আমার নিজের হাতেই ভিক্ষে দিচ্ছি, নইলে দেবাসুর কারও সাধ্য ছিল না, আমার এই কবচ-কুণ্ডল কোনওভাবে ছিন্ন করতে পারে আমার দেহ থেকে। কর্ণ জানেন, তাঁর অস্ত্রশিক্ষার কৌশল একদিন ব্যর্থ হতে পারে, যাঁর আশ্রয়ে আজ তাঁর এত বাড়বাড়ন্ত, সেই দৃঢ়মূল কৌরবকুলও একদিন ঝড়ে-পড়া গাছের মতো উৎপাটিত হতে পারে, এমনকী কৌরবের রাজনীতিতে তাঁর আজকের যে সুস্থিরতা, সে সুস্থিরতাও নষ্ট হতে পারে যে কোনওদিন। কিন্তু শিশুকাল থেকে যে অৰ্জুনবধের লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে চলেছেন, সেই অর্জুনের প্রাণের জন্য যদি দেবতাদের রাজা কর্ণের প্রাণ ভিক্ষা চান ভিক্ষুকের মতো, তা হলে কর্ণ তা দেবেন। কারণ, কর্ণ জানেন, এই দানের সুযোগে তাঁর কীর্তি ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়, যা তাঁর জন্ম-কুৎসার ধূলিধূসর অক্ষয় জীবনের চেয়ে অনেক বেশি অক্ষয়। কর্ণ তাই সোজাসুজি সূর্যকে জানালেন—যুদ্ধে আমি জীবন আহুতি দেব, যতটা সম্ভব ঝুঁকি নেব—হুত্বা শরীরং সংগ্রামে কৃত্বা কর্ম সুদুষ্করম্—কিন্তু এই উত্তমর্ণের ভূমিকায় যশ আমার চাই—যশঃ প্রাপ্‌স্যামি কেবলম্।

হায়! একমাত্র পিতামাতা ছাড়া আর কে বোঝে যে, ধন-জন-যশ-মাহাত্ম—এই সমস্ত কিছুর চেয়েও পিতামাতার কাছে পুত্রের প্রাণই বড়। তার ওপরে ভগবান সূর্যের ওপরে এই ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ আছে। জৈবিক চরিতার্থতার মুহূর্তেও তিনি এক শঙ্কিতা কুমারী জননীকে কথা দিয়েছিলেন যে, পুত্রের জীবনের জন্য তার জননীর কোনও চিন্তার কারণ নেই, কেননা সে জীবনরক্ষার উপায় নিয়েই জন্মাবে। সূর্য জানেন—তবু জননী-হৃদয়ে শঙ্কার অন্ত থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, এই পুত্রের মাতা সূর্যের বাহুবন্ধনে ধরা দেবার আগে এবং পরে সূর্যের ওপর এতটাই বিশ্বাস করেছিলেন যে, সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে গিয়েও আজ তিনি পুত্রের কাছেই পরাভূত। এই পুত্রের জননী পেটিকাবদ্ধ পুত্রকে জলে ভাসিয়ে দিয়ে বলেছিলেন—তুমি যেখানেই থাক তোমার পিতা যেন তোমাকে রক্ষা করেন, কেননা আমি না চাইলেও তিনিই তোমাকে দিয়েছেন-পিতা ত্বাং পাতু সর্বত্র তপনস্তপতাং বরঃ। যেন দত্তো’সি মে পুত্র—কাজেই পিতার দায়িত্বই এখানে বেশি। মিলনের মুহূর্তে সূর্যদেবের আশ্বাস আর কুন্তীর বিশ্বাসের ওপরেই যাঁর জীবন নির্ভর করছে, সেই পুত্র যদি হঠাৎ এখন বলে—আজ আমি ‘সুইসাইড’ করব, তা হলে পিতা হিসেবে সূর্যদেবের কেমন লাগে? বিশেষত যে পিতা আপন প্রাণ বাঁচানোর উপায় বলে দিতে এসেছেন পুত্রকে, সে পুত্র যদি বাঁচার কৌশলকে মরণের কৌশলে রূপান্তরিত করার বায়না করে, তবে পিতার হৃদয় কেঁপে ওঠে। তেমনি কেঁপে উঠেই সূর্য বললেন—না বাছা না, নিজের প্রতি এত অবিচার কোরো না—মাহিতং কর্ণ কার্ষী স্বম্।

সূর্য একবারও বলেননি, তিনি কর্ণের পিতা! তবু তিনি এমন করতে আরম্ভ করলেন যে, তাঁর গুপ্ত পিতৃসত্তা মাত্রাহীন স্নেহে দ্রবীভূত করল তাঁর ভাষা, যে ভাষা অস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করল তাঁর পিতৃত্বের প্রতি। সূর্য বললেন—না বাছা না, শুধু নিজেরই নয়, তোমার বন্ধুজন, তোমার নিজের স্ত্রীপুত্র এবং সবার ওপরে তোমার পিতামাতার এমন সর্বনাশ তুমি কোরো না বাছা—পুত্ৰাণামথ ভার্যাণামথ মাতুরথো পিতুঃ। তুমি যশ চাইছ, বেশ কথা, কিন্তু সেটা জীবনের বিনিময়ে কেন বাবা। সূর্য বলতে চাইলেন—কর্ণ তুমি এখন সামাজিক সম্পর্কহীন একটি ব্যক্তিমাত্র নও। তুমি কারও পুত্র, কারও পিতা, কারও বা স্বামী। আর এইসব স্নেহ-ভালবাসার সম্পর্ক তোমার সঙ্গে ততক্ষণই, যতক্ষণ তুমি বেঁচে আছ—জীবতাং কুরুতে কার্যং পিতা মাতা সুতাস্তথা। তা ছাড়া যে যশ তুমি এত করে চাইছ, তুমি নিজে মরে গেলে সে যশের স্বাদ তুমি কী পাবে? ভস্মীভূত মৃত ব্যক্তি যশের কী খবর পায়? গতপ্রাণ ব্যক্তির গলায় মালা পরালে, সে যেমন তার কিছুই টের পায় না, মৃত ব্যক্তির কাছে যশও সেইরকম—কীৰ্তিশ্চ জীবতঃ সাধ্বী পুরুষস্য মহাদ্যুতে।

সূর্যের ভাবে ভাষায় তাঁর আপন পিতৃত্ব বড় বেশি প্রকট হয়ে উঠেছিল। কিন্তু দেবতা হওয়া সত্ত্বেও এতদিন তিনি পিতৃপরিচয় দেননি, সেই সূর্য যদি এখন বলেন—আমিই তোমার পিতা—তা হলে নতুন কোনও দুর্বাধ আনন্দে কর্ণ যদি মৃত্যুবরণ করে আরও বেশি সুখ পান, সেই ভয়েই তিনি আমতা আমতা করে বললেন—না না আমার আর কী, এতদিন ধরে তুমি সূর্যোপাসনা করছ, তুমি আমায় ভক্তি কর কত। সেইজন্যই ভক্তের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই তোমায় বলতে এলাম যে, দেবলোকে তোমাকে নিয়ে একটা খেলা চলছে, সে খেলায় যেন তুমি বলি হয়ো না। কিন্তু সামান্য এই নির্বিকার, নির্মোহ ভাষ্য দেবার পরমুহূর্তেই সূর্যের মুখ দিয়ে ঝরে পড়ল চিরন্তন পিতার অভ্যাস। সূর্য বললেন—আমি বার বার বলছি কবচ আর কুণ্ডল—এই দুটি জিনিস তুমি যেন দিয়ো না। ওই কবচ আর কুণ্ডল দুটি তোমার শরীরে যেমনটি আছে, তেমনটিই থাকলে কেমন সুন্দরই না দেখতে লাগে তোমায়—শোভসে কুণ্ডলাভ্যাঞ্চ রুচিরাভ্যাং মহাদ্যুতে। বিশাখা নক্ষত্রের দুই ভাস্বর তারার মাঝখানে চাঁদ যেমনটি, সহজাত ভাস্বর কুণ্ডল দুটির মাঝখানে তোমার মুখখানিও লাগে ঠিক তেমন চাঁদের মতো—বিশাখয়োর্মধ্যগতঃ শশীব।

সব ছেড়ে শেষে ছেলেকে দেখতে কত সুন্দর দেখাবে এই মোহ-ভাবনায় যিনি মগ্ন, তিনি যে যশের চেয়ে পুত্রের জীবন বেশি আকাঙ্ক্ষা করবেন, তাতে আর আশ্চর্য কী? সূর্য যখন বুঝলেন কর্ণ কিছুতেই শুনবেন না, তখন তিনি কর্ণকে অর্জুনের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। এই সুচিরাকাঙিক্ষত প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যই যে তাঁর বেঁচে থাকা দরকার, এই কথাটা কর্ণকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলেন সূর্যদেব। বললেন—তুমি না অর্জুনের সঙ্গে লড়তে চাও—নিত্যং স্পর্ধসে সব্যসাচিনা, তা তোমার দেহে যদি এই কবচ আর কুণ্ডল থাকে, তা হলে অর্জুন কেন অর্জুনের বাবাও তোমার কিছু করতে পারবে না—ন তু ত্বাম্ অর্জুনঃ শক্তঃ…স্বয়মিন্দ্রঃ সখা ভবেৎ।

কে শোনে কার কথা! যার যত অভিমান, সে তত বেপরোয়া। শিশুকাল থেকে ঔরস-পুত্রহীন সূত-পিতা-মাতার অতিরিক্ত আদরে, কুরুবাড়িতে দুর্যোধনের অতিরিক্ত প্রশ্রয়ে এবং নিজের মধ্যে জমে থাকা হাজারো অভিমানে অভিমানী কর্ণ এমনিই বেপরোয়া এবং গোঁয়ার গোছের লোক। কবচ এবং কুণ্ডলের অলৌকিকতায় যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি অর্জুনের সমকক্ষ হবেন—এই কথাটাও তাঁর সদা-জাগ্রত পৌরুষে আঘাত করল যেন। সূর্যকে একেবারে স্তব্ধ করে দিয়ে কর্ণ বললেন—অর্জুনের সঙ্গে শক্তিপরীক্ষার ব্যাপারে আমার এই কবচ আর কুণ্ডলের যে কার্যকারিতা, সে-কথা নিয়ে আপনি ভাববেন না। আপনি তো জানেন অস্ত্রবল আমার কম নেই। পরশুরাম এবং দ্রোণাচার্যের মতো গুরুর কাছে আমি অস্ত্রশিক্ষা লাভ করেছি, কাজেই অর্জুনকে আমি কবজা করবই—বিজেষ্যামি রণে’র্জুন। তবে হ্যাঁ! আপনি আর বাদ সাধবেন না। ইন্দ্র এসে যদি আমার কাছে ভিক্ষে চান, তা হলে আমি তাঁকে ফেরাব না, জীবন দিতে হলেও, না। আপনি অনুমতি করুন।

সূর্য বুঝলেন, কর্ণ কথা শোনার লোক নন। তিনি বললেন অগত্যা, তুমি কবচ এবং কুণ্ডল হারাবে বুঝতে পারছি। তবু তুমি এক কাজ কোরো। ও দুটি দেওয়ার ব্যাপারে একটা শর্ত আরোপ কোরো। তুমি বলবে—দিয়ে দেব আপনাকে কবচ-কুণ্ডল, কিন্তু তার বদলে আপনি দিন আমায় সেই অমোঘ শক্তি, যা ব্যর্থ হবে না আমার শত্রুর ওপর। এই বিনিময়ের আদেশ দিয়ে স্বপ্ন-সূর্য আর দাঁড়ালেন না। সহসাই স্বপ্ন ভেঙে গেল কর্ণের। সূর্যপূজার কালে কর্ণ যাচাই করে বুঝলেন সূর্যই এসেছিলেন তাঁর কাছে।

তারপর একদিন যখন কর্ণের দানভূমি থেকে একে একে ব্রাহ্মণেরা দান নিয়ে ফিরে গেছেন, সেই সময়ে কর্ণের দুয়ারে গুরু গম্ভীর এক শব্দ শোনা গেল—ভিক্ষাং দেহি। এই গলার স্বর কোনও রুক্ষ-জীর্ণ, উপবাস-ক্লিষ্ট ব্রাহ্মণের হতে পারে না। কর্ণ ঠিক চিনেছেন, ইনি ইন্দ্র—ব্রাহ্মণবেশী। প্রখর সূর্যের সহস্র কিরণ এতক্ষণ যেন আশীর্বাদের মতো বর্ষিত হচ্ছিল কর্ণের মাথার ওপর, হঠাৎই সে সূর্যের গতি অবরুদ্ধ হল, দলে দলে মেঘ এসে সূর্যের সদা জাগ্রত সহস্র চক্ষু ঢেকে দিল যেন। দেবকুলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সূর্যের চোখের সামনে তাঁরই পুত্রের সর্বনাশ করতে স্বয়ং দেবরাজেরও বাধোবাধো ঠেকে। তাই বুঝি তাঁরই আদেশে অনন্ত মেঘের সারি সূর্যকে ঠিক আড়াল করে রাখল কর্ণের চোখ থেকে। দেবরাজ হাঁকলেন-ভিক্ষাং দেহি। কর্ণ ব্রাহ্মণবেশীকে বললেন—স্বাগত দ্বিজরাজ, আপনাকে প্রণাম।

মহাকবি ভাস মহাভারতের এই অংশ অবলম্বনে নাটক লিখতে গিয়ে ইন্দ্রের মনে বড় দ্বিধা লক্ষ করেছেন। সেকালে কেউ নত হয়ে প্রণাম জানালে সম্মানিত ব্যক্তি তাঁকে আয়ুষ্মত্তার আশীর্বাদ দিতেন। কিন্তু ব্রাহ্মণবেশী দেবরাজ যেখানে কর্ণের আয়ু হরণ করতে চান, সেখানে তিনি যদি বলেন ‘দীঘায়ু হও’, তা হলে তো আর ইষ্টসিদ্ধি হয় না। আবার আশীর্বচনের মুখে যদি তাঁর শব্দভাণ্ডার ফুরিয়ে যায়, তা হলে প্রণামান্তে নিবেদনকারী কর্ণ ভাববেন-কী মুর্খ এই ব্রাহ্মণ! কাজেই উভয় পন্থা ত্যাগ করে দেবরাজ বললেন-সূর্যের মতো, সাগরের মতো, হিমালয়ের মতো তোমার যশ অক্ষয় হোক।

আমরা জানি কর্ণও তাই চান। কিন্তু তবু তিনি দেবরাজকে একটু খেলাবার জন্য তাঁর দানের বস্তুগুলির গুণাগুণ শোনাতে লাগলেন। মহাভারতে দেখেছি সূর্যের কথা কর্ণের স্মরণ আছে। তিনি বললেন—বলুন ব্রাহ্মণ কী চাই আপনার, কীই বা আমি দিতে পারি, সোনায় মুড়ে দেওয়া যুবতী মেয়েছেলে নেবেন—হিরণ্যকণ্ঠীঃ প্রমদাঃ—অথবা গ্রাম দিতে পারি, জনপদ দিতে পারি। ইন্দ্র বললেন—ওসব মেয়েছেলে, গ্রাম, জনপদ, আরও যেসব ভাল ভাল জিনিসের নাম তুমি করছ, ওসব অন্যদের দিয়ো, আমি ওসব চাই না বাপু। কর্ণ তবু তাঁর ঋদ্ধির সূচী মাথায় রেখে একবার গজ-বাজি, একবার গোধন, একবার স্ত্রীলোক, একবার গোটা রাজ্য দিতে চাইলেন। কিন্তু দেবরাজ তাতে ভুললেন না, তিনি চান কর্ণের গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা কবচ এবং কুণ্ডল, যা তাঁকে নিজেরই নিজের দেহ থেকে কেটে দিতে হবে—এতদ্ উৎকৃত্য মে দেহি।

ভাসের নাটিকায় ঘটনাগুলি এমনভাবে সাজানো আছে, যাতে করে দেবরাজকে আস্তে আস্তে সুনিপুণ ভিখারি করে তোলা হয়েছে। কর্ণ একবার সহস্র সোনার শিংওয়ালা গোধন দিতে চান, আর ইন্দ্র বলেন—ও তো দুধ খেলেই শেষ, ও চাই না বাপু চাই না—নেচ্ছামি কর্ণ নেচ্ছামি। এমনিভাবে ঘোড়ার কথা আসে, হাতির কথা আসে, আর দেবরাজ বলেন—ও তো চড়লেই সুখ শেষ—নেচ্ছামি কর্ণ নেচ্ছামি। এইভাবে রাজ্যপাট, যজ্ঞের ফল সব দিতে চেয়েও কর্ণ খালি শোনেন—ও চাই না বাপু চাই না—নেচ্ছামি কর্ণ নেচ্ছামি। শেষে বিরক্ত কর্ণ একবার ক্ষোভে বলে ওঠেন—তা হলে আমার মাথাটা কেটে দিই, নিয়ে যান—তেন হি মচ্ছিরো দদামি। ইন্দ্র বাধা দেন। কিন্তু হতাশ হয়ে আসল কথাটা বলতেও পারেন না, অথচ লোভও ছাড়তে পারেন না। শেষে কর্ণ নিজেই বুঝে আপন কবচ-কুণ্ডলের কথা তোলেন, আর ওমনি মহাকবির আঁকা লুব্ধমুখ ভিখারির মুখে জেগে ওঠে বিকৃত হাসি; লজ্জা-ঘেন্না ত্যাগ করে সে হাত বাড়ায়–দাও দাও—দদাতু দদাতু।

মহাভারতের ভিখারি আরও লজ্জাহীন। তিনি সবকিছু প্রথমেই নস্যাৎ করে কবচ-কুণ্ডল চান এবং বলেন এই মুহূর্তেই চাই সেটা। খোঁটা দিয়ে বলেন—তুমি না দানের ব্রত নিয়েছ—যদি সত্যব্রত ভবান্। কর্ণ আরও একবার চেষ্টা করেন কিন্তু ওসব মনভুলানি কথায় দেবরাজ ভুললেন না, কবচ-কুণ্ডল তাঁর চাইই চাই। কর্ণ এবার হেসেই ফেললেন। বললেন—আমি সবই জানি দেবরাজ, কেনই বা এই ব্রাহ্মণবেশ আর কেনই বা এই প্রার্থনা। আপনি দেবরাজ, আপনাকে বর দেওয়া কি আমার সাজে। কোথায় আপনিই আমাকে বর দেবেন, তা না আপনিই বসেছেন প্রার্থীর আসনে। তা ছাড়া আপনি তো জানেন, এই কবল-কুণ্ডল দিলে আমি মৃত্যুর মুখে পড়ব এবং তাতে আপনাকে নিয়ে লোকে হাসবে। তার চেয়ে বিনিময়ের পথে আসুন, আপনি কিছু দিন, আমিও ব্রাহ্মণবেশীকে কবচ কুণ্ডল দিচ্ছি, নইলে কিছুতেই দেব না—ন দদ্যামহমন্যথা। ইন্দ্র বললেন—আমি এখানে আসবার পথেই বুঝেছি, সূর্যদেব সব বলে দিয়েছেন তোমাকে। তা বেশ, তুমি বাপু আমার নিজের হাতিয়ার বজ্রটা ছেড়ে দিয়ে আর যা চাও তাই দেব।

কর্ণ সূর্যের কথামতো এবার সেই অমোঘ শক্তি চাইলেন। ইন্দ্র বললেন—শক্তি নিচ্ছ নাও, কিন্তু এ শক্তি তোমার ঈঙ্গিত একজন প্রধান শত্রুকে বধ করা মাত্রই আমার হাতে ফিরে যাবে, তুমি কিন্তু দ্বিতীয়বার এটি ব্যবহার করতে পারবে না। কর্ণ বললেন—আমি একজনকেই মারতে চাই, একমেবাহম্ ইচ্ছামি রিপুং হন্তুং মহাহবে—দ্বিতীয়বার ব্যবহারের আমার প্রয়োজনই নেই। ইন্দ্র বললেন—একজনকে তো মারতে চাচ্ছ, কিন্তু যে একজনের কথা তুমি ভাবছ, তাকে রক্ষা করছেন স্বয়ং বাসুদেব কৃষ্ণ। কাজেই কী যে হবে, তা কে জানে। কর্ণ ইন্দ্রের কথা উড়িয়ে দিয়ে বললেন—সে যা ইচ্ছে হোক ভাবনা নেই, আমাকে একবীরঘাতিনী সেই শক্তি দিন, আমি আমার কবচ-কুণ্ডল কেটে দিচ্ছি।

ঠিক সেই মুহূর্তে সূর্যের কথা বুঝি কর্ণের মনে পড়ল। দুই সহজাত কুণ্ডলের মাঝে তাঁর মুখটি নাকি চাঁদের মতো দেখায়। দুল-কাটা, রক্ত-ঝরা কানে কর্ণের বিকৃত মুখ যদি সূর্যের মনে ব্যথা দেয়। কর্ণ বললেন—ও ভাল কথা! আমি কবচ-কুণ্ডল গা থেকে কেটে দেব আপনাকে, কিন্তু তাতে যেন কোনও বীভৎসতা না আসে আমার শরীরে, কাটা-ঘা দগদগে হয়ে না থাকে। ইন্দ্র বললেন—না বাপু কিচ্ছু হবে না। তুমি যেমনটি সুন্দর আছ তেমনি সুন্দর থাকবে। ঠিক তোমার বাবা সুয্যিঠাকুরের গায়ের যেমন রং, যেমন তাঁর তেজ-যাদৃশস্তে পিতুর্বর্ণস্তেজশ্চ বদতাং বর—ঠিক তেমনিই হবে তোমার শরীর।

কর্ণ আপন হাতের তরবারিতে নির্বিকারে নিজের দেহ থেকে তাঁর শরীররক্ষার দৈববর্ম কেটে রক্তমাখা অবস্থাতেই দিলেন দেবরাজের হাতে। কান থেকে কুণ্ডল দুটি ছিন্ন করে দিয়ে নাম নিলেন কর্ণ, প্রদদৌ কুণ্ডলে তে কর্ণাৎ তস্মাৎ কর্মণা তেন কর্ণঃ। এমন দানের মহিমায় স্বর্গ থেকে পুষ্পবৃষ্টি ঝরল, শঙ্খ-দুন্দুভি বাজল আর মহাভারতের কবি সিদ্ধান্ত দিলেন—স্বর্গের দেবতা ইন্দ্র ভুঁয়ে পা রেখে কর্ণের সঙ্গে বঞ্চনা করা সত্ত্বেও, কর্ণ যেহেতু তাঁকেই কৃতার্থ করেছেন তাই কর্ণের যশের পথ প্রশস্ত করে দিলেন স্বয়ং ইন্দ্র—ততঃ শত্রুঃ প্রহসন্ বঞ্চয়িত্বা, কর্ণং লোকো যশসা যোজয়িত্ব। আসলে কর্ণের প্রতি শিশুকাল থেকে যে বঞ্চনা চলছিল, কর্ণের সত্যব্রত এবং তাঁর আত্মদানের মাধ্যমে সে বঞ্চনার চূড়ান্ত সাধন করে তাঁকে যশ উপহার দিলেন মহাভারতের কবি। এক চূড়ান্ত বঞ্চনার জীবনে কবির হৃদয় যশ ছাড়া আর কীই বা উপহার দিতে পারে। অবশ্য কর্ণের যশোবিস্তারে আমরা পুলকিত হচ্ছি বটে, কিন্তু এই যশের কিছু বাস্তব প্রতিক্রিয়া ঘটল। সমকালে ব্যাপারটা ছিল অন্যরকম—কবচকুণ্ডল আছে, না খোয়া গেছে? খোয়া গেলে যাঁদের খুশি হওয়ার কথা, যেমন পাণ্ডবেরা, তাঁরা বনে বসে এই খবর পেলেন যে, কর্ণের জীবনরক্ষার কবচ-কুণ্ডল হরণ করেছেন দেবরাজ ; তাঁরা দারুণ খুশি হলেন। আর যাদের মুষড়ে পড়ার কথা, যেমন কৌরবেরা, তাঁরা একেবারেই ভেঙে পড়লেন, কেউ কেউ এমনও ভাবলেন যে, হয়ে গেল, আর সম্ভব নয়—দীনাঃ সর্বে ভগ্নদর্পা ইবাসন।