ঋগ্বেদ ১০।০৯৯

ঋগ্বেদ ১০।০৯৯
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৯৯
ইন্দ্র দেবতা। বস্র ঋষি।

১। হে ইন্দ্র! তুমি বুঝিয়া বুঝিয়া চমৎকার সম্পত্তি আমাদিগকে প্রেরণ করিয়া থাক, উহা প্রচুর হইয়া উঠে, উহা অতি উৎকৃষ্ট, উহাদ্বারা আমাদিগের শ্রীবৃদ্ধি হয়। সেই ইন্দ্রের বল বৃদ্ধির জন্য কিই বা দেওয়াযাইতে পারে? তাঁহার নিমিত্ত বৃত্ৰনিধনকারী বজ্র নির্মিত হইয়াছে। তিনি বৃষ্টিবর্ষণ করিলেন।

২। তিনি দীপ্তি ধারণপূর্বক বিদ্যুৎ আবিস্কৃত করিয়া যজ্ঞে সামগানের নিকট গমন করেন। তিনি বলপূর্বক অনেক স্থান অধিকার করেন। তিনি একস্থানবাসী মরুদগণের সহিত শত্ৰু পরাভব করেন। তিনি আদিত্যদিগের সপ্তম ভ্রাতা, তাহাকে ত্যাগ করিয়া কোন কাৰ্যই হইবার নহে।

৩। তিনি সুচারু গতিতে গমনপূর্বক যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হন। তিনি সর্ব বস্তুর দাতা, দিতে উদ্যত হইয়া যুদ্ধে অবস্থিত হয়েন। তিনি অবিচলিতভাবে শতদ্বারবিশিষ্ট শত্ৰুপুরী হইতে ধন অপহরণ করেন এবং ইন্দ্রিয়পরায়ণ দুরাত্মাদিগকে নিজতেজে পরাভব করেন।

৪। তিনি মেঘের দিকে গমন করিয়া মেঘে ভ্রমনপূর্বক উর্বর ভূমিতে প্রচুর জল সেচন করেন। সেই সকল ক্ষেত্রে অনেক ক্ষুদ্র নদী একত্র হইয়া ঘৃত তুল্য জল বহাইয়া দেয়, তাহাদিগের চরণ নাই, রথ নাই, দ্রোণিই তাহাদিগের অশ্ব (১)।

৫। সেই ইন্দ্র বিনা প্রার্থনায় অভিলাষ পূর্ণ করেন, তিনি প্রকাণ্ড, দুর্নাম তাহার নিকটেও যায়না, তিনি নিজ স্থান ত্যাগ করিয়া রুদ্রপুত্র মরুগণের সহিত এই স্থানে আগমন করুন। আমি বস্র, আমার পিতামাতার মনের ক্লেশ বোধ হয় দুর হইল, কারণ আমি যাইয়া শত্রুর অন্ন হরণ করিয়াছি এবং শত্ৰুদিগকে রোদন করাইয়াছি।

৬। সেই প্রভু ইন্দ্র বহুল চিৎকারকারী দাস জাতীয়কে শাসন করিয়াছেন, মস্তকত্রয়বিশিষ্ট ষটচক্ষু শত্রুকে দমন করিয়াছেন। ত্ৰিত ইহার তেজে তেজস্বী হইয়া লৌহের ন্যায় তীক্ষ্ণ নখবিশিষ্ট অঙ্গুলি দ্বারা বরাহকে বধ করিয়াছে।

৭। তাহার কোন ভক্তকে যদি শত্রুরা যুদ্ধার্থে আহ্বান করে, তাহা হইলে তিনি দর্পভরে শরীর উন্নত করিয়া শত্রু হিংসা করিবার উৎকৃষ্ট অস্ত্র প্রদান করেন। তিনি মনুষ্যদিগের সর্বোৎকৃষ্ট নেতা, দস্যু হত্যার সময় উত্তমরূপে দর্শন দিয়া মান্য ইন্দ্র অনেক শক্ত পুরী ধ্বংস করিলেন।

৮। তিনি মেঘসমূহের তৃণময়ী ভূমিতে জল বর্ষণ করেন, আমাদিগকে ভবনের পথ দেখাইয়াছেন। তিনি আপন শরীরের সর্বাংশে সোম সেচন করিয়া শ্যেনপক্ষীর ন্যায় লৌহতুল্য তীক্ষ্ণ দৃঢ়পাষ্ণি ভাগের দ্বারা দস্যুদিগকে বধ করেন।

৯। তিনি পরাক্রান্ত শত্ৰুদিগকে দৃঢ় অস্ত্রদ্বারা দূর করিয়া দেন। কুৎস নামক ব্যক্তির স্তব শুনিয়া শুষ্ণ নামক অসুরকে ছেদন করিয়াছেন। যিনি স্তব কারী কৰি উশনাকে কবচ লইয়া দান করিলেন, তিনি তাঁহাকে ও অন্য অন্য মনুষ্যকে দান করেন।

১০। তিনি মনুষ্যহিতকারী মরুৎগণের সহিত ধন দিতে ইচ্ছা করিয়া ধন পাঠাইয়াছেন। তিনি বরুণের ন্যায় নিজ তেজে সুশ্রী এবং ক্ষমতাবান্। তিনি রম্যমূর্তি, কালে কালে রক্ষাকর্তা বলিয়া সকলে তাহাকে জানে। তিনি চতুষ্পদ শত্রুকে নিধন করিলেন।

১১। ঋজিশ্বা নামক উশিজের পুত্র তাহাকে স্তব করিয়া বজ্রদ্বারা পিপ্রুর গোষ্ঠ বিদীর্ণ করিলেন। যখন সেই উশিজের পুত্র সোম প্রস্তুত করিয়া যজ্ঞানুষ্ঠান পূৰ্ব্বক স্তববাক্য কহিয়াছিলেন, তখন ইন্দ্র আসিয়ানিজতেজে শত্ৰুপুরী ধ্বংস করিলেন।

১২। হে অসুর ইন্দ্র! আমি বস্ত্র, প্রচুর হোমদ্রব্য দিবার জন্য পাদচারী হইয়া তোমার নিকট আসিয়াছি। তুমি আসিয়া এই ব্যক্তির, অর্থাৎ আমার মঙ্গল কর; অন্ন ও বল এবং উৎকৃষ্ট গৃহ, এমন কি সকল বস্তুই দান কর।

————

(১) অর্থাৎ দ্রোণি (তোঙা) দ্বারা জল লইয়া ক্ষেত্রে সেচন করে।