[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

৪৭. পল এঙ্গেল

এই শহরটির অনেক কিছু বদলে গেলেও একজন মানুষ বদলায়নি। তাঁকে দেখার পর আমি দারুণ চমকে উঠেছিলুম। মানুষের শরীর এত অবিচলিত থাকতে পারে?

রাস্তার টেলিফোন বুথ থেকে টেলিফোন করলুম পল এঙ্গেলকে। প্রথমে তিনি অবাক হয়ে দু-তিনবার বললেন কে? কে? তারপর আমায় চিনতে পেরে জিগ্যেস করলেন, তুমি কোথা থেকে কথা বলছ, কলকাতা? দিল্লি? লন্ডন?

আমি যখন বললুম এই আয়ওয়া শহর থেকেই, তখন পল একটা বিরাট লম্বাভাবে বললেন, হোয়াট? তুমি এক্ষুনি আমার বাড়ি চলে এসো। না, না, তুমি নিজে আসতে পারবে না। তুমি কোথায় আছ? সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো, আমি তোমায় তুলে আনছি।

শীতের জন্য বেশিক্ষণ রাস্তায় থাকা যায় না, সেই জন্য আমি মাঝে-মাঝেই কোনও-না কোনও দোকানে ঢুকে শরীর গরম করে নিচ্ছিলুম। এখানকার দোকানে কিছু না কিনেও ঘুরে বেড়ালে কেউ কিছু বলে না। এখন আমি রয়েছি বুক স্টোরে। আগেই বলেছি, আয়ওয়া শহরটি খুবই ছোট, ধরা যাক মানকুণ্ডু কিংবা সোনারপুরের মতন। তবু এখানকার মতন এত বড় বইয়ের দোকান সম্ভবত কলকাতা শহরেও একটি নেই।

পল এঙ্গেল মানুষটি বড় অদ্ভুত। ইনি নিজে একজন কবি, খুব একটা উঁচু জাতের নন যদিও, আমেরিকার আধুনিক কবিদের চোখে ইনি, ধরা যাক, কালিদাস রায়। কিন্তু, পল এঙ্গেল সাহিত্যকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন। ওঁর মতে, পৃথিবীর সমস্ত সাহিত্যিকরাই এক জাতির লোক এবং সবাই, সবাই-এর আত্মীয়। সেইজন্য উনি প্রতি বছর একটা আত্মীয় সমাবেশ ঘটান এই ছোট শহরে। প্রধানত ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় উনি চালু করেছেন ইন্টার ন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম। সেই প্রোগ্রামে পৃথিবীর নানান দেশের লেখকদের নেমন্তন্ন করে এনে এখানে অতিথি করে রাখা হয় তিন-চার মাস। চিন, রাশিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি থেকেও লেখকরা আসেন প্রতি বছর। ভারত থেকেও অনেক লেখক এসেছেন, বাংলা থেকে বিভিন্ন বছরে এসেছেন শঙ্খ ঘোষ, জ্যোতির্ময় দত্ত, সৈয়দ মুজতবা সিরাজ প্রমুখ। পলের সঙ্গে আমার আলাপ হয় কলকাতায় বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের মাঠে। অনেক বছর আগে।

পল একটা স্টেশন ওয়াগন নিয়ে এসে হাজির হলেন সাত মিনিটের মধ্যে। তাঁকে দেখে আমি তাজ্জব। হিসেব মতন পলের বয়স এখন হওয়া উচিত বাহাত্তর, কিন্তু আমি অনেকদিন আগে যেরকম দেখেছিলুম, চেহারাটা এখনও ঠিক সেইরকমই আছে, দীর্ঘকায় মানুষটির শরীরে বার্ধক্যের ছাপ লাগেনি। আমাকে দেখে দ্রুত এগিয়ে এসে সোজা জাপটে ধরলেন। চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন হোয়াট আ প্লেজান্ট সারপ্রাইজ।

তারপর জিগ্যেস করলেন, তোমার লাগেজ কোথায়?

আমি লাজুক মুখে বললুম, কিছু নেই সঙ্গে!

তার মানে?

–আমি ঘুরতে-ঘুরতে আসছি। থেমে-থেমে। আপাতত আসছি সিডার র‍্যাপিডসের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে। আয়ওয়া আসব কি না ভাবছিলুম। অবশ্য তোমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতুম ঠিকই–

পল চেয়ে রইলেন খানিকক্ষণ। তারপর নরমভাবে বললেন, মার্গারিট ম্যাতিউ?

আমি ঘাড় নাড়লুম।

পল বললেন, আমারও মনে আছে মেয়েটিকে। বড্ড সরল ছিল। এত সরল মানুষের বোধহয় আর জায়গা নেই এ পৃথিবীতে। পৃথিবীটা দিন-দিন যেন আরও নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে। চলো। গাড়িতে ওঠো।

আয়ওয়া নদীর ধার দিয়ে এসে পলের গাড়ি একটা টিলার ওপরে উঠল। দুপাশে জঙ্গল। ঢেউ খেলানো টিলার পর টিলা চলে গেছে, তারই একটার ওপরে পলের নতুন বাড়ি। আগের বার আমি যখন এখানে আসি তখন পল ছিল এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক, তার বাড়িটিও ছিল মাঝারি মডেস্ট ধরনের। রিটায়ার করার পর পল এই বাড়িটি কিনেছে, এটা বেশ বড় আর ছড়ানো, সঙ্গে সুইমিং পুল আছে। পল এঙ্গেল এদেশের একজন সচ্ছল মধ্যবিত্ত আমেরিকান, কিন্তু তার তুলনায় আমি আমেরিকা-কানাডার অনেক বাঙালির এর চেয়ে ঢের বড় বাড়ি দেখেছি। পলের দুখানি অতি সাধারণ গাড়ি, এর চেয়ে প্রবাসী বাঙালিরা আরও চাকচিক্যময় গাড়ির মালিক।

বাড়ির মতন পলের স্ত্রীও নতুন। এই নতুন স্ত্রীর নাম হুয়ালিং, ইনি একজন চিনে মহিলা এবং লেখিকা। চিনে এবং ইংরেজি এই দুই ভাষাতেই লেখেন। হুয়ালিং খুবই হাস্যঝলমল নারী এবং ব্যবহারে উষ্ণতা আছে। আমার হাত চেপে ধরে বললেন, তোমার কথা পলের মুখে অনেকবার শুনেছি।

তারপর একটু দুষ্টু হেসে হুয়ালিং বললেন, পল আজকাল বড্ড বেশি পুরোনো গল্প বলে।

পল অট্টহাস্য করে বললেন, তা হলেই বুঝতে পারছ, তোমাকে বিয়ে করার আগের দিনগুলো কত ভালো ছিল।

হুয়ালিং-এর বয়েস নিশ্চয়ই পঞ্চাশের বেশি, কারণ তাঁর আগের পক্ষের দুটি সাবালিকা মেয়ে আছে। কিন্তু হুয়ালিং-এর গায়ের ত্বক বালিকার মতন মসৃণ। শুনেছি চিনেদের নাকি দেরিতে জরা আসে।

পলেরও আগের পক্ষের দুটি মেয়ে। আমি চিনতুম তাদের। খবর নিয়ে জানলুম, বিয়ে করে তারা দুজনেই এখন বিদেশে থাকে। পলের ছোট মেয়ে সেরার সঙ্গে আমার বেশ বন্ধুত্ব ছিল। এই ক’বছরের মধ্যেই সে মোট চারবার বিয়ে করেছে।

পলের আগের পক্ষের স্ত্রী মেরির সঙ্গে ছিল আমার দারুণ ভাব। কারণ, প্রথম দিন আমি তাকে ভুল করে মা বলে ডেকে ফেলেছিলুম। এদেশে কোনও মহিলাকে মা বলা একটা দারুণ অপরাধ। আমি সবে প্রথম দিন এসেছি, কাঠ বাঙাল ইংরেজি আদবকায়দা জানি না। একজন বয়স্কা মহিলাকে কী বলে ডাকব ভেবে পাইনি। এদেশে সবাই সবার নাম ধরে ডাকে কিন্তু আমার বাধোবাধো লাগছিল, তাই সম্বোধন করেছিলুম মাদার বলে! মেরি অবশ্য রাগেনি। হেসেই খুন হয়েছিল সে ডাক শুনে। তারপর কত লোকের কাছে যে আমার সেই বাঙালত্বের গল্প শুনিয়ে আমায় নাজেহাল করেছে! তবে, মেরি আমায় ডেকে-ডেকে খাওয়াত প্রায়ই।

মেরি ছিল পাগলি। কখন যে রেগে উঠবে তার ঠিক নেই। একবার ক্রিসমাসের রাতে সে আমাদের উপোস করিয়ে রেখেছিল। সেদিনই টিভি-তে সে কলকাতা সম্পর্কে একটা তথ্যচিত্র দেখাচ্ছিল এখানে। আমরা সবে খেতে বসেছি এমন সময় মেরি অগ্নিমূর্তি হয়ে এসে বললে, কলকাতায় কত মানুষ খেতে পায় না, কত মানুষ সারা রাস্তায় শুয়ে থাকে, আর তোমরা এখানে বসে-বসে এত খাবার খাচ্ছ? তোমাদের লজ্জা করে না? এই বলে সে খাবারের পাত্রগুলো তুলে তুলে আছড়ে ফেলেছিল মেঝেতে।

মেরি এখন বেঁচে নেই। মেরির একটা শখ ছিল বাদুড়ের ছবি জমানো। পৃথিবীর নানান জাতের বাদুড়ের প্রায় হাজার খানেক ছবি ছিল তার। আমায় সে বলেছিল ভারতীয় বাদুড়ের ছবি পাঠাতে। আমি পাঠাতে পারিনি। আমার চেনা ফটোগ্রাফারদের বাদুড়ের ছবির কথা বললেই তারা শুধু হেসেছে।

হুয়ালিং যতই আমেরিকায় বসবাস করে আধুনিকা হোক, তাঁর শরীরে আছে প্রাচ্য দেশীয় রক্ত, একটু-একটু সংস্কারও রয়ে গেছে। এরই মধ্যে এক ফাঁকে তিনি জানিয়ে দিলেন যে, পলের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর এবং তিনি নিজেও বিধবা হওয়ার পর তারপর তাঁদের বিয়ে হয়েছে। আমি পলের আগেকার স্ত্রীকে চিনতুম বলেই বোধহয় আমাকে এই কথা জানাবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন তিনি।

পল একটু জোরে কথা বলেন, দারুণ জোরে-জোরে হাসেন, তাঁর হাঁটার সময়ে কাঠের ফ্লোরে দুপদুপ শব্দ হয়। একে বলবে বাহাত্তরে?

পল পৃথিবী ভ্রমণ করেছেন বেশ কয়েকবার, কলকাতাতেও এসেছেন দু-বার। হুইস্কির বোতল খুলে শুরু করলেন কলকাতার গল্প। সেই যে গঙ্গার ধারে বার্নিং ঘাট, সেখানে রবীন্দ্রনাথ টেগোরকে ক্রিমেন্ট করা হয়েছিল, কী যেন সেই জায়গাটার নাম?

–নিমতলা।

–হ্যাঁ, হ্যাঁ। স্পষ্ট মনে আছে। গঙ্গা নদী, জানো তো হুয়ালিং, আমাদের মিসিসিপির চেয়েও চওড়া, অবশ্য তোমাদের ইয়াংসিকিয়াং আরও বড়, কিন্তু গঙ্গা হচ্ছে হোলি রিভার, সেখানে

একবার ডিপ নিলেই সব পাপ কেটে যায়–

হুয়ালিং বললেন, জানি।

–নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের মতন কলকাতার মাঝখানে একটা হিউজ এরিয়া আছে, কী যেন নাম, না, না, বোলো না, মনে পড়েছে, মইডান! তাই না। তার পাশের রাস্তাটার নাম চৌরিঙ্ঘি। ঠিক বলিনি? আর একটা রাস্তা, যেখানে কফি হাউস আছে, সেই কফি হাউসে ইয়াং রাইটাররা যায়, খুব ক্রাউডেড রাস্তা, অনেক বইয়ের দোকান, রেলিং-এর গায়ে পুরোনো বইয়ের দোকান।

আমি বললুম, পল, তোমার তো আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি।

হুয়ালিং আবার দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন, জানো তো, পল এই কথাটা শুনতে খুব ভালোবাসে।

–কোন কথাটা?

–এই যে, ‘তোমার তো আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি!’

পল বললেন, লোকে কি আমায় খুশি করার জন্য মিথ্যে কথা বলে? আমার মেমারি তো সত্যিই ফ্যানটাসটিক।

–কিন্তু এই সব গল্প যে আমরা আগে অনেকবার শুনেছি।

–তাহলে শোনো, নীললোহিতের সঙ্গে আমার এখানকার গল্প বলি। নীলু, তোমার মনে আছে সেই ভ্যান অ্যালেনের পোশাকের ঘটনা।

আমি বললুম, সে কখনও ভোলা যায়?

–চলো, কাল তোমায় অনেক জায়গায় নিয়ে যাব।

–কাল? আমার যে আজই ফিরে যাওয়ার কথা?

–আয়ওয়া থেকে তুমি আজই ফিরে যাবে? তুমি কি ক্রেজি হয়ে গেছ নাকি?

হুয়ালিং জিগ্যেস করলেন, ভ্যান অ্যালেনের গল্পটা কী? সেটা তো আগে শুনিনি।

পল বললেন, তুমি তো ভ্যান অ্যালেনকে চেনো। একদিন তার বাড়িতে গেছি আকাশের তারা দেখতে–

হুয়ালিং বাধা দিয়ে বললেন, তুমি চুপ করো, গল্পটা নীললোহিতকে বলতে দাও!

ভ্যান অ্যালেন আয়ওয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত মানুষ। নোবেল প্রাইজ পাওয়া বিজ্ঞানী। তাঁর অনেক মৌলিক আবিষ্কার আছে। আকাশে তিনি একটা ম্যাগনেটিক ফিলড আবিষ্কার করেছেন, তার নামই দেওয়া হয়েছে ভ্যান অ্যালেন’স বেল্ট।

এই ভ্যান অ্যালেন পল এঙ্গেলের বন্ধু। আগেরবার পল আমাকে প্রায়ই নিয়ে যেতেন ভ্যান অ্যালেনের বাড়ি। অত বড় বিজ্ঞানী, কিন্তু নিরহঙ্কার মাটির মানুষ তিনি। আমাদের তিনি আকাশের নক্ষত্রজগৎ দেখাতেন আর জটিল বিজ্ঞানের কথা এমন সরলভাবে বোঝাতেন যে আমার মতন মূর্খও তা অনেকটা বুঝে যেত।

একদিন সেই রকম নক্ষত্র দেখা চলছে, চমক্কার চাঁদনি রাত। ভ্যান অ্যালেনের বাড়িতে সেদিন কেউ নেই। আমাদের খাওয়া হয়নি। হঠাৎ তিনি বললেন, চলো, আজ সবাই মিলে বাইরে কোথায় খেয়ে আসি। তারপর তিনি মাইল পঞ্চাশেক দূরের একটা রেস্তোরাঁর নাম করে বললেন, ওখানকার হাঙ্গেরিয়ান গুলাশ খুব ভালো হয় শুনেছি। আর স্যালাড দেয় পঁচিশ রকম।

এ প্রস্তাব শুনে পল খুব একটা উৎসাহ দেখালেন না। আমার দিকে কয়েকবার তাকিয়ে তিনি বন্ধুকে বললেন, ভ্যান, ইউ নো, দেয়ার ইজ আ লিটল প্রবলেম।

সমস্যাটা আমি তৎক্ষণাৎ বুঝে গেলুম। গ্রীষ্মকাল, আমি পরে ছিলুম হাওয়াই শার্ট, ট্রাউজার্স আর চটি। কোনও-কোনও রেস্তোরাঁয় তখনকার দিনে পুরোদস্তুর পোশাক পরে যাওয়ার নিয়ম ছিল। টাইটা অনেকে বর্জন করলেও ডিনারের সময় জ্যাকেট পরা অবশ্য পালনীয়। আমার জন্য ওঁদের যাওয়া হবে না ভেবে আমার দারুণ অস্বস্তি লাগছিল।

বড় বৈজ্ঞানিকরা এই সব ছোটখাটো সমস্যা চট করে বুঝতে পারেন না। ভ্যান অ্যালেন বারবার জিগ্যেস করতে লাগলেন, কেন, কেন, কী হয়েছে? কী প্রবলেম?

পল তাঁকে কয়েকবার অন্য কোনও ছোট রেস্তোরাঁর নাম বলার পর শেষ পর্যন্ত আসল কথাটা খুলেই বললেন। তা হলে আমাকে আবার বাড়ি গিয়ে পোশাক পরে আসতে হয়, আমার বাড়ি উলটো দিকে কুড়ি মাইল।

ভ্যান অ্যালেন বললেন, তাতে কী হয়েছে, আমাদের এই তরুণ ভারতীয় বন্ধুটি দৈর্ঘ্যেপ্রন্থে তো আমারই সমান। আমার জুতো ওর পায়ে লেগে যাবে।

এই বলে তিনি তক্ষুনি নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে আমায় দিলেন ওঁর জুতো-মোজা আর কোট। হাওয়াই শার্টের ওপর কেউ জ্যাকেট পরে না, সেই জন্য আমার হাওয়াই শার্টটাই খুঁজে নিলুম প্যান্টে। জামা খুঁজে পরার পর বেল্ট না পরলে চলে না। একটা বেল্টও পেয়ে গেলুম। সেটা সবে কোমরে গলিয়েছি এমন সময় পল দারুণ বিস্ময়ে বলে উঠলেন, নীলু, নীলু, তুমি কি জানো, তোমার কোমরে এখন ভ্যান অ্যালেনস বেল্ট?

গল্পটা শুনে খুব হাসলেন হুয়ালিং। এই রকম আরও অনেক গল্পে সন্ধে ঘনিয়ে এল। শীতের বেলা, দেখতে-দেখতে অন্ধকার হয়ে যায়। আমি ওঠবার কথা বলতেই পল আবার এক ধমক দিলেন। বললেন, এখানে অনেক দেশের লেখকরা এসে আছেন। আজ এ বাড়িতে পার্টি আছে,

সবাই আসবে। তুমি থাকো, তোমার সঙ্গে ওদের আলাপ করিয়ে দেব।

থাকতেই হল। সাড়ে ছ’টা বাজতে-না-বাজতেই আসতে লাগলেন লেখক লেখিকারা। বিভিন্ন রকম চেহারা, কত রকম তাদের পোশাকের বৈচিত্র্য। এদের মাঝখানে আমি এক হংস মধ্যে বকো যথা।

হঠাৎ দেখি শাড়ি পরা এক মহিলা। দারুণ জমকালো সাজসজ্জার জন্য প্রথমটায় চিনতে পারিনি। তারপরই বুঝলাম কবিতা সিংহ।

আমি ছুটে গিয়ে বললুম, কবিতাদি!