[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

৪৪. অন্য কারুর বাড়িতে

অন্য কারুর বাড়িতে একা কয়েকদিন থাকলে মনে হয় আমিও যেন একজন অন্য মানুষ হয়ে গেছি। এই ঘরের কোথায় কী জিনিসপত্র আছে আমি জানি না। এক একবার এক একটা কিছু আবিষ্কার করি। সূর্যর অ্যাপার্টমেন্টে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার খুঁজতে যেয়ে আমি পেয়ে গেলুম তিনখানা ভিডিও খেলনা। তাই নিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটল। টিভি-তে ভিডিয়ো খেলনা খেলতে-খেলতে আমার মনে হয় আমি অন্য গ্রহের মানুষ।

মাঝে-মাঝে অন্য লোকেরা টেলিফোন করে। প্রথমেই আমাকে সূর্য ভেবে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। এক-এক সময় আমার ইচ্ছে হয় সূর্য সেজে উত্তরও দিতে। কোনও মেয়ে ফোন করলে হয়তো সেরকম করতুমও, কিন্তু সূর্যকে শুধু পুরুষরাই ডাকে।

সূর্যর ঘরে পত্রপত্রিকাই বেশি, বই খুব কম। আজকাল এই এক রকম কালচার তৈরি হয়েছে। ছেলেমেয়েরা অনেক রকম পত্রপত্রিকা পড়েই সব বিষয়ে জেনে যায়, সাহিত্য পড়ে না। ক্লাসিকস তো পড়েই না।

একখানা বই পেলুম, সেটাও সাংবাদিকতা ঘেঁষা। তবে বইটি চমৎকার। বইটির নাম শ্লাউচিং টুয়ার্ডস বেথেলহেম’, লেখিকা শ্রীমতী জোন ভিভিয়ন। শ্রীমতী বলা বোধহয় ঠিক হল না, ইনি কুমারীও না, বিবাহিতাও না, অর্থাৎ মিস কিংবা মিসেস নন, এম এস। বাংলায় এর প্রতিশব্দ বোধহয় এখনও তৈরি হয়নি।

বইটি নোটবুক ধরনের। এতে আছে কিছু কিছু সাম্প্রতিক ঘটনা ও বিশেষ কয়েকটি ব্যক্তি সম্পর্কে স্কেচ। সাধারণ বিবরণ নয়। বেশ অন্তর্ভেদী চরিত্র-চিত্রণ, ভাষাও খুব গভীর। এই বইটিতে আমি এক নকশাল নেতার সন্ধান পেয়ে চমকে উঠলুম। না, লেখাটি ভারতীয় কোনও বিপ্লবী সম্পর্কে নয়, আমেরিকান নকশাল নেতা মাইকেল ল্যাসকি সম্পর্কে। আমাদের দেশে যেমন সি পি আই (এম-এল) দল আছে, এ দেশেও সেই রকম আছে সি পি উ এস এ (এম-এল) দল। আমেরিকার কমিউনিস্ট পার্টি অনেক পুরোনো। এখন তা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে এই এম-এল গোষ্ঠী পুরোনো আদি কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘শোধানবাদী বুর্জোয়া ক্লিক’ মনে করে। অবিকল আমাদের দেশের মতন।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ওয়াটস শহরে একটি বইয়ের দোকানে এই দলের শাখা অফিস। দোকানটির নাম, ‘ওয়ার্কার্স ইন্টারন্যাশনাল বুক স্টোর’, ভেতরে মস্ত বড় কাস্তে-হাতুড়ি মার্কা পতাকা ও মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন-স্ট্যালিন-মাও সে-তুং-এর ছবি। কমরেড ল্যাসকি এই দলের জেনারাল সেক্রেটারি, তিনি ওই দোকান চালান ও ‘পিপলস ভয়েস’ ও ‘রেড ফ্ল্যাগ’ নামে দুটি পত্রিকা বার করেন। আমেরিকায় ‘শ্রমিক অভ্যুত্থান’-ই এঁদের লক্ষ্য।

জোন ভিভিয়ন যখন মাইকেল ল্যাসকির সাক্ষাৎকার নিতে যান, তখন তিনি ওই মেয়েটিকে এফ বি আই-এর এজেন্ট ভেবেছিলেন। তবু তিনি সাক্ষাৎকারটি দিতে রাজি হন, কারণ এই বাজারি কাগজে এই সব লেখা বেরুলে জনগণ এই বিপ্লবী পার্টি সম্পর্কে বেশি করে জানবে। ল্যাসকির ধারণা, মার্কিন সরকার যে-কোনওদিন তাঁদের পার্টিকে নিষিদ্ধ করবে। পার্টি ওয়ার্কারদের মারধোর, কারাবাস এমনকী গুপ্তহত্যার জন্য তৈরি থাকতে বলেছেন। অবশ্য, এঁরাও অন্যরকমভাবে তৈরি আছেন, এদের পার্টি অফিসে, অর্থাৎ ওই বইয়ের দোকানের পেছনে রাখা আছে কয়েকটি শটগান ও রিভলবার। আমেরিকায় অস্ত্র রাখা বেআইনি নয়।

লেখাটি পড়বার পর লক্ষ করলুম, এর রচনাকাল ১৯৬৭। আমাদের দেশেও মোটামুটি ওই সময়েইনকশাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল না? ল্যাসকি সাহেবের বয়েস তখন ছিল ছাব্বিশ, এখন তিনি কোথায় আছেন জানি না।

লেখাটি পড়তে-পড়তে আমার একটা পুরোনো কথা মনে পড়ল। আগেরবার নিউ ইয়র্কে গ্রিনিচ ভিলেজে এক বাউন্ডুলেদের আড্ডায় একদিন নানারকম গান হচ্ছিল, এক সময় কয়েকজন ‘ইন্টারন্যাশনাল’ শুরু করতেই আমিও গলা মিলিয়েছিলুম। ছাত্র জীবনে ওই গান আমরা অনেক গেয়েছি তাই মুখস্থ। ওদের তারপর আমি ওই গানের বাংলা ভাষা, ‘জাগো, জাগো সর্বহারা’ (সম্ভবত নজরুলের অনুবাদ) গেয়ে শোনালুম।

সেই আড্ডায় উপস্থিত ছিল কবি অ্যালেন গিনসবার্গ। সে আমাকে পরে আড়ালে বলল, ‘ওহে নীলু চন্দর, আমরা এই গান গাইছি বটে, কিন্তু তুমি যেন আর অন্য কোথাও গেও না। তুমি বিদেশি, তোমার পেছনে গোয়েন্দা লেগে যেতে পারে। তোমার ভিসাও বাতিল করে দিতে পারে। আমি অবাক হয়ে বলেছিলুম, কেন? ইটস আ ফ্রি কান্ট্রি। এখানে কোনওরকম গান গাওয়ায় নিষেধ আছে নাকি? অ্যালেন বলেছিল, গানের জন্য তো কিছু বলবে না, অন্য কোনও ছুতোয় তোমাকে জ্বালাতন করবে। জানো তো, শালারা (অ্যালেন অবশ্য শালা বলেনি, অন্য গুরুতর গালাগালি দিয়েছিল) সব সময় কমুনিস্ট-জুজু খোঁজে!

সেই সময়ে নিজের দেশে অ্যালেন গিনসবার্গ বামপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিল। যে-কোনও জায়গায় সুযোগ পেলেই সে আমেরিকার সরকার ও ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেছে। কিন্তু সে কমিউনিস্ট নয়, কারণ, সে অতীন্দ্রিয় অনুভূতিতে বিশ্বাসী, সমকামী এবং চরম বাক-স্বাধীনতাপন্থী। চেকোশ্লোভাকিয়া সফরে গিয়ে সে বিতাড়িত হয়েছিল, কারণ সেখানে সে বাক স্বাধীনতার পক্ষে বক্তৃতা দিয়েছিল। আবার পোল্যান্ডে পেয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে সংবর্ধনা।

অ্যালেন জাতে ইহুদি। কুখ্যাত ইহুদি-হন্তা আইখম্যান যখন ধরা পড়ে এবং তাকে কীরকম শাস্তি দেওয়া হবে এই নিয়ে যখন জল্পনাকল্পনা চলছিল, তখন অ্যালেন বলেছিল, কোনও শাস্তি না দিয়ে আইখম্যানকে জেরুজালেম শহরের মেয়র করে দেওয়া উচিত। ইহুদিদের সেবা করলেই ওর পাপ-মুক্তি হবে।

এবারে অনেক চেষ্টা করেও আমি অ্যালেন গিনসবার্গের দেখা পেলুম না। গেছোবাবার মতন সে যে কখন উত্তরে কখন দক্ষিণে যায় তার আর ঠিক নেই। আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়ায়, সে তখন কলোরাডোতে, আমি নিউ ইয়র্ক ছেড়ে শিকাগোয় আসবার পরই খবর পেলুম সে নিউ ইয়র্কে কবিতা পড়তে গেছে।

অ্যালেনের সেই নিউ ইয়র্কের কবিতা পাঠের বিবরণ পড়লুম ‘টাইম’ সাপ্তাহিকে। প্রতিবেদক বেশ-ঠাট্টা ইয়ার্কি করেছে। বিদ্রুপের সঙ্গে বলেছে যে সেই বিপ্লবী কবি এখন ঠান্ডা হয়ে গেছে, পোশাক ভদ্রলোকের মতন, গলায় টাই পর্যন্ত বেঁধেছে, কবিতাগুলোও শান্ত আর ভদ্র ধরনের। টিভি-র ছবি তোলার সময় আলোর ফোকাস ঠিক মতন তার মুখে পড়ছে কি না সে ব্যাপারেও খেয়াল আছে টনটনে ইত্যাদি।

অ্যালেনের টাইপরা ছবি দেখে আমিও প্রথমে অবাক হয়েছিলুম। কলকাতার রাস্তায় সে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াতো আর নিউ ইয়র্কের রাস্তায় মৃতবন্ধুর ট্রাউজার্স আর গেঞ্জি পরে, গালভরতি দাড়ি।

পরে ভেবে দেখলুম, এটাই তো স্বাভাবিক। যে বয়েসে যা মানায়। অ্যালেন গিনসবার্গের বয়েস এখন প্রায় ষাট, এখন তো সুস্থির হওয়ারই সময়। একবার নিউ ইয়র্কের এক কাব্য পাঠের আসরে কয়েকজন চিৎকার করে বলেছিল, আপনার এসব কবিতার মানে কী? মানে বুঝিয়ে দিন। অ্যালেন জামা-প্যান্টের সব বোতাম খুলে মঞ্চের ওপর সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিল, এই হল আমার কবিতার মানে। আর একবার অ্যারিজোনায় এক সমালোচকের নাকে ঘুষি মেরে বলেছিল, এবারে আমার কবিতার মানে বুঝলে তো? এসব তার ছোঁকরা বয়েসের কথা। এখনও সে যদি এরকম কিছু করে, তবে সেটা হবে অত্যন্ত ভালগার ব্যাপার, বুড়ো মানুষের খোকামি! এখন সে শান্ত হয়েছে, তার কবিতাও অনেক ঘন সংঘবদ্ধ হয়েছে।

এখানকার প্রথাসিদ্ধ লেখক যাঁরা, অর্থাৎ যাঁরা কলেজে পড়ান কিংবা ফাউন্ডেশনের টাকা নিয়ে সাহিত্যচর্চা করেন, তাঁরা অ্যালেন গিনসবার্গকে পছন্দ করেন না কেউ। নাম শুনলেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। এরকম দু-একজনের কাছে আমি অ্যালেনের খোঁজ করতে গিয়েই এ ব্যাপারটা টের পেয়েছি। কেউ কেউ ঠোঁট বেঁকিয়ে বলেছে, ও, অ্যালেন? দ্যাখো গিয়ে সে বোধহয় আগামীবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদে দাঁড়াবার জন্য তৈরি হচ্ছে!

এই ঈর্ষার কারণ অ্যালেনের অসাধারণ জনপ্রিয়তা। এখনও সে কবিতা পাঠ করতে দাঁড়ালে অল্পবয়েসি ছেলেমেয়েরা মুগ্ধ হয়ে শোনে। তার কবিতার লাইন অনেকেই কথায়-কথায় মুখস্থ বলে। বিশুদ্ধ কবিতা রচনা থেকে অ্যালেন কখনও সরে যায়নি।

খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে এখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য সভায় গেলুম একদিন। সকলের জন্য দ্বার অবারিত। এখানকার সব বিশ্ববিদ্যালয়েই নিয়মিত লেখকদের ডেকে এনে সাহিত্য সভা করে। এটা লেখকদের একটা উপার্জনের পথও বটে।

এই সভাটিতে জনাপাঁচেক মাঝারি ধরনের লেখক ছিলেন। তার মধ্যে দুজনের নাম আমার পূর্ব পরিচিত। ভ্যানস বুর্জালি এবং ডনাল্ড যাস্টিস। যথাক্রমে উপন্যাস ও কবিতা লেখার জন্য এঁরা দুজনেই পুলিটজার পুরস্কার পেয়েছেন। অর্থাৎ আমাদের দেশের আকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের সমতুল্য। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ইদানীংকালের উপন্যাস ও ছোটগল্পের গতিপ্রকৃতি।

কিন্তু কথাবার্তা শুনে আমার চোখ ছানাবড়া হওয়ার উপক্রম।

পাঁচজন লেখক উপন্যাস-গল্প সম্পর্কে দুচারটে মামুলি কথা বলার পরই তাঁরা শুরু করে দিলেন তাঁদের ট্রেডের নিজস্ব কথাবার্তা। অর্থাৎ বই ছাপার আজকাল কত ঝামেলা, প্রকাশকরা কতরকম গণ্ডগোল করে, ঠিক মতন টাকাকড়ির হিসেব দেয় না, সুপার মার্কেটগুলোতে শুধু সস্তা চটকদার বইগুলোই সাজিয়ে রাখে, সিরিয়াস বই রাখতেই চায় না, বড় বড় পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা বার করা দিন দিন শক্ত হয়ে উঠছে, আর এই হতচ্ছাড়া টিভি কোম্পানিগুলো কত লোককে টক শো-তে ডাকে। লেখকদের ডাকে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

ও হরি, তা হলে সাহেব লেখকদেরও এই অবস্থা! ইংরেজিতে কথা বললেও আমার মনে হচ্ছিল এরা সবাই বাঙালি লেখক! আমরা যে ভাবতুম, সাহেব মানেই বড় লোক আর তাদের হাজার রকম সুবিধে! মহারাষ্ট্রের লেখকদের ধারণা হিন্দি লেখকদের অবস্থা ভালো, হিন্দি লেখকরা ভাবে বাঙালি লেখকদের অবস্থা ভালো, বাঙালি লেখকরা ভাবে ইংরেজিতে যারা লেখে একমাত্র তারাই স্বর্গসুখের অধিকারী। আসলে, ইংরেজিতেই দু-পাঁচজন লেখকই খুব বেশি বিত্তবান, তা-ও তারা থ্রিলার কিংবা হোটেল-এয়ারপোর্ট জাতীয় জিনিস লেখে। বাদবাকি সব লেখকদেরই চাকরি করতে হয় এবং প্রকাশকদের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই চালাতে হয়। পৃথিবীতে সব দেশের লেখকদেরই কি এই অবস্থা? একমাত্র সুইডেনের এক লেখকের মুখে শুনেছিলুম, তাঁর কোনও নালিশ নেই। তাঁর দেশের সরকার লেখকদের যে সম্মানের ব্যবস্থা করেছে, তার চেয়ে বেশি আর কিছু চাওয়া যায় না। সেখানকার লাইব্রেরি থেকে যেসব লেখকদের বই পাঠকরা নেয়, তার জন্যও সেই লেখকরা রয়ালটি পান।

আমেরিকায় একটি তরুণ কবিদের কাব্য পাঠের আসরেও আমি এই ধরনের আলোচনা শুনেছিলুম। বড় বড় পত্রিকায় কবিতা ছাপানো কত শক্ত, সেরকম ভালো কাগজই বা কোথায়, বড় শহরের তুলনায় ছোট শহরের কবিরা তেমন পাত্তা পায় না সম্পাদকদের কাছে ইত্যাদি। এ যে অবিকল কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের কথাবার্তা!

এক সময় আমি আমেরিকান সাহিত্যের বেশ ভক্ত ছিলুম। কিন্তু সল বেলোর পর সেরকম কোনও বড় লেখকের আর সন্ধান পাইনি। তাও সল বেলোকেও প্রকৃত অর্থে আন্তর্জাতিক লেখক বলা চলে কিনা সন্দেহ, তাঁর লেখা বড্ড বেশিরকম আমেরিকান। বিশেষত ইহুদি প্রথা ও সমাজ ঘেঁষা ডিটেইলসের প্রাবল্য এক এক সময় বিরক্তি ধরিয়ে দেয়। জন আপডাইকের ব্যাবিট সিরিজের লেখাগুলো একসময়ে ভালো লেগেছিল, এখন তার লেখায় এত বেশি রগরগে যৌন ব্যাপার থাকে যে মনে হয় এসব তো ছেলেমানুষি ব্যাপার! এই বাহ্য, আগে কহো আর! আপডাইকের একটি ভ্রমণ কাহিনি পড়েও বেশ হতাশ হলুম। কোনও ঔপন্যাসিক যখন ভ্রমণ কাহিনি লেখেন, তখন বোঝা যায় তাঁর চিন্তার ব্যাপকতা ও ভাষার ওপর দখল কতখানি। আপডাইক শুধু ইয়ার্কি-ঠাট্টা করেছেন। মেয়ে গাইডের সঙ্গে শোওয়া যায় কি যায় না, এই চিন্তা যেন পাশ্চাত্য লেখকদের একটা ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে, কত লোকের ভ্রমণ কাহিনিতেই যে এটা পড়তে হয়! এমনকী গুন্টার গ্রাসও এই কাণ্ড করেছেন। আপডাইক রাশিয়া সম্পর্কে লিখতে গিয়ে সেখানকার সুটকেস কত খারাপ এই নিয়ে বাজে রসিকতা করেছেন আগাগোড়া।

একজন কালো-লেখিকা গল্প পড়ে শোনালেন একদিন। লেখিকাটি ইদানীং বেশ নাম করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে খাতির করে এনেছে। সে গল্প শুনে আমার মনে হল, বাংলা ভাষায় এরকম গল্প অনেক আগেই ঢের লেখা হয়ে গেছে। সদ্য নাম করা আরও অনেকের লেখা পড়তে-পড়তে আমি ভাবি, এসব কী লিখছে এরা, এর চেয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেক ভালো লেখা হচ্ছে।

কী জানি, আমার আবার বাংলা-বাংলা বাতিক হয়ে গেল কি না।