গায়ে যদি জামা না থাকে
পায়ে যদি জুতো না থাকে
তা হলে কেউ খাবারও দেবে না!
প্রথম একটি দোকানের দরজার বাইরে এরকম লেখা দেখে অবাক হয়েছিলুম। এর মানে কী? তাহলে আমাদের ঢুকতে দেবে তো?
কলকাতায় যেমন প্যান্ট-হাওয়াই শার্ট আর চটি পরে ঘুরে বেড়াই, এদেশে এসে এখনও সেই বেশ পরিবর্তনের কোনও প্রয়োজন বোধ করিনি। আমি টাই পরেছিলুম জীবনে মাত্র একবারই। বন্ধুদের কাছ থেকে গিঁট বাঁধা শিখে নিয়ে একদিন তো টাই পরে আয়নার সামনে দাঁড়ালুম। তারপর সাংঘাতিক চমকে উঠলুম। এ কে? আমার মনে হল, আমি যেন আমার বাবা-মায়ের ছেলেই নয়, অন্য কেউ, মারামারির সিনেমায় খলনায়কের শাগরেদ! সেই যে টাই খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলুম, আর জীবনে ‘ইনি। কত লোককে টাই পরলে কী সুন্দর দেখায়, শুধু আমাকেই কিনা অন্য লোকের মতন, তাও আসল খলনায়ক নয়, তার শাগরেদের মতন!
টাই পরতে পারি না বলেই নিজের দেশে আমার ভদ্রগোছের কোনও চাকরিও জুটল না। খোদ ইংল্যান্ডেও বোধহয় এখন অনেক ছেলে গলায় টাই না বেঁধে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যায়, কিন্তু ভারতবর্ষে তা হওয়ার উপায় নেই। মৃণাল সেন একটা সিনেমায় এ ব্যাপার খুব ভালো দেখিয়েছেন!
আমি পারতপক্ষে মোজা আর শু-ও পরতে চাই না, চটি দিয়েই কাজ চালাই। অবশ্য তেমন। ঠান্ডার জায়গায় গেলে পরতেই হয়।
আমাদের সঙ্গের শিবাজি রায় নামের যুবকটি বিলেত-আমেরিকায় আসবে বলে দামি নতুন বুটজুতো কিনে এনেছে। আর একেবারে নতুন জুতো আনলে যা হয় তাই হয়েছে, দুই গোঁড়ালিতে বিরাট ফোস্কা। তাকে তো চটিজুতো পরতেই হচ্ছে, তা ছাড়া গোঁড়ালিতে ব্যান্ডেজ।
সুতরাং দোকানের বাইরে যখন লেখা দেখি, ‘নো শার্ট, নো শু, নো সার্ভিস’, তখন আমাদের পা সম্পর্কে সচেতন হতে হয়। শু মানে তো আর চটিজুতো নয়। দেখাই যাক না কী হয়, এই ভেবে ঢুকে পড়া গেল। কেউ কোনও আপত্তি করল না, কেউ আমাদের পায়ের দিকে তাকালও না।
তা হলে ‘নো শু’ মানে খালি পা। ‘নো শার্ট’ মানে খালি গা? খালি গায়ে, খালি পায়ে কেউ সাহেবদের দোকানে খেতে আসে? একি আমাদের হরিদাসপুরের চায়ের দোকান? কিন্তু সাহেবদের দেশে সবই সম্ভব। সত্তরের দশকে যখন এই দেশটা হিপিতে ভরে গিয়েছিল, তখন সেই সব ছেলেমেয়েরা প্রথমেই পা থেকে জুতো বর্জন করেছিল, তারপর ছেলেরা খুলে ফেলেছিল গায়ের জামা, এমনকী, প্রথম-প্রথম টপলেসের যুগে, অনেক মেয়েও ঊর্ধ্বাঙ্গ কোনও পোশাকে ঢাকত না।
হিপিদের যুগ প্রায় শেষ। খানিকটা সেই ফ্যাশান চলে যাওয়ার জন্য। খানিকটা মরাল মেজরিটি এবং অন্যান্য সংস্থার দমননীতির জন্য। মার্কিন দেশের অভিভাবকশ্রেণি এখন ছেলেমেয়েদের সুপথে আনবার জন্য বদ্ধপরিকর। সেই জন্যই এরকম ব্যবস্থা।
ক্রমশ প্রায় দোকানের বাইরেই এইরকম নোটিশ চোখে পড়ে। বুড়ো সাহেব মেমরা দোকানে ঢাকবার আগে এই নিয়ে ঠাট্টাও করে। বুড়ি হয়তো তার স্বামীকে বলল, ডিয়ার, তুমি জুতো পরে এসেছ তো? বুড়ো বলল, ডার্লিং, তুমি জামা পরে আসতে ভুলে যাওনি তো, চোখে ভালো দেখতে পাচ্ছি না।
ম্যাকডোনাল্ড বা বার্গার কিং জাতীয় ফাস্ট ফুডের দোকানে এরকম নোটিশ চোখে পড়ে না অবশ্য। অনেকক্ষণ গাড়ি চালাবার পর কেউ সেখানে থেমে খালি পায়ে গেঞ্জি গায়ে ঢুকে পড়তে পারে। হিপি না হলেও খুব গরমের সময় অনেক ছেলে খালি গায়েও বেরিয়ে পড়ে।
কিন্তু ছোট-ছোট কিছু সাজানো গোছানো ব্যক্তিগত মালিকানার হোটেলে অনেক রকম মজার নিয়মকানুন। প্রথম দরজা ঠেলে ঢুকলেই একটা ছোট অপেক্ষা করার জায়গা, সেখানে কিছু আসন পাতা, এবং আর একটি নোটিশ, প্লিজ ওয়েইট হিয়ার টু বি সিটেড। অর্থাৎ ভেতরে অনেক খালি টেবিল পড়ে থাকলেও ইচ্ছে মতন যে-কোনওটায় গিয়ে বসা যাবে না। একজন পরিচারিকা এসে জিগ্যেস করবে, আপনারা কজন? কোন ধরনের টেবিল পছন্দ। তারপর সে সঙ্গে করে আমাদের একটি টেবিলে নিয়ে গিয়ে বসাবে।
এইসব ছোট হোটেলেও দাম খুব বেশি লাগে না, কিন্তু এইটুকু বিলাসিতা করা যায় যে মেনিউ কার্ড দেখে অর্ডার দেওয়া যায় ইচ্ছে মতন, বাচ্চাদের জন্য দুধের কথা বলা যায়। একটা খাবারের সঙ্গে আর একটা খাবার মিশিয়ে নতুন কিছু বানিয়ে নেওয়া যায়। এবং অধিকাংশ জায়গাতেই পরিচারিকাদের ব্যবহার বেশ আন্তরিক। অবশ্য আমরা যাকে পরিচারিকা ভাবছি, সে-ই হয়তো মালিক। সে নিজেই অর্ডার নেয়, খাবার বানায়, টেবিলে এনে দিয়ে যায় এবং ক্যাশ কাউন্টারে সে-ই দাম নেয়।
এখানে পরিবেশনের কায়দাটাও অদ্ভুত।
বাংলাদেশের লোকেরা প্রথমে মাছ-মাংস দিয়ে শুরু করে, একেবারে শেষকালে খায় ডাল। ভারতের কোনও কোনও প্রদেশে খাওয়া শুরু হয় মিষ্টি দিয়ে, শেষকালে নোতা। সেই রকম এখানেও প্রথমেই এনে দেবে কফি। অর্থাৎ ক্ষুধার্ত অবস্থায় খালিপেটে খেতে হবে দু-তিন কাপ কফি। তারপর এনে দেবে স্যালাড। সেটাও শুধু খেতে হবে। স্যালাডের ব্যাপারেও অনেক কায়দা আছে, অর্ডার নেওয়ার সময় পরিচারিকা খুব সিরিয়াস মুখ করে জিজ্ঞাসা করবে, স্যালাডের সঙ্গে আপনি কী ড্রেসিং চান? যেন এর উত্তরের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। কোন স্যালাডের সঙ্গে কোন ড্রেসিং চলে, এটা আপনার জানা দরকার। আপনি চুপ করে থাকলে পরিচারিকা অনেকগুলি ড্রেসিং-এর নাম বলবে। আমরা অনভিজ্ঞ হিসেবে ইতস্তত করলে জয়তীদি আমাদের সাহায্য করবার জন্য বলেন, তোমরা কি এইটা, না ওইটা, না সেইটা চাও? এর মধ্যে একটার ওপর একটু বেশি জোর দেবেন, যাতে, আমরা বুঝতে পারি, ওইটাই এক্ষেত্রে বলা উচিত। আমি অবশ্য দেখেছি, চোখ-কান বুজে ‘ফ্রেঞ্চ ড্রেসিং’ বললেই সব জায়গায় বেশ কাজ চলে যায়।
স্যালাড নামের তেল মেশানো ঘাস-পাতা খাওয়া শেষ করলে তারপর আসবে আসল মাংস টাংস।
জয়তীদির মেজদি নিজে সর্বক্ষণ নানান কিছু হারাচ্ছেন বা ভাঙছেন বটে, কিন্তু অন্য কেউ যাতে কোনও রকম নিয়মকানুন না ভাঙে, সে ব্যাপারে খুব সজাগ।
কফি খাওয়ার পর হয়তো আমি ফস করে সিগারেট ধরিয়েছি, অমনি মেজদি বলে উঠলেন, এই গোবিন্দ, তুমি যে এখানে সিগারেট খাচ্ছ–
আমি নিরীহ মুখে জিগ্যেস করলুম, গোবিন্দ কে?
মেজদি বললেন, ও গোবিন্দ নয়, কী যেন, বিশ্বম্ভর! তুমি যে সিগারেট ধরালে–।
আমি আবার বললুম, বিশ্বম্ভর বলেও তো কারুকে দেখতে পাচ্ছিনা।
জয়তীদি হাসতে-হাসতে বললেন, মেজদি, তুই কী রে! নীলু এই ছোট্ট নামটা তুই মনে রাখতে পারিস না। যত সব খটকা খটকা নাম…।
মেজদি এতে লজ্জিত না হয়ে বরং অবাক হয়ে বললেন, সত্যি রে, আমার যে কী হয়, কিছুতেই নামটা…জানিস, একদিন আমি বাবাকে দাদা বলে ডেকেছিলুম? দু-তিনবার বলেছি, দাদা শোনো, দাদা শোনো–। বাবা তো অবাক।
দীপকদা বললেন, মেজদি, আপনি আমাকেও একদিন দর্জি বলে ডেকেছিলেন। একবার না তিনবার!
মেজদি এবার প্রতিবাদ করে বললেন, যাঃ, মোটেই আমি দর্জি বলিনি–
দীপকদা বললেন, হ্যাঁ, বলেছেন। আমি প্রতিবাদ না করে চুপ করে ছিলুম, কারণ, আমি তখন বাথরুম পরিষ্কার করছিলুম, আপনি ভাগ্যিস আমায় মেথর বলেননি!
জয়তীদি বললেন, বাথরুম পরিষ্কারের সঙ্গে দর্জির কি সম্পর্ক রে, মেজদি? তুই আমাকে দু একবার খুকুমা বলে ডেকে ফেলিস, তার না হয় মানে রয়েছে।
শিবাজি বলল, আমাকে উনি একবার বিপ্লব, আর একবার মহেন্দ্র বলে ডেকেছেন।
প্রিয়া বলল, ছোট্টিমা ওয়ানস অর টোয়াইস আমায় ডেকেছেন পুপলু! বাঃ! বাঃ!
এমনকী প্রিয়াও বলল, সি ওয়ানস কলড মি পুঁচকি!
যাক সবারই যখন নতুন নাম হয়েছে, তখন আর ক্ষোভের কোনও কারণ নেই।
অপ্রতিভ ভাবটা কাটাবার জন্য মেজদি বললেন, কিন্তু নীলু যে এখানে সিগারেট ধরাল, ওরা যদি কিছু বলে?
মেজদির দুশ্চিন্তার কারণ হল এই যে, এখানকার হোটেল-রেস্তোরাঁয় যেখানে সেখানে বসে সিগারেট খাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি আছে। সিগারেটের বিরুদ্ধে প্রচুর আন্দোলন চলছে। ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশ বলেই আইন করে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করা যায় না, তা ছাড়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থও আছে নিশ্চয়ই। আমেরিকান পুরুষরা তো ক্যানসারের ভয়ে সিগারেট খাওয়া ছেড়েই দিয়েছে বলতে গেলে, মেয়েরা অবশ্য এখনও অকুতোভয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। সিনেমায়, বাসে, ট্রেনে, হোটেলে কয়েকটি মাত্র সিট নির্দিষ্ট করা থাকে, যেখানে ধূমপায়ীরা বসতে পারে শুধু, সে নিয়মভঙ্গ করলে অনেক টাকা জরিমানা হতে পারে।
মেজদিকে আশ্বস্ত করবার জন্য আমি টেবিলের ওপরের অ্যাসট্রেটা দেখিয়ে বললুম, এখানে নিষেধ থাকলে কি এটা রাখত।
আমার থেকে মনোযোগ সরিয়ে মেজদি এবার বললেন, ইস, শিবাজির কিছু খাওয়া হল না।
সত্যি, এই যুবকটিকে নিয়ে আমরা খুব বিপদে পড়েছি।
দেশে সে বাবা-মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করে এসেছে যে গরু কিংবা শুয়োর খাবে না। এই স্লেচ্ছদের দেশে গরু-শুয়োর বাদ দিয়ে কি চলা সম্ভব? অনেক দোকানে ও ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। কোথাও হয়তো মুরগি পাওয়া যায়, কিন্তু সেই মুরগিও যে গরু বা শুয়োরের চর্বির তেলে ভাজা নয়, তা হলফ করে বলা যাবে না। তা ছাড়া এদেশের মুরগি অতি বিস্বাদ। ইঞ্জেকশন দিয়ে ফোলানো-ফাঁপানো ঢাউস চেহারার মুরগি, দু-একদিন খাওয়ার পরেই অখাদ্য লাগে। কোথাও কোথাও মাছ পাওয়া যায় বটে, কিন্তু সে যে কোন জাতের মাছ তা কে বলবে! এদেশের প্রায় সবই সমুদ্রের মাছ। আমাদের এই শিবাজির শুধু পুকুরের রুই-কাতলা আর ভেড়ির ভেটকি ছাড়া অন্য কোনও মাছ পছন্দ নয়।
তবে মনের জোর আছে বটে ছেলেটির, অন্য সব কিছু অপছন্দ বলে সে শুধু, আলুভাজা আর কফি খেয়ে ডিনার সেরে নেয়।
কিন্তু আমরা ভালো-ভালো খাবার খাচ্ছি, আর একজন শুধু আলু ভাজা আর কফি, এ কি সহ্য করা যায়? আমাদের বিবেকের যন্ত্রণা হয়। বিশেষত মেজদি খুবই কাতর হয়ে পড়েন। ঘরের ছেলেকে ঠিকঠাক কীভাবে ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, সেই নিয়ে আমরা চিন্তা করি।
মাঝে-মাঝে এই রকম খাওয়ার জন্য থামা, আবার পথ চলা। এক একদিনে আমরা সাতশো আটশো মাইল এগিয়ে যাই। পথে পুলিশের কাছ থেকে আর কোনও বিপদ আসে না। আসলে পুলিশ সম্বন্ধে আমরা যত ভয় পেয়েছিলুম, ততটা কিছু ভয়ের নয়। এদেশের পুলিশ ঠিক ভক্ষক নয়, রক্ষকই বটে।
আইডাহো কিংবা অরিগন রাজ্যে বাইরের টুরিস্ট বেশি আসে না। আমেরিকার নাম ডাকওয়ালা রাজ্যগুলির তুলনায় এরা অপাঙক্তেয়। এখানে বড়-বড় শহর নেই, সেরকম কিছু দ্রষ্টব্য নেই। তবে প্রকৃতির সমারোহ বড় অপূর্ব। কত পাহাড়, বন, নদী আমরা পেরিয়ে যাই। রাস্তার পাশে মাঝে-মাঝে এক-একটা হরিণের ছবি আঁকা বোর্ডে লেখা থাকে ডিয়ার ক্রসিং। মনে হয় ওটা কথার কথা। কিন্তু সত্যি-সত্যি একদিন রাতে আমরা মস্ত শিংওয়ালা একটা হরিণকে হুড়মুড়িয়ে রাস্তা পার হতে দেখলুম। সামনের গাড়ি হর্ন বাজিয়ে পেছনের গাড়িগুলোকে জানিয়ে দেয়, হরিণ যাচ্ছে, দেখো, দেখো, চাপা দিও না যেন!
আমরা সবাই দেখলুম, শুধু মেজদিই দেখতে পেলেন না। চশমা খুঁজে পাননি সেই মুহূর্তে।
আমেরিকায় গ্রাম নেই, সবই ছোট শহর। প্রত্যেকটি শহরে ঢোকবার মুখে লেখা থাকে, সেখানকার জনসংখ্যা কত, সেখানে কী কী পাওয়া যায়। কোনওটার জনসংখ্যা তিনশো উনিশ, কোনওটার দুশো সাতাশি। কোনওটার বা শুধু উনচল্লিশ। এইসব শহরেও কিন্তু একটা ব্যাঙ্ক বা একটা সুপার মার্কেট আছে। নামও কি সুন্দর সুন্দর সেইসব শহরের, বিড়ালের থাবা, শুকনো ঝরনা, বুনো ফুল…এইরকম।
এক জায়গায় আমরা চমকে উঠলাম। সেই শহরটির নাম গোস্ট টাউন। তার জনসংখ্যা সাতাশ। ম্যানড্রেকের গল্পে আমরা সবাই ভূতের শহরের কথা পড়েছি। এই কি সেই? রাস্তার দু’পাশে বাড়ি, কিন্তু পথ একেবারে জনশূন্য। সাতাশজনই তাহলে ভূত!
জিয়া লাফিয়ে উঠল, আমরা এখানে থাকব! আমরা এখানে থাকব!
এমনকী মেজদিরও খুব উৎসাহ!
কিন্তু সবদিক বিবেচনা করে সেখানে থামা হল না। মোটেল নেই, কোনও ভূতের বাড়িতে তো আশ্রয় চাওয়া যায় না?
রাত দশটার পর আমরা মোটেল খুঁজি রাত্রিবাসের জন্য। আমাদের অন্তত দুটো ঘর দরকার, একটি মেয়েদের আর একটি ছেলেদের জন্য। অনেক মোটেলের বাইরে নো ভ্যাকেন্সির আলো জ্বলে। দু-এক জায়গায় দামে পোষায় না। কোথাও বা একটির বেশি ঘর খালি নেই।
দ্বিতীয় রাত্রে আমরা রাত প্রায় একটার সময় মনমতন একটি মোটেল পেলুম। একটি উনিশকুড়ি বছরের মেয়ে একলা কাউন্টারে জেগে বসে আছে। সম্ভবত কোনও কলেজের মেয়ে, রাত্রে চাকরি করে। এ-দেশের মেয়েদের এই সাহস আর কাজ করার ক্ষমতা দেখে সত্যিই মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
মনোমতন ঘর পাওয়া গেল। মেয়েটি নিজেই এসে ঘর খুলে সাজিয়ে দিয়ে গেল বিছানাটিছানা।
জামাকাপড় ছেড়ে সবে আমরা সুস্থ হয়ে বসেছি, শিবাজি তার অভ্যাস মতন রঙিন টিভির চ্যানেল ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে কোনও ওয়েস্টার্ন ফিল্ম খুঁজছে, এমন সময় বাইরে পরপর দুবার গুলির শব্দ হল।
আমরা পরস্পরের মুখের দিকে তাকালুম।
দীপকদা বললেন, যাই হোক না কেন, দরজা খুলে বাইরে যাওয়ার কোনও দরকার নেই।