[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

৩৩. ওয়াশিংটন ডি সি ঘুরে আসা যাক

হঠাৎ একদিন ঠিক করলুম ওয়াশিংটন ডি সি ঘুরে আসা যাক। এলোমেলো ভ্রমণে যদি শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডি সি না যাওয়া হয় তা হলে বড় দুঃখের ব্যাপার হবে। রাজধানী বলে নয়, আমেরিকায় বেড়াতে এসে ওয়াশিংটন ডি সি-র স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট না দেখে ফিরে যাওয়া একটা অমার্জনীয় অপরাধ।

বন্ধুরা আমাকে বাস স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে গেল। ওয়াইওমিঙে আমার সেই সাংঘাতিক বাস দুর্ঘটনার কথা শুনে নিউ ইয়র্কে অনেকে বলেছিলেন, তুমি আবার বাসে ঘোরাঘুরি করছ, তোমার ভয় করে না? এর উত্তরে সেই পুরোনো কথাটাই বলতে হয়, রোজ কয়েক লক্ষ লোক তো বিছানায় শুয়ে মরে যাচ্ছে, তাহলে তো বিছানায় শুতেই মানুষের ভয় পাওয়া উচিত।

নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনের বাস এক ঘন্টা অন্তর ছাড়ে। ঘণ্টাপাঁচেকের জার্নি। আমি অ্যাকসিডেন্টে পড়েছিলুম বটে তবু গ্রে-হাউন্ড বাস সার্ভিসের মুক্ত কণ্ঠে প্রশংসা করতে হয়। কাঁটায়-কাঁটায় ঠিক সময়ে বাস ছাড়ে, আর হাজার মাইল পেরিয়েও অবিকল নির্দিষ্ট সময় পৌঁছোয়।

আমি পোঁছোতে পাঁচ মিনিট দেরি করে ফেলেছি বলে পরবর্তী বাসের জন্য পঞ্চান্ন মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় কাটাবার কোনও সমস্যা নেই। প্রত্যেক বাস স্টেশনেই আছে সস্তার খাবার দোকান। তার চেয়েও সস্তা চাইলে মেশিন থেকেই পাওয়া যায় ঠান্ডা ও গরম পানীয় এবং নানান ধরনের স্ন্যাকস। একটা বাস স্টেশনের মেশিন থেকে আমি চিকেন সুপ পর্যন্ত পেয়েছিলুম, বেশ সুস্বাদু আর জিভে-গরম। সেদিন সত্যি খুব অবাক হয়েছিলুম। এদেশের এসব ছোটখাটো ব্যাপারই বেশিবিস্ময়কর।

আগে গেলুম একটা টেলিফোন করতে। ওয়াশিংটন ডি সি-তে রমেন পাইনের বাড়িতে আমার আশ্রয় নেওয়ার কথা, তাঁকে জানিয়ে দিতে হবে আমার বাসের সময় বদলে যাওয়ার কথা। কিন্তু টেলিফোন বুথগুলোর কাছে একটা দৃশ্য দেখে থমকে গেলুম।

একটি মেয়ে তার বয়েস ষোলো সতেরোর বেশি নয়, মাটিতে বসে পড়ে নিঃশব্দে শরীর মুচড়ে-মুচড়ে কাঁদছে অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে, আর একটি আঠারো-উনিশ বছরের ছেলে ফিসফিস করে খুব আন্তরিকভাবে তাকে কিছু বোঝাবার চেষ্টা করছে। মেয়েটি পরে আছে একটা গাঢ় হলুদ রঙের স্কার্ট, তার মাথার চুল সম্পূর্ণ সোনালি। আর ছেলেটি পরে আছে একটা নীল কর্ডের ট্রাউজার্স আর সাদা গেঞ্জি, তার চোখ দুটি নীল, তাকে দেখতে অবিকল অল্পবয়েসি অ্যান্টনি পারকিনসের মতন। ছেলেটি একবার করে একটা টেলিফোনের রিসিভার হুক থেকে নামিয়ে জোর করে মেয়েটির হাতে দিচ্ছে, আর মেয়েটি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে সেটা। দেওয়ালে ধাক্কা লেগে টেলিফোনটি ঝুলছে কর্ডে। একবার মেয়েটি নো-ও-ও-ও বলে এত জোরে টেলিফোনটি ছুঁড়ে দিল যে তার অর্ধেকটা ভেঙে উড়ে গেল।

কাছাকাছি দশ-বারোটা টেলিফোন বুথ। তিন-চারজন নারীপুরুষ অন্য বুথগুলোতে নির্বিকারভাবে ফোন করে যাচ্ছে, কেউ ওদের দিকে একবারও তাকাচ্ছে না। বোধহয় তাকাবার নিয়মও নয়। এমনকী ওরা কেন একটি টেলিফোন ভেঙে ফেলছে, সে ব্যাপারেও কেউ আপত্তি জানাতে আসছে না।

কিন্তু আমার ছোটখাটো বাঙালি হৃদয় ওরকম নির্বিকার থাকতে পারে না। কান্নার দৃশ্য আমি একেবারেই সহ্য করতে পারি না। ফট করে আমার নিজেরও কান্না পেয়ে যায় ক্যাবলার মতন। ওই ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটি কাঁদছে কেন অমন বুক উজাড় করে?কী ওর দুঃখ?

ওদের পাশে দাঁড়িয়ে এখন আমার পক্ষে টেলিফোন করা সম্ভব নয়। আমি ওখান থেকে সরে গেলুম। একেবারে দূরে চলে যেতে পারলুম না। একটা কোকাকোলা মেশিনের আড়ালে এমনভাবে দাঁড়ালুম যেখান থেকে ওদের দেখা যায়। দৃশ্যটা একই রকম। ছেলেটি বারবার মেয়েটিকে অনুরোধ করছে কোথাও টেলিফোন করার জন্য, মেয়েটি কিছুতেই টেলিফোন করবে না, সে এক-একবার রেগে উঠছে, আবার অঝোরে কাঁদছে। আমি মেয়েটির মুখ ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না, তার মুখ দেওয়ালের দিকে।

প্রথমেই মনে হয়, এরা দুজনে নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। এটা এখানকার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। হাজার-হাজার ছেলেমেয়ে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশে চলে যায়। এই নিয়ে কত নাটক, কত সিনেমা হয়েছে। কিন্তু কখনও তো কোনও ছেলেমেয়েকে কাঁদতে কিংবা পরাজয় স্বীকার করতে দেখিনি। আমেরিকান যৌবন সবসময় দুঃসাহসের পতাকা তুলে ধরে থাকে। এই মেয়েটি কাঁদছে যেন বুক নিঙড়ে-নিঙড়ে। আর ছেলেটির মুখেও একটা অপরাধী-অপরাধী ভাব।

এক সময় মেয়েটি উঠে দাঁড়াল, ছেলেটি তার কাঁধ ধরল। কয়েকপা মাত্র এগিয়েই মেয়েটি কান্নায় ভেঙে পড়ল আবার। আবার সে মাটিতে বসে পড়ল। এবারে আমি তার মুখ দেখতে পেয়েছি চোখের জলে একেবারে মাখামাখি। মুখখানা যেন কোনও বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা। মাথা ভরতি ওরকম সোনালি চুলের জন্যই মনে হয় মেয়েটি যেন এই পৃথিবীর নয়। অন্য কোনও গ্রহ ট্রহ থেকে এসেছে। মেয়েটির শরীরের নিখুঁত গড়নের তুলনায় ওর কোমরের কাছটা যেন একটু স্ফীত। খুব সম্ভব মেয়েটি গর্ভবতী। এই বয়েসের ছেলে মেয়ের বিবাহ কিংবা একসঙ্গে থাকা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এরা যৌবনের একটুও বাজে খরচ করতে চায় না।

মনে হয়, ওরা দুজনে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে, হয়তো দূরের কোনও শহরে থাকত, নিউ ইয়র্কে এসে টাকাপয়সা সব ফুরিয়ে ফেলেছে, তার ওপরে এই বিপদ। টাকাপয়সা না থাকলে নিউ ইয়র্কের মতন বড় শহর বড় নির্দয়। ছেলেটি কি মেয়েটিকে বলছে ওর বাবা-মা-র কাছে ফোন করে সাহায্য চাইতে? ছেলেটি নিজে তো ফোন করছে না!

এই রকম অবস্থায় সাধারণত সবাই ছেলেটিকেই দোষ দেয়। সবাই বলবে, বদমাস ছেলে, একটা কাঁচাবয়েসি মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এনে এখন এই অবস্থায় ফেলেছে। কিন্তু ছেলেটি মেয়েটির চেয়েও অনেক বেশি রূপবান, এমন সরল আর নিষ্পাপ মুখ আমি আগে কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ছেলেটি কোনও ভুল করতে পারে, কিন্তু ওর মনে কোনও কু-মতলব থাকতে পারে না। তা ছাড়া, এই সব ব্যাপারে ছেলে আর মেয়ের দায়িত্ব সমান। এদেশে ষোলো বছরের মেয়ে কচি খুকি নয়, তারা ছেলেদের সঙ্গে সব ব্যাপারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে।

এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকলে মনে হয় সবাই আমাকে দেখছে। কাছাকাছি অনেক বসবার জায়গা থাকতেও আমি কোকাকোলা মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছি কেন? আমি পয়সা ফেলে একটা কোকাকোলার টিন বার করে অন্য দিকে চলে গেলুম।

ওদের জন্য আমার মন কেমন করতে লাগল। বাস স্টেশনে কত লোক, কেউ ওদের একটা কথা জিগ্যেস করছে না। এরা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে অত্যন্ত সম্মান দেয়, কিন্তু আমার মনে হল তারও একটা সীমা থাকা দরকার। ওই বয়েসের দুটি বিভ্রান্ত ছেলে-মেয়ে, এখন কারুর কাছ থেকে সামান্য একটা সান্ত্বনা বা সহানুভূতির কথা শুনলেই অনেক ভরসা পায়। দারুণ কোনও মানসিক সংকটে না পড়লে আমেরিকার মেয়ে প্রকাশ্যে কিছুতেই কাঁদবে না।

আমার নিজেকে খুব অসহায় বোধ হল। আমি কি কিছু করতে পারি? সব সময়েই মনে হয় আমি বিদেশি। আমার আর সাধ্য কতটুকু? তা ছাড়া আমি কিছু বলতে গেলেই যদি ওরা আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়?

বেশিক্ষণ দূরে থাকতে পারলুম না। তা ছাড়া আমায় তো টেলিফোন করতেই হবে।

এখন সেই একই দৃশ্য। সেই রকম ভাবেই কেঁদে চলেছে মেয়েটি, ছেলেটিও তার পাশে বসে তাকে বোঝাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এমনিই এদের শিক্ষা যে মেয়েটির কান্নায় ফোঁপানি ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই, ছেলেটিও কথা বলছে যথা সম্ভব নিম্ন স্বরে। তিন-চারজন নারীপুরুষ ওদের প্রতি হৃক্ষেপ না করে টেলিফোন করে যাচ্ছে। এদের এই নির্লিপ্ততা এক-এক সময় আমার হৃদয়হীনতা বলে মনে হয়।

টেলিফোন করতে-করতে আমি আসলে কান খাড়া রাখলুম ওদের দিকে। যদি ওদের একটি কথাও শুনতে পাওয়া যায়। শুধু শুনতে পেলুম ছেলেটি বলছে, প্লিজ, রোজি, প্লিজ, প্লিজ…। আর মেয়েটির শরীর দুলে-দুলে উঠছে কান্নায়। আমার মনে হল, এই পুরো বাস ষ্টেশনের এমনকী বাইরেও আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে গেছে একটি সপ্তদশী মেয়ের কান্না।

টেলিফোনে কথাবার্তা সেরে আমি আবার একটি যন্ত্র থেকে এক গেলাস কফি নিলুম। আমার বাস ছাড়তে আরও তেইশ মিনিট বাকি। এদিকে-ওদিকে জোড়ায়-জোড়ায় নারী-পুরুষ গল্প করছে, কেউ হাসছে, এক বৃদ্ধা মহিলাকে সম্ভবত তার ছেলে ও ছেলের বউ (কিংবা মেয়েজামাইও হতে পারে) চুমু খাচ্ছে দুদিকের গালে, মাইক্রোফোনে নানান জায়গার বাস আগমন-নির্গমনের কথা ঘোষিত হচ্ছে, অনেক গেটে যাত্রীদের লাইন পড়েছে, ছুটোছুটি করছে দুটি শিশু…জীবন চলেছে জীবনের নিয়মে। এখানেই একটি মেয়ে যে বুক ভাসিয়ে কেঁদে যাচ্ছে, সেদিকে কারুর খেয়াল নেই।

আমার আর একটা ঘটনা মনে পড়ল। সেটাও আর একটা বাস স্টেশনের। সেখানে বাস বদলের কারণে ঘণ্টা দু-এক অপেক্ষা করার ব্যাপার ছিল। সময় কাটাবার জন্য কেউ-কেউ টিভি দেখে। কেউ-কেউ ঘুমোয়। আমি একটা বই পড়ছিলুম। আমার হ্যান্ডব্যাগটা আমার পায়ের কাছে রাখা। মাঝে-মাঝে সেদিকে নজর রাখছি। বন্ধুবান্ধবের মুখে শুনেছি আজকাল স্টেশন থেকে ব্যাগট্যাগ চুরি যাওয়া আশ্চর্য কিছু নয়, যদিও আগে এরকম ছিচকে চোর ছিল না।

একটি তিন-চার বছরের ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে ওয়েটিং রুমে। এক একবার সে এসে আপন খেয়ালে টানাটানি করছে আমার হ্যান্ডব্যাগটা। আমি মুখ তুলে সস্নেহ হাসি দিচ্ছি। পাশের সিট থেকে মা ধমকাচ্ছে মেয়েকে। মেয়েটির মাথায় বেশ বড় একটা ব্যান্ডেজ বাঁধা। যা দুষ্টু মেয়ে, নিশ্চয়ই আছাড় খেয়ে মাথা ফাটিয়েছে। মেয়েটি একবার আমার ব্যাগটা খুলে ফেলবার চেষ্টা করতেই ওর মা বেশ জোরে বকুনি দিল।

আমি মুখ ফিরিয়ে ভদ্রতা করে বললুম, থাক, থাক। কিছু হয়নি। ও তো খেলা করছে। ওর মাথায় অতবড় ব্যান্ডেজ কেন?

মহিলা তীব্র গলায় বললেন, ওর বাবা ওকে মেরেছে। ওর বাবা মাতাল, বর্বর, নরপশু।

আমি চমকে গেলুম। অপরিচিত লোককে তো কেউ এভাবে এসব কথা বলে না। ভালো করে তাকিয়ে দেখলুম, ভদ্রমহিলার বয়েস বছর পঁয়তিরিশেক হবে, সাজ পোশাকে কোনও মনোযোগ দেননি, চুল এলোমেলো, চোখ দুটো ফোলাফোলা। কোলে আর একটা বাচ্চা।

ভদ্রমহিলা আবার বললেন, ওর বাবা আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। হি জাস্ট কিকড আস আউট, লাইক অ্যানিম্যালস, ডিডনট গিভ আস আ নিকল…একটা পয়সা দেয়নি, স্রেফ মারতে মারতে বার করে দিয়েছে।

আমি হতবাক। এতে আমাদের রাধার মা। আমার ছোট মাসির বাড়িতে বাসন মাজার কাজ করত রাধার মা। একদিন তার জীবন কাহিনি শুনেছিলুম। চব্বিশ পরগনার এক গ্রামে তার বিয়ে হয়েছিল। তিনটি বাচ্চা হয় তার, তিনটিই মেয়ে, সেই অপরাধে তার স্বামী তাকে বাচ্চা সমেত মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে। কলকাতার অনেক বাড়ির দাসী রাঁধুনীই স্বামী বিতাড়িত। এদেশেও তা হলে রাধার মায়েরা আছে। এদেশে অবশ্য মামলা-মোকদ্দমা করে স্বামীর কাছ থেকে মোটা খোরপোশ আদায় করা যায়। কিন্তু মামলা করতে গেলেও তো খরচ লাগে। এই মহিলা তো দেখছি নিঃসম্বল, ইনি কী করে মামলা করবেন? মেয়েরা সব দেশেই এখনও অসহায়।

আমার সঙ্গে কথা বলতে-বলতে মহিলা কেঁদে ফেললেন। সেদিনও আমি খুব অসহায় বোধ করেছিলুম। আমি তাঁকে কী সাহায্য করতে পারি? দশ-কুড়ি ডলার দিয়ে তো সাহায্য করা যায় না। তার বেশি সামর্থ্যও আমার নেই। বাচ্চা দুটিকে নিয়ে ভদ্রমহিলা কোথায় চলেছেন তা জিগ্যেস করার সাহসও আমি পাইনি। শুধুই মহিলাকে বলেছিলুম, আমি কফি খেতে যাচ্ছি, তোমার বা তোমার বাচ্চাদের জন্য কি কিছু এনে দিতে পারি? তিনি তাঁর বড় মেয়েকে একটি চকলেট বার নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন শুধু।

…আমার বাস ছাড়তে আর সাত মিনিট দেরি আছে। পাঁচ মিনিট আগে লাইনে দাঁড়াতে হবে। ওই সপ্তদশী মেয়েটি আর কতক্ষণ কাঁদবে?

টেলিফোন বুথের দিকে ওদের আবার দেখতে গেলুম। ছেলেটি আর মেয়েটি ওখানে নেই। ওরা যেখানে বসে ছিল সেখানে এখনও কয়েকটি চোখের জলের ফোঁটা রয়েছে। ঠিক যেন রক্ত।

কোথায় গেল ওরা। একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলুম, এক কোণের দিকে একটা বেঞ্চে বসে আছে ওরা। মেয়েটি সম্ভবত এখনও কাঁদছে, সে দু-বাহুর মধ্যে ঢেকে রেখেছে মুখ। ছেলেটি নার্ভাস ভাবে সিগারেট টানছে ঘনঘন, তার একটা হাত মেয়েটির পিঠে।

এখান থেকে এর মধ্যে অনেক জায়গার বাস ছাড়ছে। ওরা বাস স্টেশনে এসেছিল কেন, কোথাও যাওয়ার জন্য? ওদের কাছে কি বাস ভাড়াও নেই?

আমি যা ভাবছি, হয়তো সেসব কিছুই ঠিক নয়। ওদের সমস্যা বোধহয় অন্য। কিন্তু মেয়েটির কান্নাটা তো সত্যি।

আমি বাসে উঠে গেলুম, আর ওদের দেখা গেল না। জানি না ওরা এরপর কী করবে। অনেকক্ষণ ওদের দুজনের জন্য আমার বুক টনটন করতে লাগল।