বিমানটি দোতলা।
মোট কত মাইল এখন পাড়ি দিচ্ছি, ঠিক আন্দাজ নেই। সাত-আট হাজার মাইল তো হবেই। নীচে আটলান্টিক মহাসমুদ্র। জানলার ধারে সিট জোগাড় করেছি, কিন্তু বাইরে চোখ মেলে কিছুই দেখার নেই। প্রথমে যেন কিছুক্ষণ নীচে সমুদ্রের অস্পষ্ট চেহারা চোখে পড়েছিল, তারপর শুধু পাতলা ধোঁয়া-ধোঁয়া। কলকাতা থেকে আসামে কিংবা ত্রিপুরায় বিমান যাত্রায় নানারকম মেঘের খেলা দেখতে পাওয়া যায়। কোথাও যেন দুর্গ, কোথাও মর্মর প্রাসাদ, কোথাও ধপধপে সাদা রঙের শিশুরা ছুটোছুটি করছে বরফের মধ্যে–এইসব কল্পনাতেই দিব্যি সময় কেটে যায়। কিন্তু এই সব জাম্বো-মাম্বা বিমানে কোনও বাইরের বৈচিত্র্য নেই, মেঘের খেলা নেই। এত উঁচুতে কিছুই দেখা যায় না। আর উঁচু মানে কি, মাউন্ট এভারেস্টের ডগার চেয়েও অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যাচ্ছে এই বিশাল রূপালি পাখি।
আমি ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী, অর্থাৎ ট্রেনের থার্ড ক্লাসের মতন, সেইজন্য বসতে দিয়েছে একেবারে লেজের দিকে। কিন্তু বিমানটি দোতলা, একথা জানবার পরই খালি মনে হচ্ছে, একবার ওপরটা দেখে আসব না? কিন্তু প্রথম-প্রথম ঠিক সাহস হয় না।
আমার পাশের দুজন যাত্রীই দুজন গোমড়ামুখো মধ্যবয়সি পুরুষ। একজন তো ওঠামাত্র কোমরের কষি আলগা করে (সিট বেল্ট খুলে) ঘুমোতে লাগলেন, যেন এই সকাল দশটাই তাঁর ঘুমোবার সময়। অন্য লোকটি প্রায় একটি দৈত্য, প্রথমে দু-তিনবার ঘনঘন আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করে বোধহয় আমাকে একটি চুনোপুঁটি জ্ঞান করলেন। তারপর আমার প্রতি আর ভ্রূক্ষেপ মাত্র না করে, এবং আমাকে দারুণ বিস্মিত করে তিনি লোরকার একটি কবিতার বই খুলে বসলেন। আমার ধারণা ছিল, বিমানযাত্রীরা আর্থার হেইলি ছাড়া অন্য কারুর বই পড়ে না। এইরকম দৈত্যাকার লোকও কবিতা পড়ে?
এই সব বিশালবপু বিমানে তিন থাক করে বসবার জায়গা থাকে প্রত্যেক সারিতে। মাঝখানের দিকে যারা বসে আছে, তাদের মধ্যে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক শ্বেতাঙ্গিনী আর একটি বছরচারেক বয়েসের বাচ্চা। মেয়েটি প্রায় যুবতিই মনে হয়, পরনে একটা লম্বা গেরুয়া রঙের সেমিজ, (যার অন্য নাম ম্যাক্সিও হতে পারে) গলায় রুদ্রাক্ষের আলখাল্লা। ছেলেটির পায়ে জুতো নেই।
ছেলেটি বেশ সুন্দর রকমের দুরন্ত, প্রায়ই ছুটে চলে যাচ্ছে এদিক-ওদিক। তার মায়ের অবশ্য সেজন্য একটুও ব্যস্ততা নেই, সে মন দিয়ে পাশের এক যাত্রীর সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত। বাচ্চাটি একবার আমার কাছে চলে এল, সে জানলার কাছে দাঁড়াতে চায়। ফুটফুটে বাচ্চাটি, মাথায় সোনালি চুল। কিন্তু সাহেবের বাচ্চা খালি পায়ে ছুটছে, এটা যেন কেমন-কেমন লাগে। যদিও প্লেনের মধ্যে পুরু করে কার্পেট পাতা, তা হলেও তো চার-পাঁচশো লোকের জুতোর ধুলো রয়েছে এই কার্পেটে। ছেলেটা কি জুতো খুলে ফেলেছে? প্লেন তো বেশিক্ষণ ছাড়েনি। সাধারণত বাচ্চারা জুতো খুলে ফেলতে চাইলে মায়েরা বেশ আপত্তি করে, সে রকম কিছু শুনিনি।
বাচ্চাটিকে আদর করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু সাহস পাই না। আমি হাঁটু গুটিয়ে তাকে জানলার কাছে জায়গা করে দিয়ে হেসে বললুম, হ্যালো! বাচ্চাটি অবিকল সত্যজিৎ রায়ের ছবির বাচ্চাদের মতন গাঢ় চোখে আমার দিকে তাকায়, কিন্তু কোনও উত্তর দেয় না। বরং পট করে মুখে একটা আঙুল পুরে দেয়। ছি ছি ছি, সাহেব-বাচ্চার এরকম খারাপ অভ্যেস? তারপরই ছেলেটি আবার আমাদের ঠেলেঠুলে চলে যায় অন্যদিকে। বাচ্চাটি সত্যিই জুতো খুলে রেখেছে, না খালি পায়েই বিমানে উঠেছে, তা জানবার জন্য দারুণ কৌতূহল হয় আমার। উঁকিঝুঁকি দিয়েও কিন্তু তার জুতো দেখতে পেলুম না।
দু-তিন ঘণ্টার বিমান যাত্রা একরকম আর এ যাত্রা অন্যরকম। অন্তত দশ-এগারো ঘন্টা থাকতে হবে এই এক জায়গায়। সুতরাং কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবেশটা অনেকটা বৈঠকখানার মতন হয়ে গেল, অনেকেই উঠে ঘোরাঘুরি করতে লাগল এদিকে ওদিকে, কেউ-কেউ অন্যদের সঙ্গে জায়গা বদলাবদলি করল। বাথরুমগুলোর সামনে দু-তিনজন করে নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে, চোখে-মুখে উদাসীন-উদাসীন ভাব।
আমিও জায়গা ছেড়ে উঠে পড়লুম।
প্রথম থেকেই ইচ্ছে, দোতলাটা একবার দেখে আসা। দোতলা বাস দেখেছি, কিন্তু দোতলা প্লেন তো আগে দেখা হয়নি। ওখানে কি বিশেষ কেউ বসে, ডবল ভাড়া দেয়, আমি উঠতে গেলে বাধা দেবে? সবাই যখন ঘোরাঘুরি করছে, তখন মনের ভুলে একবার ওপরে ঘুরেই আসা যাক না।
ফার্স্ট ক্লাসের পাশ দিয়ে ওপরে ওঠবার সিঁড়ি। একটু-একটু গা ছমছম করছে। এখন তো আর রাজা-মহারাজা নেই, ওপরে উঠলেই একালের কোটিপতিদের দেখতে পাব। উঠে এসে একটু নিরাশ হলুম। বিমানের একতলাটি যত বড়, সেই তুলনায় দোতলাটি বেশ ছোট, সেখানে যারা বসে আছে তাদের কারুর চেহারাই কোটিপতিদের মতন নয়। অবশ্য কোটিপতি আমি কখনও দেখিনি, তাদের চেহারায় কী বিশেষত্ব থাকে তাও আমার জানা নেই, তবু একটা কিছু তো আলাদা থাকবে! এ যে সব সাধারণ চেহারা! এদের মধ্যে শাড়ি-পরা এক মহিলা এবং আরও একজন দাড়িওয়ালা ভারতীয়কেও দেখলুম। এরা কি কোটিপতি? নাঃ, তাহলে হয়তো ওপরের জায়গাগুলোর আলাদা কোনও ব্যাপার নেই, দোতলা বাসের মতন ওপরেও এক ভাড়া।
ফার্স্ট ক্লাসে যারা বসে আছে, তাদের মুখে একটা আলাদা ছাপ ঠিকই নজরে পড়ে। কারুর কারুর মুখে স্পষ্ট অহংকার, কেউ-কেউ অহংকার চাপা দিয়ে ঔদার্যের ভাব ফুটিয়ে তোলা রপ্ত করে। বড় মানুষদের একটা বৈশিষ্ট্য হল, তারা অন্যদের সামনে হাসে না। যে যত বড় মানুষ, সে তত গম্ভীর।
ফার্স্ট ক্লাসের ঠিক পরের সারিতেই পাশাপাশি তিনজন লোক বসে আছে, তিনজনের গায়েই এক রকমের ওভারকোট। অন্যরা কোট ফোট খুলে রেখেছে, কিন্তু এরা তিনজন কোটপরা অবস্থাতেই পরস্পর কী একটা আলোচনায় মগ্ন।
লোকজন স্টাডি করার আর বিশেষ অবকাশ হল না, কারণ লক্ষ করলুম খাবার দেওয়া হচ্ছে। পাছে আমারটা ফস্কে যায়, তাই তাড়াতাড়ি গিয়ে বসে পড়লুম নিজের জায়গায়।
প্লেন ছাড়বার কিছুক্ষণ পরেই একবার চা আর কেক দিয়েছে, এর মধ্যেই আবার খাবার! দূরপাল্লার বিমান যাত্রায় শুনেছি খুব ঘনঘন খাবার দেয়। তাতে খানিকটা একঘেয়েমি কাটে। দশ-বারো ঘন্টা ধরে ঠায় বসে থাকা, এর মধ্যে কাজ তো মাত্র দুটো, খাওয়া আর বাথরুমে যাওয়া। আমার অবশ্য বিমানের বাথরুমে ঢুকতে ভয় হয়, মনে হয়, ভেতরে ঢোকবার পর দরজা যদি আর না খোলে? কেউ যদি আমার চিৎকারও শুনতে না পায়?
খাবারের বহর দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। একটা গোল রুটি ও মাখন, এক গেলাস ফলের রস, বড় এক চাকা মাংস, খানিকটা ভাত, অনেকটা আলু সেদ্ধ, একবাটি স্যালাড, দুরকম সস, এক প্যাকেট চিজ আর এক কৌটো আইসক্রিম। এত খাবার কেউ একসঙ্গে খেতে পারে? খাবার নষ্ট করতেও গা কষকষ করে। এত দামি সুখাদ্য!
আমার পাশে কবিতা পাঠক দৈত্যটি খাবারের সঙ্গে ওয়াইনের অর্ডার দিয়েছিলেন। পরপর দু-বোতল ওয়াইন সমেত সে সমস্ত খাবারদাবার চেটেপুটে শেষ করল। তারপর তৃপ্তির সঙ্গে একটি সিগারেট ধরিয়ে আড়চোখে তাকাল আমার দিকে।
আমি অন্য খাবারগুলোর যতদূর সম্ভব যত্ন করলেও পাঁউরুটি-মাখন, চিজ ও আইসক্রিম ‘ইনি। কত লোক আইসক্রিম ভালোবাসে, অথচ আমাকে ওটা ফেলে দিতে হবে, আইসক্রিম আমার জিভে ঠেকাতেই ইচ্ছে করে না কক্ষনো। এত ঘোরাঘুরির পরও মাঝে-মাঝে সব কিছুই আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগে। সত্যি কি পঁয়তিরিশ হাজার ফিট উঁচুতে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে একটা জেট বিমানের পেটের মধ্যে বসে আছি? সেই আমি, যে কি না এইমাত্র কয়েক বছর আগেও কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতুম, যদি চেনাশুনো কারুর সঙ্গে দেখা হয় তা হলে ভেতরে ঢুকে এক কাপ কফি খাওয়াতে বলব তাকে। কতদিন পকেটে ট্রাম বাস ভাড়া থাকেনি বলে হেঁটে গেছি শ্যামবাজার। সেই আমি বিলিতি আইসক্রিম ফেলে দিচ্ছি?
চিজের প্যাকেটটা না খুলেই টপ করে রেখে দিলুম কোটের পকেটে। মাখন আর আইসক্রিম তো পকেটে নেওয়া যায় না, গলে যাবে। পাশের লোকটা দেখে ফেলেছে নাকি?
ঘুমন্ত লোকটি জেগে উঠে খাবারটাবার ঠিক খেয়ে নিয়েছে। এবার সে আমাদের উদ্দেশ করে বলল, ইট ওয়াজ ড্যাম হট ইন প্যারিস। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, নিউ ইয়র্কও গরম হবে এই সময়।
দৈত্যটি বলল, গরমতর।
পাক্কা সাহেবেরা প্রথম আবহাওয়া সমাচার দিয়ে আলাপ শুরু করল। তারপর তাদের কথাবার্তা চলল এই প্রকার :
–গত মাসে আমি টরেনটোতে ছিলুম, বড্ড গরমে কষ্ট পেয়েছি।
–আসল গরম হচ্ছে ওয়াশিংটন ডি সি-তে। প্যাঁচপেচে ঘাম।
–আমি তো এ সময় ওয়াশিংটন ডি সি-তে যাই না। তবে জেনিভায় বেশ মনোরম আবহাওয়া।
–তা ঠিক।
–আমি টরেনটোতে মাত্র দুদিন থাকব, তারপরই ফিরে আসছি জেনিভায়। সেখানেই থাকব কিছুদিন। অবশ্য মাঝখানে একবার জাপান ঘুরে আসতে হবে।
–তোমার কি জেনিভাতেই অবস্থিতি?
–হ্যাঁ। সেখানে আমার শাখা অফিস। বাকি সময়টা আমায় মনট্রিয়েলে থাকতে হয়।
–আমিও মনট্রিয়েলেই যাচ্ছি।
–সেখানে তুমি…
–না, সেখানে আমার অফিস নয়, এমনিই।
এক মাসের মধ্যেই ওদের একজন টরেন্টো-জেনিভা-জাপান ঘোরাঘুরি করবে, যেন ব্যাপারটা কিছুই না। এই সব লোকের পক্ষেই তো বিমানে উঠেই সঙ্গে-সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া স্বাভাবিক।
এ সব কথাবার্তার চেয়ে উঠে পড়া ভালো। এক চক্কর ঘুরে আসা যাক আবার। মনে করা যেতে পারে, আমি মহাসমুদ্রের ওপর দিয়ে হাঁটছি।
বাথরুমের কাছের ফাঁকা জায়গাটায় সেই গেরুয়া শেমিজ-পরা শ্বেতাঙ্গিনীটি একজন সাফারি সুট পরা ভারতীয় যুবকের সঙ্গে হাত-পা নেড়ে অনেক কথা বলছে। সিগারেট টানার ছলে আমি একটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালুম এবং আবিষ্কার করলুম যে মেয়েটির পায়েও জু তো নেই। যুবকটির মুখ ভরতি কালো দাড়ি, সে বেশ সাবলীলভাবে কথা বলে যাচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে।
দু-একটা কথাতেই বোঝা গেল ব্যাপারটা। আচার্য রজনীশকে ভারত থেকে উৎখাত করায় মেয়েটি খুবই ক্ষুব্ধ। সে বলছে, এই কি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের স্বরূপ? সেখানে যেকোনও মানুষের ধর্মচর্চার অধিকার আছে, তাহলে আচার্য রজনীশের কী দোষ? ভারতীয় যুবকটি বলল, ধর্ম কাকে বলে? আমাদের প্রাচীন শাস্ত্রে আছে .
শ্বেতাঙ্গিনী বললে, তোমাদের দেশে তন্ত্রচর্চা হয়নি? আচার্যও তো এক রকম তন্ত্র সাধনাই করছিলেন…
–শোনো, গুরু হতে গেলে যোগসাধনায় যে ঊর্ধ্বমার্গে উঠতে হয়…
–কী করে তুমি জানলে যে ভগবান রজনীশ সেই উধ্বমার্গে ওঠেননি? আমি পাঁচ বছর পুণায় ওই আশ্রমে ছিলুম।
এই সব ধর্মটর্ম আমার মাথা গুলিয়ে দেয়। এ আলোচনাও আমায় আকৃষ্ট করল না। শুধু একটা খটকা রয়ে গেল। মেয়েটি পাঁচ বছর ধরে পুণার আশ্রমে থাকার পর মনের দুঃখে ভারত ছেড়ে ফিরে যাচ্ছে। তাহলে ওই চার বছরের শিশুটি জন্মাল কী করে? ও কি প্রকৃতির দান?
অন্য প্রান্তে হেঁটে গিয়ে সেই ছোট ছেলেটিকে আবার দেখতে পেলুম। সে একজন যাত্রীর ওয়াইনের বোতল উলটে দিয়েছে, বিমান-সখীরা তাই নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, যাত্রীটি কিন্তু বাচ্চাটাকে কোলে বসিয়ে আদর করছে।
হঠাৎ মনে হল, এই সময় একটা হাইজ্যাকিং হলে মন্দ হত না। একঘেয়েমির বদলে বেশ একখানা নাটক দেখা যেত। প্রত্যেক মাসে দুটো-তিনটে হাইজ্যাকিং-এর কথা কাগজে পড়ি, এই প্লেনে সে রকম হতে দোষ কী? প্লেনখানা ত্রিপোলি কিংবা হাভানায় ঘুরিয়ে নিয়ে যাবে, বেশ একখানা জমজমাট মজা হবে। সর্বক্ষণ পিস্তল আর হাতবোমা নিয়ে শাসাবে দু-তিনটে ছোঁকরা, তার মধ্যে একটি মেয়ে থাকলে তো কথাই নেই। পরে আমি রয়টারের প্রতিনিধির কাছে রসিয়ে রসিয়ে বলব আমার রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা।
ওই যে একই রকম ওভারকোট-পরা তিনজন, এখনও ফিশফিশ করে কথা বলে যাচ্ছে, ওরা হাইজ্যাকার হতে পারে না? ওভারকোট খোলেনি কেন? ওরা কি আরব? প্যালেস্টাইনের বিপ্লবী? তিনজনই বেশ শক্ত সমর্থ যুবা পুরুষ। হাইজ্যাকার হওয়ার সমস্ত যোগ্যতাই ওদের আছে। হয়তো ওদের আরও দু-চারজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অন্য জায়গায়।
ঠিক এই সময় ওভারকোটের মধ্যে একজন উঠে দাঁড়াতেই আমার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।
এইবার কি সত্যি শুরু হবে সেই নাটক? ছেলেটি দৃঢ় পা ফেলে-ফেলে ককপিটের দিকেই যাচ্ছে না? এবার পাইলটের ঘাড়ের কাছে রিভলভার উঁচিয়ে ধরবে?
ইচ্ছে হল, লোকটির পেছনে-পেছনে যাই। অন্য দুই ওভারকোটের দিকে তাকালুম। তাদের মুখ পাথরের মতন স্থির। ওদের ওভারকোটের আড়ালে কী, বোমা না মেশিনগান?
হঠাৎ প্লেনের ভেতরের সব আলো নিভে গেল। এমনই চমকে গেলুম যে ঢাকঢোল বাজতে লাগল বুকের মধ্যে। তাহলে তো আর কোনও সন্দেহই নেই। এত প্লেনে চড়েছি আগে, কোনওদিন তো এক সঙ্গে সব আলো নিভে যেতে দেখিনি?
টুংটাং শব্দের পর মাইক্রোফোনে ভেসে উঠলো একটি ঘোষণা :
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ আপনারা দয়া করে যে-যার নিজের আসনে বসুন। অনুগ্রহ করে জানলার শেডগুলো টেনে দিন যাতে বাইরের আলো না আসে। আপনাদের এক্ষুনি একটা ফিল্ম দেখানো হবে। সুপারম্যান টু। দূর ছাই। আশা করেছিলুম জলজ্যান্ত নাটক, তার বদলে সিনেমা।