প্যারিসে দেখা হল পরিতোষের সঙ্গে, বিলেতে বিমান, আর ভবশংকর আর নন্দিতা, জার্মানিতে হৃষীকেশ, আমেরিকায় অসিত আর কৃষ্ণেন্দু আর আরতি মুখার্জি–ওরা আর ফিরে আসবে না! ওদের কারুকে আগে চিনতাম, অনেকের সঙ্গে প্রবাসে আলাপ হল, আরও তো বাঙালি বা ভারতীয়ের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় বিদেশে–অনেকেরই মুখ ভুলে যাই কয়েকদিন পর। কিন্তু দেখা হওয়ার পর কয়েকটি কথার শেষেই যারা বলেছে, আমরা আর দেশে ফিরে যাব না, এখানেই আছি, তাদের মুখ কিছুতেই ভুলতে পারি না, ইচ্ছে হয় একটা অ্যালবামে ওদের খুশির মুখোশ পরা চাপা বিষণ্ণ মুখগুলি জমিয়ে রাখি।
ভবশংকরদাকে চিনতাম খুব ছেলেবেলায়, ফুটবলের মাঠ থেকে রোজ সন্ধেবেলা জলকাদা মেখে ফিরতেন, সেই মূর্তিটাই মনে আছে। আমাদের বাড়ির রকে বসে আমার মাকে বলতেন, ছোট মাসিমা, চা-তো তৈরি করেছেন জানিই, একটু আদা দিয়ে তৈরি করবেন? সেই ভবশংকর হঠাৎ কী করে যেন বিলেতে চলে যান, তেমন লেখাপড়া শেখেননি, অথচ কী করে যে বিলেতে গিয়ে পৌঁছলেন, কোনওদিন আমরা জানতে পারিনি। সোহো-র একটা হোটেলে খাওয়ার পর বিল দিতে গেছি হঠাৎ বেয়ারাটি বলল, পয়সা দিতে হবে না। অবাক হয়ে মুখ তুলে তাকালুম, একটু চেনা চেনা লাগল, বেয়ারাটি বলল, কোথায় উঠেছিস? সন্ধের পর দেখা করতে পারবি? ভবশংকরদা!
একটা বাড়ির পাশাপাশি দুটো ঘরে ভবশংকরদা আর হাসান সাহেব থাকেন। দুজনেই এসেছেন পূর্ববঙ্গের একই গ্রাম থেকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে। দুজনের গভীর বন্ধুত্ব। কেউই আর ফিরে যাবেন না। ভবশংকরদা আমাকে হাজার প্রশ্ন করলেন, অন্তত পঞ্চাশ জনের খবর নিলেন। কারুর কথা ভোলেননি, প্রত্যেকটি খুঁটিনাটির প্রতি মমতা, আমাদের বাড়িতে বছর দশেক আগে একটা কুকুর ছিল, সেটার কথা আমাদেরই মনে নেই–অথচ সেটার মারা যাওয়ার খবর শুনে ভবশংকরদা যেন মুষড়ে পড়লেন।
জিগ্যেস করলাম, ভবশংকরদা, এই চোদ্দো-পনেরো বছরে তো আপনার এখানে মন বসেনি বুঝতে পারছি। ফিরে যাবেন না?
–না রে!
–কেন?
কী করব ফিরে গিয়ে? মুখ্য-সুখ্য মানুষ। বামুনের ছেলে হয়ে সাহেবের দেশে তবু বেয়ারার চাকরি করা যায়, কিন্তু নিজের দেশে পারব না। বেশ আছি এখানে।
আরতি মুখার্জি ছিল আমেরিকার একটি ছোট শহরে ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যমণি। প্রায় সত্তর আশি জন ভারতীয়দের মধ্যে ওই একজনই ছিল কুমারী মেয়ে এবং সুন্দরী। কে একটু ওর সঙ্গে কথা বলবে, বেড়াতে বা সিনেমায় যাবে, এই নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত। হঠাৎ একদিন সন্ধেবেলা টেলিফোন পেলাম। শুনুন, কেমন আছেন, আমি আরতি, আমি, মানে…আমি কাল, ইয়ে..ইস…দেখুন কীরকম লজ্জা পাচ্ছি, আমি না পরশুদিন বিয়ে করেছি।
–বিয়ে করা হয়ে গেছে?
হ্যাঁ! করে ফেললাম আর কি, আপনি তো দুদিন ছিলেন না এখানে, তাই খবর শোনেননি অন্য ছেলেরা এমন সব বিচ্ছিরি আলোচনা করছে!
–সৌভাগ্যবানটি কে?
–হ্যারলড। হ্যারলড ক্লার্ক!
–বাঃ! ও তো খুব ভালো ছেলে। শুনে খুব খুশি হলাম।
–কাল আমার বাড়িতে একটা ছোট্ট পার্টির আয়োজন করেছি। বেশি লোককে বলিনি, খুব ঘরোয়া, আপনি আসবেন কিন্তু।
–হায়, হায়, এ খবরে কত ছেলের যে বুক ভেঙে যাবে!
–আপনার যে যাবে না, সেটা ঠিক জানি। আপনি তো আমাকে গ্রাহ্যই করলেন না কখনও।
–আহা-হা! তুমি এরকম ভাব, এ কথা যদি আগে জানতাম!
এরপর দুজনের হাসি। টেলিফোন রেখে দিলাম।
আরতি মেয়েটি ছোটখাটো ফুরফুরে, ইংরেজিতে ছাড়া কথা বলে না। কিন্তু আমি ওকে খুকি বলে ডাকতাম। যার সঙ্গে বিয়ে হল সেই হ্যারলড ক্লার্ক চমৎকার সপ্রতিভ ছেলে, সুন্দর স্বাস্থ্য ওর। বাবা আমেরিকান, মা ক্যানেডিয়ান। ওর সঙ্গে আরতিকে খুব সুন্দর মানিয়েছে। পার্টিতে কিছুক্ষণ গল্পগুজবের পর আরতিকে একা জিজ্ঞেস করলাম বাংলায় হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করলে? আর একটু ভাবা উচিত ছিল না?
–কিন্তু আমার যে ভিসা ফুরিয়ে এসেছে। তিন বছরের জায়গায় সাড়ে চার বছর টেনেটুনে করেছি। এবার তাড়িয়ে দিত। কিন্তু আমি যেতে চাই না। আমি ফিরতে চাই না। আমি এদেশেই থাকতে চাই। এখন আমাকে ভিসা না দিয়ে দেখুক তো!
–কিন্তু ফিরতে চাও না কেন?
–উপদেশ টুপদেশ দেবনে না বলছি! চাই না তো চাই না। দেখুন আমি দেশে থাকতে বরাবর ইংরেজি ইস্কুলে পড়েছি। বাড়িতে ছিল বিষম সাহেবি আদবকায়দা। বাবা-মা চাইতেন যে, আমরা সাহেব মেমের মতো থাকি। বাড়িতে যখন এরকম শিক্ষাই পেয়েছি তখন সত্যিকারে সাহেবদের দেশেই যে আমার ভালো লাগবে তাতে আর আশ্চর্য কী! মিথ্যেমিথ্যি এখন আর ভারতীয়ত্ব দেখিয়ে লাভ কী? তা ছাড়া, আমি হ্যারলড ক্লার্ককে ভালোবাসি।
আহা, ভালোবাসা-টালবাসার কথা থাক। বললে ওটাই প্রথমে বলা উচিত ছিল। কিন্তু তুমি বড়লোকের মেয়ে। দেশে থাকলে তোমার নির্ঘাৎ কোনও ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হত, এখানে শেষ পর্যন্ত বিয়ে হল ক্লার্কের সঙ্গে।
কৃষ্ণেন্দু আমার ছেলেবেলার বন্ধু। একসঙ্গে কলেজে পড়েছিলাম। সাত বছর ধরে আমেরিকায়, ফেরার নামটি নেই! বিষম লাজুক, গোবেচারা ধরনের ছেলে ছিল, ধুতি ছাড়া প্যান্টালুন পরত না কোনদিন, এতদিন বিদেশে কী করছে কে জানে। ওর ছোট বোন আমাকে চিঠি লিখে জানাল দাদার একটু খোঁজ করুন। মাসে মাসে শুধু টাকা পাঠায় বাবার নামে, কিন্তু চিঠি লেখে না। ওকে আপনি একটু বুঝিয়ে বলুন।
আমেরিকায় তিন বছর থাকার পর দু-বছর গিয়ে কানাডায় ছিল, তারপর আমেরিকায় আবার ফিরে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করছে কৃষ্ণেন্দু, শুনলাম। কিন্তু ও থাকে আমার চেয়ে দেড় হাজার মাইল দূরে, দেখা করা সহজ নয়, সুতরাং আমি একটা চিঠি লিখলাম ওর নামে।
হঠাৎ একদিন মাঝরাত্রে টেলিফোন। লং ডিসটেন্স কল। কৃষ্ণেন্দুর গলা। ‘এই শূয়ার, তিনবার টেলিফোন করে তোকে পাইনি! চার মাস হল এখানে এসেছিস আর এখনও আমার সঙ্গে দেখা করলি না? তুই আসবি, না আমি যাব?কালই চলে আয়!’
কী স্মার্ট, তীক্ষ্ণ গলার আওয়াজ হয়ে গেছে কৃষ্ণেন্দুর। যে ছিল মার্কামারা ক্লাসে-ফার্স্ট হওয়া লাজুক ভালো ছেলে। কত বদলে গেছে। বললুম, দাঁড়া, দাঁড়া অতদূরে চট করে যাওয়া সহজ! পয়সা কোথায়? ক্রিসমাসের সময় নিউ ইয়র্কে যাব, ওখান থেকে তোর বাড়িতে।
–তাহলে কখন বাড়ি থাকিস বল? প্রায়ই তোকে টেলিফোন করব।
–সে কী রে! ঘন-ঘন লং ডিসটেন্স কল? তোর পয়সা খুব বেশি হয়ে গেছে বুঝি? বরং চিঠি লিখিস।
–গুলি মারো পয়সা! ডলারের নিয়মই হচ্ছে, যেমন পাবে তেমনি ওড়াবে! ওসব চিঠিফিটি লেখা আমার দ্বারা হয় না। তাওতো তোকে আবার লিখতে হবে বাংলায়! ঝঞ্ঝাট!
এখনও গোপনে বিয়ে করেনি, একাই থাকে, তবু কৃষ্ণেন্দু তিনখানা ঘরের বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে আছে। রেকর্ড প্লেয়ার, টেপ-রেকর্ডার, রেডিওগ্রাম, গোটাতিনেক ক্যামেরা, সিনেমা প্রোজেকটার–ইত্যাদি। বিচ্ছিরি জিনিসে ঘর ভরতি। দরজার সামনে ঝকঝকে মোটর গাড়ি। ওয়ার্ডরোবে আধশো শৌখিন পোশাক। নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের ছাত্র ছিল, কী যেন একটা গবেষণা ধরনের কাজ করে প্রচুর টাকা পায় শুনলাম। আমাকে দেখে কৃষ্ণেন্দু হইহই করে উঠল। প্রাথমিক উচ্ছাসের পর বলল, দ্যাখ, তুই এসেছিস এখন তিন চারদিন খুব হুল্লোড় করব, খাব-দাব ফুর্তি করব, আমার গাড়িতে তোকে নায়েগ্রা ফলস দেখিয়ে আনছি চল–কানাডার ওপাশ দিয়ে, কিন্তু খরবদার বলে দিচ্ছি আমার দেশে ফিরে যাওয়ার কথা তুলে প্যান প্যান করবি না!
বললুম, যা যা বয়ে গেছে আমার। ভারতবর্ষের ওই জনসংখ্যা, তোর মতো কিছু কিছু কমে গেলেই তো বাঁচি!
কিন্তু ফিরে যাওয়ার প্রসঙ্গ কৃষ্ণেন্দু নিজেই তুললে। জানিস, গাড়ি চালানো আমার এমন নেশা হয়ে গেছে! যখন কোনও কাজ থাকে না, গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শ’খানেক মাইল এমনিই ঘুরে আসি। এটা আমার সাত নম্বর গাড়ি। গরিবের ছেলে, কোনওদিন গাড়িতে চড়ার স্বপ্নই দেখিনি, এখন ইচ্ছেমতো গাড়ি কিনছি। গত ফলে (শরৎকালে) গাড়ি চালিয়ে আরিজোনা গিয়েছিলাম। আড়াই হাজার মাইল, ভেবে দ্যাখ! কী চমৎকার ছিল সেই গাড়িটা, সাদা রং ঝকঝকে নতুনের মতো, ঠিক যেন রাজহাঁস। কিন্তু কী হল জানিস গাড়িটার সব ভালো, কিন্তু মাঝে-মাঝে কোথায় যেন ক্রিক-ক্রিক করে শব্দ হতে লাগল। কোথা থেকে শব্দটা বেরুচ্ছে কিছুতেই বুঝতে পারি না, সব খুলে দেখলাম কোনও ত্রুটি নেই, অথচ আমি শুনতে পাই। গাড়ি চলবে বেড়ালের মতো, কোনও শব্দ হবে না–আশি মাইল স্পিডে চললেও। কিন্তু আমার গাড়িটা –অন্য লোক চড়ে কিছু শুনতে পায়নি, অনেককে জিগ্যেস করেছি, কিন্তু আমি একা ঠিক শুনতে পেতাম ক্রিক, ক্রিক, ক্রিক। শেষে কী করলাম জানিস? জলের দামে অমন সুন্দর গাড়িটা বেচে দিলাম। এ গাড়িটা দেখবি–নিজের মুখে কী বলব–
আমি চুপ করে শুনছিলাম। কৃষ্ণেন্দু আপন মনেই বলল, ফেরার সময় অবশ্য একটা গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু কেনই বা ফিরব?
–সত্যিই তো, কেনই বা ফিরবি?
–বেশ করব ফিরব না। কী আছে তোদের দেশে? গাড়ি নিয়েও কি মেনটেন করা সহজ। যা তা সব রাস্তা! আর গেলেও তো খেতে পাব না। যাদবপুর ইউনিভারসিটিতে পড়াতুম, চারশো কুড়ি টাকা মাইনে পেতুম, ফোর টুয়েন্টি! হাঃ হা, ওই জন্য আবার ফিরে যাওয়া! নাকে খত দিচ্ছি!
–কে তোকে ফেরার জন্য মাথার দিব্যি দিচ্ছে রে!
–জানি কেউ দিচ্ছে না! কেনই বা দেবে! আগে দেশে থাকতে সংসারে দিতুম তিনশো টাকা, এখন দু-হাজার টাকা প্রত্যেক মাসে পাঠাই। আরও বেশি পাঠাতে পারি কিন্তু লোভ বেড়ে যাবে বলে, চেপে রেখেছি খানিকটা। বাড়িতে এখন আর আমার ফেরার কথা ভুলেও লেখে না! কেন লিখবে, জানে তো–ফিরে গেলে বড়জোর সাত-আটশো টাকার মাইনের চাকরি হবে আমার সংসারে এখন যত বাবুয়ানি চলেছে–সব ঘুচে যাবে? কেউ লেখে না। খালি লেখে আমার শরীর ভালো আছে কি না। অর্থাৎ আমি অসুখে পড়লে টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যাবে যে!
–ওরকম বাজে কথা বলিস না। তোর মায়ের কাছে নিশ্চয়ই টাকার চেয়ে তোর দাম বেশি।
–আমি মাকে ভুলিনি। কিন্তু মায়ের আরও ছেলেমেয়ে আছে। মা তাদের মানুষ করে সুখে থাকুন। আর সত্যিই বল, টাকার কথা ছেড়েই দিলাম। দেশে ফিরলে আমাদের লাইনে রিসার্চ করার সুযোগ আছে? না আছে যন্ত্রপাতি, না আছে কোনও আধুনিক ধারণা–
–বাজে কথা বলছিস এবার! তোর আবার রিসার্চ কী রে? তোকে জানি–তুই মুখস্থ করা ভালো ছেলে, মেধাবী; কিন্তু বিজ্ঞান পড়েছিস বলেই কি তুই বৈজ্ঞানিক? তুই নেহাত একটা টেকনিসিয়ান। তোর কি সত্যিই নতুন কিছু আবিষ্কার করার ইচ্ছে আছে? না সে জিনিসই তোদের মধ্যে নেই আমি জানি, ওসব রিসার্চের নামে বড়-বড় কথা বলিস না। টাকা পাচ্ছিস, টাকার নেশা ধরেছে, থেকে যা।
–আচ্ছা, টাকাও কি কম কথা। আমি মহাপুরুষ নই যে টাকার আসক্তি থেকে মুক্ত হতে পারব। প্রতি মাসে ডলার পাঠাচ্ছি, ভারত সরকারের ফরেন এক্সচেঞ্জ লাভ হচ্ছে। টাকার জন্য এই সুখস্বাচ্ছন্দ্য, মজা উল্লাস পাচ্ছি–আমি এই নিয়েই থাকব। যখন যেখানে খুশি বেড়াতে যাব। এখানেই একটা মেয়েকে বিয়ে করে সংসার পাতব, ইচ্ছে হলে। এইতেই আমার সুখ।
–সুখ? কৃষ্ণেন্দু তুই এখানে থেকে যাতে চিরকাল সুখে থাকতে পারিস–আমি মনেপ্রাণে তাই কামনা করব।
এরপর শর্ত করেই আর আমরা দেশে ফেরার কথা আলোচনা করব না ঠিক করলাম। আমারও ইচ্ছে নেই। নিজের জীবনের গতি ঠিক করার জন্য প্রত্যেক মানুষেরই স্বাধীনতা আছে। কয়েকটা দিন আমরা প্রচুর খাওয়াদাওয়া, ফিলম দেখা, গাড়িতে চড়ে পাগলের মতো ঘোরাঘুরি করলাম। একদিন রাত্রে খাওয়া শেষ করে আমরা দুজনে তাস খেতে বসেছি। বাইরে অবিশ্রান্ত বরফ পড়ছে। বরফ পড়ার সময় দূরের কোনও শব্দ শোনা যায় না, চারদিক অস্বাভাবিক নিঃশব্দ। আমরাও দুজনে অনেকক্ষণ কোনও কথা বলিনি। হঠাৎ কৃষ্ণেন্দু জিগ্যেস করল, হ্যাঁ রে, ঠনঠনেতে এখনও বৃষ্টির দিনে জল জমে? আমি গম্ভীরভাবে এক শব্দে উত্তর দিলাম, জমে।
–ভাস্করদের বাড়িতে এখনও তোদের নিয়মিত আড্ডা হয়?
–হয়।
–জানিস, আর দু-একদিন পরে সরস্বতী পজো। কলকাতায় এই সময় সব মেয়েরা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে ঘুরবে না?
–হুঁ।
–যাঃ, আর তাস খেলতে ইচ্ছে করছে না। কৃষ্ণেন্দু হাতের তাসগুলো ফেলে দিয়ে উঠে গিয়ে জানলার কাছে দাঁড়াল। তারপর বরফ পড়া দেখতে লাগল একদৃষ্টে। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। হঠাৎ আমার মনে হল এখন আর আমার এ ঘরে থাকা ঠিক নয়। ওকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দেওয়াই বুঝি উচিত। আমি কৃষ্ণেন্দুকে কিছু না বলে নিঃশব্দে পাশের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।