[সোর্স না জানা অজানা গল্প]

১০. টরেন্টোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

টরেন্টোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঘরোয়া বিমান বন্দরে হুড়োহুড়ি করে যেতে হবে, সুটকেসটা তুলতে গেছি, এমন সময় একজন লোক পাশে এসে সেটির দিকে হাত বাড়াল। চেহারা দেখলেই চেনা যায়।

কুলি না বলে পোর্টার বলাই উচিত। কুলি শুনলেই মনে হয় যারা মাথায় করে মালপত্র বয়ে নিয়ে যায়। আর পোর্টার মানে স্মার্ট পোশাক পরা, ছোট ঠেলা গাড়ি নিয়ে ঘোরে। আমার সুটকেসটা যে কারুর বয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার তা-ও নয়, এতদিন তো নিজেই বয়েছি। তা ছাড়া ইওরোপের নানান বিমান বন্দরে অনেক ছোট-ছোট হাতে ঠেলা গাড়ি ছড়ানো থাকে, যেকোনও একটা টেনে এনে নিজের মালপত্র নিজেই যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়। দিল্লি ছাড়বার পর কুলি বা পোর্টার দেখিনি এ পর্যন্ত। বহু ঘন্টা বিমান যাত্রার পর মাথা ভোঁর্ভে করে, সম্পূর্ণ নতুন দেশে একটু হকচকিয়েও যেতে হয়। ভাবলুম এদেশে বুঝি এরকমই নিয়ম, তাই লোকটিকে সুটকেস নিতে দিলুম।

তারপর কাস্টমস ইত্যাদির ফর্মালিটি মেটাবার পর পরবর্তী বিমানের অপেক্ষা স্থলে এসে পৌঁছুতেই সেই লোকটি এসে আমার হাতে লাগেজ ট্যাগ গুঁজে দিল। অর্থাৎ আমার সুটকেস আবার যাত্রার জন্য তৈরি হয়েছে।

ভালো কথা। এবার?

লোকটি লম্বা-চওড়া, কুচকুচে কালো। গম্ভীরভাবে বাঁ-হাতের তালুটা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে।

একটা কিছু রেট থাকা উচিত, কিন্তু কোথাও তা লেখা নেই। কিংবা, পয়সা নেবার নিয়ম আছে কি না কে জানে, লোকটির ভাবভঙ্গি একটু গোপন-গোপন। যেন প্রকাশ্যে পয়সা চাইতে সে লজ্জা পাচ্ছে।

পকেটে হাত দিয়েই আমি প্রমাদ গুণলুম! যাঃ টাকা বদলানো তো হয়নি! এক-একটা দেশে যাওয়া মানেই নতুন করে টাকা পয়সার হিসেব রাখা। তা ছাড়া প্রত্যেক দেশের আলাদা-আলাদা সিকি আধুলি সহজে চেনাও যায় না। আমেরিকান ডলার আর কেনেডিয়ান ডলারের চেহারা প্রায় এক রকম হলেও মূল্য আলাদা। আমেরিকান ডলার আমাদের ন-টাকা, আর কেনেডিয়ান ডলার পৌনে আট টাকার মতন।

আমার পকেটে রয়েছে ফ্রেঞ্চ ফ্র্যাংক। সেই এক ফ্রাংকের দাম আবার দু-টাকার কাছাকাছি। সেই হিসেবে কত টাকা একে দেওয়া যায়? আমাদের দেশে দু-টাকা দিলেই চলে, সাহেবদের দেশেদশ টাকা দিলে হবে না।

একটা পাঁচ ফ্র্যাঙ্কের নোট বার করতেই পোর্টার বলল, নো, নো, নো, ডলার, ডলার!

আমি তাকে কাঁচুমাচুভাবে বললুম, ক্ষমা করবেন, আমার টাকা বদলানো হয়নি। এখন আর সময়ও নেই। আপনি দয়া করে এটাই নিন, আপনি তো এয়ারপোর্টের কাউন্টার থেকে যেকোনও সময়ই বদলে নিতে পারেন।

লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল, তোমার কাছে সত্যিই ডলার নেই?

আমি বললুম, সত্যি।

এবার সে জিগ্যেস করল, এটা কত?

এই রে, আবার জটিল অঙ্কের হিসেবের মধ্যে ফেললে। পাঁচ ফ্রাঙ্কে তো এক কেনেডিয়ান ডলারের কাছাকাছিই হবে। সেটা তো আমার চেয়ে এদেরই ভালো করে জানবার কথা। কানাডার এক অংশে প্রচুর ফরাসির বাস, তারা আন্দোলন করে নিজেদের দাবি আদায় করে নিয়েছে। ফরাসি এখন কানাডায় অন্যতম রাষ্ট্রভাষা, সব জায়গায় ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি লেখা থাকে। সুতরাং খোদ ফরাসি দেশের টাকার হিসেব এরা জানে না?

বললুম, এক ডলার!

লোকটি এমন একটা চোখ করে তাকাল যেন আমার মতন বে-আপ সে জন্মে দেখেনি। মাত্র এক ডলার দেওয়ার অসম্ভব প্রস্তাব করছি তাকে?

ঝটিতি আর একখানা পাঁচ ফ্র্যাঙ্কের নোট বার করে লজ্জা-লজ্জা মুখে দিলুম তার হাতে। সাহেব কুলিকে অপমান করে ফেলছিলুম আর একটু হলে। হোক না গায়ের রং আমার চেয়েও কালো, তবু তো ইংরিজি বলে!

লোকটি তখনও হাত বাড়িয়েই আছে। মুখখানা অপ্রসন্ন।

এবার আমার পকেট থেকে বেরুল একটাদশ ফ্র্যাঙ্কের নোট। পাঁচ ফ্র্যাঙ্ক আর নেই। এত বড় নোটটা দিয়ে দেব? উপায় কী!

এবারে লোকটি নোটগুলি ভাঁজ করতে লাগল। আমি খুব চাপা ব্যাঙ্গের সুরে জিগ্যেস করলুম, ঠিক আছে? এবারে ঠিক আছে তো?

লোকটি একটি ধন্যবাদ পর্যন্ত দিল না। চলে গেল।

আমার তখন গা কচকচ করছে। প্রায় চল্লিশটা টাকা চলে গেল কুলি খরচ? অথচ সুটকেসটা আমি নিজেই বইতে পারতুম। লোকটি বোধহয় আমার জন্য ঠিক পাঁচ মিনিট সময় খরচ করেছে।

নতুন দেশে এলে এরকম একটা না একটা বোকামি হয়েই যায়। কালো পোর্টারটি আমায় ঠকিয়েছে। ফরসা, রাঙা কোনও পোর্টার হলে কি এমনিভাবে আমার কাছ থেকে বেশি নিত?

ফ্লাইট নাম্বার দেখে গেটের দিকে এগোচ্ছি, সেই সময় সেই পোর্টারটি আবার স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমার কাছে এসে বলল, তোমার ফ্লাইট দু-ঘণ্টা বাদে ছাড়বে।

যাচ্চলে! তা হলে তো ধীরেসুস্থে সুটকেস আনা যেত, টাকা বদলে নেওয়া যেত, শুধু-শুধু চল্লিশটা টাকা গচ্চা যেত না!

ইচ্ছে হল, লোকটিকে দু-একটা কড়া কথা শোনাই। কিন্তু সাহস নেই। লোকটির চোখেমুখে একটা রাগ-রাগ ভাব, যেন আমার মাথায় আরও কিছু কাঁঠাল ভাঙার মতলবে আছে।

সে বলল, অনেক সময় আছে, তুমি ইচ্ছে করলে এখন টাকা বদলে নিয়ে আসতে পারো।

আমি বললুম, দরকার নেই।

লোকটিকে এড়াবার জন্য চলে গেলুম টেলিফোন বুথের দিকে।

পয়সা না থাকলেও টেলিফোন করার কোনও অসুবিধে নেই। আহা, এসব দেশের টেলিফোন দেখলে নিজের দেশের টেলিফোনের জন্য বড্ড মায়া হয়। আমাদের দেশের টেলিফোন যেন অবোধ শিশু, ভালো করে কথা বলতেই শেখেনি এখনও। কিংবা কখনও-কখনও টেলিফোনকে মনে হয়, কানা-খোঁড়া-বোবা। আমাদের তুলনায় এদের টেলিফোন যেন আগামী শতাব্দীর

প্রথম কথা, ডায়াল করার ব্যাপারটাই উঠে গেছে। দেওয়ালে দেওয়ালে ঝোলানো থাকে শুধু রিসিভারটা, তার গায়েই আছে এক-দুই লেখা বোতাম। সেগুলো টিপলেই পিপি শব্দ হয়, আর সঙ্গে-সঙ্গে কানেকশান হয়ে যায়। ঠিক যেন একটা খেলনা। অথচ সেই খেলনার বোতাম টিপেই তক্ষুনি-তক্ষুনি দেশের যেকোনো জায়গায় তো বটেই, প্যারিস-লণ্ডন, জাপান-হংকং-সিঙ্গাপুর পর্যন্ত কানেকশন পাওয়া যায়, কোনও অপারেটরের সাহায্য ছাড়াই। একমাত্র ভারতবর্ষের সঙ্গে এভাবে কথা বলা যায় না।

যেকোনও পাবলিক জায়গাতেই গাদাখানেক টেলিফোন ছড়ানো। পকেটে পয়সা থাক বা না থাক, এমনকী নম্বর জানা না থাকলেও যে-কোনও দূরের বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা যায়। পয়সা না থাকলে অবশ্য অপারেটরের সাহায্য নিতে হয়। অপারেটর আমার নামটা জেনে নিয়ে আমার চাওয়া নম্বরটায় রিং করে জিগ্যেস করবে, এই নামের লোকের সঙ্গে তোমরা কথা বলতে চাও? তখন সে হ্যাঁ বললেই হল। পয়সাটা অবশ্য তাকে দিতে হবে।

টেলিফোন করলুম এডমন্টনে দীপকদার বাড়িতে। মহিলা কণ্ঠ শুনে বুঝলুম, টেলিফোন ধরেছেন জয়তীদি। এই রে, জয়তীদি কি আমায় চিনতে পারবেন? গত বছর দীপকদা এসেছিলেন কলকাতায়, তখন বলেছিলেন, একবার চলে এসো না আমাদের দিকে। তোমাদের অ্যাডভেঞ্চার করতে ইচ্ছে করে না? কোথায় থাকি জানো? প্রায় আলস্কার কাছে, আমাদের বাড়ি থেকে সোজা হেঁটে গেলেই উত্তর মেরু। এক্সকারশান টিকিট সস্তায় পাওয়া যায়, চলে এসো!

সেই ভরসাতেই এসেছি, অবশ্য ইওরোপ থেকে চিঠিও দিয়েছি একটা। এখন জয়তীদি যদি আমায় চিনতে না পারেন…।

যথাসম্ভব মধুর গলা করে বললুম, জয়তীদি, আমার নাম নীললোহিত…কলকাতায় দু তিনবার দেখা হয়েছিল…মনে আছে কি?দীপকদা বাড়িতে আছেন?

জয়তীদি ঝরঝর করে হেসে বললেন, কেন চিনতে পারব না? তোমার জন্যই তো রান্না করছিলুম, হ্যাঁ, ভালো কথা, তুমি ঝাল খাও তো?আচার খাও? তুমি কোথা থেকে কথা বলছ?

টরেন্টো থেকে রাত দশটায় পৌঁছোব।

–জানি…দীপকদা বেরিয়ে গেছেন ফেরার পথে এয়ারপোর্ট থেকে তোমায় নিয়ে আসবেন।

–তাহলে দেখা হচ্ছে।

ফোন রেখে বেশ নিশ্চিন্ত মনে একটা চেয়ারে এসে বসলুম। কত সহজে ব্যাপারটা মিটে গেল। টরেন্টো থেকে এডমান্টন ঘড়ির হিসেবে আরও চার ঘন্টার পথ। এজন্য গ্রাহাম বেলকে ধন্যবাদ দিতে হয়।

সদ্য আমেরিকা-ফেরত তাপসদার একটা কথা মনে পড়ল। তিনি আফশোশ করে বলেছিলেন, ভাই কলকাতায় কি এমন কোনওদিন আসবে, যখন কেউ বাড়িতে টেলিফোন রাখতে চাইলে টেলিফোন কোম্পানিতে খবর দেওয়া মাত্র একদিনের মধ্যে টেলিফোন এসে যাবে, আর কোনওদিন খারাপ হবে না।

আমি বলেছিলুম, সামনের সেঞ্চুরিতে নিশ্চয়ই সেরকম দিন আসবে।

তাপসদা আর একটা অত্যাশ্চর্য গল্প বলেছিলেন। উনি ছিলেন আমেরিকার খুব ছোট একটা শহরে। সেখানে টেলিফোনের অফিস একটা দোকানের মতন। নানা রকম রং ও আকৃতির টেলিফোন সেখানে সাজানো থাকে, লোকে ফার্নিচার পছন্দ করবার মতন এসে টেলিফোন কিনে নিয়ে যায়। কয়েকটি মেয়ে সেই দোকানে থাকে, তারাই টেলিফোনের কানেকশানের ব্যবস্থা করে, তারাই বিল নেয়।

একবার তাপসদা বিশেষ দরকারে কলকাতায় ট্রাঙ্ককল করেছিলেন। মাসের শেষে বিল এলে দেখা গেল, তাঁকে ভুলে দুবার ট্রাঙ্ককলের চার্জ করেছে। উনি বিল নিয়ে গেলেন সেই দোকানে। অভিযোগ-বাক্যটি শেষ করবার আগেই একটি মেয়ে বলল, তুমি ওই টেলিফোনে সরাসরি অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে কথা বলো! এক কোণের টেবিলে একটি টেলিফোন রাখা আছে, যেটা তুললেই পার্শ্ববর্তী শহরের হেড অফিসের অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টের কেউ ধরবে। তাপসদা সেখানে বললেন তাঁর ব্যাপারটা। অ্যাকাউন্টসের অদৃশ্য মেয়েটি এক মিনিট মাত্র সময় নিয়ে রেকর্ড দেখে নিয়ে বলল, কিন্তু তোমার তো দুটো কল-ই হয়েছে, একটা সন্ধে সাড়ে সাতটায়, আর একটা পৌনে দশটায়। তাপসদা বললেন, না, তা ঠিক নয়। প্রথম কলটায় কলকাতার বাড়িতে রিং হয়ে গেছে, কেউ ধরেনি। দ্বিতীয়বার কথা হয়েছে। সুতরাং প্রথমবার বিল হবে কেন? মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে বলল, ও, প্রথমবার কথা হয়নি? ঠিক আছে! তুমি তোমার বিল থেকে প্রথম কলের চার্জটা বাদ দিয়ে বিল জমা দিয়ে দাও!

ব্যস, মিটে গেল সমস্যা!

তাপসদাকে বলেছিলুম, সামনের সেঞ্চুরিতে আমাদের কলকাতাতেও নির্ঘাত এসবও এরকম সহজ হয়ে যাবে।

বসে-বসে এই সব কথা ভাবছি এমন সময় সেই কালো পোর্টারটিকে আবার আমার দিকে আসতে দেখলুম। কী ব্যাপার, আবার কী চায়? একটু ভয়-ভয় করতে লাগল এবার। আমায় খুব বোকা মনে করেছে নিশ্চয়ই লোকটা! আমি তাড়াতাড়ি একটা বই খুলে মেলে ধরলুম চোখের সামনে।

লোকটি আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে লাগল। কিছু হয়তো বলতে চায়। কিন্তু ওর সঙ্গে গল্প করবার বিশেষ উৎসাহ বোধ করলুম না। বিলেত-আমেরিকা থেকে যতজন আমাদের দেশে ফিরে আসে, কারুর মুখে আজ পর্যন্ত আমরা কোনও নিগ্রো (ইংরেজিতে এখন নিগ্রো কথাটা নিষিদ্ধ হলেও বাংলায় অচল নয়। বাংলায় আমরা কোনও খারাপ অর্থে নিগ্রো কথাটা ব্যবহার করি না, বরং কালো কথাটাই বাংলায় একটু কেমন কেমন) বন্ধুর গল্প শুনিনি। অনেকে মেম বিয়ে করে আসে, কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত নিগ্রো বিয়ে করে ফিরেছে শোনা গেছে কি? অথচ কালো মেয়েদের মধ্যে সুন্দরী কম নেই। কালো লোকরা কালোদের ধার ঘেঁষে না। শুনেছি নিগ্রোরাও ভারতীয়দের তেমন পছন্দ করে না।

এ লোকটাও তো মওকা বুঝে আমার কাছ থেকে চল্লিশ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, ওর সঙ্গে আবার কথা কীসের?

মনে হচ্ছে লোকটির বিশেষ কোনও কাজ নেই, এদিকে-ওদিকে অলসভাবে ঘুরছে। বোধহয় আর কারুর সুটকেস হাতাবার মতলবে আছে। কিন্তু নতুন বিমান না এলে সে সুযোগ পাবে কেন?

বই পড়ায় ডুবে গিয়েছিলুম, হঠাৎ চমকে গেলুম। ক’টা বাজে? আমার ঘড়িতে তো এখনও ইওরোপের সময়। এখানে ফ্লাইট ছাড়ার আগে তেমন অ্যানাউন্সমেন্ট হয় না, টি ভি-তে দেখানো হয় কোন প্লেন কখন ছাড়ছে। আমার প্লেন ছেড়ে গেল নাকি?

এইরকম সময়ে দারুণ একটা আতঙ্ক এসে যায়। এই প্লেনে যদি উঠতে না পারি তা হলে টিকিট নষ্ট হয়ে যাবে কি না…দীপকদা ফিরে যাবেন এয়ারপোর্ট থেকে…আমি এখানে সারা রাত কোথায় থাকব…

পড়িমরি করে ছুটলুম গেটের দিকে। সত্যি দেরি হয়ে গেছে। প্লেনটা ছেড়ে যায়নি অবশ্য, কিন্তু শেষ দু-তিন জন লোক বোর্ডিং পাশ জমা দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। আমার বোর্ডিং পাশ পকেট থেকে বার করে হাঁপাতে হাঁপাতে দাঁড়ালুম সেখানে।

সেই সময় পিঠে একটা টোকা। মুখ ফিরিয়ে দেখি সেই কালো পোর্টারটি। দারুণ বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলুম, তার আগেই সে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড ব্যাগটা এগিয়ে দিল। আমার হ্যান্ড ব্যাগ। সর্বনাশ, অতি ব্যস্ততায় আমি ওটা ফেলে এসেছিলুম। ওর মধ্যে আমার পাসপোর্ট, টাকাপয়সা, টিকিট-ফিকিট সব!

লোকটিকে ধন্যবাদ জানাবারও অবকাশ পেলুম না, শুধু এক ঝলক হাসি কোনও রকমে ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেলুম বিমানের দিকে।