1 of 2

স্ট্রেঞ্জার – ৩৩

তেত্রিশ

এখনও মেঝেতে পড়ে আছে হ্যাঙ্ক নোভাকের বেরেটা। তবে ওটা রানার কাছ থেকে বেশ দূরে। কাছেই ধনুক। ওর পিঠে বাঁধা তৃণের ভেতর রয়েছে এক গোছা তীর। সবচেয়ে কাছের সিলিণ্ডারের দিকে ঝাঁপ দিল রানা। মেঝেতে পড়ে শরীর গড়িয়ে দেয়ার ফাঁকে তুলে নিল ধনুক। এক সেকেণ্ড আগে মেঝের যেখানে ছিল ওর মাথা, সেখানে লাগল রিচি নোভাকের গুলি। পিস্তলের বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠেছে মস্তবড় ঘর।

রানা সরে গেছে একটা সিলিণ্ডারের আড়ালে। প্রায় একই সময়ে মেঝেতে পিছলে সিলিণ্ডারের গা ফুটো করেছে রিচির নাইন এমএম বুলেট। তামার ড্রামের ভেতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে মেঝেতে ঝরঝর করে পড়ছে অ্যালকোহল।

ওই স্রোত এড়িয়ে পিস্তল হাতে রানার মুখোমুখি হতে চাইছে রিচি। দেখলেই গুলি করে ঝাঁঝরা করবে রানাকে। যদিও এরইমধ্যে পাশের সিলিণ্ডারের ওদিকে গিয়ে ধনুকের ছিলায় আরেকটা তীর জুড়ে নিয়েছে রানা। খেয়াল করেছে, মেঝে থেকে বেরেটা তুলেছে হ্যাঙ্ক। সিলিণ্ডারের বাম দিক থেকে হামলা করবে সে। এখন ডান দিক থেকে প্যাট্রিক এলেই মাঝে পড়ে খুন হবে ও।

কিন্তু আপাতত অন্য কাজে ব্যস্ত প্যাট্রিক।

‘আরেহ্, গেল তো!’ বলেই রানার ফেলে দেয়া তীরের দিকে ছুট দিয়েছে সে। ওদিকেই গড়িয়ে যাচ্ছে কড়া অ্যালকোহল। এখনও তীরের মাথায় জড়ানো স্টিল উলে জ্বলছে গনগনে আগুন!

অ্যালকোহল ওখানে পৌছুবার আগেই লাথি মেরে তীরটা সরাতে চাইল প্যাট্রিক। কিন্তু ভেজা মেঝেতে সড়াৎ করে পিছলে গেল তার পা। অ্যালকোহলের পুকুরে পড়ল সে।

মুহূর্তে জ্বলন্ত জীবন্ত মশাল হয়ে উঠল প্যাট্রিক। শোঁ-শোঁ শব্দে জ্বলছে তীব্র নীল শিখা। গপ করে গিলে নিল প্যাট্রিকের দুই পা। পরের সেকেণ্ডে আগুন ধরল শার্টে। বিকট আর্তনাদ ছেড়ে মেঝেতে হাত-পা ছুঁড়ছে যুবক।

দুই হাতে পিস্তল ধরেছে রিচি, হাঁটুর কাছে ভাঁজ হয়ে আছে পা-দুটো। রানাকে দেখামাত্র গুলি করতে উদ্যত হলো সে। সেই একই মুহূর্তে টের পেল সোজা ওর কপালের দিকে ‘বিদ্যুদ্বেগে ছুটে আসছে রানার ছোঁড়া তীর। ঝট্ করে মাথাটা সরিয়ে নিল বটে, কিন্তু পুরোপুরি জখম এড়াতে পারল না— বাম কানের লতি কেটে নিয়ে গেল তীরের ফলা।

‘উহ্!’ করে চেঁচিয়ে উঠল রিচি ব্যথা পেয়ে।

এদিকে রানাকে গুলি করতে গিয়েও নিজের দিকে আগুনের স্রোত আসছে দেখে এক লাফে পিছিয়ে গেল হ্যাঙ্ক নোভাক। পা পিছলে যাওয়ায় হাত থেকে পড়ল পিস্তল। সুযোগটা পেয়ে সামনে বেড়ে অস্ত্রটা তুলে নিয়ে আবারও সিলিণ্ডারের আড়ালে সরল রানা।

ডিসটিলারির নানাদিকে লকলক করে ছুটছে নীল অগ্নি- স্রোত। অন্য সিলিণ্ডারগুলো ফাটলে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরিত জ্বালামুখের মত আকাশে উড়াল দেবে গোটা ঘর। আর সেটা ঘটতে বাকি আছে মাত্র কয়েক সেকেণ্ড। গনগনে আগুনের ভেতর স্থির হয়ে গেছে প্যাট্রিকের পোড়া কালো লাশ। যা বোঝার বুঝে গেছে রানা, একহাতে রনের ধনুক আর অন্যহাতে হ্যাঙ্কের বেরেটা নিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটল সরু প্যাসেজের দিকে। তারই ফাঁকে পলকের জন্যে দেখল, এইমাত্র কাঁচের একটা জানালা ভেঙে উঠানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আহত হ্যাঙ্ক আর রিচি নোভাক। তাদের পিছু নেয়ার উপায় নেই রানার। যদিও বুঝে গেছে, এখন কোথায় চলেছে তারা।

প্যাসেজে রানা পৌছুতেই পেছনে বিস্ফোরিত হলো আরেকটা অ্যালকোহল ভরা সিলিণ্ডার। ভয়ঙ্কর শকওয়েভে থরথর করে কেঁপে উঠল মস্তবড় ঘর। রানার পিঠে এসে বাড়ি মারল আগুনের গরম ঝাপটা। প্রাণে বাঁচতে হলে এখন জলদি বেরোতে হবে এখান থেকে। সরু প্যাসেজ ধরে স্টোররুমের দিকে উড়ে চলল ও।

যে-কোনও সময়ে বিস্ফোরিত হবে হাজার হাজার গ্যালন অ্যালকোহল। ফলে চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে ভয়ঙ্কর আগুন। সঙ্গে সঙ্গে ধসে যাবে বিশাল এই ঘর।

স্টোররুমের গেট লক্ষ্য করে তীর বেগে ছুটছে রানা। কিন্তু হঠাৎই দেখল, প্যাসেজের মুখে নোভাকদের তিন স্যাঙাৎ। প্রথমজনের হাতে পিস্তল, দ্বিতীয়জনের হাতে বন্দুক, তৃতীয়জনের কাছে রাইফেল। ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে তাদের। কাউকে লড়াকু লোক বলে মনে হলো না রানার। স্থানীয় মজুর শ্রেণীর, বেশি টাকার লোভে যোগ দিয়েছে বেআইনি মদের কারখানায়। এখানে লড়াই করতে এসেছে, কারণ আগুনে পুড়ে মরার চেয়েও বেশি ভয় তাদের নোভাকদেরকে। তবে সংখ্যায় তারা তিনজন। কপাল ভাল হলে খুন করতে পারবে রানাকে। বিশেষ করে অত্যন্ত বিপজ্জনক ওই বন্দুকওয়ালা। তাকে লক্ষ্যভেদ করতে হবে না, ট্রিগার টিপে দিলেই হলো।

বিপদ বুঝে দৌড়ের ওপরে গুলি করল রানা। ধুপ করে মেঝেতে পড়ল বন্দুকধারী। ভীষণ ভয় পেয়েছে রাইফেলওয়ালা, অস্ত্রটা হাত থেকে ফেলে ঘুরেই দৌড় দিল সে। এদিকে থমকে গিয়ে কুঁজো হয়ে গুলি করল পিস্তলধারী লোকটা। তার কয়েকটা গুলি ফুটো করল রানার কনুইয়ের পাশে টিনের দেয়াল।

আর তখনই ভয়ঙ্কর আওয়াজে বিস্ফোরিত হলো গোটা ডিসটিলারি। মেঝে থেকে শূন্যে ভেসে উঠল রানার দুই পা। খুন হতো গুলি খেয়ে, তবে বিস্ফোরণের এপিসেন্টার পিস্তলওয়ালার খুব কাছে। তামার সিলিণ্ডারের চাঁদ আকৃতির ধারালো একটা টুকরো কেটে নিয়ে গেল লোকটার মাথার অর্ধেকটা। মেঝেতে পড়ার আগেই ওপর থেকে হুড়মুড় করে তার লাশ আর রানার ওপর নামল টিনের ভারী ছাত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *