1 of 2

স্ট্রেঞ্জার – ২০

বিশ

গুডরিচদের বাড়ি থেকে আধমাইল দূরে বাস করেন সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীরা। ওই অবসরপ্রাপ্ত, নিঃসন্তান দম্পতির নাম ডেসমণ্ড ও রোণ্ডা ম্যালয়। রন, রব আর টিনাকে অন্তর থেকে ভালবাসেন তাঁরা। জোসেফ আর এলিসা জরুরি কাজে শহরে গেলে খুশি মনেই বাচ্চাদের দেখভালের দায়িত্ব নেন। আজও তেমনই একটা দিন। কারণ জোসেফের চেরোকি জিপে চেপে রানাকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে চলেছে গুডরিচ দম্পতি। পাহাড়ি-জঙ্গুলে পথে বিগড়ে যেতে পারে বলে এলিসার শহুরে মাযদা গাড়িটা নেয়া হয়নি। তবে জোসেফের প্রাচীন জিপের যে করুণ হাল, আদৌ ওরা গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছুতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত।

এবড়োখেবড়ো জমিতে ঝাঁকি খেতে খেতে পুবে চলেছে জিপগাড়ি। ওদিকেই বিখ্যাত রেড রিভার। পেছনের সিটে রানা। ধুলোভরা পথে যেতে যেতে ভক্তির সঙ্গে বড়মা এবি পামবোর বিষয়ে কথা বলছে এলিসা। ছোটবেলায় ওর আত্মীয়স্বজনরা গভীর রাতে গহীন অরণ্যে ওকে নিয়ে গিয়েছিল ভুডুর অদ্ভুত এক অনুষ্ঠানে। আজও স্পষ্ট মনে আছে, কারণ ওর বয়স ছিল তখন এগারো। ওই জাদুটোনার আচারানুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল শতখানেক নারী-পুরুষ। তাদের আত্মা পরিষ্কারের দায়িত্বে ছিলেন জ্ঞানী এক বয়স্কা মহিলা। তাঁকে সবাই বলত বড়মা।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে এলিসার কাঁধে হাত রেখে তিনি বলেন, ‘সবাই শোনো, কারও দিকে একবার তাকালেই, এই মেয়েটা জেনে যাবে সেই মানুষটা কেমন।’

‘জোসেফ তো বলছিল আমরা এক ডাইনীর সঙ্গে দেখা করতে চলেছি,’ বলল রানা।

‘ঠাট্টা করেছে,’ কড়া চোখে স্বামীকে দেখল এলিসা। ‘তা-ই না, জো?’

‘তা-ই তো মনে হয়,’ সামনে চোখ রেখে বিড়বিড় করল জোসেফ। ‘উকিল ছিলাম, আমি তো সত্য-মিথ্যা কত কথাই বলি!’

‘বড়মা এবি পামবো ডাইনী নন,’ রানাকে বলল এলিসা। ‘ভুডুর নিয়ম অনুযায়ী তাঁর পদবী মামবো। মানে যাজিকা। অন্যসব ধর্মের পুরোহিত বা যাজকদের মতই।’

‘তার মানে, উনি ছাগল বলি দিয়ে তার রক্ত উৎসর্গ করেন কালো জগতের ভয়ঙ্কর সব পিশাচদের কাছে?’ জানতে চাইল রানা।

মুচকি হাসল এলিসা। ‘কী যে বলো, রানা! সিনেমা আর গাঁজাখুরি বই যা খুশি দেখিয়ে বা লিখে সাধারণ মানুষের মাথা খেয়ে নিয়েছে। শয়তান লোক সব। তবে আফ্রিকা থেকেই এসেছে ভুডু। ছড়িয়ে গেছে গোটা ক্যারিবিয়ান এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ জনবসতিতে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বেতাঙ্গরা ওটাকে খুব ভয় পেত। ভাবত, ওটার জোরে একদিন তাদেরকে গদি থেকে নামিয়ে নিজেরা ক্ষমতা কেড়ে নেবে কালোরা। আর সেজন্যেই ভুডুর দেবতা আর আত্মা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের নাম দিয়েছে ওরা উইচ ডক্টর, জাদুকর বা ডাইনী। অথচ, খ্রিস্ট ধর্মের সঙ্গে অনেক মিল ভুডুর। খ্রিস্ট ধর্মের কুমারী মেরি মা যেমন আছেন, তেমনই ভুডুতে রয়েছেন আইডা ওয়েডো। তারপর আছে দোরপ্রহরী লেগবা, যে কিনা একেবারেই সেন্ট পিটারের ডুপ্লিকেট। এ ছাড়া, ভুডুতে রয়েছে ওশুন। উনি ভালবাসার দেবী আর সৃষ্টির কর্ত্রী। পৃথিবীর সব অরণ্যের দায়িত্বে আছেন লোকো। আসলে ভুডু কোনও কালো জাদু বা শয়তানের পূজা নয়। যারা ভুডু করে, তারা কিন্তু বসে বসে ছোট সব পুতুলের পেছনে পিন ফুটিয়ে মানুষের ক্ষতি করে বেড়ায় না। খ্রিস্টানদের মতই তারাও বিশ্বাস করে, আমরা মারা গেলে প্রবেশ করি অন্য এক জগতে। আর তখন আমাদের সঙ্গে আবারও দেখা হয় প্রিয় সব মৃত আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবীর। অনেকটা হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের মতই ভুডুতেও বিশ্বাস করা হয়, আবারও জন্ম নেবে মানুষ। তুমি যদি এ জীবনে ভাল কাজ করো, ক্ষতি হবে না তোমার। সেক্ষেত্রে আবারও নতুন করে ফিরে পাবে জীবন। কিন্তু এই জীবনে মন্দ কাজ করলে পরের জন্মে হবে ডিয়াব। যে কিনা আসলে ভয়ঙ্কর পিশাচ। শুধু আনন্দের জন্যে নিরীহ মানুষকে কষ্ট দেয় সে।’

‘আমাদের চারপাশে আজকাল বহু ডিয়াব ঘুরে বেড়ায়, ‘ মন্তব্য করল জোসেফ গুডরিচ।

এলিসার কথা অনুযায়ী, পাপে ভরা এই অন্ধ, আধুনিক সভ্যতা থেকে বহু দূরের জঙ্গলে নির্জন আস্তানা গড়ে নিয়েছেন বড়মা এবি পামবো। বুনো লতাপাতা ছাড়া কিছুই খান না। বনদেবতা লোকোর নির্দেশ অনুযায়ী নানান ওষুধ তৈরি করে অসুস্থ ভুডু চর্চাকারীদেরকে সুস্থ করে তোলেন তিনি। প্রধান যাজিকা হিসেবে তাঁকে সর্বক্ষণ পাহারা দেয় সশস্ত্র একদল ভক্ত অনুসারী। ওই দুর্গম জঙ্গলে তাদেরকে এড়িয়ে বড়মা এবি পামবোর ধারেকাছে যাওয়ার উপায় নেই কারও। তবে উনি চাইলে তাঁর আস্তানায় যেতে পারে যে- কেউ

‘উনি কি আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন?’ জানতে চাইল রানা। ভাবছে, লাভ হবে অত দূরে গিয়ে? তবে, শেলি লং ল্যান্সের খুনের ব্যাপারে হয়তো জরুরি তথ্য দিতে পারবেন এবি পামবো। ওখানে যাওয়াই উচিত।

‘আশা করি উনি সাহায্য করবেন, বলল এলিসা।

আরও একঘণ্টা কাঁচা, আঁকাবাঁকা পথে চলল ওরা। একদম চুপ হয়ে গেল এলিসা। বারবার দেখছে নানাদিকের পাহাড় চূড়া ও বড় সব গাছ।

‘পথ ঠিক মনে আছে তো?’ সন্দেহ নিয়ে জানতে চাইল জোসেফ। ‘বহুদূর তো চলে এলাম।’

‘আমার ওপর ভরসা রাখো,’ বলল এলিসা। আরও আধঘণ্টা পর নিচু গলায় বলল, ‘ঠিক আছে, এবার পথ থেকে নেমে পড়ো।’

সরু রাস্তা থেকে রুক্ষ, এবড়োখেবড়ো ট্র্যাকে নামল জোসেফ। রানা বুঝে গেল, কেন মাযদা গাড়ির বদলে জিপ এনেছে এলিসা ও জোসেফ। ট্র্যাকের এখানে ওখানে গভীর খাদ। একটু পর পর চাকার নিচে পড়ছে তিন নম্বর ফুটবলের সমান পাথরের বোল্ডার। কৌটার ভেতর ঝালমুড়ির মত ঝাঁকুনি খেতে খেতে চলেছে ওরা। করুণ আর্তনাদ ছাড়ছে সাসপেনশন। ধুপধাপ শব্দে গাড়ির নিচে আপত্তি জানাচ্ছে মুঠোসমান পাথরখণ্ডগুলো।

‘শেষপর্যন্ত খসে যাবে না তো তোমার গাড়ির তলি?’ সন্দেহ নিয়ে স্বামীর কাছে জানতে চাইল এলিসা। ‘হেঁটে বাড়ি ফিরতে হলে কিন্তু পা ক্ষয়ে গিয়ে তিন ফুটি বামন হয়ে যাব!’

‘তখনও তোমার চেয়ে দু’ফুট লম্বা থাকব, হাসল জোসেফ। ‘তবে ভয় পেয়ো না। এ গাড়ির কিছুই হবে না।’

এলিসা নাকি আগেই বহু কিছু বুঝতে পারে, আনমনে ভাবল রানা। তা হলে গাড়ি রেখে হেঁটে বাড়ি ফেরার কথা বলছে কেন? পরক্ষণে মনে মনে নিজেকে ভ্রুকুটি করল। অ্যাই, তুই কবে এতবড় অকৃতজ্ঞ হলি রে? এরা ঝুঁকি নিচ্ছে তোর জন্যে! তোকে সাহায্য করছে বলে ধরা পড়লে জেল হতে পারে এদের!

তখনই স্থির করল রানা, এলিসা আর জোসেফের ভালর জন্যে যত দ্রুত সম্ভব ওর উচিত বিদায় নেয়া।

ধীরে ধীরে আরও বুনো হয়ে উঠল ট্র্যাক। চারপাশে ঘন জঙ্গল। দক্ষতার সঙ্গে গাছপালা এড়িয়ে এগোচ্ছে জোসেফ। জায়গায় জায়গায় রুক্ষ মাটি ভেদ করে নাক তুলেছে মহীরুহের মোটা মোটা শেকড়। আরও সংকীর্ণ হলো সামনের পথ। দু’দিক থেকে চেপে এল জঙ্গল। প্রকাণ্ড গাছ থেকে ঝুলছে হাজারো লতা ও স্প্যানিশ মস। কিছু গাছ এতই বিকৃত, যেন অশুভ কোনও আত্মা। মাথার ওপর ঘন পাতার সবুজ ছাউনি ভেদ করে মাটিতে পড়ে নানান নকশা তৈরি করেছে সোনালি রোদ। এখন প্রথম বিকেল। অথচ গহীন অরণ্যে নেমেছে ভোর বা সন্ধ্যার ধূসর আবছায়া।

কিছুক্ষণ পর বলল এলিসা, ‘প্রায় পৌছে গেছি।’

খানিক বাদে সত্যি হলো ওর ভবিষ্যদ্বাণী।

মন্থরগতি জিপটা থামিয়ে বিড়বিড় করল জোসেফ, ‘যাশালা!’

এরই ভেতর তাদেরকে লক্ষ করেছে রানা। হঠাৎই বেরিয়ে এসেছে পাশের ঝোপ থেকে। সংখ্যায় চারজন। গায়ের রঙ কুচকুচে কালো। এবার জঙ্গলের অন্যপাশ থেকে এল আরও চারজন। দলে তারা এখন আটজন। ঘিরে ফেলল জিপটাকে।

‘আমাকে কথা বলতে দেবে, নিজেরা কিছু বলবে না, ‘ সতর্ক করল এলিসা।

কুচকুচে কালো লোকগুলো দীর্ঘদেহী হলেও হালকা- পাতলা। চোখগুলো যেন ধিকিধিকি অঙ্গার। এবি পামবোর দেহরক্ষী। তাদেরকে এড়িয়ে উপায় নেই বড়মার কাছে যাওয়ার। ভুডুর জোব্বার বদলে পরনে ভেস্ট ও প্যান্ট। গলায় নেই করোটির মালা। চুনের মত সাদা করেনি মুখ। ভয় দেখাবার কোনও ভঙ্গিও করছে না। তবে বুঝিয়ে দিচ্ছে, আর এক পা-ও এগোতে দেবে না কাউকে। চারজনের হাতে বারো গেজের বন্দুক। অন্য চারজনের হাতে হান্টিং রাইফেল। যেভাবে অস্ত্র ধরেছে, রানার মনে হলো এরা অপেশাদার মিলিশিয়া যোদ্ধা। বুঝতে দেরি হলো না ওর, ওদের উচিত হয়নি নিরস্ত্র অবস্থায় এখানে হাজির হওয়া।

জিপ ঘিরে ফেলেছে লোকগুলো। হাতের অস্ত্রের নল এখনও মাটির দিকে তাক করা। তবে প্রয়োজনে দেরি না করেই গুলি করতে পারবে। ড্রাইভারের জানালায় এসে দাঁড়াল দলনেতা। হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিল, এখান থেকেই গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যেতে হবে।

‘পথ হারিয়েছ?’ বলল লোকটা। কণ্ঠস্বর বজ্রবিদ্যুতের মত গুড়গুড় করছে। জ্বলজ্বল করছে দু’চোখ। গাছের গুঁড়ির মত ব্যায়ামপুষ্ট দু’হাতে বোল্ট অ্যাকশন রেমিংটন রাইফেল। সতর্ক দৃষ্টিতে জিপের ভেতর চোখ বোলাল লোকটা।

সিটে ঝুঁকে ড্রাইভারের জানালা দিয়ে তাকাল এলিসা। নরম সুরে বলল, ‘আমরা বড়মা এবি পামবোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।’ মিষ্টি হাসল। ‘আসলে এসেছি আমাদের এই বন্ধুর জন্যে। ওর সাহায্য দরকার।’ রানাকে দেখিয়ে দিল এলিসা।

জিপের ধুলোভরা কাঁচ ভেদ করে সন্দেহ ভরা ষোলোটা চোখ দেখছে রানাকে। কী ভাবছে, কে জানে!

একমিনিট পর বলল দলনেতা, ‘সাহায্য লাগলে ওর নিজের লোকেদের কাছে যাক। তোমরা ভুল জায়গায় এসেছ। গাড়ির পাছাটা ঘুরিয়ে ফিরতি পথ ধরো।’

‘প্লিয,’ বলল এলিসা। সাহায্য পেতে বহু দূর থেকে এসেছি আমরা।’

কড়া চোখে রানাকে দেখল দলনেতা। ‘বড়মার কাছ থেকে কী ধরনের সাহায্য চায় এই লোক?’

‘মস্তবড় বিপদে পড়েছে।

মাথা নাড়ল দলনেতা। ‘আমরা কোনও বিপদে জড়াতে চাই না।’

‘পাডনাহ্,’ বলল জোসেফ, ‘এবি পামবোর সঙ্গে দেখা করব বলে এসেছি। দেখা না করে ফিরব না।’

আগের চেয়ে জোরে মাথা নাড়ল দলনেতা। ‘বড়মা কারও সঙ্গে দেখা করবেন না। বিশেষ করে তোমাদের মত অপরিচিতদের সঙ্গে তো একেবারেই নয়।’

‘আমি বড়মার অপরিচিত নই,’ একটু জোর দিয়ে বলল এলিসা। ‘আগেও দেখা হয়েছে আমাদের। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, আমার আত্মা পরিষ্কার। তখন একদম ছোট ছিলাম। শুনেছি কাউকে দেখলে কখনও তাকে ভোলেন না বড়মা।’

ডান ভুরু কপালে তুলল দলনেতা। এলিসার কথায় তাকে সন্তুষ্ট মনে হলো না রানার। গভীর সন্দেহ নিয়ে ওদেরকে দেখছে দেহরক্ষীরা।

দলনেতা বলল, ‘বড়মা আজকাল কারও সঙ্গে দেখা করেন না। অনেক বয়স হয়েছে তাঁর।’

কথা চালাচালি করে লাভ হবে না, বুঝে গেছে রানা। সাবধানে দরজা খুলে নেমে পড়ল মাটিতে। সঙ্গে সঙ্গে ওর বুকে তাক করা হলো কয়েকটা বন্দুক ও রাইফেল।

‘গুলি কোরো না, আমি নিরস্ত্র।’ কাঁধের কাছে হাত তুলল রানা। বোঝাতে চাইছে, ঝামেলা করতে আসেনি। দলনেতার উদ্দেশে বলল, ‘মন দিয়ে শোনো আমার কথা। আমাকে বিপদ থেকে বাঁচাতে গিয়ে মস্তবড় বিপদে নিজেরাই জড়িয়ে গেছে এই দু’জন। সত্যিকারের ভাল মানুষ এরা। এরা সাহায্য না করলে এতক্ষণে খুন হয়ে যেতাম। বড়মার কাছে মাত্র একটা প্রশ্ন করব বলে এত দূর থেকে এসেছি। একবার দেখা হওয়ার পর উনি ওই প্রশ্নের জবাব দেন বা না দেন, দেরি না করে ফিরে যাব।’

‘কী জানতে চাও বড়মার কাছে?’

‘জানতে চাই লিয বাউয়ারের ব্যাপারে,’ বলল ‘রানা। ‘চিটিমাচায় গত দু’দিন আগে সে খুন হয়েছে। একইসঙ্গে জেনে নেব কে ছিল শেলি লং ল্যান্স। আর কেন খুন হয়েছিল সে। আমাকে বলা হয়েছে, দুনিয়ার সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ বড়মা এরি পামবো। তিনি প্রশ্নের জবাব দিতে না পারলে, আর কোথাও উত্তর পাব না।’

কয়েক মুহূর্ত কড়া চোখে রানাকে দেখল দলনেতা। দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরেছে নিচের ঠোঁট। সামান্য নরম হলো চোখের দৃষ্টি। সে হাতের ইশারা দিতেই রানার বুক থেকে অস্ত্রের নল সরাল দেহরক্ষীরা। ‘ঠিক আছে, তোমরা এখানেই অপেক্ষা করো,’ বলল দলনেতা। ‘আমরা দেখছি।’

একমুহূর্ত পর তাকে অনুসরণ করে গভীর জঙ্গলে হারিয়ে গেল সশস্ত্র লোকগুলো। জিপের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়াল রানা। দু’দিকের দরজা খুলে নামল জোসেফ আর এলিসা।

‘এরা খুব সতর্ক, তাই না?’ বলল জোসেফ। বদ্ধ গরমে ঘেমে গেছে সারা মুখ। রানাকে দেখল সে। ‘তোমার সাহস আছে, রানা। যেভাবে নেমে পড়লে! আমি তো ভেবেছি গুলি করে দেবে!’

‘ওরা সতর্ক, সেজন্যে ওদেরকে দোষ দিচ্ছি না,’ বলল, এলিসা, ‘সময় তো খুব খারাপ।

‘আগেও অনেকে আমার দিকে অস্ত্র তাক করেছে,’ বলল রানা। তবে গুলি করত না এরা। আগেই বলেছে, ঝামেলা চায় না। অস্ত্র রেখেছে ভয় দেখাবার জন্যে। হয়তো ভেতরে গুলিই নেই।’

ধিরে নিলাম তোমার কথাই ঠিক,’ বলল জোসেফ। ‘তো এবার কী করব আমরা?

‘সময় লাগবে ওদের ফিরতে,’ বলল রানা। ‘তোমরা বরং বাড়ি ফিরে যাও। বাচ্চারা অপেক্ষা করছে।’

‘রেখে যাব তোমাকে জঙ্গলে?’ মাথা নাড়ল জোসেফ। ‘এত বড় পশু নই।’

‘এরই মধ্যে অনেক উপকার করেছ,’ বলল রানা।

‘বাদ দাও তো, রানা,’ বলল এলিসা। ‘আমরাও অপেক্ষা করব। তা ছাড়া, এটাই হয়তো বড়মার সঙ্গে শেষবারের মত দেখা করার সুযোগ। তাঁর সঙ্গে কথা না বলে কোথাও যাব না।’

‘যদি সুযোগ দেয় আর কী,’ সন্দেহ নিয়ে বলল জোসেফ। ‘পরিবেশ তো খুব সুবিধের লাগছে না!’

তিলতিল করে পেরোল আধঘণ্টা। তারপর আরও ত্রিশ মিনিট। হাল ছেড়ে স্ত্রীর দিকে তাকাল জোসেফ। তবে ও কিছু বলার আগেই জঙ্গলের ভেতর থেকে এল শুকনো ডাল ভাঙার মট আওয়াজ।

চরকির মত ঘুরে ওদিকে তাকাল ওরা।

আবারও জিপ ঘিরে ফেলল আট দেহরক্ষী। আগের মতই গম্ভীর। জ্বলজ্বল করছে চোখ।

এগিয়ে এল তাদের দলনেতা।

তার চোখে চেয়ে ভাবল রানা, জোসেফের কথাই ঠিক। খারাপ সংবাদ দেবে এরা। বলে দেবে, ‘বড়মা মানা করে দিয়েছেন। ফিরে যাও তোমরা।’

অবশ্য রানা কিছু বলার আগেই মুখ খুলল দলনেতা, ‘বড়মা তোমাদের সঙ্গে দেখা করবেন। এসো।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *