বিষম ভ্রম ২

বিষম ভ্ৰম! (শেষ অংশ)

(অর্থাৎ লাস সনাক্তে বিষম ভ্ৰম!)

দশম পরিচ্ছেদ

আবদুলের বাড়ীতে যে স্ত্রীলোকটিকে দেখিতে পাইয়াছিলাম, তাহাকে দেখিয়া আমার মনে হামিদার কথা উদিত হইল। মেহেরুন্নেসা অপহৃত হইবার পর, সে তাহার প্রথমা কন্যা আয়েষাকে তাহার বাড়ীতে আনিয়াছিল, ও কিছু দিবস পরে সেই আয়েষাও তাহার বাড়ী হইতে অন্তর্হিত হয়। আয়েষা ও মেহেরুন্নেসা দেখিতে প্রায় একই প্রকার, একথা আমরা হামিদার নিকট হইতে জানিতে পারিয়াছিলাম। মেহেরুন্নেসাকে দেখিতে পাইবার পর, আয়েষাই যে হত হইয়াছে, এই অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া এখন পর্যন্ত আমরা অনুসন্ধান করিতেছিলাম। হামিদাও তাহাই আমাদিগকে বলিয়াছিল ও মৃতদেহটি তাহার কন্যার বলিয়া ‘সনাক্ত’ করিয়াছিল। আমাদিগের মনে অতঃপর ইহাই স্থির বিশ্বাস হইয়াছিল যে, আয়েষার মৃতদেহ আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি, বিয়ামই আয়েষাকে হত্যা করিয়াছে, বা বিয়ামের জ্ঞাতসারে বা তাহার বাড়ীতেই এই ঘটনা ঘটিয়াছে; নতুবা বিয়ামের ঘরে আয়েষার নামাঙ্কিত সোণার চিরুণী কোথা হইতে আসিবে? এই অনুমানের উপর নির্ভর করিয়াই আমরা বিষম ভ্রমে পতিত হইয়াছিলাম। তখন আমাদিগের মনে একথা একবারের জন্যও উদিত হয় নাই যে, যাহাকে বিয়াম হত্যা করিবে, তাহার চিরুণী সকলে দেখিতে পায়, এরূপ স্থানে রাখিয়া দিবে কেন? 

এখন আবদুলের ঘরে ঐ স্ত্রীলোকটিকে দেখিয়াই আমার বেশ অনুমান হইল, আয়েষাও হত হয় নাই। এই স্ত্রীলোকটি নিশ্চয়ই আয়েষা। মনে মনে এইরূপ ভাবিয়া আবদুলকে আমার নিকটে আসিতে কহিলাম। সে আমার নিকটেই ছিল, আরও নিকটবর্তী হইলে তাহাকে চুপে চুপে জিজ্ঞাসা করিলাম— “এই স্ত্রীলোকটির নাম আয়েষা নহে?” 

আবদুল। হাঁ মহাশয়, ইহার নাম আয়েষা। 

আমি। এ কাহার কন্যা? 

আবদুল। তাহা আমি জানি না। ইহার পিতার নাম আমি অবগত নহি। 

আমি। ইহার মাতার নাম কি জান? 

আবদুল। শুনিয়াছি, ইহার মাতার নাম হামিদা। 

এই কথা শুনিয়াই আমি বেশ বুঝিতে পারিলাম যে, আমার শেষ অনুমান সত্য। হামিদার দুইটি কন্যার একটিও হত হয় নাই, উভয়েই জীবিতা আছে। 

আমি যখন প্রথম আবদুলের বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিয়াছিলাম, তখন কিন্তু আবদুল বুঝিতে পারে নাই যে, আমি কে। কিন্তু পরিশেষে সে যখন জানিতে পারিল যে, আমি কে, তখন আর সে কোন কথা গোপন করিল না। আমি যাহা জিজ্ঞাসা করিলাম, সে তাহার যথাযথ উত্তর প্রদান করিতে লাগিল। 

আমি। এই স্ত্রীলোকটি তোমার কে হয়? 

আবদুল। আমার কেহই নহে। 

আমি। তাহা হইলে ইনি তোমার বাড়ীতে বাস করিতেছেন কেন? 

আবদুল। আমি ইহাকে চিনিতামও না; কেবল আমার একজন আত্মীয়ের অনুরোধে আমি ইহাকে আমার বাড়ীতে স্থান প্রদান করিয়াছি। 

আমি। তোমার সে আত্মীয় কে? 

আবদুল। যে বৃদ্ধ অতি অল্পক্ষণ পূর্ব্বে আমার বাড়ীতে আগমন করিয়াছিলেন, তিনিই আমার আত্মীয়। তাঁহার অনুরোধেই আমি ইহাকে আমার বাড়ীতে স্থান প্রদান করিয়াছি। 

আমি। তিনি কি বলিয়া ইহাকে এই স্থানে রাখিয়া যান? 

আবদুল। তিনি কহেন, এই স্ত্রীলোকটি তাঁহার বিশেষ আত্মীয়া। তাঁহার বাড়ীতেই অনেক দিন হইতে থাকিতেন, সম্প্রতি কোন একজন ধনশালী বদমায়েস লোকের নজর ইহার উপর পতিত হইয়াছে। সে কোন গতিকে ইহাকে অপহরণ করিবার চেষ্টায় অনবরত ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। সেই নিমিত্ত তিনি তাহাকে আপাততঃ তাঁহার বাড়ীতে রাখিতে সমর্থ হইতেছেন না। এই বলিয়া বৃদ্ধ ইহাকে আমার বাড়ীতে রাখিয়া যান, ও বলিয়া যান, শীঘ্রই তিনি ইহাকে স্থানান্তরিত করিবার বন্দোবস্ত করিবেন। যে কয়েক দিবস তিনি উহার থাকিবার মত স্থানের বন্দোবস্ত করিয়া উঠিতে না পারিবেন, সে কয় দিবস ইনি এইস্থানে থাকিবেন। এই বলিয়া তিনি ইহাকে এই স্থানে রাখিয়া গিয়াছেন। 

আমি। ঐ বৃদ্ধ কে? বিয়াম নয় ত? 

আবদুল। হাঁ বিয়াম। 

আমি। আচ্ছা, তুমি ঐ স্ত্রীলোকটিকে কহ, আমি উহাকে যাহা যাহা জিজ্ঞাসা করিব, উনি যেন তাহার যথাযথ উত্তর প্রদান করেন। যদি সমস্ত কথা প্রকৃত কহেন, তাহা হইলে ইহার কোনরূপ ভয় নাই। আমরা ইহার কথা শুনিয়া এই স্থান হইতে চলিয়া যাইব, ইনি এই স্থানেই থাকিবেন। আর যদি ইনি মিথ্যা কথা কহেন, তাহা হইলে ইহাকে আমাদিগের সহিত গমন করিতে হইবে। এই বুঝিয়া যেন ইনি আমার কথার উত্তর প্রদান করেন। 

যায়। 

আবদুল। ইনি মিথ্যা কথা কহিবেন না। আপনি যাহা জিজ্ঞাসা করিবেন, তাহার প্রকৃত উত্তর প্রাপ্ত হইবেন?

আমি। তোমার নাম কি আয়েষা? 

আয়েষা। হাঁ মহাশয়। 

আমি। তোমার মাতার নাম কি হামিদা? 

আয়েষা। হাঁ। 

আমি। তোমার মাতার নিকট হইতে ত তুমি অনেক দিবস চলিয়া আসিয়াছ, এত দিবস তুমি কোথায় ছিলে?

আয়েষা। ইস্মাইল নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে। 

আমি। সেইস্থানে তুমি কেন গমন করিয়াছিলে? 

আয়েষা। আমাকে অনেক রূপ প্রলোভন দেখাইয়া সে আমার মাতার বাড়ী হইতে আমাকে বাহির করিয়া লইয়া 

আমি। সে তোমাকে কোথায় রাখিয়াছিল? তাহার নিজের বাড়ীতে রাখিয়াছিল কি? 

আয়েষা। না, সে আমাকে তাহার নিজের বাড়ীতে রাখে নাই। শুনিয়াছি, তাহার নিজের বাড়ীতে তাহার আর একটি স্ত্রীলোক আছে। আমাকে অন্য বাড়ীতে রাখিয়াছিল। 

আমি। সেই স্থান হইতে তুমি এখানে আসিলে কেন?

আয়েষা। আর একটি লোক আমাকে এখানে আনিয়াছে।

আমি। সে লোকটি কে? 

আয়েষা। তাহার নাম বিয়াম 

আমি। সে তোমাকে এখানে আনিল কেন? 

আয়েষা। তিনি আমাকে বিবাহ করিতে চাহেন। 

আমি। বিয়াম যে তোমাকে এখানে আনিয়াছে, তাহা ইস্মাইল অবগত আছে? 

আয়েষা। সে অবগত না থাকিলে আমাকে আনিবে কি প্রকারে? 

আমি। যখন তুমি তাহার রক্ষিতা ছিলে, তখন সে তোমাকে অপরের হস্তে প্রদান করিল কিরূপে? 

আয়েষা। অর্থলোভে সে আমাকে অপরের হস্তে প্রদান করিয়াছে। অর্থ পাইলে ইস্মাইল না করিতে পারে, এরূপ কোন কাৰ্য্যই নাই। 

আমি। বিয়াম দেখিতেছি নিতান্ত দরিদ্র লোক নহেন, তাহার অর্থ যথেষ্ট আছে। এরূপ অবস্থায় তিনি অপরের পরিত্যক্ত স্ত্রীলোককে বিবাহ করিতে ইচ্ছুক কেন? 

আয়েষা। শুনিয়াছি, ঠিক আমার মত দেখিতে একটি বালিকাকে তিনি শৈশব হইতে প্রতিপালন করেন, কিন্তু পরিশেষে তাঁহার সহিত বিবাহের প্রস্তাব করায় সেই স্ত্রীলোকটি তাহাতে অসম্মত হয় ও বিয়ামের বাড়ী ছাড়িয়া কোথায় চলিয়া যায়। বিয়াম তাহাকে অতিশয় ভালবাসিত। সুতরাং তাহার অদর্শনে তিনি নিতান্ত অধীর হইয়া পড়েন। পরিশেষে ইস্মাইলকে অর্থ দিয়া আমাকে আনয়ন করিয়াছেন। শুনিয়াছি, তাহার আকৃতি প্রকৃতি আমার আকৃতি প্রকৃতি অপেক্ষা কিছুমাত্র তারতম্য ছিল না। সেইজন্য বিয়াম আমাকে লইয়া তাহার শোক ভুলিতে চাহেন। এই নিমিত্তই তিনি আমাকে এখানে আনয়ন করিয়াছেন। 

আমি। এখন তোমার ইচ্ছা কি? তুমি কি বিয়ামকে বিবাহ করিবে? 

আয়েষা। বিশেষ কোন ক্ষতি দেখিতেছি না; কারণ এত দিবস পর্য্যন্ত নিতান্ত নীচভাবে জীবন যাপন করিতেছি, এখন জীবনের অবশিষ্টাংশ যদি কোন ভদ্রলোকের সহবাসে কাটাইতে পারি, তাহা হইলে, নিতান্ত মন্দ হইবে না। বিশেষ বিয়াম দরিদ্র নহেন, তাহার সহিত পরিণয়-সূত্রে আবদ্ধ হইলে আমিও তাঁহার ঐ বিষয়ের কিয়ৎপরিমাণে অধিকারিণী হইতে পারিব। 

আয়েষার কথা শুনিয়া আমার আর কোন কথা জানিতে বাকি থাকিল না। এখন বুঝিতে পারিলাম, বিয়ামের ঘরে আয়েষা-নাম-খোদিত যে সোণার চিরুণীখানি দেখিতে পাইয়াছিলাম, তাহার অর্থ কি? প্রণয়োপহার স্বরূপ উহা আয়েষাকে প্রদান করিবার মানসেই যে উহা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, তাহাতে আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। 

মৃতদেহ প্রাপ্ত হইবার পর হামিদা বিবির ছোট কন্যা মেহেরুন্নেসাকে প্রাপ্ত হইয়াছিলাম, এখন আবার তাহার প্রথমা কন্যা আয়েষাকেও পাইলাম। সুতরাং ঐ মৃতদেহ তো ইহাদিগের কাহার হইতে পারে না। এখন বেশ বুঝিতে পারিলাম, ঐ মৃতদেহ হামিদা চিনিতে না পারিয়াই আপন কন্যার মৃতদেহ বলিয়া সনাক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু এখন দেখিতেছি, আমাদিগের সমস্ত চেষ্টা ও যত্ন ব্যর্থ হইয়া গেল। যাহা হউক, এ সম্বন্ধে এখন বিয়াম কি বলেন, তাহা একবার জিজ্ঞাসা করিয়া কেন দেখা যাউক না। 

এবার আর বিয়ামের বাড়ীতে গুপ্তবেশে গমন করিলাম না। এবার তাহাকে প্রকাশ্যভাবে থানায় ডাকাইয়া আনিলাম, ও তাহাকে কহিলাম, “বিয়াম! তোমার কিরূপ কাণ্ড-কারখানা, কিছুই তো বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না।” 

বিয়াম। কিসের কাণ্ড-কারখানা? 

আমি। চুরি, হত্যা ও অবরোধ। 

বিয়াম। মহাশয়! আমি আপনার কথার কোনরূপ অর্থ বুঝিয়া উঠিতে পারিলাম না। 

আমি। খুব বুঝিতে পারিতেছ; তথাপি আমি তোমাকে একে একে সমস্ত জিজ্ঞাসা করিতেছি, তাহার যথাযথ উত্তর প্রদান করিবে কি না? 

বিয়াম। আমি কেন প্রকৃত উত্তর প্রদান করিব না? আপনি যাহা জিজ্ঞাসা করিবেন, তাহার প্রকৃত উত্তর আমার নিকট হইতে প্রাপ্ত হইবেন। 

আমি। তুমি ঠিক কথা কহিবে? 

বিয়াম। কহিব। 

আমি। ঠিক কথা কহিলে যদি তোমার বিপদ হইবার সম্ভাবনা থাকে, তাহা হইলে? 

বিয়াম। তাহা হইলেও আমি আর কোনরূপ মিথ্যা কথা কহিব না, সমস্তই সত্য কহিব। ইহাতে আমার অদৃষ্টে যাহাই হউক না কেন। 

আমি। সত্য বলিয়া তুমি তোমার নিজের বিপদ ডাকিয়া আনিতে চাহ কেন? 

বিয়াম। কারণ অপরের জ্বালায় আমি নিতান্ত জ্বালাতন হইয়াছি, ও নিরর্থক অনেক অর্থ নষ্ট করিয়াছি। অথচ এক দিবসের নিমিত্ত মনে সুখ পাই নাই। এ নিমিত্তই এখন স্থির করিয়াছি যে, আর আমি কোন কথা গোপন করিব না, সমস্তই স্বীকার করিব; ইহাতে আমার অদৃষ্টে যাহাই হউক। 

আমি। যদি তুমি এইরূপ স্থির করিয়া থাক, তাহা হইলে, আর কোন কথা গোপন করিও না, সমস্তই স্বীকার কর। আমরা সমস্ত অবস্থা অবগত হইতে পারিলে, তোমার বিপদের সম্ভাবনা থাকিলেও যেরূপে পারি তোমাকে বাঁচাইব। 

বিয়াম। আমাকে বাঁচান, আর না বাঁচান, আমি আর মিথ্যা কথা কহিব না। 

আমি। মেহেরুন্নেসা কে? 

বিয়াম। সে হামিদা নাম্নী একটি দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোকের কন্যা। 

আমি। সে এখন কোথায়? 

বিয়াম। তাহা আমি বলিতে পারি না। 

আমি। কতদিবস পর্যন্ত তুমি তাহার সন্ধান পাও নাই? 

বিয়াম। অতি তাল্প দিবস। 

আমি। তুমি তাহাকে কোথায় পাইয়াছিলে? 

বিয়াম। তাহার বাল্যকালে তাহাকে তাহার মাতার নিকট হইতে চুরি করিয়া আনা হইয়াছিল। 

আমি। কে চুরি করিয়া আনিয়াছিল? 

বিয়াম। ইস্মাইল ও হোসেন! 

আমি। তাহাকে চুরি করিয়া কোথায় রাখিয়াছিল? 

বিয়াম। ইস্মাইল তাহাকে আপনার নিকট রাখিয়াছিল। পরিশেষে আমি তাহাকে অর্থ দিয়া মেহেরুন্নেসাকে আমার বাড়ীতে লইয়া আসি। যাহাতে এই সকল কথা সে গোপন রাখে। তাহার নিমিত্ত ইস্মাইলকে মধ্যে মধ্যে অনেক অর্থ প্রদান করি। 

আমি। মেহেরুন্নেসা তাহা হইলে তোমার বাড়ী হইতে চলিয়া গেল কেন? 

বিয়াম। আমি তাহাকে প্রতিপালন করিয়া তাহাকে বড় করি ও তাহাকে প্রাণের সহিত ভালবাসিতে আরম্ভ করি, ও পরিশেষে তাহার রূপে মুগ্ধ হইয়া তাহাকে বিবাহ করিতে প্রবৃত্ত হই। সে বৃদ্ধের সহিত বিবাহ করিতে সম্মত না হইয়া আমায় ঘর হইতে কোথায় পলায়ন করিয়াছে। 

আমি। তাহার কোনরূপ সন্ধান কর নাই? 

বিয়াম। বিস্তর অনুসন্ধান করিয়াছিলাম, ও একস্থানে তাহাকে দেখিতেও পাইয়াছিলাম। সেই স্থান হইতে সে যে কোথায় চলিয়া গেল, তাহা আর কিছুই স্থির করিতে পারিলাম না। 

আমি। আয়েষাকে তুমি পাইলে কোথায়? 

বিয়াম। তাহাকেও আমি ইস্মাইলের নিকট হইতে প্রাপ্ত হইয়াছি। 

আমি। তাহাকে আনিবার কারণ? 

বিয়াম। মেহেরুন্নেসা ও আয়েষা দেখিতে প্রায় একই রূপ, যদি তাহাকে লইয়া মেহেরুন্নেসাকে ভুলিতে পারি, এই নিমিত্ত তাহাকে আমি আনিয়াছি। 

আমি। তাহাকে ইস্মাইল কোথা হইতে পাইল? 

বিয়াম। তাহা আমি জানি না, কিন্তু অনেক দিবস পর্যন্ত সে তাহার নিকট ছিল, ইহা আমি জানিতাম। 

আমি। তুমি আয়েষাকে কি বিবাহ করিবে? 

বিয়াম। হাঁ, নিকা করিবার ইচ্ছা আছে। 

আমি। তাহাকে তুমি নিজের বাড়ীতে না রাখিয়া আবদুলের বাড়ীতে রাখিয়াছ কেন? 

বিয়াম। আপনাদিগের যেরূপ গোলযোগ দেখিতেছি, তাহাতে মনে মনে ভয় পাইয়াছিলাম। পাছে আয়েষাকে লইয়াও আপনারা টানাটানি করেন, এই ভয়ে তাহাকে আবদুলের বাড়ীতে রাখিয়া দিয়াছি। 

আমি। তুমি যে হোসেনের নাম করিলে, সে কে? 

বিয়াম। আমাকেই কেহ কেহ সময় সময় হোসেন বলিয়া ডাকিত। 

আমি। তাহা হইলে ইস্মাইলের সহিত তুমিই মেহেরুন্নেসাকে চুরি করিয়া আনিয়াছিলে? 

বিয়াম। যাহা বলেন। 

আমি। তুমি জান, আয়েষা ও মেহেরুন্নেসার মধ্যে কোনরূপ সংস্রব আছে কি না? 

বিয়াম। আমি শুনিয়াছি, তাহারা দুই ভগ্নী। উভয়েই হামিদার কন্যা। 

আমি। হামিদার কেবল এই দুইটি কন্যা? 

বিয়াম। শুনিয়াছি, তাহার আর একটি কন্যা ছিল। সে বর্তমান আছে কি না, তাহা বলিতে পারি না। 

আমি। কি? তাহা হইলে হামিদার তিনটি কন্যা হইয়াছিল? 

বিয়াম। আমি ত এইরূপই শুনিয়াছি; কিন্তু ঠিক বলিতে পারি না। 

আমি। তুমি শুনিয়াছ যে, একটি স্ত্রীলোকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছে? 

বিয়াম। হাঁ শুনিয়াছি ও দেখিয়াছি। 

আমি। সেটি কাহার মৃতদেহ? 

বিয়াম। তাহা আমি বলিতে পারি না। 

আমি। আয়েষা বা মেহেরুন্নেসার সহিত ঐ মৃতদেহের কতকটা সাদৃশ্য আছে বলিয়া অনুমান হয় না? 

বিয়াম। কতকটা সাদৃশ্য কেন, দেখিতে ঠিক একই প্রকারের। 

আমি। তুমি ত মৃতদেহ দেখিয়াছ, কিন্তু উহার বয়স কত তোমার অনুমান হয়? 

বিয়াম। উহার বয়ক্রম ২০ বৎসরের কম হইবে না বরং আরও অধিক হইবার সম্ভাবনা। 

আমি। আমি অনুমান করিতেছিলাম ১৫/১৬ বৎসর। 

বিয়াম। না মহাশয়, তাহা অপেক্ষা অনেক বেশী। উহা যাহার মৃতদেহ, তাহা যদি জানিতে পারেন, তাহা হইলেই বুঝিতে পারিবেন, আমার অনুমান সত্য, কি আপনার অনুমান সত্য। 

আমি। তুমি আয়েষাকে এখন আপন বাড়ীতে লইয়া যাও। সেইস্থানে উহাকে যত্নের সহিত রাখিয়া দেও, ও তাহাকে বলিয়া দেও যে, আমার নিকট হইতে যদি কোন কথা আমাদিগের জানিবার প্রয়োজন হয়, তাহা হইলে, সে যেন প্রকৃত কথা কহে। আরও একটি কথা তোমাকে আমি জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করি। 

বিয়াম। কি। 

আমি। মেহেরুন্নেসাকে যদি এখন পাওয়া যায়, তাহা হইলে, তুমি তাহাকে গ্রহণ করিতে প্রস্তুত আছ? 

বিয়াম। যাহার জন্য আমার প্রাণের মধ্যে সৰ্ব্বদা জুলিয়া যাইতেছে, তাহাকে আর আমি গ্রহণ করিতে প্রস্তুত নহি? যাহার শোক নিবারণ করিবার মানসে আয়েষাকে আনিয়া আপন ঘরে স্থান দিতে বসিয়াছি, তাহাকে পাইলে আমি তাহাকে গ্রহণ করিব কিনা, তাহা কি আর আপনি বুঝিতে পারিতেছেন না। সে এখন কোথায়, তাহা কি আপনি অবগত আছেন? 

আমি। সে যে এখন কোথায় আছে, তাহা আমি অবগত নহি। কিন্তু যদি কোন স্থানে তাহার অনুসন্ধান পাই, তাহা হইলে সে সংবাদ আমি তোমাকে প্রদান করিব। 

বিয়ামের সহিত এই সকল কথাবার্তা হইবার পর, বিয়াম সে দিবস প্রস্থান করিলেন। যাইবার সময় বলিয়া গেলেন যে, যখন তাঁহাকে প্রয়োজন হইবে, সংবাদ দিলেই তিনি তখনই আগমন করিবেন ও তাঁহার সাধ্যমত আমাদিগকে সাহায্য করিতে প্রবৃত্ত হইবেন। 

বিয়াম আমাদিগকে তাঁহার সাধ্যমত সাহায্য করিতে যে কেন ইচ্ছুক হইলেন, তাহার কারণ পাঠকগণ কি কিছু অনুমান করিতে পারিয়াছেন? যদি না পারিয়া থাকেন, তাহা হইলে এই মাত্র বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, তিনি বালিকা চুরি প্রভৃতি যে সমস্ত অন্যায় ও আইন-বহির্গত কৰ্ম্ম করিয়াছেন, আমরা তাহার নিমিত্ত তাঁহাকে কোনরূপে অভিযুক্ত করিলাম না, অধিকন্তু তাঁহার প্রাণাপেক্ষা প্রিয়তমা মেহেরুন্নেসার অনুসন্ধান করিয়া দিতে একরূপ প্রতিশ্রুত হইলাম! 

বিয়াম থানা পরিত্যাগ করিয়া প্রস্থান করিল। এ পর্যন্ত আমরা যে সকল লোক জনের উপর এই হত্যার সন্দেহ করিয়াছিলাম, বা যাহাদিগকে একরূপ আবদ্ধও করিয়া রাখিয়াছিলাম, তাহাদিগকেও অব্যাহতি প্রদান করিয়া এই অনুসন্ধানের নূতন পন্থা অবলম্বনে প্রবৃত্ত হইলাম। 

একাদশ পরিচ্ছেদ

বিয়ামের সহিত যে দিবস আমার কথাবার্তা হইল, তাহার পর দিবস অতি প্রত্যূষে আমি হামিদার বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলাম। হামিদার বাড়ী আমি পূর্ব্ব হইতেই চিনিতাম, একথা পাঠকগণ অবগত আছেন। 

হামিদা যে বাড়ীতে থাকে, তাহা কাষ্ঠ-নির্ম্মিত একখানি ক্ষুদ্র বাড়ী। নিতান্ত নীচ পল্লীর মধ্যে উহা স্থাপিত না হইলেও ভদ্রপল্লীতে উহা স্থাপিত নহে। বাড়ীখানা দোতলা। নীচের তলায় দুইটি ও উপরে বড় গোছের একটি মাত্র ঘর আছে। তৎব্যতীত একটু আলাহিদা রন্ধনের স্থানও আছে। 

যে মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছিল, উহার সনাক্ত লইয়াই হামিদার সহিত আমার প্রথম পরিচয়। সুতরাং তাহার নিজের বৃত্তান্ত আমি বিশেষ কিছুই অবগত ছিলাম না, বা তাহার বাড়ীর ভিতর এ পর্যন্ত কখন প্রবেশও করি নাই। হামিদা আমাকে দেখিবামাত্রই আমাকে তাহার সেই উপরের ঘরে লইয়া গিয়া বসাইল। উপরে উঠিবার সময় দেখিলাম, নীচের একটি ঘরে একটি অর্দ্ধ বয়স্ক লোক বসিয়া রহিয়াছে। তাহাকে আমি কোন কথা জিজ্ঞাসা করিলাম না, বা তিনিও আমাকে কিছুই বলিলেন না। আমি হামিদার পশ্চাৎ পশ্চাৎ উপরে উঠিলাম। ঐ ব্যক্তি যে কে, তাহার পরিচয় সেই সময় না পাইলেও পরিশেষে জানিতে পারিয়াছিলাম, উনিই আজকাল হামিদার একরূপ অবলম্বন স্থল। কিন্তু হামিদা উহার আশ্রিতা কি উনিই হামিদার আশ্রয় গ্রহণ করিয়া সেইস্থানে হামিদার অন্নে প্রতিপালিত হইয়া, হামিদার উপর প্রভুত্ব জন্মাইয়া থাকেন কি না, তাহা আমরা অবগত নহি। কারণ ঐ বিষয়ের অনুসন্ধান করিবার আমাদিগের বিশেষ কোনরূপ প্রয়োজন হইয়াছিল না। আমি হামিদার উপরের ঘরে প্রবেশ করিয়া তাহাতে উপবেশন করিলাম। ঐ ঘরটির অবস্থা কিরূপ, তাহার পরিচয় বিশেষরূপে প্রদান না করিয়া কেবল এই মাত্র বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, কলিকাতায় যে সকল বাড়ীতে বাইজীগণ বাস করিয়া থাকেন, তাহাদিগের “মজুরা”র ঘর যেরূপ, বা যেরূপ উপাদানে প্রায় সজ্জিত থাকে, এই ঘরটিও প্রায় সেইরূপ অনুকরণে সজ্জিত। আমি সেই ঘরের মধ্যস্থিত বিস্তৃত বিছানার উপর উপবেশন করিলে, হামিদা বিশেষ ব্যগ্রতার সহিত আমাকে জিজ্ঞাসা করিল, “এরূপ অসময়ে এখানে আপনার পদার্পণ হইল কেন?” 

আমি। বিশেষ প্রয়োজন আছে বলিয়া। 

হামিদা। কি প্রয়োজন, তাহা জানিতে পারি না কি? 

আমি। যদি জানিতেই না পারিবে, তাহা হইলে আর আমি এখানে আসিব কেন? তোমাকে বলিব বলিয়াই এখানে আসিয়াছি। 

হামিদা। বলুন। 

আমি। তুমি মেহেরুন্নেসার কোনরূপ সন্ধান পাইয়াছ কি? 

হামিদা। না মহাশয়, আমি তাহার কিছুই সন্ধান করিয়া উঠিতে পারি নাই। আপনি তাঁহার কোন সন্ধান পাইয়াছেন কি? 

আমি। না, এখনও পাই নাই, কিন্তু পাইবার খুব সম্ভাবনা আছে। যদি আমি তাহার কোনরূপ সন্ধান করিতে পারি, তাহা হইলে তুমি তাহাকে কি করিবে? 

হামিদা। আপন কন্যাকে আর কি করিয়া থাকে? আমি তাহাকে আপন বাড়ীতে আনিব। 

আমি। তুমি বিয়াম নামক কোন ব্যক্তিকে চিন কি? 

হামিদা। না, আমি চিনি না, কিন্তু তাহার নাম শুনিয়াছি। মেহেরুন্নেসাই আমাকে তাহার সমস্ত বিষয় বলিয়াছে।

আমি। যদি মেহেরুন্নেসাকে পাওয়া যায়, তাহা হইলে তুমি বিয়ামের সহিত তাহার বিবাহ দিতে প্রস্তুত আছ?

হামিদা। আমি প্রস্তুত থাকিলে কিছুই হইবে না। ইহাতে মেহেরুন্নেসার অভিমত চাই। সে আমাকে বলিয়াছে, ও আপনিও তাহা অবগত আছেন যে, সে বিয়ামের সহিত বিবাহ করিতে সম্মত নহে। এই নিমিত্তই সে তাহার ঘর হইতে পলায়ন করিয়াছিল। 

আমি। সে যাহা হউক, যে মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছিল, সেই মৃতদেহ দেখিয়া তোমার প্রথমে কি অনুমান হইয়াছিল?

হামিদা। আমার মনে হইয়াছিল, উহা আমার কন্যা মেহেরুন্নেসার মৃতদেহ। 

আমি। আরও তোমার মনে হইয়াছিল, বিয়াম উহাকে হত্যা করিয়াছে? 

হামিদা। না, তখন তাহা আমার মনে উদিত হয় নাই, কারণ আমি সেই সময় অবগত ছিলাম না যে, বিয়ামের দ্বারা সে প্রতিপালিতা হইতেছিল। 

আমি। মেহেরুন্নেসা যে মরে নাই, এ সন্দেহ এখন তোমার মিটিয়া গিয়াছে? 

হামিদা। তাহা গিয়াছে বৈকি। মৃতদেহ পাইবার পরে যখন তাহাকে জীবিত অবস্থায় দেখিয়াছি, তখন আর কি করিয়া বলিব যে, সে মরিয়া গিয়াছে? 

আমি। তোমার বড় কন্যা কোথায়, তাহা কিছু বলিতে পার? 

হামিদা। কে আয়েষা! না মহাশয়, তাহার কথা আমি কিছুই অবগত নহি। যে পৰ্য্যন্ত আমি মেহেরুন্নেসাকে দেখিতে পাইয়াছি, সেই পর্য্যন্তই আমার ইহা দৃঢ় বিশ্বাসরূপে পরিণত হইয়াছে যে, ঐ মৃতদেহ আমার কন্যা আয়েষার। 

আমি। আয়েষা ও মেহেরুন্নেসা উভয়েই কি দেখিতে একই প্রকার? 

হামিদা। আমাকে যেরূপ দেখিতেছেন, তাহারাও দেখিতে ঠিক সেইরূপ। তবে আমার বয়ঃক্রম কিছু অধিক হইয়াছে, আর তাহারা আমার কন্যা, এই মাত্র প্রভেদ। 

আমি। তাহা হইলে, তোমার বিশ্বাস যে, আয়েষারই মৃতদেহ তুমি দেখিয়াছ? 

হামিদা। সে বিষয়ে আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। 

আমি। আর যদি আয়েষা জীবিতা থাকে? 

হামিদা। এরূপ ভাগ্য আমার কি আর হইবে? আমি কি আর তাহাকে দেখিতে পাইব? 

আমি। পাইবে, সে জীবিতা আছে। 

হামিদা। কোথায় মহাশয়? 

আমি। যেখানে হউক, সে মরে নাই, সে জীবিতা আছে। গত কল্য আমি তাহাকে দেখিয়াছি। 

হামিদা। মহাশয় আপনি আমার সহিত উপহাস করিবেন না, প্রকৃতই কি আমার আয়েষা জীবিতা আছে?

আমি। তোমার সহিত আমি উপহাস করিব কেন? সে প্রকৃতই জীবিতা আছে। আমি তোমার নিকট যে নিমিত্ত আগমন করিয়াছি, তাহা যদি আমাকে যথার্থ কহ, তাহা হইলে, আমি আয়েষাকে আনিয়া তোমার হস্তে এখনই সমর্পণ করিব। আর যদি মিথ্যা কথা বলিয়া আমাকে বুঝাইয়া দিবার চেষ্টা কর, তাহা হইলে জানিও, আয়েষা বা মেহেরুন্নেসাকে আর দেখিতে পাইবে না। 

হামিদা। আমি মিথ্যা কথা কহিব না, আপনি যাহাই কেন জিজ্ঞাসা করুন না, সমস্তই প্রকৃত কথা কহিব।

আমি। দুই চারিটি কথা জিজ্ঞাসা করিলেই তাহা আমি এখনই জানিতে পারিব, কারণ তোমার অনেক বিষয় আমি অবগত আছি। 

হামিদা। আমি মিথ্যা কহিব কেন? 

আমি। তোমার মোট কয়টি কন্যা? 

হামিদা। দুইটি; আয়েষা ও মেহেরুন্নেসা, একথা তো আমি আপনাকে পূৰ্ব্ব হইতেই বলিয়াছি। 

আমি। পূৰ্ব্ব হইতেই আমার নিকট মিথ্যা কথা বলিয়াছ, ও এখনও সেই মিথ্যা কথার কিছুমাত্র পরিবর্তন করিতেছ না। 

হামিদা। কেন মহাশয়, আমি কি মিথ্যা কথা কহিলাম? 

আমি। তোমার দুইটি কন্যা নহে। 

হামিদা। কয়টি? 

আমি। সবশুদ্ধ তোমার যে কয়টি কন্যা হইয়াছে, তাহার সঠিক সংবাদ আমি এ পর্যন্ত প্রাপ্ত হই নাই। তবে এখন যতদূর পর্যন্ত জানিতে পারিয়াছি, তাহাতে তোমার কন্যা তিনটি। 

হামিদা। মিথ্যা কথা। একথা আপনাকে কে বলিল? 

আমি। মেহেরুন্নেসা বলিয়াছে, আয়েষা বলিয়াছে, আরও এক ব্যক্তি যে সমস্ত বিষয় অবগত আছে, সেও বলিয়াছে। 

হামিদা। মহাশয়, সে অতিশয় গোপনীয় কথা, আমি সে সকল বিষয় কিরূপে প্রকাশ করি? 

আমি। প্রকাশ না করিলে চলিবে না, বিশেষ যখন আমি তোমার প্রায় সমস্ত বিষয়ই অবগত হইতে পারিয়াছি, তখন তুমি আমার নিকট কোন কথা গোপন করিতে পারিবে না। 

হামিদা। আপনি যখন সমস্ত বিষয় অবগত হইতে পারিয়াছেন বলিতেছেন, তখন আমিও আপনার নিকট কোন কথা আর গোপন করিব না। কিন্তু মহাশয় আপনি প্রতিজ্ঞা করুন যে, ঐ সকল কথা আপনি কাহার নিকট প্রকাশ করিবেন না। 

আমি। দেখ হামিদা, আমি তোমার নিকট কোনরূপ প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হইতে পারি না, তবে এই মাত্র বলিতে পারি যে, অপর কোন ব্যক্তির নিকট এই সকল কথা প্রকাশ করিবার কোনরূপ প্রয়োজন আমি দেখিতেছি না, কিন্তু পরিশেষে প্রয়োজন হইবে কিনা, তাহাও আমি বলিতে পারি না। তবে আমি তোমাকে এইমাত্র বলিতে পারি যে, বিনা প্রয়োজনে ঐ সকল কথা আমি কাহার নিকট প্রকাশ করিব না। আরও এক কথা তুমি মনে রাখিও, তুমি আমার নিকট তোমার সমস্ত বিষয় যদি অকপটে প্রকাশ না কর, তাহা হইলে আমিও কোন কথা তোমাকে বলিব না, আয়েষা বা মেহেরুন্নেসার কোনরূপ অনুসন্ধান তুমি আমার নিকট হইতে কিছুতেই প্রাপ্ত হইবে না। ইহাই বিবেচনা করিয়া তুমি তোমার ইচ্ছানুযায়ী পন্থা অবলম্বন করিতে পার। 

হামিদা। আচ্ছা মহাশয়, আমি আর কোন কথা আপনার নিকট গোপন করিবার চেষ্টা করিব না। যাহা ইচ্ছা হয়, তাহাই আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিতে পারেন। 

আমি। আচ্ছা, এখন বল, তোমার গর্ভে কয়টি কন্যা জন্মগ্রহণ করে? 

হামিদা। তিনটি। 

আমি। কে কে? 

হামিদা। আয়েষা, মেহেরুন্নেসা ও লুৎফুন্নেসা। 

আমি। ইহাদিগের মধ্যে সকলের বড় কে? 

হামিদা। লুৎফন্নেসা। 

আমি। সে এখন কোথায়? 

হামিদা। তাহা জানিনা। 

আমি। তাহার নাম আমার নিকট এ পর্যন্ত প্রকাশ কর নাই কেন? 

হামিদা। সে অতিশয় গোপনীয় কথা, এই নিমিত্ত উহা আপনার নিকট প্রকাশ করি নাই। আপনি কেন, এ পৰ্য্যন্ত আমি অপর কাহার নিকট ঐ কথা বলি নাই। লুৎফন্নেসা নাম্নী যে আমার একটি কন্যা হইয়াছিল, তাহা দুই একজন ব্যতীত অপর আর কেহ যে অবগত আছে, তাহা আমার বোধ হয় না। আমার অপর কন্যাদ্বয় যে তাহা অবগত আছে কি না, তাহা ত আমি জানি না। 

আমি। বিশেষ গোপনীয় কথা হইলেও তাহা এখন আমার নিকট প্রকাশ করিতে হইবে। 

হামিদা। তাহা কাজেই করিব। ঐ সকল কথা বলিতে হইলে, পূর্ব্বে সংক্ষেপে আমার পরিচয় প্রদান করা 

আবশ্যক। 

২৮১ 

আমি। ভালই, তুমি তোমার সমস্ত পরিচয় আমাকে প্রদান কর। তাহা হইলেই আমি অনায়াসেই সমস্ত বুঝিয়া উঠিতে পারিব। 

হামিদা। মহাশয় আমি আমার সমস্ত পরিচয় প্রদান করিতেছি। কিন্তু উহা অতিশয় গোপনীয় কথা, যাহাতে এই সকল বিষয় প্রকাশ না হয়, সে বিষয়ে আপনি বিশেষরূপে দৃষ্টি রাখিবেন। আমার নাম হামিদা নহে বা আমি জাতিতে মুসলমানও নহি। আমি কোন সম্ভ্রান্ত ইহুদির কন্যা। আমার পিতার দেশব্যাপী সওদাগরি ব্যবসা আছে। সওদাগর মহলে তিনি বিশেষরূপে পরিচিত ও সকলেই তাঁহাকে বিশেষরূপ মান্য করিয়া থাকেন। আমিই তাঁহার একমাত্র কন্যা। হিন্দুদিগের ন্যায় বাল্যকালেই তিনি আমায় বিবাহ দেন। যাহার সহিত আমার বিবাহ হয়, তিনি একজন দেশ বিখ্যাত সওদাগরের পুত্র। আমার বিবাহের পর আমি আমার স্বামীর বাড়ীতেই অবস্থিতি করিতে থাকি। সময় মত তাঁহার ঔরসে আমার একটি কন্যা হয়, কিন্তু ঐ কন্যা জন্মাইবার সঙ্গে সঙ্গে আমিও বিধবা হই। আমি যে কেবল মাত্র বিধবাই হই তাহা নহে, বিধবা হইবার সঙ্গে সঙ্গেই আমার চরিত্র কলুষিত হইয়া পড়ে। অপর একজন ইহুদি যুবক আমাকে আমার ঘরের বাহির করিয়া লইয়া যায়। যে সময় আমি আমার স্বামীর ঘর পরিত্যাগ করি, সেই সময় আমার প্রথমা কন্যাটি সেই স্থানেই রহিয়া যায়। 

যে ইহুদি আমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছিল। ক্রমে তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া আমি জনৈক মুসলমানের আশ্রয় গ্রহণ করি ও সেই সময় হইতেই হামিদা বলিয়া অভিহিত হইতে থাকি। সেই সময় ক্রমে ক্রমে আয়েষা ও মেহেরুন্নেসা নাম্নী অপর দুইটি বালিকাও জন্মগ্রহণ করে। ইহর পর সেই মুসলমানটিকেও আমি পরিত্যাগ করিয়া, প্রকাশ্য বার- বনিতার জীবন অবলম্বনে দিন যাপন করিতে আরম্ভ করি। আমার কন্যাদ্বয়কেও সেইরূপে জীবনযাপন করাইতে মনস্থ করিয়াছিলাম। কিন্তু মেহেরুন্নেসা বাল্যকাল হইতেই অপহৃত হয় বলিয়া, তাহাকে আর সে পথ প্রদর্শন করিতে সমর্থ হই না। আয়েষাকে সেই পথ অবলম্বন করাইয়াছিলাম, ও তাহারই উপার্জ্জনের উপর নির্ভর করিয়া দিন যাপন করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলাম। কিন্তু সেও পরিশেষে আমাকে পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যায়। সুতরাং তাহাদিগের উভয়ের আশাই আমাকে পরিত্যাগ করিতে হইয়াছে। কিন্তু যদি আপনি আমার উপর কৃপা দৃষ্টি করেন, তাহা হইলে পুনরায় আমি উভয়কেই যে প্রাপ্ত হইব, সে বিষয়ে আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। 

আমি। তোমার শ্বশুরবাড়ী কোথায় ছিল? 

হামিদা। এই সহরেই। 

আমি। তাহার এখন কে আছেন? 

হামিদা। তাহা আমি বলিতে পারি না, কারণ তাহাদিগের কোন সন্ধান আমি রাখি না। 

আমি। তোমার প্রথমা কন্যাটি কোথায়? 

হামিদা। তাহা আমি বলিতে পারি না। 

আমি। সে জীবিতা আছে কি? 

হামিদা। তাহাও আমি জানি না। 

আমি। তুমি কত দিবস তাহার কোনরূপ সন্ধান লও নাই? 

হামিদা। ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিবার পর আর আমি তাহার কোনরূপ সন্ধান লই নাই। কিন্তু পাঁচ বৎসর গত হইল, একবার তাহার সন্ধান পাইয়াছিলাম। 

আমি। কিরূপ সন্ধান পাইয়াছিলে? 

হামিদা। ঐ বাড়ীর একটি পরিচারিকার সহিত হঠাৎ আমার সাক্ষাৎ হয়, তাহাকেই আমি ঐ কন্যাটির কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। 

আমি। কি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে? 

হামিদা। আমার স্বামীর নাম করিয়া জিজ্ঞাসা করি, তাহার যে একটি বালিকা ছিল, সে কত বড় হইয়াছে, ও 

কেমন আছে। 

আমি। তাহাতে সে কি বলে? 

হামিদা। তাহাতে সে কহে, সে বড় হইয়াছে, ভাল আছে, ও তাহার বিবাহ হইয়াছে। এখন সে স্বামীর ঘর করিয়া থাকে। 

আমি। তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে, কোথায় তাহার বিবাহ হইয়াছে? 

হামিদা। না। 

আমি। কাহার সহিত বিবাহ হইয়াছে? 

হামিদা। তাহাকে আমি এ সকল কথা জিজ্ঞাসা করি না। 

আমি। যে পৰ্য্যন্ত তুমি তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া আসিয়াছ, তাহার পর আর তুমি তাহাকে কখন দেখিয়াছ?

হামিদা। না। 

আমি। তাহা হইলে এখন সে দেখিতে কেমন হইয়াছে ও কত বড়টি হইয়াছে, তাহা তুমি বলিতে পার না?

হামিদা। না। 

আমি। তুমি তোমার শ্বশুরবাড়ী আমাকে দেখাইয়া দিতে পারিবে? 

হামিদা। তাহা পারি। দিনমানে আমি সেইস্থানে যাইব না, রাত্রিকালে গাড়ীর মধ্যে থাকিয়া ঐ বাড়ী চুপে চুপে আমি আপনাকে দেখাইয়া দিতে পারি। 

আমি। আজ রাত্রিতেই তবে তোমাকে আমার সহিত গমন করিতে হইবে। 

হামিদা। তাহা যাইব। কিন্তু আমার আয়েষাকে কখন আমি প্রাপ্ত হইব?

আমি। অদ্য রাত্রিতেই আয়েষার সহিত আমি তোমার সাক্ষাৎ করাইব। 

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

সেই দিবস রাত্রিতেই হামিদা আমার সঙ্গে গমন করিয়া তাহার শ্বশুরালয় আমাকে দেখাইয়া দিল। আমি সেই প্রদেশে কেবলমাত্র গমন করিয়াছি, কাহার সহিত আলাপ পরিচয় নাই। কাহাকে জিজ্ঞাসা করিলে আমি ঐ বাড়ীর আভ্যন্তরিক অবস্থা সকল অবগত হইতে পারিব তাহার কিছুই জানি না; সুতরাং আমাকে সেই স্থানের স্থানীয় পুলিসের সাহায্য লইবার আবশ্যক হইয়া পড়িল। আমার নিকট সেই প্রদেশীয় পুলিণের সর্ব্বপ্রধান কর্ম্মচারীর এক পত্র ছিল, তাহা পাঠকগণ অবগত আছেন। ঐ পত্রসহ আমি সেই থানার ভার-প্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট গমন করিলাম ও তাহাকে উহা দেখাইলে, তিনি তাঁহার সাধ্যমত আমাকে সাহায্য করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। 

হামিদার সহিত আমি যে প্রতিজ্ঞাসূত্রে আবদ্ধ হইয়াছিলাম, সেই রাত্রিতেই আমি আমার সেই প্রতিজ্ঞা প্রতিপালন করিলাম। আয়েষার সহিত তাহাকে সাক্ষাৎ করাইয়া দিলাম, কিন্তু তাহাকে তাহার বাড়ীতে লইয়া যাইতে দিলাম না। কারণ আমাদিগের বিশ্বাস জন্মিয়াছিল, যে, আয়েষাকে কিয়ৎপরিমাণে আমাদিগের হস্তগত করিয়া রাখিতে পারিলে, অনেক প্রকারে হামিদার সাহায্য প্রাপ্ত হইতে পারিব। হামিদা আয়েষাকে দেখিতে পাইল সত্য, কিন্তু সে যে এখন কাহার আশ্রিতা, তাহা তাহাকে বুঝিতে দিলাম না। সেই থানার যে ভার-প্রাপ্ত কর্মচারীর আমি সাহায্য গ্রহণ করিয়াছিলাম, তিনি নিজে অনুসন্ধান করিয়া পর দিবস সন্ধ্যার সময় আমাকে একটি বৃদ্ধ মুসলমানকে দেখাইয়া দিলেন ও কহিলেন, যে ইহুদি বাড়ীর সংবাদ গ্রহণের আবশ্যক, এই বৃদ্ধ মুসলমান অনেক দিবস হইতে সেই বাড়ীতে চাকরী করিতেছে। যে সময় হামিদা ঘরের বাহির হইয়া যায়, সেই সময়ও এই ব্যক্তি ঐ বাড়ীতে চাকরি করিত। 

কর্ম্মচারীর এই কথা শুনিয়া আমি ঐ বৃদ্ধের পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিলাম। দেখিলাম, সে একটি কাফিখানার মধ্যে গিয়া উপস্থিত হইল। আমিও তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ সেই কাফিখানার ভিতর প্রবিষ্ট হইয়া যে স্থানে সেই বৃদ্ধ উপবেশন করিয়াছিল, সেই স্থানে গিয়া উপবেশন করিলাম। দোকানদার সেই বৃদ্ধকে এক পেয়ালা কাফি আনিয়া দিল। কাফির দাম আমি প্রদান করিলাম। কাফির দাম আমাকে প্রদান করিতে দেখিয়া সেই বৃদ্ধ কহিল, “আপনি আমার কাফির দাম প্রদান করিলেন কেন?” 

আমি। আমি এই স্থানে প্রায়ই আসিয়া থাকি, ও এইরূপে অনেককেই কাপি খাওয়াইয়া থাকি। এই নিমিত্ত তোমার কাফির দামও আমি প্রদান করিয়াছি। আরও ইচ্ছা কর, ত পান কর, তাহার দামও আমি প্রদান করিব। 

বৃদ্ধ। আপনি পান করিলেন না? 

আমি। আমার শরীর আজ কিছু গরম বোধ হইতেছে, সেই জন্য আজ আমি আর উহা পান করিব না? বৃদ্ধ আপনি কোথায় থাকেন। 

আমি। আমি এই সহরেই থাকি। কেন তুমি কি আমাকে চিন না? 

বৃদ্ধ। না মহাশয়, আমি আপনাকে চিনিতে পারিতেছি না। 

আমি। আমি তোমাকে চিনি। 

বৃদ্ধ। আপনি আমাকে চিনেন? 

আমি। হাঁ, তুমি ইহুদির বাড়ীতে কর্ম্ম কর। 

বৃদ্ধ। আজ্ঞে হাঁ, আমি সেই স্থানে কৰ্ম্ম করিয়া থাকি। 

আমি। তোমার নিকট আমি কিয়ৎ পরিমাণে ঋণগ্রস্ত আছি, তাহা তোমার মনে হয় কি? 

বৃদ্ধ। না মহাশয়, আপনি আমার নিকট ঋণগ্রস্ত থাকিবেন কেন? 

আমি। তোমার মনে নাই, কিন্তু আমি ভুলি নাই। আজ কয়েক মাস হইল, আমি বিশেষ কোন প্রয়োজনবশতঃ তোমার মনিবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়াছিলাম, তোমার মনিব সেই সময় বাহিরে ছিলেন না, অন্দরে ছিলেন। তুমিই গিয়া তাঁহাকে সংবাদ প্রদান কর ও তিনি আসিয়া আমার সহিত সাক্ষাৎ করেন। এই কার্য্যের নিমিত্ত আমি তোমাকে কিছু পারিতোষিক প্রদান করিতে চাহিয়াছিলাম; কিন্তু সেই সময় আমার নিকট টাকা না থাকায়, আমি তোমাকে কিছুই প্রদান করিয়া আসিতে পারিয়াছিলাম না। তাহার পর তোমার সহিত আর আমার সাক্ষাৎ হয় নাই, সুতরাং আমার কথাও আমি রক্ষা করিতে পারি নাই। আজ তোমার সহিত হঠাৎ সাক্ষাৎ হওয়ায় আমি বিশেষরূপে সন্তুষ্ট হইয়াছি ও এত দিবস পরে আমার অঙ্গীকৃত ঋণ হইতেও মুক্তিলাভ করিবার সময় পাইয়াছি। 

এই বলিয়া আমি আমার পকেট হইতে পাঁচটি টাকা বাহির করিয়া ঐ বৃদ্ধের হস্তে প্রদান করিলাম। ঐ সামান্য অর্থ পাইয়াই বৃদ্ধ যে কতদূর সন্তুষ্ট হইল, তাহা বলিতে পারি না। 

বৃদ্ধ। আপনারা বড়লোক, আপনারা সহজে কোন কথা ভুলেন না, কিন্তু আমরা দরিদ্র লোক, আমরা সহজেই সমস্ত ভুলিয়া যাই। 

আমি। তোমার মনিব ভাল আছেন? 

বৃদ্ধ। আছেন। 

আমি। তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিবার আমার প্রয়োজন আছে। আর এক দিবস আমি তোমাদের বাড়ীতে গমন করিব। 

বৃদ্ধ। আপনি যখন গমন করিবেন, তখনই আমি আমার মনিবকে ডাকিয়া দিব। আমি অনেক দিবস পর্যন্ত ঐ বাড়ীতে কার্য করিতেছি বলিয়া, আমার কোন স্থানে গমন করিতে নিষেধ নাই। এমন কি যখন আমার মনিব শয়ন করিয়া থাকেন, সেই সময়ও আমি তাঁহার শয়ন ঘরে প্রবেশ করিয়া থাকি। 

আমি। তুমি যে অনেক দিবস হইতে ঐ বাড়ীতে আছ, তাহা আমি অবগত আছি। কারণ যে সময় তোমার মনিবের বাড়ী হইতে একটি স্ত্রী বাহির হইয়া যায়, সেই সময় তোমার মনিবের সঙ্গে আমি তাহার অনেক অনুসন্ধান করিয়াছিলাম। সেই সময় আমি তোমাকে সেই স্থানেই দেখিয়াছিলাম। সে অনেক দিবসের ঘটনা। 

বৃদ্ধ। সে অনেক দিবসের কথা। এত দিবসের কথাও আপনার মনে আছে? 

আমি। মনে আর না থাকিবে কেন? ভাল, যখন তোমার সহতি সাক্ষাৎ হইল, তখন একটি পুরাতন কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, যে সময় সেই স্ত্রীলোকটি তোমার মনিবের বাড়ী হইতে বহির্গত হইয়া যায়, সেই সময় সে তাহার একটি কন্যাকে ফেলিয়া গিয়াছিল। এখন সেই কন্যাটি কত বড় হইয়াছে? 

বৃদ্ধ। সে বড় হইয়াছে, তাহার বিবাহ হইয়া গিয়াছে। এখন সে তাহার শ্বশুর বাড়ীতে বাস করে। 

আমি। তাহার শ্বশুরবাড়ী কোথায়?

বৃদ্ধ। এই নগরেই তাহার শ্বশুরবাড়ী।

আমি। এই নগরের কোন্ স্থানে? 

বৃদ্ধ। আমি সেই স্থানের নাম জানি না। তবে যদি ইচ্ছা করেন, তাহা হইলে আমি ঐ বাড়ী আপনাকে দেখাইয়া দিতে পারি। 

আমি। ঐ বাড়ী দেখিবার আমার একটু প্রয়োজন ছিল। যদি তুমি এখন আমাকে ঐ বাড়ী দেখাইয়া দিতে পার, তাহা হইলে আমি তোমাকে পাঁচ টাকা পুরস্কার দিতে পারি। 

বৃদ্ধ। আপনার কাছে আর পুরস্কার কি লইব? চলুন এখনই আমি ঐ বাড়ী দেখাইয়া দিতেছি। কিন্তু উহা এখান হইতে অনেক দূরে। 

আমি। আমার গাড়ি আছে, যতই দূর হউক না কেন, কতক্ষণ লাগিবে? 

এই বলিয়া আরও পাঁচটি টাকা আমি বৃদ্ধের হস্তে প্রদান করিলাম। সে উহা গ্রহণ করিয়া উত্থিত হইল ও কহিল, “তবে আসুন, আমি এখনই গিয়া ঐ বাড়ী দেখাইয়া দিতেছি।” 

আমিও তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ উঠিয়া তাহার সহিত গমন করিতে লাগিলাম। রাস্তায় একখানি গাড়ি আমি পূৰ্ব্ব হইতেই রাখিয়া দিয়াছিলাম, আমরা উভয়েই ঐ গাড়ীতে আরোহণ করিয়া বৃদ্ধের নির্দেশমত গমন করিতে লাগিলাম। যাইবার সময় আমি সেই বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “ঐ বাড়ীতে তোমার যাতায়াত আছে?” 

বৃদ্ধ। আমি প্রায়ই ঐ স্থানে গমন করিয়া থাকি। ঐ বাড়ীতে যাইবার প্রয়োজন হইলে আমার মনিব আমাকেই ঐ স্থানে পাঠাইয়া থাকেন। 

আমি। বাড়ীর ভিতর তুমি যাও? 

বৃদ্ধ। বাড়ীর ভিতর যাই বৈ কি। 

আমি। সেই বালিকার সহিত তোমার দেখাশুনা হয়? 

বৃদ্ধ। কেন হইবে না? 

আমি। শেষে কত দিবস হইবে তুমি সেইখানে গিয়াছিলে? 

বৃদ্ধ। ২০। ২২ দিন হইবে, আমি গিয়াছিলাম। তাহার পর আর যাই নাই।

আমি। সেই দিবস সেই বালিকার সহিত তোমার সাক্ষাৎ হইয়াছিল? 

বৃদ্ধ। তাহার নিমিত্ত একটি দ্রব্য লইয়া আমি সেইস্থানে গমন করিয়াছিলাম, ও ঐ দ্রব্য তাহার হস্তে প্রদান করিয়া আসি। 

আমি। আমি তোমাকে আর একটি সামান্য কার্য্যের ভার দিতেছি, তাহা তুমি করিতে পারিবে কি? যদি পার, তাহা হইলে আরও দশটি টাকা আমি তোমাকে প্রদান করিব। 

বৃদ্ধ। আমায় কি কার্য্য করিতে হইবে? 

আমি। আমি ঐ বাড়ীর একটু দূরে থাকিব। তুমি গাড়ি হইতে নামিয়া যেরূপ ভাবে ঐ বাড়ীতে গমন করিয়া থাক, সেইরূপ ভাবে ঐ বাড়ীর ভিতর গমন করিবে। যদি কেহ তোমাকে বাড়ীর ভিতর গমন করিতে নিষেধ করে, তাহা তুমি শুনিও না। 

বৃদ্ধ। বাড়ীর ভিতর গমন করিয়া আমাকে কি করিতে হইবে? 

আমি। সেই বালিকাটির সহিত একবার সাক্ষাৎ করিবে। 

বৃদ্ধ। তাহাকে কিছু বলিতে হইবে, কি না? 

আমি। তাহাকে কোন কথা বলিবার প্রয়োজন নাই, কেবলমাত্র তুমি নিজ চক্ষে তাহাকে দেখিয়া আসিবে।

বৃদ্ধ। তিনি যদি জিজ্ঞাসা করেন যে, তুমি কি নিমিত্ত আসিয়াছ, তাহা হইলে আমি কি বলিব? 

আমি। তাহা হইলে এই বলিও যে, আজ কয়েক দিবস তোমার মনিব তাহার সংবাদ পান নাই, এই নিমিত্ত তিনি কেমন আছেন তাহাই জানিবার নিমিত্ত তোমাকে পাঠাইয়া দিয়াছেন। এই বলিয়া তুমি চলিয়া আসিও। কিন্তু বালিকাটিকে তোমার নিজের চক্ষে দেখিয়া আসা চাই। 

বৃদ্ধ। এ অতি সামান্য কথা। ইহা আর আমি পারিব না? আমি এখনই গিয়া তাহাকে দেখিয়া আসিতেছি। 

এই বলিয়া বৃদ্ধ গাড়ি হইতে অবতরণ করিল। আমি দশটি টাকা তাহার হস্তে প্রদান করিলাম। বলা বাহুল্য আমিও তাহার অলক্ষিতে ঐ গাড়ি হইতে অবতরণ করিয়া তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিলাম। সে কাহাকেও কিছু না বলিয়া একটি বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিল, আমিও নিকটবর্ত্তী এক স্থানে দণ্ডায়মান থাকিয়া তাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। প্রায় অর্দ্ধ ঘণ্টা পরে ঐ বৃদ্ধ সেই বাড়ী হইতে বহির্গত হইয়া আমার গাড়ির দিকে গমন করিতে লাগিল। আমিও তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিয়া সেই গাড়িতে গিয়া আরোহণ করিলাম। বৃদ্ধও আসিয়া সেই গাড়িতে উঠিল। 

আমি। কেমন, ঐ বালিকার সহিত তোমার সাক্ষাৎ হইল! 

বৃদ্ধ। না। 

আমি। কেন? 

বৃদ্ধ। সে ঐ বাড়ীতে নাই।

আমি। কোথায় আছে? 

বৃদ্ধ। তাহা বলিতে পারি না। 

আমি। কি জানিতে পারিলে? 

বৃদ্ধ। কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিলাম না। 

আমি। কেন? 

বৃদ্ধ। কেহ কহিল, বিসূচিকা রোগে তাহার মৃত্যু হইয়াছে। কেহ কহিল, সে বাহির হইয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে। যে ঘরে সে থাকিত, আমি সেই ঘর পর্য্যন্ত গমন করিয়াছিলাম, সেই ঘরে কেহ নাই, তালা বদ্ধ আছে। 

আমি। যেরূপ অবস্থা দেখিলে, তাহাতে তোমার কি অনুমান হয়? 

বৃদ্ধ। আমি কিছুই অনুমান করিতে পারিতেছি না। আমাকে ছাড়িয়া দিন, আমার মন নিতান্ত খারাপ হইয়া গিয়াছে। এখনই গিয়া আমি এই সংবাদ আমার মনিবকে প্রদান করি। 

ব্যস্ত হইবার প্রয়োজন নাই, তোমার মনিবকে সংবাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয়, আমিও তোমার সঙ্গে গমন করিব ও তাঁহাকে এই সংবাদ প্রদান করিব। আমি শুনিয়াছি, সে একস্থানে আছে, তুমি আমার সহিত সেই স্থানে গমন করিয়া তাহাকে দেখিয়া লও, তাহা হইলেই বুঝিতে পারিবে যে, সে মরিয়া গিয়াছে, কি বাহির হইয়া গিয়াছে। তুমি তাহাকে দেখিলে চিনিতে পারিবে ত? 

বৃদ্ধ। আমি তাহাকে দেখিলে আর চিনিতে পারিব না? তাহার ছায়া দেখিলে আমি তাহাকে চিনিতে পারিব। 

বৃদ্ধের সহিত এই সকল কথা হইবার পর আমি তাহাকে লইয়া বিয়ামের বাড়ীতে গমন করিলাম ও আয়েষাকে ডাকাইয়া বৃদ্ধকে দেখাইলাম। বৃদ্ধ দূর হইতে আয়েষাকে দেখিয়াই কহিল, “হাঁ মহাশয়! এই তিনি!” 

এই বলিয়া বৃদ্ধ আয়েষার নিকটবর্তী হইল ও তাহাকে বিশেষ করিয়া দেখিয়া কহিল, “ইনি দেখিতে ঠিক সেইরূপ, কিন্তু ইনি তিনি নহেন।” 

আমি। তুমি বেশ চিনিতে পারিয়াছ যে ইনি তিনি নহেন? 

বৃদ্ধ। হাঁ মহাশয়, আমি বেশ চিনিয়াছি। আমি তাহাকে বাল্যকাল হইতে দেখিয়া আসিতেছি বলিয়াই, আমি চিনিতে পারিতেছি যে ইনি তিনি নহেন, কিন্তু উভয়ের মধ্যে কিছুমাত্র প্রভেদ নাই। যাহারা দুই একবার মাত্র দেখিয়াছে, তাহারা কখনই ঠিক চিনিয়া উঠিতে পারিবে না। 

আয়েষা যে হামিদার প্রথমা কন্যা নহেন, তাহা আমরা পূর্ব্ব হইতেই জানিতাম। এখন বৃদ্ধের কথায় বেশ বুঝিতে পারিলাম যে, হামিদার কন্যা প্রায়ই দেখিতে ঠিক একই প্রকার। 

এই অবস্থা অবগত হইতে পারিয়াই আমি সেই বৃদ্ধের সহিত তাহার মনিবের বাড়ী গিয়া উপস্থিত হইলাম। বৃদ্ধ আমাকে তাহার মনিবের নিকট লইয়া গেল ও কহিল, “এই ব্যক্তি আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাহেন।” সেই ইহুদি আমাকে তাঁহার সন্নিকটে বসিবার আসন প্রদান করিলেন ও আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাহেন?” 

আমি। হাঁ। 

ইহুদি। কি প্রয়োজন বলিতে পারেন? আপনাকে ইতিপূর্ব্বে আর কখন দেখিয়াছি বলিয়া মনে হয় না। আপনি কে?

আমি। আমি একজন সরকারী কর্ম্মচারী। 

ইহুদি। সরকারী কর্মচারী—কোন্ অফিসে কর্ম্ম করিয়া থাকেন? 

আমি। আমি পুলিস-বিভাগে কার্য্য করি। 

ইহুদি। আপনার কি প্রয়োজন? 

আমি। একটি স্ত্রীলোকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছে, পুলিস তাহার অনুসন্ধান করিতেছেন, একথা আপনি শুনিয়াছেন কি? 

ইহুদি। হাঁ, একখানি সংবাদপত্রে উহা পাঠ করিয়াছিলাম। 

আমি। যে স্ত্রীলোকটি হত হইয়াছে, সে যে কে, তাহা আপনি কিছু শুনিয়াছেন কি? 

ইহুদি। না, তাহা আমি অবগত নহি। 

আমি। আমি একটি কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা করিতে চাই। 

ইহুদি। আপনি অবলীলাক্রমে জিজ্ঞাসা করিতে পারেন। 

আমি। লুৎফন্নেসা এখন কোথায়? 

ইহুদি। আমাদিগের বাড়ীতে এরূপ কোন স্ত্রীলোক ত নাই। 

আমি। আছে বৈকি? আমি বিশেষ না জানিয়া আপনাকে এই কথা জিজ্ঞাসা করিতেছি না। কন্যার পিতা, ঐ কন্যার নিতান্ত শৈশবাবস্থায় ইহ-জীবন পরিত্যাগ করেন। 

ইহুদি। হাঁ, হইয়াছে। তাহার নাম তো লুৎফন্নেসা নহে, তবে কেহ কেহ আদর করিয়া তাহাকে ঐ মুসলমান নামে অভিহিত করিত বটে। তাহার কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন কেন? 

আমি। তিনি এখন জীবিত আছেন কি না, আর যদি জীবিত থাকেন, তাহা হইলে এখন তিনি কোথায় আছেন, কেবল তাহাই আমি জানিতে চাই। 

ইহুদি। কারণ? 

আমি। কারণ আর কিছুই নহে, কেহ কেহ কহেন, তিনিই হত হইয়াছেন! 

ইহুদি। সে কি? ইহা কখন হইতে পারে না। তিনি তাঁহার শ্বশুরবাড়ীতে বাস করিতেছেন। 

আমি। তিনি তো সেইস্থানে নাই। 

ইহুদি। এ কথা আপনাকে কে বলিল? 

আমি। আমি সেইস্থানে গিয়াছিলাম। 

ইহুদি। আপনি সেইস্থানে গিয়াছিলেন? 

আমি। কেমল আমি নহে, আপনার বৃদ্ধ পরিচারককেও আমি সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়াছিলাম। তাহাকে একবার জিজ্ঞাসা করিয়া দেখুন না কেন, তাহা হইলেই তো সমস্ত অবগত হইতে পারিবেন। 

বৃদ্ধ নিকটেই ছিল, সেই ইহুদি তাহাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি ইহাঁর সহিত কোন স্থানে গিয়াছিলে?

বৃদ্ধ। গিয়াছিলাম, কিন্তু কন্যাকে দেখিতে পাই নাই। 

ইহুদি। তিনি কোথায় গিয়াছেন, তাহার কিছু অনুসন্ধান করিয়াছিলে? 

বৃদ্ধ। করিয়াছিলাম। কিন্তু ঠিক কিছুই জানিতে পারি নাই। তবে যে ঘরে তিনি থাকিতেন, সেই ঘরের দরজায় তালাবদ্ধ দেখিলাম। তিনি কোথায় গিয়াছেন জিজ্ঞাসা করায়, একজন কহিল, বিসূচিকা রোগে তাহার মৃত্যু হইয়াছে, কিন্তু অপর এক ব্যক্তি কহিল, তিনি ঘরের বাহির হইয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছেন। 

ইহুদি। এ কথা আমাকে বল নাই কেন? 

বৃদ্ধ। এই তো সেইস্থান হইতে আসিতেছি, বলিবার সময় পাই নাই। 

বৃদ্ধের কথা শুনিয়া সেই ইহুদির মনের ভাব যেন কেমন একরূপ পরিবর্ত্তন হইয়া গেল। আরও দুই তিন জন ইহুদিকে তিনি সেইস্থানে ডাকিলেন, তাঁহারা তাহাদিগের নিজের ভাষায় কি কথাবার্তা কহিয়া আমাকে কহিলেন, 

“আপনার কি অনুমান হইতেছে, যে মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছে, তাহা কি তবে তাহারই দেহ?” 

আমি। আমার তো এইরূপ অনুমান হইতেছে। 

ইহুদি। যে মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছে, তাহার কোনরূপ নিদর্শন আছে কি? 

আমি। অপর কোন নিদর্শন নাই; কেবল যেস্থানে ঐ মৃতদেহ পাওয়া যায়, সেইস্থানে একখানি সোণার চিরুণী পাওয়া গিয়াছে। তৎব্যতীত ঐ মৃতদেহের আমি ফটোগ্রাফ রাখিয়াছি। 

এই বলিয়া একখানি ফটোগ্রাফ আমার পকেট হইতে বাহির করিয়া তাহার হস্তে প্রদান করিলাম। তিনি উহা অনেকক্ষণ পর্যন্ত দর্শন করিয়া পরিশেষে কহিলেন, “এখন বুঝিতে পারিতেছি যে, আমাদিগেরই সর্ব্বনাশ হইয়াছে। ইহা লুথুরই ফটোগ্রাফ।” 

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

এই অনুসন্ধানে নিযুক্ত হইবার পর হইতেই যে সকল বিপদে পতিত ও উত্থিত হইয়া কাৰ্য্যক্ষেত্রে বিচরণ করিতেছিলাম, যেরূপ নীচ প্রকৃতিবিশিষ্ট লোকদিগের সংস্রবে থাকিয়া দিন অতিবাহিত করিয়া আসিতেছিলাম, তাহার অনেক বিবরণ পাঠকগণ অবগত হইতে পারিয়াছেন; কিন্তু যে কার্য্য সম্পন্ন করিবার মানসে আমি উহার দিকে একবারের নিমিত্তও দৃষ্টিপাত করি নাই, সেই কার্য্যের কিন্তু কিছুই করিয়া উঠিতে পারিতেছিলাম না। যে পন্থা অবলম্বন করিয়া ক্রমে অগ্রগামী হইতে প্রবৃত্ত হইতেছিলাম, একটু গমন করিলেই সেই পন্থা অবরুদ্ধ হইয়া পড়িতেছিল। মেহেরুন্নেসা হতা হইয়াছে, এই অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া প্রথমেই পদবিক্ষেপ করিয়াছিলাম, কিন্তু সেই পদ স্খলিত হইয়া গেল মেহেরুন্নেসা সশরীরে আমার সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাহার পর আয়েষার দিকে আদিগের লক্ষ্য পড়িল। আয়েষা হতা হইয়াছেন ইহাই মনে মনে আমরা একরূপ স্থির করিয়া লইলাম, ও সেই অনুমানের উপর নির্ভর করিয়া পুনরায় কার্যক্ষেত্রে পদার্পণ করিলাম। সেবারও আমাদিগের লক্ষ্য ব্যর্থ হইয়া গেল, আবদুলের বাড়ীতে সেই আয়েষা মূর্ত্তি আমাদিগের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। এখন আবার লুৎফন্নেসার উপর নয়ন আকৃষ্ট হইয়াছে, দেখি, সেই বা আবার কোথা হইতে উপস্থিত হয়। 

যে বাড়ীতে লুৎফন্নেসার বিবাহ হইয়াছিল, আমরা এবার সেই বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলাম। আমাদিগের সহিত সেই ইহুদিও গমন করিলেন। প্রথমতঃ গোপনীয়ভাবে আমি সেই বাড়ীতে সেই ইহুদির সহিত প্রবেশ করিলাম, অর্থাৎ সেই সময় সেই বাড়ীর কেহই আমাকে পুলিস কৰ্ম্মচারী বলিয়া জানিতে পারিল না। সেইস্থানে গমন করিয়া আমরা যাহা জানিতে পারিলাম, তাহাতে আমাদিগের মনে নিতান্ত সন্দেহ আসিয়া উপস্থিত হইল। সেই বাড়ীর কর্তৃপক্ষীয়গণের সহিত সাক্ষাৎ হইবার পূর্ব্বে একটি পরিচারকের সহিত আমাদিগের সাক্ষাৎ হয়, তাহাকে লুৎফুন্নেসার কথা জিজ্ঞাসা করায় সেই কহে যে, আজ কয়েক দিবস হইল, সে রাত্রিযোগে ঐ বাড়ী পরিত্যাগ করিয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে, তাহার পর তাহার আর কোনরূপ সন্ধান পাওয়া যায় নাই। ইহার পরই সেই বাড়ীর কর্তৃপক্ষীয়গণের সহিত সাক্ষাৎ হইলেই তাঁহারা কহিলেন, হঠাৎ বিসূচিকা রোগে আক্রান্ত হইয়া আজ কয়েক দিবস হইল, তাহার মৃত্যু হইয়াছে। তাহার পীড়িত অবস্থায় তাহার পিত্রালয়ে পর্যন্ত সংবাদ দিবার সময় পাওয়া যায় নাই, ও তাহার পর এই শোক সংবাদও প্রদান করিবার কোনরূপ প্রয়োজন হয় নাই। 

তাহাদিগের নিকট এইরূপ ভাবের কথা অবগত হইয়া আমাদিগের মনে অতিশয় সন্দেহের উদয় হইল। আমি উহাদিগকে আর কোন কথা না বলিয়া সেই স্থান হইতে বাহিরে আসিলাম। বাহিরে আমার গাড়ি ছিল, তাহাতে আরোহণ করিয়া একেবারে সেই প্রদেশের পুলিস বিভাগের সেই সর্ব প্রথম কর্ম্মচারীর নিকট গিয়া উপস্থিত হইলাম। তাঁহাকে সমস্ত কথা কহিলাম, আমার কথা শুনিয়া তাঁহার মনেও যেন প্রতীতি জন্মিল যে, ঐ মৃতদেহ লুৎফুন্নেসার, ও ঐ বাড়িতেই এই ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের সংঘটন হইয়াছে। 

এবার ঐ সর্ব্বপ্রধান কর্ম্মচারী এই অনুসন্ধানের ভার নিজ হস্তেই একরূপ গ্রহণ করিতে মনস্থ করিয়া তিনি আরও কয়েকজন পুলিস-কৰ্ম্মচারীকে সেই স্থানে ডাকাইলেন। সংবাদ পাইবামাত্র সকলেই আসিয়া সেই স্থানে উপস্থিত হইল। তাহাদিগকে ও আমাকে সঙ্গে লইয়া সেই সৰ্ব্বপ্রধান কর্মচারী মহাশয় লুৎফুন্নেসার শ্বশুরবাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। এবার আর গোপনীয় অনুসন্ধান নহে, এবার প্রকাশ্য অনুসন্ধান; সৈনিক বিভাগের অনুসন্ধানের ন্যায় অনুসন্ধান। আদেশ হইল, ছোট হউক, বড় হউক, সম্ভ্রমশালী হউক, বা অসম্ভ্রমশালী হউক, চাকর হউক বা দর্শক হউক, যাহাকে সেই বাড়ীতে পাওয়া যাইবে, তাহাদিগের প্রত্যেককেই ধৃত করিয়া পৃথক পৃথক স্থানে রক্ষিত হউক, আবশ্যক হইলে স্ত্রীলোকদিগের উপরও ঐরূপ ব্যবহার হইবে। বলাবাহুল্য, আদেশ প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে সেই আদেশ প্রতিপালিত হইল। বাড়ীর আবাল-বৃদ্ধ সকলেই একরূপ বন্দীরূপে পৃথক পৃথক স্থানে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। কেবল যে ইহুদি আমার সহিত সেই স্থানে গমন করিয়াছিলেন, ও আমাদিগের প্রত্যাবর্তন পর্য্যন্ত তিনি সেই স্থানেই ছিলেন; কেবল তিনিই বন্দী রূপে পরিগণিত হইলেন না। 

এইরূপে সমস্ত ব্যক্তিগণকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখিবার এক ঘণ্টাকাল অতিবাহিত হইতে না হইতেই অল্পে অল্পে সমস্ত কথা প্রকাশ হইয়া পড়িতে লাগিল। আমার নিকট যে ফটোগ্রাফ খানি ছিল, তাহা দেখিয়া ক্রমে ক্রমে সকলকেই স্বীকার করিতে হইল যে, উহা লুৎফন্নেসার ফটোগ্রাফ। যে যে ব্যক্তি ক্রমে ক্রমে যে সকল কথা সেই সময় প্রকাশ করিয়াছিল, তাহার আনুপূর্ব্বিক বিবরণ লিপিবদ্ধ করিবার স্থান এই ক্ষুদ্র দপ্তরে নাই। সুতরাং ঐ সকল বিষয় এই স্থান হইতে পরিত্যক্ত হইল। লুৎফুন্নেসার স্বামী পরিশেষে যে সকল কথা আমাদিগের নিকট বলিয়াছিল ও যাহার সংক্ষিপ্ত বিবরণ আমি সেই সময় আমার পকেট বহিতে লিখিয়া লইয়াছিলাম, তাহাই এই স্থানে প্রকাশিত হইলেই পাঠক পাঠিকাগণ এই ভয়ানক ঘটনার কতক বিবরণ অনায়াসেই অবগত হইতে পারিবেন। লুৎফুন্নেসার স্বামী বলিয়াছিলেন — “লুৎফুন্নেসার মাতা যে দুশ্চরিত্রা ছিলেন, তাহা আমি পূর্ব্বে জানিতাম না, ইহা জানিলে আমি লুৎফন্নেসাকে কখনই আপন হৃদয়ে স্থান প্রদান করিতাম না। আমি বিশেষরূপ অনুসন্ধান না করিয়া এই বিবাহ করিয়াছিলাম বলিয়াই তাহার যথোপযুক্ত ফলপ্রাপ্ত হইয়াছি। আঠার বৎসর বয়ঃক্রম পর্যন্ত লুৎফনের চরিত্রে আমি কোনরূপ কালিমা দেখিতে পাই না, কিন্তু তাহার পর হইতেই তাহার চরিত্র সম্বন্ধে আমার মনে সন্দেহ আসিয়া উপস্থিত হয়; কিন্তু কোন বিষয় বিশেষরূপে অবগত হইতে পারি না। আমি ইহা বেশ বুঝিতে পারি যে, সে কাহার সহিত প্রণয়ে আসক্তা হইয়াছে, কিন্তু কে যে তাহার প্রণয়াভিলাষী, তাহার কিছুই স্থির করিয়া উঠিতে পারি না। তাহার পরিচারিকাগণের উপর আমার সন্দেহ হয়, তাহাদিগের মধ্যে কাহার না কাহার জ্ঞাতসারে যে এই কাৰ্য্য হইতেছে, তাহাও আমি বেশ বুঝিতে পারি; কিন্তু সেই পরিচারিকা যে কে, তাহা স্থির করিয়া উঠিতে না পারিয়া আমি তাহাদিগের সকলকেই আমার বাড়ী হইতে বহির্গত করিয়া দি। এইরূপে যে সকল চাকরাণী কৰ্ম্ম হইতে বিচ্যুত হয়, তাহাদিগের মধ্যে পরিশেষে একজন আসিয়া আমাকে কহে যে, যদি তাহাকে পূর্ব্বের ন্যায় বাড়ীর মধ্যে থাকিবার অনুমতি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে নিশ্চয়ই সে জানিতে পারিবে যে কাহার সহিত লুৎফন অবৈধ প্রণয়ে আসক্ত হইয়াছে। ঐ পরিচারিকার কথা বিশ্বাস করিয়া আমি তাহাকে পুনরায় আমার অন্দরে স্থান প্রদান করি। পাঁচ সাত দিবস অতিবাহিত হইতে না হইতেই সেই পরিচারিকা আমাকে কহে, জনৈক মুসলমান যুবকের সহিত লুৎফন প্রণয়ে আবদ্ধ হইয়াছে। ঐ মুসলমান যুবক যে কে, তাহা যে অবগত নহে; কিন্তু দিবাভাগে প্রায়ই সে বাড়ীর ভিতর আসিয়া থাকে ও লুৎফনকে লইয়া আমোদ আহ্লাদ করিয়া প্রায়ই সে দিন অতিবাহিত করে। তাহার কথা শুনিয়া আমি কহিলাম, “কি? একজন মুসলমান যুবক তাহার প্রণয়ে আসক্ত?” 

পরিচারিকা। হাঁ। 

আমি। আমার বাড়ীতে অসিয়া সে এই কাৰ্য্য করিয়া থাকে? 

পরিচারিকা। হাঁ। 

আমি। কোন্ সময়ে সে আমার বাড়ীতে আসে? 

পরিচারিকা। দিবা ভাগে। 

আমি। মিথ্যা কথা; দিবাভাগে সে আমার বাড়ীতে আগমন করে, আর আমরা তাহার কিছুই অবগত নহি?

পরিচারিকা। না, আমরা সদাসর্ব্বদা তাঁহার নিকট থাকিয়াও অবগত হইতে পারি নাই, আপনি জানিবেন কি প্রকারে? 

আমি। সে কিরূপে আসে? 

পরিচারিকা। সর্ব্বসমক্ষেই আসিয়া থাকে, আপনিও কত দিবস তাহাকে দেখিয়াছেন। 

আমি। কি আমি তাহাকে দেখিয়াছি? 

পরিচারিকা। হাঁ, আপনিও তাহাকে দেখিয়াছেন। একটি স্ত্রীলোক প্রায় মধ্যে মধ্যে পাল্কীতে করিয়া লুৎফনের নিকট আগমন করে, তাহা কি আপনি জানেন না? 

আমি। তাহা তো জানি, কিন্তু সে তো স্ত্রীলোক। 

পরিচারিকা। না, সে স্ত্রীলোক নহে; সে পুরুষ মানুষ। স্ত্রীলোকের বেশে সে আসিয়া থাকে, একে ব্রহ্মদেশীয় লোক দেখিতে অনেকটা রমণীর ন্যায়, তাহার উপর গোঁফ দাড়ি নাই, ও দেখিতেও ঠিক স্ত্রীলোকের ন্যায় বলিয়াই আমরা এ পর্যন্ত তাহাকে স্ত্রীলোক বলিয়াই স্থির করিয়াছিলাম। গতকল্য আমার সন্দেহ হয় ও পরিশেষে আমি জানিতেও পারি যে, সে পুরুষ মানুষ। 

আমি। তুমি কিরূপে জানিতে পারিয়াছিলে যে, সে স্ত্রীলোক নহে? 

পরিচারিকা। এদেশীয় কি স্ত্রী, কি পুরুষ সকলেই লুঙ্গি পরিয়া থাকে। আমার মনে সন্দেহ হওয়ায় আমি কোনরূপ বাহানা করিয়া সকলের সম্মুখেই তাহার লুঙ্গি ধরিয়া টানি ও উহা খুলিয়া যায়। তখন সকলেই দেখিতে পান যে, তিনি স্ত্রীলোক নহে, পুরুষ মানুষ। যেমন এই কথা সকলেই জানিতে পারিলেন, অমনি সে দ্রুতপদে বাড়ী হইতে বহির্গত হইয়া গেল ও তাহার পাল্কী যাহা বাড়ীর বাহিরে ছিল, তাহাতে উঠিয়া দ্রুতগতিতে প্রস্থান করিল। 

আমি। যে সময় সে বিবস্ত্র হইয়া পড়ে, সেই সময় সেই স্থানে আর কে ছিল? 

পরিচারিকা। বাড়ীর অনেকেই ছিলেন, অনেকেই উহা দেখিয়াছেন; লুৎফনও সেই স্থানে উপস্থিত ছিলেন। পরিচারিকার নিকট এই সকল বিষয় অবগত হইয়া আমি আমার অন্তঃপুরের মধ্যে গমন করিলাম ও জানিতে পারিলাম যে, পরিচারিকা আমাকে যাহা বলিয়াছে, তাহার সমস্তই সত্য। 

ইহা জানিতে পারিয়াই আমি আমার ক্রোধ কোনরূপে সম্বরণ করিতে পারিলাম না, প্রথমেই সেই স্ত্রীলোক- বেশী যুবকের অনুসন্ধান করিলাম; কিন্তু যখন কোনরূপেই তাহার কোন সন্ধান করিয়া উঠিতে পারিলাম না, তখন আমার স্ত্রীকে আমি স্বহস্তে হত্যা করিয়াই তাহাকে তাহার প্রতিফল প্রদান করিলাম। আমা কর্তৃক আমার স্ত্রী হতা হইয়াছে, ইহা আমার কর্তৃপক্ষীয় গণ অবগত হইতে পারিয়া যাহাতে ইহা গোপন থাকে ও যাহাতে আমার জীবনরক্ষা হয়, তাহাতে প্রবৃত্ত হন। রাত্রিযোগে ঐ মৃতদেহটি একখানি নৌকায় উঠাইয়া পর্ব্বতের পাদদেশে একটি গহ্বরের মধ্যে রাখিয়া আসা হয়, ঐ স্থানে লোক গমনাগমন প্রায়ই হয় না, সুতরাং সেই স্থান হইতে ঐ মৃতদেহ বাহির হইবার আর কোনরূপে সম্ভাবনা ছিল না। 

আসামীর নিকট হইতে এই সমস্ত কথা অবগত হইবার পর, ঐ মোকদ্দমার কিনারা হইতে আর বাকী রহিল না। ইহার পর যাহা কিছু আবশ্যকীয় অনুসন্ধানের আবশ্যক হইল, তাহার সমস্তই সেই প্রদেশীয় পুলিস কর্মচারীগণের দ্বারা সমাপন হইল। আমি যে কার্য্যের নিমিত্ত ঐ প্রদেশে গমন করিয়াছিলাম, তাহার অনুসন্ধান সর্ব্বপ্রধান পুলিস কর্ম্মচারী সাহেব অপর আর একজন কর্মচারীর দ্বারা শেষ করিয়া রাখিয়াছিলেন। সুতরাং সে সম্বন্ধেও আমাকে আর অধিক সময় অতিবাহিত করিতে হয় নাই। আমি সেই প্রদেশ পরিত্যাগ করিবার পূর্ব্বে মেহেরুন্নেসারও অনুসন্ধান পাইয়া ছিলাম। হামিদার অনুমতি ক্রমে পরিশেষে বিয়াম মেহেরুন্নেসাকে অনেকরূপে প্রলোভন দেখাইয়া তাহাকে তাহার বাড়ীতে লইয়া যায়। যে পর্য্যন্ত এই মোকদ্দমার চূড়ান্ত বিচার শেষ হইয়া না যায়, সেই পৰ্য্যন্ত সে বিয়ামের বাড়ীতেই ছিল, এ সংবাদ আমরা রাখিয়া থাকি, কিন্তু তাহার পর যে কি হয়, তাহা আমি জানি না। আমি ঐ স্থান পরিত্যাগ করিবার পূর্ব্বে আয়েষাকে তাহার মাতার নিকট রাখিয়া আসিয়াছিলাম। 

এই মোকদ্দমায় আসামী বিচারার্থ মাজিষ্ট্রেট সাহেবের নিকট প্রেরিত হইবার পূর্ব্বেই আমি ঐ স্থান পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া আসি, কিন্তু বিচারকালে ঐ মোকদ্দমার সাক্ষ্য প্রদান করিবার নিমিত্ত আমাকে পুনরায় সেই স্থানে গমন করিতে হয়। বিচার সময়ে আসামী সমস্ত কথা অস্বীকার করে। যেরূপ ভাবে অনুসন্ধান করিয়া এই মোকদ্দমার কিনারা হয়, তাহার সমস্ত বৃত্তান্ত বিচারকালে আমার ও অপরাপর সাক্ষীর প্রমুখাৎ বাহির হয়, মেহেরুন্নেসা, আয়েষা, হামিদা প্রভৃতি সকলকেই আদালতে উপস্থিত হইয়া সাক্ষী প্রদান করিতে হয়। সৰ্ব্ব প্রথমে মৃতদেহ মেহেরুন্নেসার বলিয়া সনাক্ত হইয়াছিল; পরিশেষে ইহা যে আয়েষার দেহ তাহাও স্থিরীকৃত হয়। উহাদিগের উভয়কেই প্রাপ্ত হইবার পর, ঐ মৃতদেহ লুৎফুন্নেসার মৃতদেহ ইহা ফটোগ্রাফ দৃষ্টে স্থির হইতেছে, অথচ ঐ ফটোগ্রাফের সহিত মেহেরুন্নেসার ও আয়েষার সাদৃশ্য আছে। এরূপ অবস্থায় যদি পরিশেষে লুৎফন্নেসাও বাহির হইয়া পড়ে ও ঐ আকৃতির অপর কোন স্ত্রীলোক বাহির হয়, তাহা হইলে কি হইবে? বিশেষ বিচারকের সম্মুখে আসামীর বাড়ীর সমস্ত লোকই শপথ করিয়া মিথ্যা বলিয়াছিলেন, লুৎফনের সহিত ঐ ফটোগ্রাফের কোনরূপ সংস্রব নাই। এই সকল নানা কারণের উপর নির্ভর করিয়া ও মৃতদেহ সনাক্তের পূর্ব্ব হইতেই বিশেষ গোলযোগ ঘটিয়াছে দেখিয়া, বিচারক ঐ মোকদ্দমা হইতে আসামীকে অব্যাহতি প্রদান করেন। 

[শ্রাবণ, ১৩০৮] 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *