অদ্ভুত ভিখারী

অদ্ভুত ভিখারী

(বা বিষম ভ্রমে পতিত পুলিস কর্ম্মচারীর হত্যার অনুসন্ধান ) 

প্রথম পরিচ্ছেদ

জ্যৈষ্ঠ মাস প্রায় শেষ হইয়া গিয়াছে। দারুণ গ্রীষ্মের প্রকোপে গত তিন চারি রাত্রি নিদ্রা হয় নাই। আজ এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতি যেন কতকটা শীতল হইয়াছে। রাত্রি ১০টা বাজিয়া গিয়াছে। আমি আফিসে বসিয়া সমস্ত দিবস যে সকল কার্য্যে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছি, তাহার ডায়েরি লিখিতেছি, এরূপ সময় সংবাদ আসিল যে, চারি দিবস হইল সহরতলীতে একটি অদ্ভুত রকমের হত্যা হইয়াছে, মৃতদেহ পাওয়া যায় নাই কিন্তু হত্যাকারী ধৃত হইয়াছে। 

এই সংবাদ পাইবামাত্র সেই রাত্রির বিশ্রাম-সুখের আশা পরিত্যাগ করিতে হইল। যে স্থানে এই হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হইয়াছে, সেই স্থানে গিয়া উপস্থিত হইলাম। এই স্থানটি সহরতলীর মধ্যে হইলেও সহরের ন্যায় অনেক লোকের সহবাস আছে। যে বাড়ীতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হইয়াছে, উহা ইষ্টকনির্ম্মিত একটি দ্বিতল গৃহ। ঐ গৃহের নিম্ন দিয়া একটি ক্ষুদ্র নদী প্রবাহিত। গৃহটি দ্বিতল হইলেও নিম্নে চারিখানি ঘর আছে। ঐ ঘরগুলি একজনের অধিকারভুক্ত, তিনি নিজে একজন প্রসিদ্ধ গুলিখোর; নিম্নের ঐ ঘর চারিটিতে তাহারই কার্য্যের উপযোগী একটি গুলির আড্ডা খুলিয়া তিনি সেই স্থানেই বাস করিয়া থাকেন। 

আমি সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া একজন পুলিস-কৰ্ম্মচারীকে ঐ অনুসন্ধানে নিযুক্ত দেখিতে পাইলাম। বহুদিবস পূর্ব্বে আমরা অনেকগুলি পুলিস-কৰ্ম্মচারী একটি হত্যা-মোকদ্দমার অনুসন্ধানে নিযুক্ত ছিলাম, ইনিও আমাদিগের সহিত সেই অনুসন্ধান করিতে প্রবৃত্ত হন। মৃতদেহ দেখিয়া আমরা প্রথমতঃ কিছুই স্থির করিতে পারি না যে, কিরূপে উহাকে হত্যা করা হইয়াছে; কারণ উহার শরীরে কোনরূপ চিহ্নও পরিলক্ষিত হয় না। কিরূপে উহাকে হত্যা করা হইল, তাহা স্থির করিবার নিমিত্ত আমাদিগের মধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক হইতেছিল, সেই সময় ঐ কৰ্ম্মচারী বলিয়া উঠেন যে, গলা টিপিয়া উহাকে মারিয়া ফেলা হইয়াছে। প্রকৃতপক্ষে ডাক্তারের পরীক্ষায়ও তাহাই সাব্যস্ত হয়। সেই সময় হইতে আমরা সকলেই উহাকে ডাক্তার বলিয়া ডাকিতে আরম্ভ করি ও ক্রমে উনি ডাক্তার নামেই পরিগণিত হইয়া পড়েন। সুতরাং ডাক্তার বলিয়াই আমি উহাকে অভিহিত করিব। 

অনুসন্ধান উপলক্ষে ঐ স্থানে উপস্থিত হইয়া দেখিলাম, ডাক্তার ঐ অনুসন্ধানে নিযুক্ত আছেন, কিন্তু সেই সময় একখানি ভাড়াটিয়া গাড়ীতে উঠিবার উপক্রম করিতেছেন, আমাকে দেখিবামাত্র তিনি গাড়ীতে না উঠিয়া একটু দাঁড়াইলেন ও কহিলেন, “আপনি আসিয়াছেন, ভালই হইয়াছে; আমি যে স্থানে যাইতেছি, আপনিও সেই স্থানে আমার সঙ্গে আগমন করিয়া নিজ কানে সমস্ত কথা না শুনিলে বিশেষ কিছুই স্থির করিয়া উঠিতে পারিবেন না।” 

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “হত হইয়াছে কে?”

ডাক্তার। নরেন্দ্রকৃষ্ণ নামক একটি বাবু। 

আমি আশ্চর্য হইয়া ডাক্তারকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলাম, “নরেন্দ্রকৃষ্ণবাবু কে? তাঁর কি হইয়াছিল? আমাকে সে সকল কথা কিছুই ত বলিলে না?” 

ডাঃ। বলিব। তুমি আমার সঙ্গে যাইবে কি? 

আমি। আবশ্যক হইলে কাজেই যাইতে হইবে। 

ডাঃ। প্রথমত এই স্থানের অবস্থাগুলি একবার দেখিয়া লও; রাস্তায় যাইতে যাইতে সমস্ত অবস্থা বলিব। আমাদের প্রায় তিন ক্রোশ যাইতে হইবে। এই বলিয়া সেই স্থানের সমস্ত অবস্থা আমাকে দেখাইয়া তিনি একখানা গাড়ীতে উঠলেন। বলা বাহুল্য, আমিও তাহার সহিত সেই গাড়ীতে উঠিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা গমন করিবার পর আমার বন্ধু দূরে দুটি আলোক আমাকে দেখাইয়া বলিল, “ঐ যে দুটি আলোক দেখিতে পাইতেছ, বোধ হয় ঐখানেই আমাদিগকে যাইতে হইবে। আর দশ পনের মিনিটের মধ্যেই আমরা ঐ স্থানে উপস্থিত হইব। 

আমি বলিলাম, “ডাক্তার! আমরা ত এসে পড়লুম, কিন্তু এখনও আমি সমস্ত অবস্থা জানতে পারি নাই। বলবে কখন?” 

“এই যে বলি। আমি যতদূর শুনিয়াছি, তাহাতে এইমাত্র অবগত হইতে পারিলাম যে, খৃষ্টীয় ১৮৮৪ সালে নরেন্দ্রকৃষ্ণ নামে এক অতি ভদ্রলোক এই স্থানে আসিয়া বাস আরম্ভ করিলেন। তাহার যথেষ্ট সম্পত্তি ছিল বলিয়া সকলেই অনুমান করিত। যাহা হউক, ক্রমে ক্রমে সেই নরেন্দ্রকৃষ্ণ সকলের প্রিয়পাত্র হয় এবং অতি অল্প কাল পরেই স্থানীয় এক ভদ্রলোকের কন্যাকে বিবাহ করিয়া সুখে স্বচ্ছন্দে সংসার-যাত্রা নির্ব্বাহ করিতে থাকে। নরেন্দ্রকৃষ্ণ যে কি কার্য্য করিত, তাহা কেহই জানিত না। তবে বড় বড় বণিকদিগের সহিত তাহার সদ্ভাব ছিল। তিনি প্রত্যহ প্রাতে সহরে যাইতেন এবং সন্ধ্যার সময়ে আবার স্বস্থানে ফিরিয়া আসিতেন। সকলে অনুমান করিত, তিনি দালালী করিয়া থাকেন। তিনি একজন সৎ লোক ও অতি শান্ত। তাহার পুত্রগণ ও স্ত্রী তাহার প্রতি বিশেষ অনুরক্ত। এখন তাহার বয়স প্রায় ৩৭ বৎসর এইরূপ শুনিয়াছি। 

গত সোমবার নরেন্দ্রকৃষ্ণবাবু অন্যান্য দিবস অপেক্ষা কিছু অধিক প্রাতে সহরে গমন করেন। যাইবার সময় এই বলিয়া যান, দুইটি কার্য্যোপলক্ষে তাঁহাকে এরূপ প্রাতে যাইতে হইতেছে। ফিরিবার সময় কনিষ্ঠ পুত্রের জন্য এক বাক্স খেলিবার কাষ্ঠের পুতুল আনিবেন। 

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

নরেন্দ্রকৃষ্ণের স্ত্রীর মাতুলালয় সহরের মধ্যে। নরেন্দ্রকৃষ্ণ বাহির হইয়া যাইবার পর তিনি সংবাদ পান যে, তাহার মাতুল অতিশয় পীড়িত, এমন কি, কখন তাহার মৃত্যু হয়, তাহার স্থিরতা নাই। আরও জানিতে পারেন যে, মৃত্যুর পূর্ব্বে তাহার মাতুল তাহাকে একবার দেখিবার প্রার্থনা প্রকাশ করিয়াছেন, বিলম্ব হইলে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ হইবার সম্ভাবনা নিতান্তই অল্প। সুতরাং বাধ্য হইয়া স্বামীর বিনা অনুমতিতেই তাহাকে মাতুল দর্শন নিমিত্ত গমন করিতে হয়। একজন পরিচিত গাড়োয়ানকে ডাকাইয়া ও তাহার একমাত্র পুত্রকে সঙ্গে লইয়া তিনি মাতুলালয় উদ্দেশে গমন করেন। সেই স্থানে উপস্থিত হইয়া মাতুলকে শেষ দর্শন দিয়া সন্ধ্যার প্রাক্কালে তিনি পুনরায় আপন বাড়ীতে প্রত্যাগমন করিতে থাকেন। স্বামির বিনা অনুমতিতে তিনি গমন করিয়াছেন, সুতরাং সেই স্থানে রাত্রিবাস করিতে তাহার সাহস হয় না, বিশেষ যাইবার সময় বাড়ীর কোনরূপ বন্দোবস্ত করিয়া যাইবারও সাবকাশ পান নাই, কাজেই তাহাকে প্রত্যাগমন করিতে হয়; ইচ্ছা ছিল, যদি তাহার মাতুল আরও দুই এক দিবস জীবিত থাকেন, তাহা হইলে তাহার স্বামীকে বলিয়া ও সুবিধা হইলে তাহার স্বামীকেও লইয়া পুনরায় মাতুলালয়ে গমন করিবেন। 

মাতুলালয় হইতে প্রত্যাগমন করিবার সময় নরেন্দ্রবাবুর স্ত্রী ও পুত্র ঐ গুলিখানার নিকট দিয়া আসিতেছিলেন। ঐ গুলির আড্ডার সম্মুখে ঘোড়াদিগের জলপান করাইবার একটি স্থান আছে। গাড়োয়ান ঘোড়াকে জলপান করাইবার জন্য সেইখানে দাঁড় করায়। গাড়ীর দরজা কিছু খোলা ছিল। নরেন্দ্রবাবুর স্ত্রী এই সময় হঠাৎ ঐ দ্বিতল গৃহের উপরের জানালার দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন; অমনি তিনি তাঁহার স্বামিকে জানালার নিকট দেখিতে পাইলেন। এরূপ সময়ে এরূপ স্থানে তাঁহার স্বামীকে দেখিয়া মনে করিলেন, কোন কার্য্যগতিকে হয় তো তাঁহার স্বামী সেইস্থানে আগমন করিয়াছেন ও আরো মনে করিলেন, তিনি যদি জানিতে পারেন যে, তাঁহার স্ত্রী-পুত্র সেইসময় সেই স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন, ও তাঁহার কার্য্যও যদি শেষ হইয়া গিয়া থাকে, তাহা হইলে তিনি তাহাদিগের সহিত প্রত্যাগমন করিতে পারেন। মনে মনে এইরূপ ভাবিয়া তিনি সেই গাড়ির কোচম্যানকে তাঁহার পুত্রের দ্বারা বলাইলেন যে, সে ঐস্থানে গমন করিয়া তাঁহার স্বামীকে তাঁহার নিকট ডাকিয়া দেয়। কোচম্যান তাঁহার আদেশমত ঐ বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিবার চেষ্টা করিল, কিন্তু সেই গুলিখানার আড্ডাধারী কোনমতেই তাহাকে উপরে উঠিতে দিল না। কোচম্যান প্রত্যাগমন করিয়া সমস্ত কথা তাঁহাকে কহিল, আরো কহিল, “আপনি বোধ হয় অবগত নহেন যে, এই স্থানটি কি? ইহা একটি গুলির আড্ডা। এই স্থানে কোন সম্ভ্রান্ত লোক আগমন করে না। ঐ প্রদেশের যত চোর বদমায়েসের ইহা একটি প্রধান আড্ডা, ইহাতে নিত্য নিত্য যে কতরূপ কুকার্য্য সম্পন্ন হইয়া থাকে, তাহার ইয়ত্তা নাই।” 

এই কথা শুনিয়া নরেন্দ্রবাবুর স্ত্রী আরও চিন্তিত হইলেন। ও ভাবিলেন, তাহার স্বামী নিশ্চয়ই কোনরূপ বিপদগ্রস্ত হইয়া ঐ স্থানে আগমন করিয়াছেন; সুতরাং এরূপ অবস্থায় তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়া কখনই চলিয়া যাওয়া কৰ্ত্তব্য নহে। 

মনে মনে এইরূপ ভাবিয়া, তিনি তাহার পুত্রের সহিত ঐ কোচম্যানকে পুনরায় সেইস্থানে পাঠাইয়া দিলেন। তাহারা ঐ স্থানে প্রবেশ করিতে সমর্থ না হইয়া বিফল মনোরথের সহিত প্রত্যাগমন করিল। 

নরেন্দ্রবাবুর স্ত্রী এরূপ অবস্থায় কি কৰ্ত্তব্য তাহা স্থির করিয়া উঠিতে পারিলেন না, অথচ ঐরূপ অবস্থায় তাহার স্বামীকে সেইস্থানে পরিত্যাগ করিয়া যাইতেও সাহসী হইলেন না। 

এইরূপ বিপদে পড়িয়া, অনেক চিন্তার পর, তিনি মনে মনে স্থির করিলেন, ঐ স্থানে তিনি যদি কোন ভদ্রলোককে সেই সময় দেখিতে পান, তাহা হইলে তাঁহাকে সমস্ত কথা বলিয়া দেখিবেন যে, যদি তাঁহার দ্বারা কোনরূপ উপকার হইতে পারে। তিনি মনে মনে এইরূপ চিন্তা করিতেছেন, এরূপ সময়ে সেইস্থান দিয়া একজন উচ্চপদস্থ পুলিস কর্ম্মচারীকে গমন করিতে দেখিতে পাইলেন। তাঁহাকে দেখিয়াই তিনি তাহার পুত্রের দ্বারা ঐ কর্ম্মচারীকে ডাকিলেন ও ঐ পুত্রের দ্বারা সমস্ত কথা তাঁহাকে কহিলেন। তিনি সমস্ত অবস্থা শুনিয়া কহিলেন, “এই বাড়ীর নিম্নে একটি গুলির আড্ডা আছে, উপরে একখানি মাত্র ঘর, তাহাতে সময় সময় একজন মুসলমান ফকির বাস করিয়া থাকেন। এই বাড়ীর ভিতর গমনাগমন করিবার কেবল এই একটি মাত্র দরজা আছে। যদি আপনি আপনার স্বামীকে নিশ্চয়ই দেখিয়া থাকেন ও তিনি তাহার পর যদি বাহিরে না গিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি নিশ্চয়ই এই বাড়ীর ভিতরে আছেন, ও বোধ হয়, গুলিটা আসটা খাইয়াও থাকেন। যাহা হউক, আপনার পুত্র আমার সঙ্গে আসুক, যদি তিনি এই বাড়ীর ভিতর থাকেন, তাহা হইলে আমি এখনই তাঁহাকে আপনার সম্মুখে আনিয়া উপস্থিত করিব।” “এই বলিয়া সেই পুলিস-কৰ্ম্মচারী বালককে সঙ্গে লইয়া সেই বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করিলেন। 

প্রথমতঃ নিম্নের ঘরগুলি দেখিলেন, তাহাতে নরেন্দ্রবাবুর কোন সন্ধানই পাইলেন না। তাহার পর উপরের ঘরে গমন করিলেন। সেই স্থানে সেই মুসলমান ফকির ভিন্ন আর কাহাকেও দৃষ্টিগোচর হইল না। কিন্তু ঐ ঘরের এক পার্শ্বে একখানি কম্বল দ্বারা আবৃত একটি কাপড়ের গারি দেখিতে পাইলেন। ঐ গাঁটরিটি খুলিলে দেখিতে পাওয়া গেল, উহার মধ্যে একখানি ধুতি, একখানি চাদর, একটি পিরাণ, এক জোড়া জুতা ও এক জোড়া মোজা আছে। উহা দেখিবামাত্র নরেন্দ্রবাবুর পুত্র ও পরিশেষে নরেন্দ্রবাবুর স্ত্রী কহিলেন, “উহা তাহার স্বামীর। যে সমস্ত বস্ত্রাদি পরিধান করিয়া তিনি বাড়ী হইতে বহির্গত হইয়াছিলেন, উহা তাহাই।” 

পুলিস-কৰ্ম্মচারী এই অবস্থা দেখিয়া অতিশয় বিস্মিত হইলেন, অথচ মুসলমান ফকিরকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি কোনরূপ সন্তোষজনক উত্তর প্রদান করিতে পারিলেন না, কেবল এইমাত্র বলিলেন, তিনি নরেন্দ্রবাবুকে চিনেন না, কোনও ব্যক্তি তাহার ঘরে আসে নাই, ও ঐ বস্ত্রাদি তাহার নয় ও কিরূপে উহা ঐ স্থানে আসিল, তাহা তিনি বলিতে পারেন না। 

এইরূপ অবস্থায় ঐ পুলিস-কৰ্ম্মচারীও বিপদে পড়িলেন, তাঁহার মনে ভয়ানক সন্দেহ আসিয়া উপস্থিত হইল। তাঁহারও মনে হইল, সেই কদাকার লোকই কি নরেন্দ্রবাবুকে হত্যা করিয়াছে, আর তাহাই যদি হয়, তাহা হইলে ঐ মৃতদেহটা কোথা গেল? 

সে যাহা হউক, ঐ পুলিস-কৰ্ম্মচারী এই সকল অবস্থা দেখিয়া আমাকে সংবাদ প্রদান করেন, আমি আসিয়া এই অনুসন্ধানে নিযুক্ত হই। 

আমি। আচ্ছা, সেই লোকটার কোন পরিচয় পাওয়া গিয়াছে কি? 

ডাক্তার। লোকটা সহরের একটি ভিখারী; কোম্পানীর বাগানের ধারে প্রায়ই দেখিতে পাওয়া যায়। সকলেই তাহাকে নিরীহ লোক বলিয়াই জানে। 

আমি। সে চণ্ডুর আড্ডায় কি করে? 

ডাক্তার। কিছুই করে না। তবে সে এখানে সেই ঘরখানিতে বাস করে। আড্ডার অধ্যক্ষ বলে যে, তার মত শান্ত লোক সহরে নাই। ঘরের ভাড়ার স্বরূপ সে মাসে মাসে আড্ডাধারীকে পাঁচ টাকা করিয়া দিয়া থাকে। 

আমি। আচ্ছা, লোকটা দেখিতে কিরূপ? 

ডাক্তার। সে কথা আর জিজ্ঞাসা করো না। তাহার আকার প্রকার অতি বিশ্রী। লোকটা অল্প খোঁড়া। মুখে নানা প্রকার দাগ, ঠোঁট উল্টান। দেখিলে স্বতঃই মনে দয়ার উদ্রেক হয়। 

আমি। ঘরের ভিতর নরেন্দ্রবাবুর কাপড় পাওয়া ভিন্ন তাহার হত্যার আর কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নাই?

ডাক্তার। হাঁ, নদীর ধারে যে জানালা আছে, সেই জানালার কপাটে ও সেই গৃহের দুই চারি জায়গায় রক্তচিহ্ন দেখিতে পাওয়া গিয়াছে। 

আমি। লোকটা তার কি উত্তর দেয়? 

ডাক্তার। সে বলে, তার হাত কেটে গিয়াছিল, সেই জন্যই ঐ সকল রক্তের চিহ্ন। বাস্তবিকই দেখিলাম যে, তাহার দক্ষিণ হস্তের মধ্যমাঙ্গুলির অগ্রভাগ কাটিয়া গিয়াছে এবং তখনও তাহা দিয়া রক্ত বাহির হইতেছিল। 

আমি। আচ্ছা ডাক্তার! একটা খোঁড়া লোক অমন তেজীয়ান লোককে কিরূপে খুন করিল। 

ডাক্তার। তোমার অনুমান সত্য বটে, কিন্তু লোকটা খোঁড়া হইলে তাহার শক্তি বেশ আছে। সে ইচ্ছা করিলে দুইজনকে একেবারে খুন করিতে পারে। 

আমি। আচ্ছা, আড্ডাধারী কি বলে? 

ডাক্তার। নরেন্দ্রবাবুরস্ত্রী যখন সেই বাটীতে তাঁহার স্বামীকে দেখেন, তখন আড্ডাধারী নিম্নে ছিল। সে কখনও স্বয়ং খুন করিতে পারে না। তবে সেও যে ঐ ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে, তাহা বেশ বুঝিতে পারা যায়। তবে সে বলে যে, সে এ বিষয় কিছুই জানে না; এমন কি, সে ঐ ভাড়াটিয়ার গৃহে পর্য্যন্ত যায় না। কিন্তু কিরূপে যে নরেন্দ্রবাবুর পোষাক ঐ স্থানে আসিল, সে উহার কিছুই বলিতে পারে না। 

আমি। তার পর কি হইল? 

ডাক্তার। সেই ভিক্ষুক নরেন্দ্রবাবুর হত্যাকারী ভাবিয়া তাহার স্ত্রী অবাক হইয়া পড়িলেন। তখন তাহাকে তথা হইতে স্থানান্তরিত করা হইল এবং সেই ভিক্ষুককে আপাততঃ সন্দেহ করিয়া হাজতে রাখা হইয়াছে। 

আমি। আর একটি কথা আমার জিজ্ঞাসা করিবার আছে, নরেন্দ্রবাবুর সকল পোষাকই কি ঐ স্থানে পাওয়া গিয়াছে?

ডাক্তার। না, প্রথমে কেবল চাপকানটি পাওয়া যায় নাই, কিন্তু এখন পাওয়া গিয়াছে। কোথায় জান?

আমি। না, কিরূপে জানিব? 

ডাক্তার। ঐ নদীগর্ভে। ঠিক ঐ জানালার নীচে। যখন ভাঁটা পড়ে, তখন সেই চাপকান দেখিতে পাওয়া যায়, উহাতে কি ছিল জান? 

আমি। না? 

ডাক্তার। পয়সা ও আধলায় পরিপূর্ণ। দুইটি পকেটে প্রায় পাঁচ টাকার পয়সা ও আধলা ছিল। সম্ভবতঃ যখন নরেন্দ্রবাবুর পুত্র তাহার পিতার অন্বেষণে ঐ আড্ডায় প্রবেশ করে, তখন সেই ভিক্ষুক তাহার ভিক্ষালব্ধ সঞ্চিত পয়সা ও আধলায় তাহার চাপকানের পকেট পূর্ণ করিয়া জানালা দিয়া নদীগর্ভে নিক্ষেপ করে। বোধ হয়, অপর পোষাকগুলিরও সেই দশা করিতে, যদি পুলিস শীঘ্র সেই স্থানে আসিয়া উপস্থিত না হইত 

আমি। খুব সম্ভব। 

ডাক্তার। সে যাহা হউক, আপাততঃ সেই কদাকার হতভাগ্য ভিক্ষুকের উপরেই সন্দেহ হইয়াছে ও তাহাকে হাজতে রাখা হইয়াছে। তাহার নামে ইতিপূর্ব্বে কোন ঘটনা পুলিসের কর্ণগোচর হইয়াছে কি না, তাহা অনুসন্ধান করা হয় কিন্তু তাহাতে উহার ঠিকানা কিছুই অবগত হইতে পারা যায় নাই। অতএব এখন রহস্য এই যে, নরেন্দ্রকৃষ্ণবাবু গুলির আড্ডার উপর বসিয়া সে দিন কি করিতেছিলেন এবং এই কদাকার ভিক্ষুকের সহিত তাহার কি সম্বন্ধ? 

ডাক্তারের এই কথা শেষ হইবার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গাড়ী একখানি বৃহৎ অট্টালিকার দ্বারদেশে আসিয়া উপস্থিত হইল। ডাকিবামাত্র ভিতর হইতে একজন চাকর তৎক্ষণাৎ বাড়ীর দরজা খুলিয়া দিল। ডাক্তার গাড়ী হইতে অবতরণ করিয়া বাটির ভিতরে প্রবেশ করিলেন। আমিও তাহার অনুসরণ করিলাম। বাটীর ভিতর প্রবেশ করিয়া আমরা বাহিরের বৈঠকখানায় উপবেশন করিলাম ও পরিচারকের দ্বারা সংবাদ প্রদান করিলে, বাটির গৃহিণী প্রায় বিংশ বৎসর বয়স্কা সুন্দরী এক রমণী অতি আগ্রহের সহিত আমরা যে স্থানে বসিয়াছিলাম, তাহার পার্শ্বের ঘরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন ও অন্তরাল হইতে তাহার সেই পুত্রের দ্বারা আমাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমার স্বামীর কি আর কোনরূপ সন্ধান পাওয়া গিয়াছে? তাঁহার মৃতদেহ কি বাহির হইয়াছে? 

উত্তরে ডাক্তার কহিলেন, “না। এখনও পর্যন্ত তাঁহার কোন সন্ধান পাওয়া যায় নাই বা মৃতদেহেরও কোনরূপ সন্ধান করিয়া উঠিতে পারি নাই। সেই ফকির আর কোন কথা বলিতেছে না। আমরা আপনাকে আরও দুই একটি কথা জিজ্ঞাসা করিবার নিমিত্ত আগমন করিয়াছি।” 

উত্তরে তিনি কহিলেন, “আপনারা মুক্তকণ্ঠে আমাকে সকল কথা জিজ্ঞাসা করিতে পারেন। আমি যাহা কিছু অবগত আছি তাহার সমস্তই অকপটে আপনাদিগের নিকট প্রকাশ করিব। আপনারা যেরূপ কষ্ট সহ্য করিয়া আমার কাৰ্যে নিযুক্ত হইয়াছেন তাহাতে ঈশ্বর আপনাদিগের মঙ্গল করিবেন।” 

উহার কথা শুনিয়া ডাক্তার বলিলেন, “আমাদের ও কথা বলিবেন না। এ কাৰ্য্য আমাদের চির অভ্যস্ত। আপনি সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা প্রাণপণে আপনার সাহায্য করিব বলিয়া আমার বন্ধুর সহিত এখানে আসিয়াছি। যদি আমি কোন উপকার করিতে পারি, তাহা হইলেই আপনাকে কৃতার্থ মনে করিব। 

ডাক্তার এই কথা বলিলে তিনি যেন কতকটা আশ্বস্ত হইয়া আমাদিগকে বলিলেন, “বাবা! আজ আমি আপনাদিগকে একটি কথা জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করি। আপনারা সত্য করিয়া উহার উত্তর দিন।” 

ডাক্তার। কি কথা বলুন? আমি তাহার উত্তর দিতেছি। 

রমণী। আপনাদিগের উত্তরে আমার অন্তর কাতর হইবে, এরূপ মনে করিয়া যেন সত্য কথা বলিতে বিচলিত হইবেন না। সত্য কথা অপ্রিয় হইলেও আমার নিকট বলিতে বিমুখ হইবেন না। ঠিক বলুন দেখি, অনুসন্ধানে আপনারা যতদূর অবগত হইয়াছেন, তাহাতে আমার স্বামী জীবিত আছেন কি মরিয়া গিয়াছেন? এ সম্বন্ধে আপনাদিগের অন্তরের অন্তরে যেরূপ ধারণা হইয়াছে তাহা আমাকে ঠিক করিয়া বলুন? 

ডাক্তার। সত্য কথা বলিতে গেলে, আমার মতে তিনি ইহলীলা সম্বরণ করিয়াছেন, ইহা আমাদের বিশ্বাস।

রমণী। তবে কি আপনি মনে করেন যে, তিনি আর জীবিত নাই! তিনি আমায় একেবারে পরিত্যাগ করিয়াছেন? এই বলিয়া রমণী এক সুদীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে তিনি পুনরায় কহিলেন, “তাহা হইলে কি আমার স্বামী সেই মুসলমান ফকির কর্তৃকই হত হইয়াছেন?” 

ডাক্তার। সে বিষয়ে আমি এখন নিশ্চয় করিয়া কোন কথা বলিতে পারিতেছি না; তবে বোধ হয়, কেহ তাঁহাকে খুন করিয়াছে। নতুবা এই কয় দিবস পৰ্য্যন্ত তাহার কোনরূপ সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না কেন? 

রমণী। আমার মনে এখন কেমন একটু সন্দেহ আসিয়া উপস্থিত হইতেছে, আজ আমি এই চিঠিখানি প্রাপ্ত হইয়াছি; যদি তিনি ইহজীবন পরিত্যাগ করিতেন, তাহা হইলে এই চিঠি কিরূপে আজ আমার হস্তগত হইত? 

আমার বন্ধু রমণীর এই কথা শুনিয়া যেন বজ্রাহত হইলেন। তিনি কোনরূপ কথা কহিতে পারিলেন না। অনেকক্ষণ পর তিনি সহসা বলিয়া উঠিলেন, “আপনি কি বলছেন?” 

রমণী। হাঁ, আজই এই পত্র পেয়েছি, এই দেখনা বাবা? 

ডাক্তার। পত্রখানি আমি কি পড়তে পারি? 

রমণী। নিশ্চয়ই! আপনাদিগকে উহা দেখাবার জন্যই ত আমি উহা আপনাদিগের হস্তে প্রদান করিলাম। 

ডাক্তার পত্রখানি অতি ব্যগ্রভাবে গ্রহণ করিলেন। পরে একবার চারিদিক বিশেষরূপে লক্ষ্য করিয়া দেখিলেন যে, পত্রখানি সেই তারিখেরই। অনেকক্ষণ এদিক ওদিক দেখিবার পর তিনি উহা আমার হস্তে প্রদান করিলেন, আমি উহা পড়িয়া দেখিলাম। তখন তিনি কহিলেন, “আপনার স্বামীর লেখা আপনি চেনেন?” 

“হাঁ, আমি তাঁর লেখা চিনি?” 

“এ লেখা কি তাঁর?” 

“না, ওর ভিতর অপর কাগজে তাঁর হাতের লেখা আছে।” 

ডাক্তার। দেখছি, যে খামের উপর নাম লিখেছে, তাহাকে ঠিকানা জানিবার নিমিত্ত অপরের নিকট যাইতে হইয়াছিল, সে নিশ্চয়ই নিজে ঠিকানা জানিত না। 

রমণী ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন করিয়া আপনি উহা জানিতে পারিলেন?” 

“কেন? আপনি দেখুন, নামটি সম্পূর্ণ কাল কালীতে লেখা? যাহা আপনিই শুকাইয়া গিয়াছে। অর্থাৎ উহাতে ব্লটিং কাগজ ছাপা হয় নাই। আর অবশিষ্ট অংশ এক রকম ফিকে রংয়ের। দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, উহার উপর ব্লটিং কাগজ দিয়া ছাপা হইয়াছে। ইহা দ্বারা স্পষ্টই বোধ হইতেছে, যে, লোকটি প্রথমে নাম লিখিয়া, ঠিকানা জানিবার জন্য অন্যত্র গিয়াছিল। নাম আপনিই শুকাইয়া যায়, পরে সে ঠিকানা জানিয়া আসিয়া উহা খামে লিখিয়া ব্লটিং কাগজ দিয়া ছাপিয়াছে।” 

“আপনি নিশ্চয় বলিতে পারেন না যে, ইহা আপনার স্বামীর হস্তাক্ষর?” 

রমণী। হাঁ, আমি যথার্থ বলিতেছি যে, এখানা আমার স্বামীর লেখা। 

ডাক্তার। আর কোন কথা না জিজ্ঞাসা করিয়া পত্র পাঠ করিতে আরম্ভ করিলেন। পত্রে লেখা এই : প্ৰিয়তম! আমার হঠাৎ অদর্শনে ভীত হইও না। শীঘ্রই সমস্ত গোলযোগ মিটিয়া যাইবে। এক মহা সমস্যা ঘটিয়াছে সেই জন্য এই ব্যাপার! তোমারই নরেন। 

পত্রপাঠ করিয়া ডাক্তার আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা, আবার জিজ্ঞাসা করিতেছি, আপনি সত্য করিয়া বলুন, উহা আপনার স্বামীর হস্তাক্ষর কি না?” 

রমণী। হাঁ বাবা, আমি মিথ্যা বলিব কেন? 

ডাক্তার। আজই এই পত্র ডাকে ফেলা হইয়াছে। পোষ্ট অফিসের ষ্ট্যাম্পে আজিকার তারিখ স্পষ্টই দেখা যাইতেছে। মা, বিশেষ সন্দেহ হইতেছে। আজ আমার চিন্তা করিতে সময় দিন। বোধ হয় কালই আপনাদিগকে সন্তুষ্ট করিতে পারিব। 

রমণী। আচ্ছা বাবা! একটি কথা জিজ্ঞাসা করি। এখন তোমার কি মত? তিনি জীবিত আছেন ত? 

ডাক্তার। যদি এই পত্র নকল না হয়, তবে তিনি নিশ্চয়ই জীবিত আছেন। তবে একটি কথা- পত্রখানি তিনি মৃত্যুর পূর্ব্বেও লিখিতে পারেন। এইরূপ হইতে পারে যে, হয়ত তিনি মরিবার পূর্ব্বে পত্রখানি লিখিয়া কোন লোককে ডাকে দিবার নিমিত্ত দিয়াছিলেন, লোকটি সে দিন ভুলিয়া গিয়াছিল, আজ দিয়াছে। 

এই কথা শুনিয়া রমণী হতাশ হইয়া বলিলেন, “হাঁ, তাহাও হইতে পারে। কিন্তু তা বলিয়া বাবা, আমায় এমন করিয়া হতাশ করিও না। আমার মন কিন্তু বলিতেছে, যে তাঁহার বিবাহ হয় নাই। সে দিন তাঁর ছুরিতে হাত কাটিয়া যায়। 

আমি সে সময় নিকটে ছিলাম না। রন্ধনশালায় আহার করিতে ছিলাম। সহসা মন কেমন বিচলিত হইয়া উঠিল। ভাবিলাম, যেন কাহার কি হইয়াছে। আর আহার করিতে ভাল লাগিল না। তখনই শয়নকক্ষে গিয়া দেখি, আমার স্বামীর হাত কাটিয়া রক্তে রক্তারক্তি হইয়াছে। সেই জন্যই বলছি যে, যাঁর একটা হাত কেটে গেলে আমার প্রাণ এত অস্থির হয়, তাঁর মৃত্যু হইলে আমার প্রাণ কি স্থির থাকতে পারে। তিনি নিশ্চয়ই জীবিত আছেন।” 

ডাক্তার। মা, আপনি যা বলিতেছেন, তাহা বাস্তবিকই সত্য কথা। কিন্তু মা, যদি আপনার স্বামী জীবিতই আছেন এবং চিঠি লিখতে পারেন, তবে তিনি কি কারণে তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতেছেন না? এমন কি ব্যাপার ঘটিল, যাহাতে তিনি তোমায় দেখা দিতে পারিতেছেন না? 

রমণী। সেটা আমি বলতে পারি না। ভাবতেও পারি না। ওকথা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। 

ডাক্তার। সোমবার দিন যখন তিনি যান, তখন কোন কথা বলে যান নাই? 

রমণী। না বাবা। 

ডাক্তার। আপনি নিশ্চয়ই তাঁকে গুলির আড্ডায় দেখে আশ্চর্য্য হয়েছিলেন।

রমণী। নিশ্চয়ই। 

ডাক্তার। আচ্ছা, জানালা কি খোলা ছিল? 

রমণী। হাঁ। 

ডাক্তার। তা হ’লে তিনি তোমায় ডাকতে পারতেন। 

রমণী। হাঁ, নিশ্চয়ই পারতেন। 

ডাক্তার। আপনি বলেছিলেন যে, তিনি কেবল একটা অস্পষ্ট শব্দ করেছিলেন। 

‘রমণী। হাঁ বাবা। 

ডাক্তার। সেটা কি আপনি ভেবেছিলেন যে, তিনি আপনাকে সাহায্যের জন্য ডাকছেন। 

রমণী। হাঁ বাবা। তিনি যে তাঁর হাতও তুলেছিলেন। 

ডাক্তার। কিন্তু মা সে হাত তোলাটা আশ্চর্যও হতে পারে। লোকে আশ্চর্য্য হলেও হাত তুলে থাকে, আপনাকে হঠাৎ সেখানে দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েও তিনি হাত তুলতেও পারেন। 

রমণী। সম্ভব বটে। 

ডাক্তার। আপনি সে গৃহে অপর কোন লোক ত দেখেন নাই? 

রমণী। না। 

ডাক্তার। আচ্ছা, আপনি যখন আপনার স্বামীকে দেখেন তখন তাঁহাকে সজ্জিত দেখেছেন কি? 

রমণী। না, বোধ হয় তিনি তখন কাপড় ছাড়ছিলেন। 

ডাক্তার। আপনার স্বামীকে ইতিপূর্ব্বে ঐ গুলির আড্ডার কথা বলিতে শুনিয়াছেন কি? 

রমণী। না। 

ডাক্তার। কখনও কি তিনি আফিং খান। ইহা আপনি জানতে পেরেছেন? 

রমণী। না, কখনও না। 

এইরূপ কথাবার্তা হইবার পর আমি ও আমার বন্ধু সেই সময় সেই স্থান হইতে প্রস্থান করিলাম। 

এখন কিরূপে এই মোকদ্দমার অনুসন্ধান আবশ্যক তাহারই চিন্তা করিবার নিমিত্ত আমরা আপনাপন স্থানে গমন করিলাম। আপনার বাসায় উপনীত হইয়া আহারাদি সমাপনান্তে একটু নিদ্রা যাইবার চেষ্টা করিলাম কিন্তু কোনরূপেই নিদ্রা-সুখ অনুভব করিতে পারিলাম না, এই অনুসন্ধান সম্বন্ধীয় নানারূপ চিন্তায় প্রায় সমস্ত রাত্রি অতিবাহিত হইয়া গেল। প্রত্যূষে অতি সামান্য মাত্র নিদ্রা আসিয়া আমাকে আশ্রয় করিল, কিন্তু তাহাও অধিকক্ষণ স্থায়ী হইতে পারিল না। 

প্রত্যূষে ডাক্তারের কণ্ঠস্বর আমার কর্ণগোচর হইল। তিনি আমাকে ডাকিতেছিলেন, এবং বলিতেছিলেন, “ভোর হয়েছে, উঠ, আর কেন?”

ডাক্তারের কণ্ঠস্বরে আমার নিদ্রা ভঙ্গ হইল। আমি উঠিলাম ও ডাক্তারের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলাম; ডাক্তারকে কহিলাম, “আমার সঙ্গে এক জায়গায় যাইতে রাজী আছ?” 

ডাক্তার। নিশ্চয়ই! সে কথা আবার জিজ্ঞাসা কচ্ছো। 

আমি। তবে আমি শীঘ্র প্রস্তুত হইয়া আসিতেছি। এই বলিয়া ডাক্তারকে সেই স্থানে বসিতে বলিয়া আমি ভিতরে গমন করিলাম ও অতি অল্পকাল মধ্যেই প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিয়া একটি ব্যাগ হস্তে ডাক্তারের নিকট আগমন করিলাম। ডাক্তার যে গাড়ীতে আমার নিকট আগমন করিয়াছিলেন, সেই গাড়ীতে তাহার সহিত উঠিলাম। শীঘ্রই গাড়ী চলিতে লাগিল। যাইতে যাইতে পথে ডাক্তার আমায় বলিলেন, “এখন কোথায় গমন করিতে ইচ্ছা করিতেছ?” 

আমি। তুমি একজন গণ্ডমূর্খের ন্যায়, কার্য্য করিয়াছ বলিয়া আমার বোধ হইতেছে। আমার বোধ হয়, তুমি প্রথমত বিষমভ্রমে পতিত হইয়া এই মোকদ্দমার অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইয়াছ। যেরূপ অনুমান হইতেছে তাহা যদি সত্য হয় তাহা হইলে এই মোকদ্দমার সমস্ত গোলযোগ এখনই শেষ হইয়া যাইবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা। 

আমার কথায় ডাক্তার কোন উত্তর করিলেন না। আমি যে কেন এরূপ মতামত প্রকাশ করিতেছি, তাহাও ভাল করিয়া বুঝিতে পারিলেন না। কথায় কথায় আমরা হাজত-গৃহে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। সেইস্থানে আমরা উভয়েই বিশেষ পরিচিত। উপস্থিত হইবামাত্র একজন কর্ম্মচারী আসিয়া আমাদিগের নিকটে উপস্থিত হইলেন ও আমাদিগকে সম্ভাষণ করিয়া আমাদিগের সেই সময়ে সেই স্থানে উপস্থিতির কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। 

আমি। একবার গোপনে আপনাকে দুই একটি কথা জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করি। 

কর্ম্ম। আসুন, আমার কামরায় আসুন। সেখানে আপনার যাহা ইচ্ছা জিজ্ঞাসা করিতে পারিবেন। 

আমি আমার বন্ধুর সহিত সেই কর্ম্মচারীর আফিস-কামরায় যাইলাম। ঘরটি বেশ পরিষ্কার, একটি ছোট টেবিল, তাহার উপর দোয়াত, কলম, একটা কাগজ রাখা বাক্স এবং আরও দুই একটি আবশ্যকীয় জিনিষ রহিয়াছে। আমরা গিয়া এক একখানি আসন অধিকার করিয়া বসিলাম। 

সকলে উপবেশন করিলে হাজত-গৃহের সেই কর্ম্মচারী আমাকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, “এখন বলুন, আমি আপনার কি উপকার করিতে পারি?” 

আমি। সেই কদাকার ভিক্ষুককে দেখিতে আসিয়াছি, যে ব্যক্তি নরেন্দ্রবাবুকে খুন করিয়াছে বলিয়া আপনার নিকট হাজতে রহিয়াছে। 

কৰ্ম্ম। হাঁ, হাঁ, সে ত এখানেই আছে। 

আমি। কোথায়? 

কর্ম্ম। একটি ঘরে। 

আমি। সে কি শান্ত প্রকৃতির লোক? না কোনরূপ উৎপাত করে? 

কৰ্ম্ম। সে বড় শান্ত। এ পর্য্যন্ত আমাদের কোন কষ্ট দেয় নাই। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, তার মত অপরিষ্কার জীব বোধ হয় পৃথিবীতে আর নাই। 

আমি। বলেন কি! সে কি এতই অপরিষ্কার! 

কর্ম্ম। হাঁ, আমার ইচ্ছা এই যে, তাহার বিচার হয়ে গেলে একবার তাহাকে আচ্ছা করে স্নান করিয়ে দিতে হবে। আপনি যদি এখন তাহাকে একবার দেখেন, তাহলে আপনিও আমার মতে মত দিবেন। 

আমি। আমারও বড় ইচ্ছা যে, এখন একবার তাহাকে দেখি। 

কৰ্ম্ম। সত্য না কি? ইহা অতি সহজ কাৰ্য্য। আমার সহিত আসুন, আমি তাহাকে দেখাইয়া দিতেছি। কর্ম্মচারীর এই কথা শুনিয়া, আমি আমার যে ব্যাগটি সঙ্গে করিয়া সেই স্থানে গমন করিয়াছিলাম, সেই ব্যাগটির হস্তে লইয়া গাত্রোত্থান করিলাম। উহা দেখিয়া, হাজত-গৃহের সেই কর্ম্মচারী কহিলেন, “ ও কি! ও ব্যাগ লইয়া আবার দরকার নাই। আমার ঘরে চোর থাকার সম্ভাবনা নাই। আপনি আপনার ব্যাগটিকে আমার ঘরে রেখে আসুন। মিছামিছি কষ্টভোগ করিবার প্রয়োজন কি?” 

আমি। এই ব্যাগটায় আমার বিশেষ দরকার আছে। এটাকে নিয়েই তার কাছে যাওয়া যাক চল। 

কর্ম্ম। ভাল! আপনার যাহা ইচ্ছা। আসুন, আপনি আমার সহিত এদিকে আসুন, আমি আপনাকে তাহার কাছে লইয়া যাইতেছি। এই কথা বলিয়া সেই হাজতের কর্ম্মচারী আমাদিগকে কয়েদীর গৃহে লইয়া গেলেন। 

আমরা নিকটে গিয়ে দেখিলাম, লোকটি নিদ্রিত। কামরা বাহির হইতে আবদ্ধ। কর্ম্মচারী উহাকে নিদ্রিত দেখিয়া আমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, “আপনার আসামী গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত। এই সুযোগে আপনি ভাল করিয়া দেখিয়া লউন।” 

কর্মচারীর কথা শুনিয়া আমিও ডাক্তারের সহিত রেলের ভিতর দিয়া উহাকে দেখিতে লাগিলাম। কয়েদী আমাদের দিকেই মুখ ফিরাইয়া নিদ্রা যাইতেছিল। ভাবভঙ্গী, অঙ্গের সৌষ্ঠব ও নিশ্বাস-প্রশ্বাসের কার্য্য দেখিয়া তাহাকে দোষী বলিয়া বোধ হয় না। আমার বন্ধুর সহিত অনেক দোষী ও কয়েদীর আকৃতি অনেকবার দেখিয়াছি ও উহাদিগের আকৃতি দেখিয়া উহাদিগের মনের ভাব অনুমান করিবার কেমন একটু ক্ষমতাও জন্মিয়াছে বলিয়া আমাদিগের বিশ্বাস। সেইজন্যই দেখিবামাত্র তাহাকে যেন কেমন নির্দোষী বলিয়া বোধ হইল। 

লোকটি অধিক দীর্ঘ বা খর্ব্ব নহে। সাধারণত ভিক্ষুর যেরূপ বেশভূষা হইয়া থাকে, ইহার বেশভূষা তদপেক্ষাও অনেক অংশে হীন। গাত্রে একটি শতগ্রন্থি অতি পুরাতন জামা রহিয়াছে। গাত্র অত্যন্ত মলিন। দেখিলেই বোধ হয়, যেন একপুরু ময়লা জমিয়া গিয়াছে। মুখে যেন একটি কাটার দাগ, তাহার উপর আবার ঠোঁট উল্টান থাকায় তাহার বিশ্রী আকৃতি আরও কুৎসিত হইয়াছে। 

যখন আমরা আসামীকে এইরূপে দেখিতেছিলাম, তখন সেই কৰ্ম্মচারী আমাদিগকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন, “কেমন? আমি যাহা বলিতেছিলাম, তাহা সত্য নয় কি? এমন সুপুরুষ আর কোথাও দেখেছেন কি? অনেক অনেক কদাকার পুরুষ দেখিয়াছি কিন্তু এরূপ কদাকার ব্যক্তিকে আমি যে কখন দেখিয়াছি তাহা আমার অনুমান হয় না।” এইরূপ অবস্থা দেখিয়া আমি সেই কৰ্ম্মচারীকে কহিলাম, “আমি ইচ্ছা করি, লোকটাকে একবার পরিষ্কার করিয়া দিয়া দেখি যে, উহাকে কিরূপ দেখায়, আমি মনে মনে এই অভিপ্রায় করিয়াছি। এই ব্যাগে স্নানের আবশ্যকীয় সকল দ্রব্য সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছি, এখন আপনি যদি আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়া এই কামরার দরজা খুলিয়া দেন, তাহা হইলে আমি বিশেষ বাধিত হই।” এই বলিয়া আমি একখানি স্পঞ্জ বাহির করিলাম, সেই স্পঞ্জখানা এবং সেই ব্যাগের মধ্যে অন্যান্য দ্রব্যগুলি দেখিয়া, কৰ্ম্মচারী সহসা হাস্য সম্বরণ করিতে পারিলেন না। মুখে বলিলেন, “আপনার চিরকালই সমান গেল। আসুন, আর বিলম্বে প্রয়োজন নাই। আপনি ত অনেক দেখিয়াছেন, বলুন দেখি, এই হাজতগৃহে এমন কুৎসিত আসামী ইতিপূর্ব্বে আর কখন আসিয়াছে কি? ওরূপ কদাকার লোক আমার হাজতের কলঙ্ক-স্বরূপ।” 

আমরা আর সময় নষ্ট না করিয়া ধীরে ধীরে সেই কামরায় প্রবেশ করিলাম। আসামী প্রথমে আমাদিগকে দেখিয়া পার্শ্ব পরিবর্ত্তন করিল, পরে আবার নিদ্রা যাইবার জন্য মুখ ফিরাইয়া কম্বলের উপর মস্তক ন্যস্ত করিল। আমি তাহাকে উঠাইয়া তাহাকে একবারে বিবস্ত্র করিয়া ফেলিলাম ও একখানি বড় স্পঞ্জ জলসিক্ত করিয়া তাহাকে উত্তমরূপে ঘর্ষণ করিতে লাগিলাম। এইরূপে কিয়ৎক্ষণ ঘর্ষণ করিতে ঐ ফকিরের অঙ্গস্থিত সমস্ত ময়লা ইত্যাদি দূর হইয়া গেল, সে তখন অপর রূপ ধারণ করিল। ডাক্তার এই অবস্থা দেখিয়া নিতান্ত বিস্মিতের সহিত বলিয়া উঠিলেন, “আমার বোধ হইতেছে, ইনিই নরেন্দ্রকৃষ্ণ। যতবার আমি স্পঞ্জ দিয়া আসামীর গাত্র ঘর্ষণ করিতে লাগিলাম, ততবারই যেন গাত্র হইতে এক এক পুরু ছাল উঠিয়া আসিতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে সেই কদাকার দেহের সমুদায় ময়লা উঠিয়া গেল, সেই উল্টান ঠোঁট কোথায় অদৃশ্য হইল। চুলের লাল দাগ তখনই যেন কোথায় চলিয়া গেল, এবং তাহার পরিবর্তে অতি সুন্দর কৃষ্ণবর্ণ কেশগুচ্ছ শোভা পাইতে লাগিল, অমন মলিন মুখ সুন্দর হইল, কয়েক মিনিটের মধ্যেই তেমন কদাকার লোক যেন সুন্দর যুবকে পরিণত হইল। আসামী এতক্ষণ কোন কথা কহে নাই। কিন্তু যখন দেখিল, যে তাহার ছদ্মবেশ একেবারে অদৃশ্য হইল, তখন সে চীৎকার করিতে করিতে সেই স্থানের কম্বলের মধ্যে তাহার মস্তক লুকাইবার চেষ্টা করিল। 

এই সকল ব্যাপার দেখিয়া ডাক্তার আশ্চর্যান্বিত হইয়া বলিল, “কি আশ্চর্য্য! এই লোককেই পাওয়া যাইতেছে না। আমি ইহার আকৃতি ছবিতে দেখিয়াছি। এমন কি, উহার ফটো এখনও আমার নিকট আছে। এই সেই নরেন্দ্রকৃষ্ণ?” আসামী তখন সাহসী হইয়া বলিল, “আচ্ছা, যদি তাই হয়, যদি আমিই সেই লোক বলিয়া সাব্যস্ত হই, তবে আর কেন আমায় কষ্ট দেন। কিজন্য আমায় কয়েদ করা হইয়াছে বলুন?” 

ডাক্তার। নরেন্দ্রবাবুকে খুন করিবার জন্য। কিন্তু যখন তুমিই সেই নরেন্দ্রবাবু, তখন তোমাকে আর সে দোষে দোষী করা যাইতে পারে না। যাহা হউক, আমি প্রায় সাতাশ বৎসর পুলিসের কার্য্য করিতেছি, কিন্তু এরূপ আশ্চর্য্য ঘটনা আমি স্বপ্নেও জানিতাম না। 

নরেন্দ্র। এখন সে সকল কথা ছাড়িয়া দিন। এখন আমি বলিতেছি যে, যদি আমিই নরেন্দ্রবাবু হই, তাহা হইলে নরেন্দ্রবাবুকে খুন করিয়াছি বলিয়া আমাকে যে কয়েদ করা হইয়াছে, ইহা ন্যায়সঙ্গত হইয়াছে কি? 

আসামীর কথা শুনিয়া আমার বন্ধু বলিল, “তুমি কোন দোষ কর নাই সত্য বটে কিন্তু এক মহা ভ্রম করিয়াছ। তোমার এ কার্য্য তোমার স্ত্রীকে বলিয়া রাখ নাই কেন? স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এরূপ গোপনীয় কাৰ্য্য থাকিতে পারে তাহা আমিও জানিতাম না।” 

নরেন্দ্র। আপনি যথার্থ বলিয়াছেন; কিন্তু আমি আমার সন্তানগণকে আমার এই অবস্থা জানাব না বলিয়াই একাৰ্য্য ঘটিয়াছে। হা ভগবান! কি পাপ বশতঃ আজ আমার এতাদৃশ অপমানিত করিলে? এখন আমি কি করিব? এবার যে সকলেই জানিতে পারিবে। আর যে আমার স্ত্রী বা পুত্রকন্যাগণের মধ্যে কেহই বিশ্বাস করিবে না। 

আসামীর খেদোক্তি শ্রবণ করিয়া আমার বন্ধুর দয়া হইল। তিনি বলিলেন, “যদি এই ব্যাপার আদালতে যায়, তাহা হইলে নিশ্চয়ই এ সকল সংবাদ সকলেরই শ্রুতিগোচর হইবে। কিন্তু যদি এরূপ বলিতে পার যে, তোমার বিরুদ্ধে পুলিসের আর কোন আধিপত্য নাই অর্থাৎ তুমি যদি এরূপ প্রমাণ করিতে পার যে, তুমি আর কোন দোষে দূষিত নহ, তাহা হইলে এসকল সমাচার সংবাদ পত্রে বাহির না হইলেও হইতে পারে। আমি জানি, এই কর্ম্মচারীও অতি ভদ্র, ইনি কখনই অন্যায়রূপে কাহারও প্রতি অত্যাচার করেন না। আজ যদি তুমি তোমার এই ভ্রমের বিষয় বিশেষ করিয়া বুঝাইয়া বলিতে পার, তাহা হইলে হয়ত ইনি তোমায় মুক্তি দিতে পারেন।” 

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

নরেন্দ্রকৃষ্ণ কহিলেন, “মহাশয়! ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করিবেন। আমি লজ্জার ভয়ে প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জ্জন করিতেও প্রস্তুত ছিলাম, আজ যদি নরেন্দ্রবাবুকে খুন করিয়াছি বলিয়া আপনারা আমার ফাঁসির হুকুম দিতেন, তাহা হইলেও আমি কোন বাক্যব্যয় করিতাম না। আমি প্রাণান্তেও পুত্রগণকে আমার প্রকৃত অবস্থার বিষয় জ্ঞাপন করিতে সক্ষম নহি। এখন আমার যাহা বক্তব্য তাহা আপনাদের সকলের সাক্ষাতে বলিতেছি শ্রবণ করুন। আমার এই গুপ্তকথা আর কেহই ইতিপূৰ্ব্বে জানিতেন না। আজ আপনারা এই তিনজনে প্রথমে আমার এই অদ্ভুত কাহিনী শ্রবণ করিতেছেন। আমার পিতা কোন একটি গবর্ণমেণ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি একজন পণ্ডিত লোক। আমিও পিতার কৃপায় যথেষ্ট বিদ্যা শিক্ষা করিয়াছিলাম। বিদ্যা শিক্ষা করিলেই যে অর্থ উপার্জন হয়, এমন কোন কথা নাই। আমি যদিও যথেষ্ট বিদ্যালাভ করিয়াছিলাম, তথাপিও অনেকদিন পর্যন্ত একটা পয়সার মুখ দেখিতে পাই নাই। অবশেষে অনেক কষ্টের পর একখানা খবরের কাগজের সম্পাদকপদে প্রতিষ্ঠিত হইলাম। একদিন আমি এই সংবাদ পাইলাম যে, যে লোক ভিক্ষাবৃত্তি সম্বন্ধে একটি উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ রচনা করিতে পারিবেন, তিনি পুরস্কৃতহইবেন। আমি সেই সুযোগ ত্যাগ করিতে পারিলাম না। মনে করিলাম, কেবল স্বকপোলকল্পিত কতকগুলি আবৰ্জ্জনা না লিখিয়া প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধান করিয়া এই কার্য্যে নিযুক্ত হওয়াই কৰ্ত্তব্য। আমি পূর্ব্বে একটি সখের থিয়েটারে কার্য্য করিতাম। ছদ্মবেশ আমার চির অভ্যস্ত ছিল। ছদ্মবেশে আমি এমন সিদ্ধহস্ত ছিলাম যে, আমাকে আমার অত্যন্ত আত্মীয়, এমন কি, আমার পিতা মাতা পৰ্য্যন্ত চিনিতে পারিতেন না। প্রবন্ধ লিখিবার সময় আমার সেই সকল বিষয় স্মরণ হইল। আমি তখন ছদ্মবেশ ধারণ করিলাম। এক অদ্ভুত আকৃতি করিয়া রাজধানীর প্রশস্ত পথে আসিয়া দণ্ডায়মান হইলাম। সেই আকৃতিতে আমি সকলের দয়া উদ্রেক করিয়াছিলাম, তাহার আর অধিক কি বর্ণনা করিব। আমার সেই অদ্ভুত কদাকার মূর্তি আপনারা স্বচক্ষেই দেখিতে পাইয়াছেন। সেই কদাকার মূর্তিতে আমি সকলেরই দয়ার পাত্র হইলাম। প্রায় ছয় সাত ঘণ্টা এইরূপে দণ্ডায়মান থাকিবার পর আমি কার্যাস্থানে আসিলাম। দেখিলাম যে, সেই একদিনেই আমি প্রায় কুড়ি টাকা উপায় করিয়াছি। তাহার পর আমি প্রবন্ধ লিখিলাম। সেইদিন নিজে ভিক্ষুক সাজিয়া যাহা যাহা করিয়াছি, যে যে বিষয় অবলোকন করিয়াছি, কি কৌশলে সাধারণের দয়ার পত্র হইয়াছিলাম, এই সমস্ত ব্যাপার প্রবন্ধে লিখিলাম। আমার প্রবন্ধই সকলের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হইল। আমি পুরস্কার পাইলাম। আর আমার নিজের ভিক্ষাবৃত্তির বিষয় স্মরণপথে আনিবার চেষ্টা করিলাম না। 

কিছুদিন এইরূপে অতিবাহিত হইল, পরে একদিন আমার একবন্ধু আমার নিকট উপস্থিত হইল। পূর্ব্বে আমি তাহার নিকট হইতে প্রায় আড়াই শত টাকা কর্জ্জ লইয়াছিলাম, তখনও পরিশোধ করিতে পারি নাই। বলিতে গেলে, দেনার বিষয় আমার একবারে মনেই ছিল না। বন্ধুবর আসিয়া আমার নিকট হইতে অর্থ চাহিলেন। আমার হস্তে তখন এক কপদক ছিল না। অথচ বন্ধুর বিশেষ প্রয়োজন। কি করি তাহার নিকট হইতে সাত দিনের সময় লইলাম। 

সেইদিন আবার আমার ভিক্ষাবৃত্তির কথা মনে পড়িল। আমি তখনই আমার প্রভুকে বলিয়া কাৰ্য্য হইতে কিছুকাল অবসর গ্রহণ করিলাম। তারপর আবার সেইরূপ ছদ্মবেশ ধারণ করিলাম ও পুনরায় সহরে গিয়া ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করিলাম। আপনারা সহজেই অনুমান করিতে পারিবেন, কেন আমি এরূপ ঘৃণাঙ্কর কার্যে লিপ্ত হইলাম। যখন আমি কঠোর পরিশ্রম করিয়া এক মাসের পর মোট ত্রিশটি টাকা পাই এবং বিনা পরিশ্রমে একদিনে প্রায় ২০ কুড়ি টাকা উপায় করিতে পারি, তখন কেন আমি পরিশ্রম করিয়া অল্প অর্থ উপার্জ্জন করিতে পাইব, কি রূপেই বা আমি অনায়াসলব্ধ দৈনিক ২০ কুড়ি টাকার লোভ সম্বরণ করিব। অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া আমি শেষোক্ত লভ্যজনক কার্য্যেই নিযুক্ত হইলাম। 

কেবল একটি লোক আমার এই কার্য্য জানিত। সে সেই গুলির আড্ডার সর্দ্দার। সেই আমায় দয়া করিয়া তাহার আড্ডার মধ্যে একটি কামরা আমায় থাকিতে দিয়াছিল। অবশ্য আমি তাহাকে তাহার ঘরের ভাড়া স্বরূপ কিছু কিছু দিতাম এবং আমার এই গুপ্তকথা পাছে প্রকাশ করে এজন্যও তাহাকে আমার লভ্যের কিয়দংশ দিতাম। সুতরাং সে কাহাকেও আমার গোপনীয় রহস্য প্রকাশ করিত না। 

অতি অল্প দিনের মধ্যেই আমি দেনা শোধ করিলাম বটে কিন্তু আমার এই লাভজনক ব্যবসা আর পরিত্যাগ করিতে পারিলাম না। শীঘ্রই দেখিলাম যে, আমার যথেষ্ট অর্থ সঞ্চিত হইয়াছে এবং দিন দিন আমি ধনবান হইতেছি। তখন আমি বিবাহ করিলাম ও কিছুদিন পরে আমার সন্তান-সন্ততি হইতে লাগিল। আমার স্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই জানিত না। আমি তাহাকে এ সকল কথার কিছুই বলি নাই, তবে মধ্যে মধ্যে আমায় সহরে আসিতে হইত বলিয়া আমার স্ত্রীকে বলিতাম যে, সহরে আমার বিশেষ কাৰ্য্য উপলক্ষে সময়ে সময়ে যাইতে হয়। গত সোমবার আমার দৈনিক ভিক্ষাবৃত্তির পর যেমন আমি গুলির আড্ডায় আগমন করিয়া আমার ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করিয়াছি, অমনি আমার স্ত্রীর সহিত আমার সাক্ষাৎ হয়। কিজন্য আমার স্ত্রী ঐ স্থান দিয়া যাইতেছিল, তাহা ইতিপূৰ্ব্বেই আপনারা জ্ঞাত আছেন এবং কিজন্য আমি খুনী বলিয়া ধৃত হই, তাহাও আপনাদিগের অজ্ঞাত নহে। 

আমার স্ত্রীকে দেখিয়া আমি অতীব আশ্চর্যান্বিত হইলাম এবং তখনই অদৃশ্য হইলাম। আমি জানিলাম যে, আমার স্ত্রী সহজে ছাড়িবার নহে সুতরাং আমিও পুনরায় ছদ্মবেশ পরিধান করিয়া রহিলাম এবং পরে ধরা পড়িলাম! কারণ আমার পুত্র সেই ঘরে প্রবেশ করিবার পূর্ব্বে আমি সমুদায় পোষাক জলে ফেলিয়া দিতে পারি নাই। কেবল উপরের জামাটার পকেট তাম্রমুদ্রায় পূর্ণ করিয়া নদীগর্ভে ফেলিয়া দিয়াছিলাম। যদি আমার পুত্রের আসিতে বিলম্ব হইত, তাহা হইলে আমি অপর পোষাকগুলির অবস্থাও সেইরূপ করিতাম। কিন্তু অদৃষ্টের ভোগ কোথায় যাইবে! আমি তাপর পোষাকগুলির বন্দোবস্ত করিবার পূর্ব্বেই আমার পুত্র আসিয়া সেইস্থানে উপস্থিত হইল এবং আমার পোষাকগুলি দেখিতে পাইয়া আমাকেই তাহার পিতার হত্যাকারী বলিয়া মনে করিয়া আমায় পুলিসের হস্তে সমর্পণ করিল। এই আমার ইতিহাস। এখন আপনারা ইহার যেরূপ বিচার করিবেন, আমি তাহাই অবনত মস্তকে গ্রহণ করিব। আর একটি কথা বলিতে ভুলিয়া গিয়াছি, যখন দেখিলাম যে, আমার আর নিষ্কৃতি নাই, তখন আমি কোন একটি লোকের হস্তে আমার আংটি ও একখানি পত্র দিয়া আমার স্ত্রীর নিকট পাঠাইয়া দিতে অনুরোধ করি। বোধহয়, আমার স্ত্রী সে পত্র পান নাই, সেইজন্যই এত গোলযোগ ঘটিয়াছে। 

আমার বন্ধু বলিলেন, “তোমার সেই পত্র কেবলমাত্র গতকল্য তোমার স্ত্রীর হস্তে পতিত হইয়াছে।” 

নরেন্দ্র। কি ভয়ানক! তবে ত আমার স্ত্রী এক সপ্তাহ কাল ভয়ানক কষ্টে দিনযাপন করিয়াছে। হায়! হায়! আমার পাপে তাহাকে এত কষ্ট সহ্য করিতে হইল। ভগবান! আমি কি পাপে এত শাস্তি পাইলাম তাহা বলিতে পারি না। 

আমি। তুমি ত জান যে পুলিস, আড্ডার সর্দ্দারের উপর বিশেষ সন্দেহ করিয়াছিল। পুলিস ইহাও সাব্যস্ত করিয়াছিল যে, তোমার ন্যায় একজন অক্ষম লোকে অপরের সাহায্য ব্যতীত কোন লোককে হত্যা করিতে পারে না; তোমার নিশ্চয়ই একজন সঙ্গী ছিল। আর ইহাও আমাদিগের বিশ্বাস হইয়াছিল যে, আড্ডার কোন গুলিখোর তোমার ভয়ানক কার্য্যে সাহায্য করিতে পারিবে না। কারণ, তাহা হইলে অনেকেই তোমাদের কার্য্য লক্ষ্য করিবে। অতএব সেই আড্ডার সর্দ্দার ভিন্ন আর কোন লোক এ কার্যে হস্তক্ষেপ করিতে পারে? এইজন্য পুলিস সেই আড্ডাধারীকে সন্দেহ করিয়াছিল, কিন্তু তাহার বিপক্ষে কোন প্রমাণ না পাওয়াতে উহাকে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে হাজতে দিতে পারে নাই। সুতরাং তাহারা ভিতরে ভিতরে সর্দ্দারের কার্য-প্রণালী লক্ষ করিতেছিল এবং সেই কার্য্যের জন্য অনেক লোকও নিযুক্ত করিয়াছিল। এই হেতু সর্দার তোমার প্রদত্ত পত্র যথাসময়ে ডাকঘরে দিতে পারে নাই। আমার বোধ হয়, সে নিজেও এ কার্য করিতে সক্ষম হয় নাই, অপর কাহারও হস্তে দিয়াছিল। সে হয়ত পত্র ডাকে দিতে বিলম্ব করে। সেই জন্যই তোমার স্ত্রী যথাসময়ে তোমার পত্র পান নাই। 

আমি নরেন্দ্রবাবুকে এই কথা বলিলে আমার বন্ধু বলিলেন, “ঠিক কথা! এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই। এখন আমার একটি কথা আছে। যদি পুলিস অনুগ্রহ করিয়া এই সম্বন্ধে আর কোন গোলযোগ না করিতে স্বীকৃত হয়, তাহা হইলে তুমিও আর কখনও ভিক্ষুকের কার্য্য করিতে পারিবে না। ছদ্মবেশ ধারণ করিয়া ভিক্ষুকতা দ্বারা অর্থ উপার্জ্জন করিতে চিরকালের জন্য বঞ্চিত হইলে।” 

আমি আসামীকে লক্ষ্য করিয়া কহিলাম, “নরেন্দ্রবাবু। আমি আপনাকে মুক্তি দিলাম। এ বিষয়ে আর কোন গোলযোগ হইবে না। আপনি ভদ্রলোক, সামান্য ভ্রমের জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করিলেন। এমন কি, যদি এই ভয়ানক রহস্যভেদ এত সহজে না হইত, তাহা হইলে আপনাকে হয়ত জীবন পৰ্য্যন্ত বিসর্জ্জন দিতে হইত। আপনি যদি আপনার স্ত্রীকে এই বিষয় ইতিপূৰ্ব্বে জানাইতেন, তাহা হইলে কখনও এরূপ গোলযোগ ঘটিত না। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এরূপ গোপনীয় বিষয় থাকা উচিত নহে। আপনি মুক্তি পাইলেন অদ্য আপনাকে এখন আর একটি কার্য্য করিতে হইবে। আপনি বাটী প্রত্যাগমন করিয়া আপনার স্ত্রীকে এই বিষয় সত্য করিয়া বলিবেন, ইহাই আমার আন্তরিক অভিপ্রায়।” “আপনার কথা শিরোধার্য্য। কিন্তু জানিবেন যে, এ সকল কথা বলিতে আমার যৎপরোনাস্তি অপমান বোধ করিতে হইবে।” 

তখন আমার বন্ধু আমার দিকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, “আজ আপনি যেরূপ অসাধারণ ক্ষমতার পরিচয় দিলেন, তাহা ইতিপূৰ্ব্বে কখনও শ্রুতিগোচর হয় নাই। আজ আপনি কেবল যে পুলিসের কার্য্য করিলেন, এমন নহে, একটি পরিবারের সুখের কারণ হইলেন। একবার ভাবিয়া দেখুন, যদি আজ এ ভয়ানক অদ্ভুত রহস্যভেদ না হইত, যদি আজ নরেন্দ্রবাবু যে অপরাধে অপরাধী বলিয়া ধৃত হইয়াছেন, তাহাতে সম্পূর্ণ নির্দোষী হইয়াও শাস্তি গ্রহণ করিতে বাধ্য হইতেন, তাহা হইলে কি হইত? ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই যে, তিনি তোমার মত বিচক্ষণ ব্যক্তিকে এমন কাৰ্য্যে নিযুক্ত করিয়াছেন। ঈশ্বরের নিকট শেষ প্রার্থনা এই যে, তিনি যেন আপনাকে দীর্ঘজীবী করিয়া সর্ব্বদা সুস্থ শরীর ও স্বচ্ছন্দমনে জীবন অতিবাহিত করিতে দেন।” 

আমার বন্ধু, আসামী ও আমি তথা হইতে বাহির হইলাম। দ্বারেই গাড়ী ছিল, সকলে আরোহণ করিয়া অনতিবিলম্বে নরেন্দ্রবাবুর বাটীতে উপস্থিত হইলাম। 

প্রথম আনন্দ উচ্ছ্বাস অতীত হইলে আমার বন্ধু, নরেন্দ্রবাবু ও তাহার স্ত্রীকে সঙ্গে লইয়া নির্জ্জনে গমন করিলেন। আমিও তাহাদের অনুসরণ করিলাম। তথায় আমার বন্ধু নরেন্দ্রবাবুর ছদ্মবেশের সেই অদ্ভুত রহস্য তাহার স্ত্রীকে বিশেষরূপে বর্ণনা করিয়া উভয়ের মধ্যে যাহাতে শান্তি স্থাপিত হয়, তাহার উপায় করিলেন। এই স্থানে আমাদিগের কার্য্যেরও শেষ হইল। 

আমরা সেই স্থান হইতে বহির্গত হইয়া আমাদিগের আপন আপন স্থানে গমন করিলাম। এই মোকদ্দমার কথা সবিশেষ যিনি যিনি শ্রবণ করিয়াছিলেন, তিনিই পুলিসকে প্রথম গালি না দিয়া ক্ষান্ত হন নাই; কিন্তু সংবাদপত্রে সকল কথা প্রকাশ হয় না। 

[ চৈত্র, ১৩১১ ] 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *