1 of 2

অধ্যায় ৪৮ : লাগামহীন রেলগাড়ি আর অনাকাঙ্ক্ষিত ভায়োলিনবাদক – ফিলিপ্পা রুথ ফুট আর জুডিথ জার্ভিস থমসন

অধ্যায় ৪৮ : লাগামহীন রেলগাড়ি আর অনাকাঙ্ক্ষিত ভায়োলিনবাদক –  ফিলিপ্পা রুথ ফুট আর জুডিথ জার্ভিস থমসন

মনে করুন আপনি একদিন হাঁটতে বের হয়েছেন এবং দেখলেন একটি নিয়ন্ত্রণহীন ট্রেন দ্রুতবেগে ছুটে আসছে পাঁচজন শ্রমিকের দিকে, ট্রেনটির ড্রাইভার তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে হয়তো তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হবার ফলাফলে, ফলে ট্রেনটি আর তার নিয়ন্ত্রণে নেই। যদি কিছু না করা হয় অর্থাৎ ট্রেনটির গতিপথ যদি পরিবর্তন না করে, তাহলে ট্রেনটি তাদের সবাইকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলবে, কারণ এটি এত দ্রুত চলছে যে তাদের কেউ এর পথ থেকে সময়মতো সরেও যেতে পারবে না। তবে, একটি আশা আছে। রেললাইনের উপর একটি ফর্ক বা লাইনটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত হবার ব্যবস্থা আছে, সেই পাঁচজন শ্রমিক যে লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ করছেঠিক তার আগে, তবে অন্য লাইনটিতে দাঁড়িয়ে কাজ করছে শুধুমাত্র একজন শ্রমিক। আপনি যথেষ্ট কাছে আছেন একটি সুইচের কাছে, যেটি নাড়িয়ে দিলে আপনি ট্রেনটিকে পাঁচজন শ্রমিকের লাইন থেকে অন্য লাইনে ঘুরিয়ে দিতে পারেন একজন শ্রমিককে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে। এই নিরপরাধ মানুষটিকে হত্যা করা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য? সংখ্যাবিচারে অবশ্যই, আপনি একজনকে হত্যা করে পাঁচজনের জীবন বাঁচাবেন। এটি অবশ্যই সুখকে ম্যাক্সিমাইজ বা সর্ব্বোচ্চ করে। বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটাই স্পষ্টত করার জন্যে সঠিক কাজ মনে হবে। বাস্তব জীবনে খুব কঠিন হবে সুইচ নাড়ানো এবং তার পরিণতিতে কারো মৃত্যু দেখা, কিন্তু আরো বেশি খারাপ মনে হবে কিছুই না করে তার চেয়ে পাঁচ গুণ মানুষের মৃত্যু দেখা। বিখ্যাত একটি চিন্তার পরীক্ষার (বা থট এক্সপেরিমেন্ট) এটি একটি সংস্করণ, যা মূলত সৃষ্টি করেছিলেন ব্রিটিশ দার্শনিক ফিলিপ্পা ফুট (১৯২০-২০১০)। তিনি আগ্রহী ছিলেন জানতে কেন লাইনের উপর দাঁড়ানো পাঁচজন মানুষের জীবন বাঁচানো নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে হয় এবং কেন কিছু ক্ষেত্রে অনেককে বাঁচানোর জন্য একজনকে বিসর্জন দেয়াও নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কল্পনা করুন সুস্থ একজন মানুষ একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রবেশ করছে। সেই ওয়ার্ডে আরো পাঁচজন লোক আছেন যাদের নানাধরনের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা দরকার। তাদের একজন যদি একটি হৃৎপিণ্ড না পান তিনি অবশ্যই মারা যাবেন। অন্যজনের দরকার একটি যকৃত, অন্যজনের একটি কিডনি ইত্যাদি। নৈতিকভাবে বিষয়টি কি গ্রহণযোগ্য হবে যদি একজন সুস্থ রোগীকে হত্যা করে তার শরীর থেকে সেইসব অঙ্গগুলোকে সংগ্রহ করে অসুস্থ মানুষগুলোকে দেয়া হয়? স্পষ্টতই কোনো একটি সুস্থ মানুষকে হত্যা করে, তার হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃত, কিডনি সরিয়ে নিয়ে বাকি পাঁচজনের শরীরে প্রতিস্থাপন করার বিষয়টি কারো কাছেই গ্রহনযোগ্য হবেনা। কিন্তু এটাও পাঁচজনকে বাঁচানোর জন্য একজনকে বিসর্জন দেয়া। এটার সাথে সেই লাগামহীনভাবে ছুটে আসা ট্রেনের দৃশ্যটির পার্থক্য কী?

থট এক্সপেরিমেন্ট বা চিন্তার পরীক্ষা হচ্ছে কাল্পনিক সেই পরিস্থিতি যার উদ্দেশ্য আমাদের অনুভূতিগুলো বের করে আনা অথবা দার্শনিকরা যাকে বলেন ‘ইনটুইশন’ বা সজ্ঞা বা স্বতঃলব্ধ জ্ঞান। কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে সেই ইনটুইশনকে বের করে আনার জন্যে দার্শনিকরা প্রায়শই এগুলো ব্যবহার করে থাকেন। চিন্তার পরীক্ষাগুলো আমাদের সুযোগ করে দেয় যে-বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর উপর মনোযোগ স্থির করতে। এখানে দার্শনিক প্রশ্নটি হচ্ছে : বেশিসংখ্যক জীবনকে বাঁচাতে একটি জীবনকে বিসর্জন দেয়া কখন গ্রহণযোগ্য হতে পারে? লাগামহীনভাবে ছুটে আসা ট্রেন আমাদের এই বিষয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করে। এটি মূল নিয়ামকগুলোকে আলাদা করে আর আমাদের প্রদর্শন করে এই ধরনের কোনো কাজের ব্যাপারে আমরা কী মনে করি, কাজটি কি সঠিক নাকি ভুল। কিছু মানুষ বলবেন যে আমাদের কখনোই উচিত না এখানে সুইচটি নামানো, কারণ সেটি হবে ঈশ্বরের ভূমিকা পালন করা: বাকে মারা যাবে আর কে বাঁচবে তার সিদ্ধান্ত নেয়া।বেশিরভাগ মানুষ, যদিও মনে করেন, আপনার সেটি করা উচিত। কিন্তু এর সাথে সম্পর্কযুক্ত আরো উদহারণের কথা ভাবুন। মার্কিন দার্শনিক জুডিথ জার্ভিস থমসন মূল সমস্যার এই সংস্করণটির কথা ভেবেছিলেন। লাগামহীন ট্রেন এবার সেই সোজা রেললাইনের উপর, যা ছুটে যাচ্ছে সেই হতভাগ্য পাঁচ শ্রমিকের দিকে, তারা অবশ্যই মারা যাবে যদি-না আপনি কিছু করেন। আপনি একটি ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বপু একজন মানুষ। আপনি যদি তাকে ব্রিজের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন, সেই লোকটি যথেষ্ট ভারী সেই ট্রেনটির বগির গতি কমিয়ে এমনকি থামাতে, সেই পাঁচ শ্রমিককে আঘাত করার আগে। অবশ্য তার আগে আমাদের মনে করে নিতে হবে যে আপনার সেই শক্তি আছে সেই মানুষটিকে ব্রিজের উপর থেকে নিচে ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবার জন্য। আপনার কি সেটি করা উচিত? বহু মানুষের মনে হয়েছে এটি আরো বেশি কঠিন কাজ, এবং তাদের মধ্যে বেশি প্রবণতা দেখা দিয়েছে ‘না’ বলার জন্যে, যদিও এই কেসটিতে ও দুইভাগ হয়ে যাওয়া লাইনের কেসেও আপনি আপনার কাজের পরিণতি পরিবর্তন করতে পারবেন পাঁচজনের মৃত্যু থেকে মাত্র একজনের মৃত্যু। আসলেই, ব্রিজের উপর থেকে ভারী মানুষটাকে ফেলে দেয়া হত্যার মতোই মনে হয়। যদিও দুটি ক্ষেত্রেই পরিণতি একই থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা হবার কথা না। যদি কাজটি সঠিক হয় সুইচ-পরিবর্তন করার সেই প্রথম উদাহরণে, নিশ্চয়ই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে একটি মানুষকে ট্রেনের সামনে ফেলে দিয়ে ট্রেন থামানোও একই হবে। এটাই বেশ ধাঁধার মতো।

যদি কাউকে ব্রিজ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার কাল্পনিক পরিস্থিতি শারীরিক সমস্যার প্রস্তাব করে, অথবা হত্যা করার জন্য কারো সাথে হিংস্রভাবে কুস্তি করতে হবে এমন ভাবনা যদি আপনাকে বিকর্ষণ করে, এই কেসটি আমরা নতুন করে ভাবতে পারি। যেমন ব্রিজের উপর লুকানো একটি দরজা বা ট্র্যাপ ডোর থাকবে। সুইচ পয়েন্টের মতো একই ধরনের লিভার ব্যবহার করে, যেমন আপনি প্রথম কেসে করেছিলেন, তেমনি এই বিশাল মানুষটিকে খুব অল্প চেষ্টায় ট্রেনের রাস্তায় ফেলে দিতে পারবেন। আপনার শুধু লিভারটা টেনে ধরতে হবে। প্রথম উদাহরণটির তুলনায় এটি বহু মানুষই নৈতিকভাবে খুবই ভিন্ন চোখে দেখে। কিন্তু কেন এমন হবে? তথাকথিত Law of Double Effect হচ্ছে একটি ব্যাখ্যা কেন আমরা আগের দুইভাগ হয়ে যাওয়া রেললাইনের কেসটি আর ব্রিজের উপরে দাঁড়ানো মোটা মানুষের কেসটিকে ভিন্নভাবে দেখি। এটি হচ্ছে সেই বিশ্বাস, কাউকে এত জোরে আঘাত করা যেন সে মারা যায় এবং কাজটি সঠিক হতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র যদি নিজেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্য থাকে আপনার, কারণ আরো হালকাভাবে মারলে আপনি নিজেকে রক্ষা হয়তো করতে পারতেন না। কোনো একটি কাজের আগেথেকে ভাবা সম্ভব এমন খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যে কাজটির পূর্ব-উদ্দেশ্য ছিল ভালো (এই ক্ষেত্রে আপনার নিজেকে বাঁচানো) নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কারো ক্ষতি করা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কাউকে আগেই বিষ খাওয়ানো ঠিক নয়, যে- কিনা আপনাকে খুন করার পরিকল্পনা করছে। প্রথম ক্ষেত্রটিতে, যেখানে আপনার একটি গ্রহণযোগ্য উদ্দেশ্য আছে, শুধুমাত্র সেটি পালন করার প্রক্রিয়াটি কারো মৃত্যুর কারণ হয়েছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, আপনি সেই মানুষটিকে খুন করতে চাইছেন এবং সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। কিছু মানুষের জন্যে, এটি সমস্যার সমাধান করে। অন্য অনেকে মনে করেন Double Effect-এর এই মূলনীতি ভুল।

এই কেসগুলোকে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে এবং প্রাত্যহিক জীবনের সাথে যাদের কোনো যোগসূত্রতা নেই। একটি অর্থে তা সত্য। এগুলো আসলে সত্যিকারের কোনো কেস হিসাবে বোঝানো হয়নি। এইসব হচ্ছে চিন্তার পরীক্ষা যা পরিকল্পনা করা হয় আমাদের বিশ্বাসকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু মাঝে মাঝে বাস্তব জীবনের কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে যা একই ধরনের সিদ্ধান্তের কারণ হয়। যেমন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা লন্ডনের বিভিন্ন অংশের উপর যখন বোমা ফেলছিল, একজন জার্মান গুপ্তচর তখন ডাবল এজেন্ট হয়েছিল, বৃটিশদের সুযোগ ছিল জার্মানদের ভুল তথ্য পাঠানো, যেমন তাদের বলা যে তাদের মূল লক্ষ্যের আরো অনেক উত্তরে বোমাগুলো পড়ছে। এর প্রভাব পড়ত যখন জার্মানরা বোমার লক্ষ্য পরিবর্তন করত সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে। সুতরাং জনবহুল লন্ডনে বোমা না পড়ে সেটি পড়ত আরো দক্ষিণে কেন্ট বা সারেতে। অন্যার্থে একটি সম্ভাবনা ছিল এমন কোনো তথ্য পাচার করার জন্য যা অল্পসংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারত। কিন্তু এই ক্ষেত্রে বৃটিশরা নিজেরা ঈশ্বরের ভূমিকা নিতে চাননি।আরেকটি ভিন্নধরনের বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিতে, অংশগ্রহণকারীরা আসলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিছু করার জন্যে। ১৯৮৭ সালে জিবুগী দুর্ঘটনায় একটি গাড়ির ফেরি ডুবে যায় এবং বহু আরোহী তুষারহিম সমুদ্রে তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য সংগ্রামকরেছিলেন। একটি তরুণ দড়ির মই বেয়ে উপরে ওঠার সময় ভয়ে অসাড় হয়ে গিয়েছিল, এবং সে নড়তে পারছিল না। সেই অবস্থানে সে ছিল প্রায় দশ মিনিট, যা অন্য সবাইকে বাধা দিয়েছিল ভীষণ ঠাণ্ডা সমুদ্রের পানি থেকে বের হয়ে আসার জন্য। যদি তারা পানি থেকে তাড়াতাড়ি বের না হয়ে আসতে পারত, তাহলে তাদের ঠাণ্ডায় ও ডুবে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলনা। একসময় যারা পানিতে ছিল তারা তাকে টেনে পানিতে ফেলে দিয়ে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। সেই তরুণটি সমুদ্রে পড়ে যায় এবং ডুবে মারা যায়। সেই তরুণটিকে মই থেকে টেনে ছুড়ে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত টি অবশ্যই খুব যন্ত্রণাদায়ক একটি সিদ্ধান্ত। কিন্তু এইসব চরমতম পরিস্থিতিতে, যেমন লাগামহীন হয়ে ছুটে আসা ট্রেনের ক্ষেত্রে যা হয়, একজন মানুষকে বিসর্জন দেয়া বহুজনকে বাঁচানোর জন্য সম্ভবত সঠিক কাজ ছিল করার জন্য।

দার্শনিকরা এখনও তর্ক করে যাচ্ছেন ট্রেনের উদাহরণটির ব্যাপারে এবং কীভাবে এটি সমাধান করা উচিত সে-বিষয়ে। তারা অন্য একটি চিন্তার পরীক্ষা নিয়েও তর্ক করে যাচ্ছেন যা জুডিথ জার্ভিস থমসন (জন্ম ১৯২৯) প্রস্তাব করেছিলেন। এই চিন্তার পরীক্ষাটি দেখাচ্ছে একজন মহিলা যিনি জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করেন, কিন্তু তিনি তারপরও গর্ভবতী হন, সেই শিশুটির জন্ম দেয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তার কোনো নৈতিক দায়িত্ব নেই। তিনি একটি গর্ভপাত করিয়ে নিতে পারেন নৈতিকভাবে কোনো অন্যায় না করে। এই পরিস্থিতিতে শিশুর জন্ম দেয়া হবে দয়া বা করুণার একটি কাজ, কিন্তু অবশ্যই কর্তব্য নয়। প্রথাগতভাবে, গর্ভপাতের নৈতিকতা সংক্রান্ত বিতর্কটিকে দেখা হয় ফিটাস বা ভ্রূণের দৃষ্টিকোণ থেকে। তার প্রস্তাবনাগুলো ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ কারণে যে এটি মহিলাটির দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টিকে দেখার উপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছিল। আরো একটি উদাহরণ যেমন, একজন বিখ্যাত বেহালাবাদক যার কিডনিতে সমস্যা আছে। তার বেঁচে থাকার একটিমাত্র সুযোগ হচ্ছে এমন কোনো মানুষের সাথে যুক্ত থাকা যে তার মতো খুব দুর্লভ রক্তের গ্রুপবহন করে। আপনার সেই একই রক্তের গ্রুপ আছে। একদিন সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠে দেখলেন যে, যখন আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তখন ডাক্তাররা তাকে আপনার কিডনির সাথে যুক্ত করে দিয়েছে। থমসন প্রস্তাব করেন এই ধরনের পরিস্থিতিতে আপনার কোনো নৈতিক দায়িত্ব কিংবা কর্তব্য নেই তার সাথে আপনার নিজেকে যুক্ত করে রাখা। এমনকি যখন কিনা আপনি জানেন সে মারা যাবে যদি আপনি টিউবটি টেনে বের করে নেন। একইভাবে তিনি প্রস্তাব করেন যদি কোনো মহিলা গর্ভবতী হয় যখন কিনা সে জন্মনিরোধক খাচ্ছে, বিকাশমান ভ্রূণ তার মধ্যে যে আছে তার কোনো স্বয়ংক্রিয় অধিকার নেই তার শরীর ব্যবহার করার জন্য। এই ভ্রূণটি সেই ভায়োলিনবাদকের মতো। থমসনের এই উদাহরণটি প্রস্তাবের আগে, বহু মানুষ ভাবতেন যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে : ভ্রূণ কোনো ব্যক্তি বা পার্সন কিনা? তারা বিশ্বাস করতেন যে যদি তারা দেখাতে পারেন যে একটি ভ্রূণ আসলে একজন পার্সন বা ব্যক্তি, তাহলে গর্ভপাত অবশ্যই প্রতিটি ক্ষেত্রে অনৈতিক হবে। থমসনের চিন্তার পরীক্ষা প্রস্তাব করেছিল যে এমনকি যখন ভ্রূণ একটি পার্সনও, সেটি অবশ্যই প্রশ্নটিকে সমাধান করেনা। অবশ্যই সবাই তার এই উত্তরের সাথে একমত হননি। কিছু মানুষ এখনও ভাবেন যে আপনার ঈশ্বরের ভূমিকা নেয়া উচিত না, এমনকি যদি আপনি জেগে ওঠেন ও দেখেন বেহালাবাদক আপনার কিডনির সাথে যুক্ত হয়ে আছে। খুবই কঠিন একটি জীবন হবে, যদি-না অবশ্যই আপনি বেহালার সুর ভালোবাসেন। কিন্তু তারপরেও এটি ভুল হবে বেহালাবাদককে হত্যা করা, এমনকি যদিও আপনি তাকে সাহায্য করার বিষয়টি নির্বাচন করেননি। একইভাবে বহু মানুষ বিশ্বাস করেন যে, আপনার কখনোই উচিত না একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থাকে শেষ করা, এমনকি যদিও আপনার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না গর্ভবতী হবার এবং সব ব্যবস্থাই নিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে। খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে সাজানো চিন্তা পরীক্ষা যা করে, তাহলো এইসব মতানৈক্যের ভিত্তিতে থাকা মূলনীতিগুলোকে বের করে আনে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *