অধ্যায় ৪২ : বেঁচে থাকার রহস্যময়তা – মার্টিন হাইডেগার
ক্ষেত্রটিতে যদিও বিশিষ্ট প্রতিযোগীদের কোনো অভাব নেই, কিন্তু দুর্বোধ্য জার্মান দার্শনিকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ইতিহাসে মার্টিন হাইডেগার, যে-কোনো হিসাবেই সার্বিকভাবে বিজয়ী হবেন। তাঁর মাস্টারপিস Being and Time (১৯২৭)-এর গদ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী আসলেই কিছু নেই, বিশেষ করে জটিলতায় আর তাঁর আবিষ্কৃত অসংখ্য জটিল যৌগিক জার্মান শব্দ সংখ্যায়, যেমন: Seinsvergessenheit (বেঁচে থাকার বিষয়টি বিস্মরিত হওয়া), Bodenständigkeit (মাটির সাথে গভীর সংযুক্ততা), Wesensverfassung (আবশ্যিক সংবিধান)। প্রথমে অবোধ্য মনে হলেও ধীরে ধীরে পাঠকের পক্ষে বোঝা সম্ভব হতে পারে যে তাঁর লেখার বাষ্পীয় পৃষ্ঠের নিচে হাইডেগার আমাদের কিছু খুব সাধারণ, সরল সত্য বলছেন, আমাদের জীবনের অর্থ সম্বন্ধে, আমাদের সময়ের অসুস্থতা সম্বন্ধে, এবং স্বাধীনতা অর্জন করার উপায় সম্বন্ধে। সেকারণেই তাঁর সম্বন্ধে আমাদের সবারই কিছু জানা দরকার। তিনি মূলত গ্রামীণ প্রাদেশিক জার্মান হিসাবে তাঁর জীবন কাটিয়েছিলেন, যিনি মাশরুম তুলতে আর গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে আর তাড়াতাড়ি ঘুমাতে ভালোবাসতেন। তিনি টেলিভিশন, প্লেটো, পপ সংগীত, বাজারজাত খাদ্য ঘৃণা করতেন। ১৮৮৯ সালে দরিদ্র একটি ক্যাথলিক পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল, তার বিখ্যাত বই Being and Time প্রকাশিত হবার পর তিনি পরিচিতি ও খ্যাতি লাভ করেন। কিন্তু তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করে বসেন যখন মধ্যত্রিশে (অবশ্য এই ভুল তিনি একা করেননি) হিটলার সেই সময় যা-কিছু বলেছিলেন তা বিশ্বাস করেছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন নাৎসিরা জার্মানিতে শৃঙ্খলা আর মর্যাদা ফিরিয়ে আনবে। আর সেই সময়ের মানসিকতার সাথে তাল মিলিয়ে ফ্রিবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইহুদি শিক্ষকদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করারও চেষ্টা করেন, সেই সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির রেক্টর ছিলেন। বহু দশক ধরে তিনি তাঁর সেই কাণ্ডজ্ঞানহীন পর্বের জন্য অনুশোচনা করেছেন তাঁর নিজের মতো করে, এবং এর জন্য তাকে চরম মূল্যও দিতে হয়েছিল। ১৯৪৫ সালে জার্মানির পরাজয়ের পর, তাঁকে যে-কোনো ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বেশকয়েক বছরের জন্য। কিন্তু বিস্ময়করভাবে তার পেশাগত জীবন খুব ধীরে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল, যদিও তিনি বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন জঙ্গলের মধ্যে তার বানানো ছোট একটি কুটিরে, সভ্যতা থেকে বহুদূরে, ১৯৭৬ সালে তার মৃত্যু অবধি। পুরো পেশাগত জীবনে তিনি চেষ্টা করেছিলেন কীভাবে আরো বেশি বিবেচনা ও প্রজ্ঞার সাথে আমরা আমাদের জীবন কাটাতে পারি। তিনি আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন যেন কিছু সত্য স্বীকার করার মতো সাহসী হয়ে উঠতে পারি আমরা, যা আমাদের জীবনকে আরো সমৃদ্ধ, গভীর আর সুখী করে তুলবে। তিনি মনে করতেন দর্শন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন নয়, এটি, যেমন করে গ্রিকরা ভাবতেন, একটি আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টা, একধরনের চিকিৎসা বা থেরাপি। তিনি শনাক্ত করেছিলেন, আধুনিক মানবতা তাঁর আত্মায় বেশকিছু নতুন অসুখে আক্রান্ত :
এক. আমরা লক্ষ করতে ভুলে গেছি যে আমরা বেঁচে আছি : তাত্ত্বিকভাবে আমরা এটি জানি, অবশ্যই, কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনে আমরা সঠিকভাবে আমাদের অস্তিত্বের তীব্র রহস্যময়তাকে স্পর্শ করতে ব্যর্থ হই, যে রহস্যটিকে হাইডেগার বলেছিলেন ‘das Sein’ বা ‘Being; তাঁর বেশিরভাগ দর্শন মূলত চেষ্টা করেছে আমাদের জাগিয়ে তুলতে, অন্যথায় আপাতদৃষ্টিতে নীরব, অপরিচিত, অবান্ধব, বসতিশূন্য একটি মহাবিশ্বে ঘূর্ণায়মান একটি গ্রহে বেঁচে থাকার অদ্ভুত বিষয়টির প্রতি সচেতন করে তুলতে। শুধুমাত্র অল্পকিছু অদ্ভুত মুহূর্তে, হয়তো গভীর রাতে অথবা যখন আমরা অসুস্থ, সারাদিন ধরে একাকী, অথবা প্রকৃতির কাছাকাছি, তখনই হয়তো আমরা সবকিছু রহস্যময়, এই অদ্ভুত বিষয়টির মুখোমুখি হতে পারি। কেন সবকিছুর অস্তিত্ব আছে যেমন আমরা দেখি, কেন আমরা সেখানে না বরং কেন আমরা এখানে এভাবে, কেন পৃথিবী এমন, কেন ঐ গাছ ৱা বাড়িটাই বা ঐরকম, এই দুর্লভ মুহূর্তগুলো অনুভব করার প্রক্রিয়াটি, যা স্বাভাবিক সবকিছুকে আমূল নাড়িয়ে দেয়, সেটিকে বোঝাতে হাইডেগার ব্যবহার করেছিলেন Mystery of Being বা ‘বেঁচে থাকার রহস্যময়তা’ শব্দকে। তাঁর দর্শনের পুরোটাই নিবেদিত ছিল, এই বিমূর্ত, তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধারণাটির মূল্যায়ন ও এর প্রতি সঠিক প্রতিক্রিয়া আমরা কীভাবে দেখাতে পারি সেই বিষয়গুলো নিয়ে।
হাইডেগারের জন্য, আধুনিক পৃথিবী হচ্ছে নারকীয় একটি যন্ত্র যার কাজ হচ্ছে বেঁচে থাকার সেই বিস্ময়কর প্রকৃতির মৌলিকতাটি থেকে আমাদের মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করা। সারাক্ষণই এটি আমাদের প্রায়োগিক ব্যবহারিক কাজের দিকে টানে, আমাদেরকে নিমজ্জিত করে তথ্য দিয়ে, নীরবতাকে হত্যা করে, আমাদের এটি একা কিছুতেই থাকতে দেয় না, আংশিকভাবে এর কারণ Mystery of Being অনুভব করার সাথে যুক্ত আছে কিছু আতঙ্কিত করার মতো অভিজ্ঞতার মাত্রা। সেটি করলে আমরা হয়তো আক্রান্ত হতে পারি উৎকণ্ঠায় (বা Angst), কারণ আমরা সচেতন হই যে সবকিছু যা মনে হয় প্রোথিত, প্ৰয়োজনীয়, খুব বেশি আবশ্যকীয়, সেগুলো হতে পারে আকস্মিক, অর্থহীন আর সত্যিকারভাবেই হয়তো উদ্দেশ্যহীন। আমরা হয়তো নিজেদের প্রশ্ন করতে পারি কেন আমরা ঐ কাজটির বদলে এই কাজটি করছি, কেন অন্যজন নয়-এর সাথে সম্পর্কে আছি, কেনই বা বেঁচে আছি যখন কিনা আমরা খুব সহজেই মরে যেতে পারি। প্রাত্যহিক জীবনের অনেককিছুই পরিকল্পিত এই অদ্ভুত, বিচলিত আর অস্থির করা, তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোকে লাগাম দিয়ে রাখার জন্যে। আমরা আসলে পালিয়ে বেড়াচ্ছি das Nichts (The Nothing) বা শূন্যতার’ মুখোমুখি হতে, যার অবস্থান Being বা আমাদের অস্তিত্বেই অন্যপাশে। জার্মান নয় এমন মানুষরাও হয়তো das Nichts-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ, শ্রুতিমধুর আর ভাবপূর্ণ সেই হাইডেগারীয় শব্দটির প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন। এই das Nichts বা শূন্যতা হচ্ছে সর্বত্র, এটি আমাদের সারাক্ষণ অনুসরণ করে, একসময় এটি আমাদের গ্রাস করবে, কিন্তু হাইডেগার আমাদের জানাতে ভুলে যাননি যে, একটি জীবনকে খুব ভালোভাবে কাটানো যাবে, যদি কেউ শূন্যতা বা Nothingness আর Being বা অস্তিত্বের সংক্ষিপ্ত রূপটিও বিবেচনায় রাখে। যেমন আমরা হয়তো করি, যখন সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখি, হালকা সন্ধ্যার আলো ক্রমশ অন্ধকার হতে থাকে দিনের শেষে।
দুই. আমরা ভুলে গেছি সব জীবনই সংযুক্ত: আমাদের সংকীর্ণ স্বার্থের প্রিজম দিয়ে আমরা পৃথিবীকে দেখি। আমাদের নিজস্ব চাহিদা সেগুলোকেই রঙিন করে যা যার প্রতি আমরা নজর দিই বা ভাবি। আমরা অন্যদের ও প্রকৃতিকে কোনোকিছু অর্জন করার একটি উপায় হিসাবে ব্যবহার করি। কিন্তু কখনো কখনো আমরা আমাদের এই সংকীর্ণ কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি এবং অস্তিত্বের বাকি অংশের সাথে আমাদের যোগাযোগকে আরো উদার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে পারি। আমরা হয়তো অনুভব করতে পারব হাইডেগার কাকে Unity of Being বলেছিলেন, হয়তো কোনোভাবে আমরা এর আগে যা লক্ষ করিনি, কোনো গাছের বাকলের উপর বসা একটি লেডি বার্ড আর ঐ পাথর, আর ঐ মেঘ, সবকিছু যার অস্তিত্ব আছে এই মুহূর্তে, আর মূলত এই বেঁচে থাকার বাস্তব সত্য দিয়ে আমরা একীভূত হয়ে আছি। হাইডেগার এই মুহূর্তগুলোর মূল্য দিতেন, এবং চেয়েছিলেন আমরা যেন সেটি ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করতে পারি আরো গভীর উদারতায় প্রবেশ করার জন্য, বিচ্ছিন্নতা আর স্বার্থপরতাকে অতিক্রম করতে পারি, আরো গভীরভাবে অনুভব করতে পারি সেই সংক্ষিপ্ত সময়টিকে, যা আমাদের জন্য অবশিষ্ট আছে, শূন্যতা বা das Nichts আমাদের গ্রাস করার আগে।
তিন. আমরা ভুলে গেছি কীভাবে স্বাধীন হতে হয় আর নিজেদের জন্য বাঁচতে হয়: অবশ্যই আমাদের অনেককিছুর কারণ আমরা খুব বেশি স্বাধীন নই। আমরা, আমাদের এই পৃথিবীতে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে, হাইডেগারের সেই অদ্ভুত শব্দ, thrown into the world, আমাদের জীবনের শুরুতে : আমাদের ছুড়ে দেয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট আর সংকীর্ণ সামাজিক পরিবেশে, আমাদের পরিবেষ্টিত করে আছে কঠোর মানসিকতা, প্রাচীন সংস্কার আর প্রায়োগিক আবশ্যিকতা যার কোনোটাই আমাদের সৃষ্টি নয়। হাইডেগার আমাদের সাহায্য করতে চান এই ‘Thrownness’ (বা এই ‘Geworfenheit’) থেকে আমাদের নিজেকে মুক্ত করতে, এর নানা বৈশিষ্ট্যগুলোকে বোঝার মাধ্যমে। আমাদের উচিত হবে আমাদের মনোজাগতিক, সামাজিক ও পেশাগত সংকীর্ণতাবাদকে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করা আর তারপর সেটিকে অতিক্রম করা আরো বিশ্বজনীন একটি দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে। আর সেটি করতে গিয়ে, আমাদের ধ্রুপদী একটি হাইডেগারীয় যাত্রা করতে হবে কৃত্রিমতা থেকে সত্যে (Uneigentlichkeit থেকে Eigentlichkeit)। আর আমরাও সত্যিকারভাবে নিজেদের জন্য বাঁচতে শুরু করব। কিন্তু তারপরও বহু সময়ে, হাইডেগারের দৃষ্টিতে, আমরা খুব খারাপভাবে এই কাজে ব্যর্থ হই। আমরা শুধুমাত্র আত্মসমর্পণ করি একটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য, উপরিদৃষ্টিতে হালকা জীবনযাত্রার প্রক্রিয়ায়, যাকে তিনি বলেছিলেন they-self (যা our-selves-এর বিপরীত)। আমরা শুধু কথাবার্তা বা গুজব অনুসরণ করি (das Gerede); যা আমরা খবরের কাগজে, টিভি কিংবা বড় কোনো শহরে (যেখানে থাকতে তিনি ঘৃণা করতেন) থাকলে শুনতে পাই সারাক্ষণ। এই they-self থেকে যা আমাদের বের হয়ে আসতে সাহায্য করে তাহলো আমাদের আসন্ন মৃত্যুর প্রতি উপযুক্ত পরিমাণে গভীর মনোযোগ। শুধুমাত্র যখন আমরা অনুধাবন করি যে অন্য মানুষরা আমাদের das Nichts থেকে রক্ষা করতে পারবেনা, তখনই সম্ভবত আমরা তাদের জন্য বাঁচা বন্ধ করব। অন্যরা কী ভাবে সেটি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করা বন্ধ করব, জীবনের সিংহভাগ বিসর্জন দেয়া বন্ধ করব অন্যদের সন্তুষ্ট করার জন্যে এবং আমাদের শক্তি খরচ বন্ধ করব সেই মানুষগুলোকেতুষ্ট করার জন্যে যারা আসলেই আমাদের পছন্দ করেনা। অস্তি ত্বহীনতার শূন্যতা নিয়ে উৎকণ্ঠা যদিও অস্বস্তিকর, তবে তা আমাদের বাঁচাতে পারে। আমাদের এই Sein-zum-Tode বা Being-toward-death বা বেঁচে থাকা থেকে মৃত্যু সম্বন্ধে আমাদের সচেতনতাই জীবনের পথ। ১৯৬১ সালে একটি লেকচারের সময় হাইডেগারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কীভাবে আমরা আমাদের অকৃত্রিমতাকে পুনরুদ্ধার করতে পারি, তিনি খুব সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করছিলেন, ‘সমাধিক্ষেত্রে’ বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করা উচিত আমাদের।
চার. আমরা অন্যদের মানুষ না বস্তু হিসাবে ভাবি : বেশিরভাগ সময়, গভীর কোনো অর্থ ছাড়াই, আমরা অন্য মানুষদের জীবন্ত কোনো অস্তিত্ব বা সত্তা হিসাবে নয় বরং বস্তু হিসাবে বিবেচনা করি (হাইডেগারের শব্দ das Zeug বা যন্ত্র)। আর এই স্বার্থপরতার নিরাময় আছে মহান শিল্পকলায়। আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসতে, অন্য মানুষ আর জিনিসের স্বাধীন অস্তিত্বকে মূল্যায়ন করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে শুধুমাত্র শিল্পকর্ম। হাইডেগার এই ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে ভ্যান গো’র একটি চিত্রকর্ম ব্যবহার করেছিলেন, কৃষকের একজোড়া জুতার তৈলচিত্র। সাধারণত আমরা জুতার প্রতি এত মনোযোগ দিই না, আমাদের ব্যবহার করার একটি উপকরণ মাত্র, যা আমাদের দরকার আছে চলার জন্য। কিন্তু যখন সেটি কোনো ক্যানভাসে উপস্থাপন করা হয়, আমরা তাদের লক্ষ্য করতে বাধ্য হই। যেন প্রথমবারের মতো, শুধুমাত্র তাদের খাতিরে। একই বিষয় আমাদের সাথে ঘটতে পারে, যখন আরো প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট কিছুকে এভাবে উপস্থাপন করতে দেখি মহান শিল্পীদের। শিল্পকলার কল্যাণে আমরা নতুন ধরনের অস্তিত্বের অনুভব (বা তার ভাষায় Sorge) বোধ করি যার অবস্থান আমাদের বাইরে।
অবশ্যই মিথ্যা বলা হবে যদি বলি হাইডেগারের অর্থ আর নৈতিকতা খুব বেশি স্পষ্ট। যাই হোক, তিনি আমাদের যা বলেছেন তা মাঝে মাঝে বিস্ময়কর, জ্ঞানপূর্ণ এবং বিস্ময়করভাবে উপযোগী। অসাধারণ সব শব্দ আর ভাষা সত্ত্বেও, এক অর্থে, ইতিমধ্যে আমরা আসলে এসবের অনেককিছুই ইতিমধ্যেই জানি। শুধুমাত্র সেই সবকিছু স্মরণ করা আর গুরুত্বসহকারে বিষয়টি নেবার জন্যে সাহস সঞ্চয় করার দরকার, তাঁর অদ্ভুত গদ্য হয়তো যা করতে আমাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। আমরা আমাদের মনের গভীরে অনুভব করতে পারি যে, সময় এসেছে আমাদের Geworfenheit কে জয় করার (বা অন্যদের জন্য নয়, আমরাও সত্যিকারভাবে নিজেদের জন্য বাঁচতে শুরু করব), আমাদের উচিত প্রতিদিন আরো বেশি das Nichts (শূন্যতা) নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠা, এবং আমাদের কাছেই আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ das Gerede (সমাজের অনর্থক নানা কথাবার্তা ও গুজব)-এর খপ্পর থেকে নিজেদের মুক্ত করতে Eigentlichkeit (অকৃত্রিমতা বা সত্য)-এর খাতিরে, হয়তো সমাধিক্ষেত্র থেকে খানিকটা সাহায্য নিয়ে।