1 of 2

অধ্যায় ৪৪ : ইতিহাসের ময়নাতদন্ত – মিশেল ফুকো

অধ্যায় ৪৪ : ইতিহাসের ময়নাতদন্ত – মিশেল ফুকো

মিশেল ফুকো (১৯২৬-১৯৮৪) বিংশ শতাব্দীর একজন ফরাসি দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ যিনি তার পেশাগত জীবন কাটিয়েছিলেন আধুনিক বুর্জোয়া পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ব্যবচ্ছেদ ও সমালোচনা করে (সঠিক শব্দটি হবে ফরেনসিকালি ব্যবচ্ছেদ বা ময়নাতদন্ত করে) যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেমন পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, আদালত, জেলখানা, এছাড়া ছিল ডাক্তার এবং মনোচিকিৎসক ইত্যাদি। তাঁর কাজের উদ্দেশ্য ছিল মূলত কীভাবে power বা ক্ষমতা কাজ করে সেটি খুজে বের করা এবং তারপর মার্ক্সবাদী-নৈরাজ্যবাদী ইউটোপিয়ার দিক বরাবর সেটিকে পরিবর্তন করা। যদিও তিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন লাইব্রেরি আর সেমিনার রুমে, তবে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নিবেদিতপ্রাণ বিপ্লবী এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ফরাসি বুদ্ধিজীবী বলয়ে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন (জ্যাঁ-পল সার্ত্র তাকে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন) এবং এখনও উন্নত বিশ্বসহ সারা পৃথিবীতেই বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাঁর অনেক অনুসারী আছেন। তাঁর অতীত জীবনের ব্যাপারে তিনি খুব একটা মুখ খোলেননি, খুবই অনিচ্ছুক ছিলেন এ বিষয়ে কিছু বলতে। এমনকি চেষ্টা করেছেন সেই বিষয়ে কোনো ধরনের অনুসন্ধানে সাংবাদিকদের যে-কোনো মূল্যে বাধা দিতে। তাসত্ত্বেও যতটুকু জানা যায়, তিনি এসেছিলেন খুবই সচ্ছল একটি পরিবার থেকে। তাঁর বাবা-মা দুজনেই খুবই বিত্তবান পরিবারের উত্তরাধিকারী ছিলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা পশ্চিম মধ্য ফ্রান্সের পোয়াটিয়েরে অত্যন্ত সফল শল্যচিকিৎসকদের একটি পরিবার ছিল। তাঁর বাবা, ডাক্তার পল ফুকো, সেই বুর্জোয়া ফ্রান্সেরই প্রতিনিধিত্ব করতেন যা মিশেল ফুকো চূড়ান্তভাবে ঘৃণা করতেন। প্রথাগত নিয়মে মানসম্পন্ন উচ্চবিত্তশ্রেণির শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন। খুব বিখ্যাত জেস্যুইট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি পড়াশুনা করতে যান, একজন অল্টার বয়ও ছিলেন, এবং ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হবেন এমনই আশা ছিল তার। কিন্তু মিশেল স্পষ্টতই অন্য ছেলেদের মতো ছিলেন না। তিনি নিজের শরীরের উপর জখম আর ক্ষতি করা শুরু করেন এবং সারাক্ষণ‍ই তিনি আত্মহত্যার কথা ভাবতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর শোবার ঘরের দেয়াল সাজিয়েছিলেন গয়ার নির্যাতন আর নিপীড়নের চিত্রকর্মের নানা ছবি দিয়ে। তাঁর বয়স যখন ২২, তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন এবং নিজের মতের বিরুদ্ধে তাঁর বাবার দ্বারা বাধ্য হন প্যারিসের সাঁ-অ্যান হাসপাতালে সেই সময়ে সেরা মনোচিকিৎসক জ্যাঁ দোলের কাছে পরামর্শ নিতে যাবার জন্যে। ডাক্তার জ্যাঁ বুদ্ধিমানের মতোই শনাক্ত করেছিলেন যে ফুকোর সমস্যাগুলোর বড় কারণ হচ্ছে সমালোচনামূখর সমাজে তাঁর সমকামিতা, বিশেষ করে তীব্র ধর্ষকামিতার প্রতি তাঁর আগ্রহকে জোর করে চেপে রাখার জন্যে।

ধীরে ধীরে ফুকো ফ্রান্সের গোপন সমকামিতার জগতে প্রবেশ করেন, প্রেমে পড়েন এক মাদকদ্রব্য বিক্রেতার সাথে, এরপর একজন ট্রান্সভেস্টাইটের (যারা বিপরীত লিঙ্গের মতো কাপড় পরেন ও আচরণ করেন) সাথে। বিশের দশকে দীর্ঘ একটি সময় তিনি দেশের বাইরে বসবাস করেছিলেন, সুইডেন, পোল্যান্ড আর জার্মানিতে, যেখানে যৌনতা অনেক কম সীমাবদ্ধ হবে এমন অনুভব করেছিলেন তিনি। এই সময় ধরেই ফুকো ক্রমশ ফরাসি শিক্ষাজগতে সিঁড়ি বেয়েও উপরে উঠছিলেন। তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ১৯৫৩ সালের গ্রীষ্মে, যখন তাঁর বয়স ২৭, ইতালিতে তখন তিনি তার প্রেমিকের সাথে। সেখানে তিনি প্রথম দার্শনিক নিচাহর Untimely Meditations বইটি পড়েন, যার মধ্যে একটি প্রবন্ধ ছিল On the Uses and Abuses of History for Life; এই প্রবন্ধটিতে নিচাহ যুক্তি দিয়েছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবেষকরা কীভাবে ইতিহাস পড়তে হবে আর পড়াতে হবে আমাদের সেই বোধটিকে বিষাক্ত করে ফেলেছেন। তারা বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করেন যেন, যদি কেউ অতীতে সবকিছু কেমন ছিল সেটি শিখতে চায় তবে তাকে নিরপেক্ষ আর নির্লিপ্ত উপায়ে ইতিহাস পাঠ করতে হবে। কিন্তু নিচাহ বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাঁর শ্লেষাত্মক ক্ষুব্ধতায়। অতীত শুধুমাত্র অতীতের জন্য, এমন ভেবে কিছু শেখার কোনো অর্থ হয়না। ইতিহাস পড়া আর গবেষণা করার একমাত্র কারণ হচ্ছে অতীতের ধারণাগুলোকে খনন করে বের করে আনা, সেই ধারণা আর উদাহরণগুলো, যা আমাদের নিজেদের সময়ে একটি উত্তম জীবন কাটাতে সাহায্য করবে। বিষয়টি বৌদ্ধিকভাবে ফুকোকে স্বাধীন করেছিল, এর আগে আর কোনোকিছু যেভাবে পারেনি। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তার কাজের দিক পরিবর্তন করেন, এবং সিদ্ধান্ত নেন তিনি একটি বিশেষ ধরনের দার্শনিক ইতিহাসবিদ হবেন, এমন কেউ, যিনি অতীতের দিকে তাকিয়ে সেইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন যা তার নিজের সময়েও প্রাসঙ্গিক। এর আট বছর পর তিনি প্রস্তুত হয়েছিলেন তাঁর ধারণাগুলো প্রকাশ করার জন্য, যে সৃষ্টিগুলোকে শনাক্ত করা হয় তার মাস্টারপিস হিসাবে :

Madness and Civilisation (১৯৬১) : প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে বর্তমানে মানসিক রোগীদের সাথে আমরা অনেক বেশি মানবিকতার সাথে আচরণ করি অতীতের যে-কোনো সময়ের তুলনায়। তাদের আমরা বিশেষ হাস্পাতালে থাকার সুযোগ করে দিয়েছি, তাদের ঔষধ দেয়া হয় এবং তাদের দেখার জন্য বিশেষ শ্রেণিরপ্রশিক্ষিত পেশাজীবীরাও আছেন। কিন্তু ঠিক সেই দৃষ্টিভঙ্গিটাই তিনি ভাঙতে চেষ্টা করেছেন তার Madness and Civilisation বইটিতে, যেখানে তিনি যুক্তি দেন রেনেসাঁ পর্বের সময় আসলে বিষয়টি আরো অনেক ভালো ছিল মানসিক রোগীদের জন্য, পরবর্তীতে শুধু অবনতি হয়েছে। রেনেসাঁর সময় মানসিক রোগীদের পাগল না-ভেবে তাদের ভিন্ন ভাবা হতো, ভিন্ন হিসাবে অনুভব করা হতো। মনে করা হতো তাদের বিশেষ ধরনের কিছু জ্ঞান আছে, কারণ তারা যুক্তির সীমানা কী হতে পারে সেটি প্রদর্শন করতে পারতেন। বেশকিছু বলয়ে তাদের শ্রদ্ধাও করা হতো, এবং স্বাধীনভাবে তাদের চলাফেরা করার সুযোগ দেয়া হতো। কিন্তু তারপর, ফুকোর ঐতিহাসিক গবেষণাগুলো দেখিয়েছিল যে মধ্য- সপ্তদশ শতকে, একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা হয়, যা অবিরাম মানসিক রোগীদের দেখেছে চিকিৎসাবিদ্যার দৃষ্টিভঙ্গিতে, এবং মানসিক রোগীদের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে পৃথক করে রাখার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তথাকথিত সুস্থ মানুষদের পাশে তাদের আর থাকার অনুমতি মেলেনি, পরিবার থেকে তাদের সরিয়ে ফেলা হয়েছে, এবং অ্যাসাইলামে তাদের বন্দী করা হয়েছে, এবং তাদের দেখা হয় অসুস্থ হিসাবে যাদের ভিন্ন হিসাবে সহ্য না করে চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা উচিত এমনভাবে দেখা হয়। ফুকোর এর পরের অসাধারণ বইটিতেও একই ধরনের দর্শন দেখতে পাওয়া যায়।

The Birth of the Clinic (১৯৬৩): এখানেও তাঁর নিশানা মূলত চিকিৎসাবিজ্ঞান তবে আরো বড় পরিসরে। তিনি পদ্ধতিগতভাবে সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে আক্রমণ করেন যা দাবি করে চিকিৎসাবিজ্ঞান সময়ের সাথে আরো বেশি মানবিক হয়েছে। তিনি মেনে নিয়েছেন এখন অবশ্যই আমাদের অনেক ভালো চিকিৎসা আর ঔষধ আছে, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন যে অষ্টাদশ শতকে, তথাকথিত সেই পেশাগত চিকিৎসকদের আবির্ভাব ঘটেছে, এবং তিনি মনে করেন তারা ভয়ংকর এক চরিত্র, যিনি রোগীর দিকে সবসময়ই তাকান ভিন্নভাবে, ফুকো যার নাম দিয়েছিলেন, medical gaze, চিকিৎসার দৃষ্টি, যা প্রকাশ করে সেই অমানবিকীকরণের প্রক্রিয়াটিকে, কোনো রোগীকে ব্যক্তি হিসাবে না দেখে, বরং কতগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমষ্টি হিসাবে দেখে। এই মেডিকেল দৃষ্টির নিচে কেউ শুধুমাত্র অকেজো কিডনি বা লিভার, সামগ্রিক সত্তা হিসাবে বিবেচ্য কোনো ব্যক্তি নয়। ফুকোর এর পরের কাজ ছিল রাষ্ট্রীয় শাস্তিব্যবস্থা নিয়ে।

Discipline and Punish: The Birth of the Prison (১৯৭৫): এই অসাধারণ বইটিতে ফুকো নজর দেন রাষ্ট্রীয় শাস্তিব্যবস্থার উপর। আবারো প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি বলছে যে জেলখানা ও দণ্ডব্যবস্থা আধুনিক বিশ্বে অনেক বেশি পরিমাণে মানবিক অতীতের সেইসব দিনগুলো থেকে যখন কিনা খোলা বাজারেই মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হতো। না, ফুকো দাবি করেছিলেন; তাঁর মতে সমস্যাটি হচ্ছে ক্ষমতাকে যদিও দেখতে দয়ালু মনে হয় কিন্তু সেটি দয়ালু নয়। অন্যদিকে অতীতে, এটি অবশ্যই যেমন দয়ালু ছিল না, আর সেকারণে প্রত্যক্ষ প্রতিবাদ আর উন্মুক্ত বিদ্রোহ প্ররোচনা করতে পারত। ফুকো লক্ষ করেন যে অতীতে, কোনো মৃত্যুদণ্ডের পর, দণ্ডিত ব্যক্তির শরীর হতে পারত সহমর্মিতা আর প্রশংসার কেন্দ্রবিন্দু, এবং যে শাস্তি পেল সে নয়, বরং শাস্তিদাতাই লজ্জার কেন্দ্র হতে পারত। এছাড়া জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড প্রায়শই দাঙ্গার কারণ হতো বন্দির সমর্থনে। কিন্তু আধুনিক জেলখানার আবিষ্কার, যেখানে সবকিছুই ঘটে বদ্ধ দরজার পেছনে, যা কেউ দেখতে পায়না, আর সেকারণে রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেনা। আর সেকারণে দণ্ড দেবার আধুনিক পদ্ধতি ফুকোর দৃষ্টিভঙ্গিতে সত্যিকারভাবে আদিম ও বর্বর। ফুকোর শেষ বিশাল কাজটি ছিল যৌনতার ইতিহাস নিয়ে।

The History of Sexuality (১৯৭৬-১৯৬৪): ফুকোর এই বইটি বেশ কয়েকটি খণ্ডে লেখা। যৌনতা নিয়ে তিনি যে-প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছিলেন সেটিও পরিচিত মনে হবে। ফুকো বিদ্রোহ করেছিলেন সেই দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে যা দাবি করে আমরা এখন যৌনতার ব্যাপারে গভীরভাবে স্বাধীন ও বিষয়টি সহজ। তিনি যুক্তি দেন অষ্টাদশ শতকের পর, আমরা অবিরাম যৌনতাকে চিকিৎসাবিদ্যার বিষয়ে পরিণত করেছি। আমরা বিষয়টি হস্তান্তর করেছি পেশাগত যৌনতা নিয়ে গবেষক ও বিজ্ঞানীদের হাতে। আমরা এমন একটি যুগে বাস করি যাকে ফুকো বলেছিলেন scientia sexualis, science of sexuality বা যৌনতার বিজ্ঞানের যুগ। ফুকো নস্টালজিয়ার সাথে রোম, চিন ও জাপানের দিকে তাকিয়েছিলেন, যেখানে তিনি শনাক্ত করেছিলেন সেই বিষয়টির প্রভাব, যাকে তিনি বলেন ars erotica (erotic art), যেখানে পুরো মনোযোগ ছিল কীভাবে যৌনতার সুখ বৃদ্ধি করা যায়, এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে বোঝা কিংবা এর নানা বিষয়কে নামকরণ করা নয়। আবারো, তিনি আধুনিকতাকে অভিযুক্ত করেছেন ভান করার জন্য যে, আসলেই প্রগতি অর্জন হয়েছে বলে, যখন আসলেই হারিয়ে গেছে স্বতঃস্ফূর্ততা আর কল্পনাশক্তি। এই বইটির শেষ খণ্ড লেখার সময় ফুকো ছিলেন অসুস্থ।১৯৮৪ সালে ৫৮ বছর বয়সে এইডস-এর কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ফুকো যে দীর্ঘস্থায়ী অবদান রেখে গেছেন আমাদের জন্যে সেটি হচ্ছে যেভাবে আমরা ইতিহাসের দিকে তাকাই। আধুনিক পৃথিবীর অনেককিছু সম্বন্ধে প্রায়শ‍ই আমাদের বলা হয় সেগুলো অসাধারণ, আর অতীতে স্পষ্টতই পরিস্থিতি খারাপ ছিল। যেমন, শিক্ষা, গণমাধ্যম, আমাদের যোগাযোগের মাধ্যমগুলো। কিন্তু ফুকো আমাদের উৎসাহিত করেছিলেন বর্তমান সম্বন্ধে অতিমাত্রায় আশাবাদী আত্মতৃপ্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্যে এবং দেখতে যে, বহু উপায়ে, অতীতে অনেক ভালো কিছু লুকিয়ে আছে। ফুকো আমাদের স্মৃতিবেদনায় আক্রান্ত করতে চেষ্টা করেননি, তিনি চেয়েছিলেন অতীত থেকে শিক্ষাগুলো নিয়ে যেন আমরা এখন যেভাবে বসবাস করছি সেটি আরো উন্নত করতে পারি। ফুকোর কাজ ঘৃণা করার প্রবণতা আছে অ্যাকাডেমিক ইতিহাসবিদদের। তারা মনে করেন তার তথ্যগুলো নির্ভুল নয় এবং বারবারই কোনো-না-কোনো রেকর্ডে তথ্য বুঝতে ফুকো ভুল করেছেন, তারা এই বিষয়টি ইঙ্গিত করেন। কিন্তু ফুকো ঐতিহাসিক নির্ভুলতা নিয়ে আদৌ মাথা ঘামাননি। তাঁর জন্য ইতিহাস ছিল ভালো ধারণার একটি গুদামঘর, আর সেই গুদামঘরটিকে অস্পৃশ্য আর আদি-অকৃত্রিম রাখার বদলে তিনি সেখানে আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন সেইসব ভালো ধারণাগুলো খুঁজে বের করার জন্যে। ফুকোর কাছ থেকে আমরা অনুপ্রেরণা নিতে পারি আমাদের সময়ের প্রভাবশালী ধারণা আর প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো করে দেখার সময়, এবং সেগুলোকে প্রশ্ন করার জন্যে, তাদের ইতিহাস আর বিবর্তনের দিকে নজর দিয়ে। ফুকো যে-কাজটি করেছিলেন সেটি অসাধারণ, তিনি ইতিহাসকে পরিণত করেছিলেন জীবন-বর্ধিতকারী এবং দার্শনিকভাবে সমৃদ্ধ একটি বিষয়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *