1 of 2

অধ্যায় ১৮ : কাঁচ ঘষে লেন্স যিনি বানাতেন – বারুখ স্পিনোজা

অধ্যায় ১৮ : কাঁচ ঘষে লেন্স যিনি বানাতেন – বারুখ স্পিনোজা 

বেশিরভাগ ধর্মই শেখায় যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব এই মহাবিশ্বের বাইরে কোথাও, হয়তো স্বর্গে। বারুখ স্পিনোজা (১৬৩২-১৬৭৭) তার সময়ের তুলনায় বেশ ব্যতিক্রম ছিলেন তার চিন্তায়, কারণ তিনি মনে করতেন ঈশ্বরই হচ্ছেন এই মহাবিশ্ব। ‘ঈশ্বর অথবা প্রকৃতি’, এই দুটি শব্দ যে একই জিনিসকে বোঝাচ্ছে সেটি বোঝানোর জন্যে তিনি লিখেছিলেন, ঈশ্বর এবং প্রকৃতি হচ্ছে একটি জিনিসকেই বর্ণনা করার জন্যে দুটি ভিন্ন উপায় মাত্র। ঈশ্বরই হচ্ছেন প্রকৃতি এবং প্রকৃতি হচ্ছে ঈশ্বর। এটি একধরনের প্যানথেইজম বা সর্বেশ্বরবাদ, যার মূল বিশ্বাস হচ্ছে ঈশ্বরই আসলে সবকিছু। বলাবাহুল্য সপ্তদশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে এটি বৈপ্লবিক একটি ধারণা ছিল, যার কারণে তাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। পর্তুগিজ একটি ইহুদি-পরিবারে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আমস্টারডাম তখন ছিল নানা ধরনের নির্যাতন থেকে পালিয়ে বেড়ানো মানুষদের নিরাপদ একটি আশ্রয়স্থল। কিন্তু এমনকি সেখানেও ঠিক কতটুকু খোলাখুলিভাবে আপনি আপনার মন্তব্য প্রকাশ করতে পারবেন সেক্ষেত্রেও সহিষ্ণুতার একটা সীমা ছিল। যদিও ইহুদি-পরিবারে জন্ম, কিন্তু ২৪ বছর বয়সেই স্থানীয় সিনাগগের (ইহুদিদের উপাসনালয়) রাবাই (কোনো সিনাগগের প্রধান ধর্মগুরু) তাকে বহিষ্কার করেছিলেন তাদের ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে, সম্ভবত তার কারণ ঈশ্বর সম্বন্ধে তাঁর অতিমাত্রায় অপ্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি। আমস্টারডাম থেকে তিনি এরপর দ্য হেগ শহরে এসে বসতি গড়েন। এখান থেকেই আমরা তাকে চিনি তার ইহুদি নাম বারুখ নয় বরং বেনেডিক্ট দ্য স্পিনোজা নামে। 

বহু দার্শনিকেরই একটি প্রিয় বিষয় ছিল জ্যামিতি। প্রাচীন গ্রিক ইউক্লিডের জ্যামিতির নানা হাইপোথিসিসের বিখ্যাত প্রমাণগুলো শুরুর কিছু স্বতঃসিদ্ধ প্রস্তাবনা বা প্রারম্ভিক পূর্বধারণা থেকে আমাদের উপসংহারে নিয়ে যায়, যেমন কোনো ত্রিভুজের আভ্যন্তরীণ সব কোণগুলোর সমষ্টি দুই সমকোণের (১৮০ ডিগ্রি) সমান। জ্যামিতিতে দার্শনিকরা যা পছন্দ করতেন তা হলো যেভাবে সতর্ক যুক্তিপূর্ণ ধাপের শুরুর একটি অবস্থান থেকে এটি অগ্রসর হয় বিস্ময়কর উপসংহারে। অ্যাক্সিওম বা স্বতঃসিদ্ধ প্রস্তাবনাগুলো যদি সত্য হয় তাহলে উপসংহারও অবশ্যই সত্য হবে। এই ধরনের জ্যামিতিক যুক্তিপ্রক্রিয়া রেনে দেকার্ত আর টমাস হবস দুজনকেই আকৃষ্ট করেছিল। 

স্পিনোজা শুধুমাত্র জ্যামিতি ভালোবাসতেন না, তিনি দর্শন লিখেছিলেন এমনভাবে ‘যেন’ সেটি জ্যামিতি। তাঁর বই ‘এথিকস’ (Ethics)-এ প্রস্তাবিত ‘প্রমাণগুলো’ জ্যামিতিক প্রমাণের মতো এবং যার মধ্যে আমরা অ্যাক্সিওম এবং সংজ্ঞাও পাই। জ্যামিতির মতো একই অবিশ্রান্ত যুক্তি তাদের মধ্যে আছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু জ্যামিতির মতো ত্রিভুজের কোণ, বৃত্তের পরিধির মতো বিষয়গুলো বাদে তার বিষয় ছিল ঈশ্বর, প্রকৃতি, স্বাধীনতা এবং আবেগ। তিনি অনুভব করেছিলেন যে এইসব বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা যায় এবং যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় ঠিক একইভাবে, যেভাবে আমরা কোনো ত্রিভুজ কিংবা বৃত্ত বা বর্গক্ষেত্র নিয়ে যুক্তি প্রদান করতে পারি। তিনি এমনকি তার বইয়ের খণ্ডগুলো শেষ করেছেন ‘QED’ ব্যবহার করে, যা quod erat demonstrandum-এর সংক্ষিপ্ত রূপ, ল্যাটিন একটি বাক্য, যার অর্থ ‘যা প্রমাণ করা হলো’, জ্যামিতির পাঠ্যপুস্তকে এর ব্যবহার খুব স্বাভাবিক ছিল। স্পিনোজা বিশ্বাস করতেন যে মহাবিশ্ব, এই পৃথিবী এবং এখানে আমাদের অবস্থান সবকিছুর ভিত্তিতে আছে কাঠামোগত যুক্তি, যা যৌক্তিক ব্যাখ্যা দ্বারা উন্মোচিত হতে পারে। কোনোকিছু ঘটনাচক্রে ঘটেনি, সবকিছুর একটি উদ্দেশ্য এবং মূলনীতি আছে। সবকিছুই পরস্পরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় একটি সুবিশাল সিস্টেম বা পদ্ধতিতে, এবং সেটা বোঝার সবচেয়ে সেরা উপায় হচ্ছে চিন্তার শক্তি। দর্শনের এই পদ্ধতি, যেখানে পরীক্ষা আর পর্যবেক্ষণ নয় বরং গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যুক্তির উপর, প্রায়ই সেটিকে চিহ্নিত করা হয় Rationalism বা যুক্তিবাদ হিসাবে। 

স্পিনোজা একা থাকতে ভালোবাসতেন। এই নিঃসঙ্গতায় তিনি যেমন সময় পেতেন পড়াশুনা করার জন্য, তেমনি মানসিকভাবেও শান্তি পেতেন। বিশেষ করে ঈশ্বর সম্বন্ধে তাঁর ধারণাগুলোর জন্যে কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হওয়া সম্ভবত তার জন্যে নিরাপদ ছিল না, এ কারণে, তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বই Ethics প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পরে। যদিও অত্যন্ত মৌলিক একজন চিন্তাবিদ হিসাবে সুনাম তার জীবদ্দশায় ছড়িয়ে পড়েছিল, কিন্তু তিনি নিজেই হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তবে, তার সাথে দেখা করতে আসা নানা চিন্তাবিদের সাথে তিনি তার ধারণাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে বেশ আনন্দ পেতেন। দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞ গটফ্রিড লাইবনিজ ছিলেন তাদেরই একজন। খুবই সাধারণভাবেজীবন কাটাতেন স্পিনোজা, নিজের বাড়ি কেনার বদলে কারো বাসায় লজিং হিসাবে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন তিনি। তেমন বেশি টাকাপয়সার দরকারও ছিলনা তার। তিনি কাঁচ ঘষে লেন্স তৈরি করার কাজটি খুব ভালো পারতেন। লেন্স বানানোর কাজ থেকে যা আয় হতো এবং তার দার্শনিক কাজের জন্য কিছু মানুষের কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকা পেতেন, এভাবেই তার চলে যেত। তিনি যে লেন্স বানাতেন সেগুলো ব্যবহার হতো নানা বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামে, যেমন দূরবীক্ষণ আর অণুবীক্ষণ যন্ত্র। তাঁর এই দক্ষতা বাসাভাড়া করে স্বাধীনভাবে থাকা ও কাজ করতে তাকে সুযোগ করে দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই কাজটির কারণে তাঁর মৃত্যুও হয়েছিল মাত্র ৪৪ বছর বয়সে। কাচ ঘষার সময় কাচের মিহি টুকরোগুলো নিশ্বাসের সাথে তার ফুসফুসে (সিলিকোসিস) গিয়ে ভয়ংকর ক্ষতি করেছিল। 

স্পিনোজা যুক্তি দিয়েছিলেন, যদি ঈশ্বর অসীম হয়ে থাকেন, সেখান থেকে যুক্তিযুক্তভাবে অবশ্যই আমাদের মানতে হবে যে এমন কোনোকিছুরই অস্তিত্ব নেই যা ঈশ্বর নয়। আপনি যদি মহাবিশ্বের কোনোকিছু আবিষ্কার করেন যা ঈশ্বর নয়, তাহলে ঈশ্বর অসীম হতে পারেনা কিছুতেই। কারণ নীতিগতভাবে অন্য সবকিছুর ক্ষেত্রে যেমন, সেই জিনিসটিরও ঈশ্বরের অংশ হবারই কথা। আমরা সবাই ঈশ্বরের অংশ, একইভাবে সেটি সত্য পাথর, পিঁপড়া, ঘাস এবং জানালার ক্ষেত্রেও, সবকিছুই ঈশ্বরের অংশ। সবকিছু মিলেই অবিশ্বাস্যরকম জটিল একটি সামগ্রিক রূপের সৃষ্টি করে, কিন্তু পরিশেষে সবকিছু যার অস্তিত্ব আছে তারা সবই একটি জিনিসের অংশ: ঈশ্বর। প্রথাগত ধর্মীয় চিন্তার অনুসারীরা প্রচার করেন যে ঈশ্বর মানবতাকে ভালোবাসেন, ব্যক্তিগত প্রার্থনাগুলোর উত্তর দেন। এটি একধরনের anthropomorphism বা নরাত্বরোপ, যার মানে হচ্ছে মানুষ নয় এমন কোনো সত্তার উপর মানবীয় গুণ আরোপ করা, যেমন সহমর্মিতা। এর সবচেয়ে চূড়ান্ত রূপটি হচ্ছে ঈশ্বরকে দীর্ঘ দাড়ি, স্মিত হাসিসহ একজন দয়ালু মানুষ হিসাবে কল্পনা করা। স্পিনোজার ঈশ্বর আদৌ এরকম কোনো কিছু নন, তিনি, অথবা আরো সঠিকভাবে ‘এটি’, পুরোপুরিভাবে নৈর্ব্যক্তিক এবং কারো বা কোনোকিছুর জন্যই এর কোনো উৎকণ্ঠা নেই। স্পিনোজার মতে আপনি ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারেন এবং আপনার তাকে ভালোবাসাও উচিত, কিন্তু তার কাছে কোনো ফিরতি ভালোবাসা প্রত্যাশা করবেন না, কারণ সেটা হচ্ছে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীর প্রকৃতি ভালোবাসার মতো এবং আশা করা যে প্রকৃতিও তার ভালোবাসার প্রতিদান দেবে। বাস্তবিকভাবেই তিনি যে ঈশ্বরের বর্ণনা দিয়েছিলেন, সেই ঈশ্বর পুরোপুরিভাবে মানুষ এবং তারা যা করে এমন সবকিছুর প্রতি পুরোপুরিভাবে নির্বিকার। অনেকেই মনে করেছিলেন যে স্পিনোজা আসলে ঈশ্বরবিশ্বাসী নন মোটেও এবং তার সর্বেশ্বরবাদ আসলে তাঁর অবিশ্বাসকে ঢেকে রাখার একটি প্রচেষ্টা। স্পিনোজাকে তারা সেকারণেই নিরীশ্বরবাদী ও ধর্মবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। কারণ প্রচলিত মতবাদীরা ভাবছিলেন, কারো পক্ষে কীভাবে এমন কোনো ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা সম্ভব যিনি মানবতা নিয়ে আদৌ আগ্রহী নন? স্পিনোজার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, যদিও, ঈশ্বরের প্রতি তার একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ভালোবাসা ছিল, যে ভালোবাসাটি অর্জিত হয়েছিল যুক্তির মাধ্যমে গভীর অনুধাবনে। তবে অবশ্যই এটাকে প্রথাগত ধর্মের সাথে তুলনা করা সম্ভব না। সিনাগগ থেকে তাকে বহিষ্কৃত করার সঙ্গত কারণ ছিল। 

স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বিতর্কিত। তিনি ছিলেন ডিটারমিনিস্ট। এর মানে হচ্ছে তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের প্রতিটি কর্মই কিছু পূর্বকারণেরই পরিণতি; এই দার্শনিক অবস্থানটি দাবি করে, প্রতিটি ঘটনার জন্যে, মানব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াসহ, অবশ্যই কিছু পূর্বপরিস্থিতি আছে যার কারণে সেই ঘটনাটি ছাড়া আর কোনোকিছু ঘটতে পারেনা। একটি পাথর বাতাসে ছুড়ে দেয়া হলো, সে যদি মানুষের মতো সচেতন হতো, সে হয়তো কল্পনা করত সে তার নিজের ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে বাতাসে ভাসছে, এমনকি যখন সেটি সে করছে না। আসলেই যা তাকে বাতাসে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেটি হলো যে-শক্তিটি সৃষ্টি হয়েছিল পাথরটি ছুড়ে মারার সময়, সেই শক্তিটি এবং পাথরটির উপর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব। পাথরটি শুধু ভাবছে মাধ্যাকর্ষণ না, সে নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে, কোথায় সে পড়বে। মানুষও সেরকম: আমরা কল্পনা করি, আমরা স্বাধীনভাবে কোনোকিছু বেছে নিচ্ছি যখন সেটা করছি, এবং আমাদের জীবনের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। কিন্তু তার কারণ, আমরা সাধারণত বুঝতে পারিনা, কীভাবে আমাদের নির্বাচন করা পথগুলো এবং কাজগুলো আসলেই ঘটছে। বাস্তবিকভাবেই ‘ফ্রি উইল’ হচ্ছে একটি বিভ্রম। কোনো স্বতঃস্ফূর্ত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আসলেই নেই। যদিও একজন ডিটারমিনিস্ট বা নিয়তিবাদী, স্পিনোজা কিন্তু বিশ্বাস করতেন যে খুব সীমিত ধরনের একটা স্বাধীনতা মানুষের জন্যে সম্ভব এবং কাঙ্ক্ষিত। এবং বেঁচে থাকার সবচেয়ে খারাপ উপায় হচ্ছে, তিনি যাকে বলেছিলেন bondage, নিজের আবেগের কাছে বন্দি হয়ে। যখনই খারাপ কিছু ঘটে, কেউ আপনার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে, এবং আপনি রেগে যান, এবং ঘৃণায় পূর্ণ হয়ে ওঠেন। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যা খুবই নিষ্ক্রিয় একটি উপায়। আপনি শুধু ঘটনার প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন, আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিষয়গুলো আপনাকে ক্রুদ্ধ করে। আপনি আদৌ নিয়ন্ত্রণে নেই। এখান থেকে পরিত্রাণের উপায় সেই কারণগুলো সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা, যা এই আচরণগুলোর রূপ দেয়, সেই বিষয়গুলো যা আপনাকে রাগায়। স্পিনোজার মতে, আমরা আমাদের আবেগের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যা অর্জন করতে পারি সেটি হচ্ছে বাইরে ঘটা কোনো ঘটনা না, যেন আমরা আমাদের নিজেদের নির্বাচনগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারি। এমনকি যখন এই বাছাই বা নির্বাচন প্রক্রিয়া পুরোপুরিভাবে স্বাধীন নয়, নিষ্ক্রিয় হবার চেয়ে সক্রিয় হওয়া উত্তম। 

স্পিনোজার দার্শনিকসুলভ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি বিতর্কিত হবার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন এমন কোনো ধারণা উপস্থাপন করতে যা সেই সময় কেউ শুনতে প্রস্তুত ছিলনা, এবং তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তিনি যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাঁর লেখার মাধ্যমেই পাঠককে প্রভাবিত করা অব্যাহত রেখেছিলেন, এমনকি যখন তারা খুব দৃঢ়ভাবে তাঁর সাথে একমত নয়। ঈশ্বর হচ্ছে প্রকৃতি, তাঁর সেই বিশ্বাসটি সেই সময়ে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর থেকে তাঁকে সমর্থন জুগিয়েছে বহু বিখ্যাত মানুষ : ভিক্টোরিয়ান যুগের লেখিকা জর্জ এলিয়ট, যিনি তাঁর বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন, এবং বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইন, যদিও তিনি কোনো ব্যক্তিগত ঈশ্বরের ধারণা মেনে নিতে পারেননি, তবে একবার একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে তিনি স্পিনোজার ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন। স্পিনোজার ঈশ্বর, যেমনটি আমরা দেখেছি, নৈর্ব্যক্তিক, এবং যার মানবিক কোনো বৈশিষ্ট্য নেই, সুতরাং কাউকেই তিনি তাদের পাপের জন্য শান্তি দেবেন না। জন লক, যিনি স্পিনোজার মতো একই বছরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি খুব ভিন্নধারণা পোষণ করতেন। আত্মপ্রকৃতি নিয়ে তার আলোচনা আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল শেষ বিচারের দিনে কী হতে পারে সেই বিষয়ে তার ভাবনাটির দ্বারা। 

বারুখ স্পিনোজা নতুন করে ধর্মকে আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন। কুসংস্কার আর সরাসরি স্বর্গীয় হস্তক্ষেপের ধারণা থেকে এটিকে দূরে সরিয়ে, এমন কোনো বিষয়ে যা অনেক বেশি নৈর্ব্যক্তিক, প্রায়-বৈজ্ঞানিক এবং একই সাথে গভীরভাবে সান্ত্বনা-প্রদায়ক। হিব্রু ভাষায় ‘বারুখ’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে আশীর্বাদপুষ্ট, ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডামে যখন তার জন্ম হয়েছিল তখন আমস্টারডাম ছিল ইহুদি বাণিজ্য এবং চিন্তার প্রাণকেন্দ্র। তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন শেপার্ডিক ইহুদি, ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে যারা ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে আইবেরীয় (স্পেন ও পর্তুগাল) উপদ্বীপ ছেড়ে এসেছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি, ইহুদি স্কুলেই তিনি পড়াশুনা করেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে, তিনি নিজেকে তাঁর পূর্বসূরিদের বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নেন। পরে তিনি তাঁর সহজাত সতর্কতার সাথে লিখেছিলেন, ‘যদিও আমি শৈশব থেকেই ধর্মগ্রন্থ-সংক্রান্ত স্বীকৃত বিশ্বাস সম্বন্ধে শিক্ষা পেয়েছি, কিন্তু পরিশেষে বাধ্য হয়েছি অন্য দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিতে।’ 

তাঁর অসাধারণ কাজ ‘এথিকস’-এ আমরা তাঁর চিন্তার শ্রেষ্ঠ রূপটি দেখতে পাই। ল্যাটিন ভাষায় লেখা বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৬৭৭ খ্রিস্টাব্দে। বিশেষ করে এখানেই স্পিনোজা সরাসরি ইহুদিবাদ ও সংগঠিত সব ধর্মগুলোর মূল বিশ্বাসগুলোকে আক্রমণ করেছিলেন : ঈশ্বর কোনো সত্তা নয় যিনি প্রকৃতির বাইরে দাঁড়িয়ে, এমন কেউ নেই যিনি আমাদের প্রার্থনাগুলো শুনছেন; অথবা অলৌকিক কিছুসৃষ্টি করেন; অথবা দুষ্কর্মের জন্য আমাদের শাস্তি দেন; মৃত্যু- পরবর্তী কোনো জীবন নেই; মানুষ ঈশ্বরের বিশেষভাবে নির্বাচন করা কোনো প্রাণী নয়; বাইবেল লিখেছিলেন শুধুমাত্র সাধারণ কিছু মানুষ; ঈশ্বর শিল্পী যেমন নন, তেমনি স্থপতিও নন; তিনি রাজা কিংবা কোনো সামরিক কৌসুলি নন, যিনি কিনা বিশ্বাসীদের পবিত্র তরবারি হাতে তুলে নেবার আহ্বান জানান। ঈশ্বর কিছুই দেখতে পান না, তিনি কিছু প্রত্যাশাও করেন না। তিনি কোনোকিছু বিচার করেন না। তিনি এমনকি সদ্‌গুণাবলিসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর একটি জীবন দিয়ে পুরস্কৃত করেন না। একজন ব্যক্তিসত্তা ঈশ্বরের প্রতিটি উপস্থাপন কল্পনার প্রকাশ মাত্র।প্রতিটি প্রথাগত ধর্মীয় আচারের ক্যালেন্ডার শুদ্ধভাবেই কুসংস্কার। 

তবে এতকিছু সত্ত্বেও বিস্ময়করভাবেই, স্পিনোজা নিজেকে নাস্তিক বলে কখনো ঘোষণা করেননি। তিনি সবসময় নিজেকে ঈশ্বরের অনুগত সমর্থক হিসাবে দাবি করেছেন। স্পিনোজার এথিকস বইটিতে ঈশ্বরই কেন্দ্রীয় চরিত্র, তবে ওল্ড টেস্টামেন্টের পাতায় থাকা ভীতিজাগানো কোনো ঈশ্বরের মতো নয়। স্পিনোজার ঈশ্বর পুরোপুরি নৈর্ব্যক্তিক, অবিচ্ছেদ্য সেই সত্তা থেকে, আমরা যাকে প্রকৃতি বলি অথবা অস্তিত্ব কিংবা একটি বিশ্ব-আত্মা : ঈশ্বরই মহাবিশ্ব এবং এর আইনগুলো, ঈশ্বরই যুক্তি এবং সত্য, ঈশ্বরই সবকিছুর প্রাণদায়ী শক্তি, যা আছে এবং হতে পারে, সবকিছুর কারণ ঈশ্বর, কিন্তু তিনিই চিরন্তন কারণ। তিনি পরিবর্তনে অংশগ্রহণ করেন না, তিনি সময়ে সীমাবদ্ধ না, তাকে এককভাবে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। 

স্পিনোজা লিখেছিলেন: ‘যা কিছু আছে, সবই ঈশ্বরের অংশ, কোনোকিছুর অস্তিত্ব থাকতে পারে না অথবা কল্পনা করাও সম্ভব না ঈশ্বর ছাড়া।’ তাঁর পুরো লেখা জুড়েই, স্পিনোজা বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন প্রার্থনা করার ধারণাটিকে অসার প্রমাণ করার জন্য। প্রার্থনায়, কোনো একক ব্যক্তি ঈশ্বরের কাছে আবেদন করেন মহাবিশ্ব যেভাবে কাজ করছে সেটি পরিবর্তন করার জন্যে। কিন্তু স্পিনোজা যুক্তি দেন, পুরো বিষয়টি আসলে ভ্রান্ত একটি প্রক্রিয়া। মানুষের কাজ হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করা কীভাবে এবং কেন সবকিছু যেমন আছে, এমনভাবেই আছে। এবং আকাশ অভিমুখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বার্তা প্রেরণ করার পরিবর্তে বরং সবকিছু আমাদের এই অস্তিত্বের কর্মপ্রক্রিয়ার ফলাফল হিসাবে মেনে নেয়া। স্পিনোজা যেমন কিছুটা তিক্ততাসহ কিন্তু চমৎকারভাবে বলেছিলেন, ‘যে কিনা ঈশ্বরকে ভালোবাসে, ঈশ্বরও এর প্রতিদানে তাকে ভালোবাসবেন এমন প্রত্যাশা করতে পারেন না।’ অন্যভাবে বললে, শুধুমাত্র নির্বোধ (হয়তো কিছুটা হৃদয়স্পর্শীও) আত্মপ্রেম কাউকে এমন এক ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করতে পারে, যিনি পদার্থবিদ্যার চিরন্তন সূত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং একই সাথে এটাও কল্পনা করেন যে সেই একই ঈশ্বরও বিশেষ আগ্রহী হবেন অস্তিত্বের সেই সূত্রগুলো উপেক্ষা বা রদবদল করবেন, কোনো-না-কোনোভাবে তার জীবনে উন্নতি করার জন্যে। 

স্পিনোজাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল প্রাচীন গ্রিস ও রোমের স্টয়িক বা বৈরাগ্যদর্শনবাদীরা, যারা যুক্তি দিয়েছিলেন, প্রজ্ঞাপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে পরিস্থিতি যেমন আছে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ না করে সেই সমস্যাগুলোকে বোঝার নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যাওয়া। অবশ্য স্টয়িকরা মনে করতেন শান্তিপূর্ণভাবে এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া না-দেখানোই সবচেয়ে উত্তম। সেনেকা, স্পিনোজার প্রিয় দার্শনিক ছিলেন যিনি, মানুষকে তুলনা করেছিলেন দড়িতে বাঁধা কুকুর হিসাবে, যাকে বিভিন্ন দিকে টেনে নিয়ে যায় জীবনের প্রয়োজনগুলো। প্রয়োজনের তুলনায় যারা এই দড়ির বিরুদ্ধে যতই টান দেয়, তত বেশি তার শ্বাসরুদ্ধ হবার সম্ভাবনা বাড়ে এবং সেকারণে বিজ্ঞ মানুষরা অবশ্যই আগে থেকে চেষ্টা করেন সবকিছু সম্বন্ধে জানার জন্য। যেমন ভালোবাসা কেমন করে কাজ করে, অথবা কীভাবে রাজনীতি কাজ করে, তারপর তারা সেই অনুযায়ী তাদের দিক পরিবর্তন করেন, যেন তাদের গলায় ফাঁস না লাগে। বৈরাগ্যদর্শনের মতো এই দৃষ্টিভঙ্গিটি আমরা স্পিনোজার দর্শনে প্রায়শই উপস্থিত দেখি ৷ 

গতানুগতিক ধারায় ঈশ্বরকে বোঝার জন্য আপনাকে বাইবেল বা অন্য ধর্মগ্রন্থ পড়তে হবে, কিন্তু স্পিনোজা নতুন একটি ধারণা প্রস্তাবনা করেছিলেন। ঈশ্বরকে জানার সেরা উপায় হচ্ছে কীভাবে জীবন ও মহাবিশ্ব কাজ করে সেটা জানা : মনোবিজ্ঞান, দর্শন, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের জ্ঞান আহরণ করেই আমরা ঈশ্বরকে জানতে পারি। প্রথাগত ধর্মে বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের কাছে নানা কিছু চান, স্পিনোজা প্রস্তাবনা করেছিলেন, আমাদের বোঝা উচিত ঈশ্বর কী চান এবং আমরা সেটা করতে পারি সর্বোপরি একটি উপায়েঃ যা-কিছু আছে সবকিছু সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করে। যুক্তির দ্বারা, আমরা স্বর্গীয় দৃষ্টিভঙ্গিটিকে স্বীকার করে নিতে পারব স্পিনোজা জীবনের প্রতি দুটি দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে বিখ্যাত পার্থক্য করেছিলেন, তাঁর ভাষায়: আমরা এটিকে দেখতে পারি স্বার্থপর আত্মবাদী আমাদের ব্যক্তিগত সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে: Sub specie durationis – under the aspect of time অথবা আমরা জীবনকে দেখতে পারি বৈশ্বিক ও চিরন্তন একটি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে Sub specie aeternitatis – under the aspect of eternity; আমাদের প্রকৃতি মানে আমরা সবসময়ই এই দুটি অংশে বিভক্ত। ইন্দ্রিয়সুখপূর্ণ জীবন আমাদের টানে সময় দ্বারা সীমাবদ্ধ আংশিক দৃষ্টিভঙ্গিতে। কিন্তু আমার যৌক্তিক বুদ্ধিমত্তা আমাদের আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি দেখার অনন্য সুযোগ করে দেয়, চিরন্তন সামগ্রিকতায় অংশগ্রহণ করার জন্যে। স্পিনোজা তাঁর দর্শনকে দেখেছিলেন সেই জীবনের অভিমুখে একটি পথ হিসাবে, যে জীবনের ভিত্তি সব পাপবোধ, দুঃখ, করুণা অথবা লজ্জা থেকে স্বাধীনতা। সুখের জন্য দরকার আমাদের ইচ্ছাগুলো মহাবিশ্বের ইচ্ছার সাথে একটি রেখায় নিয়ে আসা। মহাবিশ্বের ঈশ্বর, নিজের প্রকল্প আছে, আর আমাদের দায়িত্ব হলো সেগুলো বোঝা ও তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না- করা। একজন স্বাধীন মানুষ হচ্ছেন তিনি, যিনি আমাদের সবাইকে পরিচালিত করা সব প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতন 

স্পিনোজা লিখেছিলেন, জ্ঞানী মানুষ, যিনি বোঝেন, কীভাবে এবং কেন কী হচ্ছে, ‘তিনি সত্যিকারভাবে আত্মার প্রশান্তি পান।’ বলাবাহুল্য, এইসব ধারণার কারণে স্পিনোজাকে বেশ সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। ইহুদি সমাজ থেকে তাকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে। আমস্টারডাম থেকে পালাতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন, পরে দ্য হেগ শহরে বসতি গড়েন। এখানে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে একজন লেন্স-নির্মাতা ও শিক্ষক হিসাবে ১৬৭৭ সালে তার মৃত্যু অবধি বাস করেছিলেন। তার কাজ মূলত উপেক্ষিত হয়েছিল দীর্ঘদিন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে হেগেল বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন, পরে তাকে অনুসরণ করেন ভিটগেনস্টাইন এবং বিংশ শতাব্দীর আরো কয়েকজন দার্শনিক। কিন্তু সার্বিকভাবে স্পিনোজা আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন দর্শনের ব্যর্থতা সম্বন্ধে। তার এথিকস বইটিকে মনে করা হয় পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটি বই। জীবন সম্বন্ধে স্বস্তিদায়ক, দৃষ্টিভঙ্গি সুনির্দিষ্টকরণের কিছু নির্দেশনা আছে সেই বইয়ে। কুসংস্কারের ঈশ্বরকে এটি প্রতিস্থাপিত করেছিল একটি প্রজ্ঞাময়, সান্ত্বনাদায়ক সর্বেশ্বরবাদ দিয়ে। এবং তারপরও স্পিনোজার কাজ পুরোপুরিভাবেই ব্যর্থ হয়েছিল প্রথাগত ধর্ম পরিত্যাগ করার জন্য অল্পকিছু মানুষ ছাড়া আর কারো মন পরিবর্তন করতে। তিনি বোঝাতে পারেননি যে বিশ্বাসের একটি প্রজ্ঞাময় কাঠামো সৃষ্টি করা সম্ভব যুক্তিবাদী পথ বেছে নেবার মাধ্যমে। কারণগুলো একার্থে খুব সাধারণ এবং আটপৌরে। স্পিনোজা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তার আগে ও পরে বহু দার্শনিকই এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, ধর্মের প্রতি মানুষের এই আকর্ষণ শুধুমাত্র যুক্তি না, বরং আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণভাবে, আবেগ,বিশ্বাস, ভয় আর ঐতিহ্য। মানুষ তাদের বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে থাকে কারণ তারা সেই আচার, অনুষ্ঠান, উৎসব, সুন্দর স্থাপত্য, সংগীত, ভাবগম্ভীর ভাষা, এ সবকিছু পছন্দ করে। স্পিনোজার ‘এথিকস’ তর্কসাপেক্ষে বাইবেলের চেয়ে অনেক বেশি প্রজ্ঞাপূর্ণ, কিন্তু যেহেতু এটি বাইবেলের সেই সহায়ক অনুষঙ্গ আচার এবং কাঠামো ছাড়া এসেছে, এটি সেই আবেদন সৃষ্টি করেনি বহু ধর্মানুসারীদের মনে। অল্পকিছু পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে পড়ানো হয়েছে যদিও, তাসত্ত্বেও তিনি তেমন গুরুত্ব পাননি মূলধারায়, অন্যদিকে প্রথাগত ধর্ম, যা তিনি ১৬৭০-এর দশকেই ভেবেছিলেন অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে, সেটি এখন আরো ব্যাপক এবং এখনও মানুষকে বিশ্বাস করানো অব্যাহত রেখেছে। যদি কখনো আমরা প্রথাগত ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রতিস্থাপিত করি, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ধর্মকে কতটা সাহায্য করেছে আচার, শিল্পকলা, ঐতিহ্যময় সামাজিক সংহতি : সেই সবকিছুই যা স্পিনোজা, তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও উপেক্ষা করেছিলেন নিজের ক্ষতি করে, যখন তিনি বাইবেলকে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করেছিলেন। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *