1 of 2

অধ্যায় ৩৯ : অস্তিত্ববাদের ধাত্রী – সিমোন দ্য বুভোয়া

অধ্যায় ৩৯ :  অস্তিত্ববাদের ধাত্রী – সিমোন দ্য বুভোয়া

দার্শনিক হিসাবে জায়গা করে নিতে সময় লেগেছিল তার। নিজেকে তিনি স্বতন্ত্র দার্শনিক নয় বরং ঔপন্যাসিক, লেখক আর তার বৌদ্ধিক সঙ্গী সার্ত্রের অস্তিত্ববাদী নৈতিকতার ধাত্রী হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। দর্শনে তাঁর জায়গাটি জয় করতে তাকে তাঁর নিজের কথার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিততে হয়েছে। তবে দার্শনিক হিসাবে তার অবস্থান আজ প্রশ্নাতীত। নৈতিক দর্শন, রাজনীতি, অস্তিত্ববাদ, ফেনোমেনোলজি, নারীবাদ তত্ত্বে তার অবদান চিরস্থায়ী আর অধিকার আদায়ের সব সংগ্রামে সক্রিয় কর্মী ও জনগণের বুদ্ধিজীবী হিসাবে তার পরিচয় আজও বিস্মৃত হয়নি। যদিও দার্শনিক হিসাবে তার পরিচিতি এসেছে পরে, তবে নারীবাদের তাত্ত্বিক হিসাবে তাঁর পরিচিতি নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তোলেনি। সাৰ্ব্ব, কামু ও মার্লো-পন্টির মতো পরিচিত অস্তিত্ববাদী দার্শনিকদের পাশাপাশি কাজ করে নীতিদর্শন, নারীবাদ, উপন্যাস, রাজনীতি, আত্মজীবনী ইত্যাদি নানাক্ষেত্রে বেশ কিছু অসাধারণ সৃষ্টি তিনি আমাদের জন্যে রেখে গেছেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত আর প্রভাবশালী দার্শনিক অবদান, দ্য সেকেন্ড সেক্স (১৯৪৯) নারীবাদী বিপ্লবের সূচনা করেছিল, এবং আজো নারীনিপীড়ন আর স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় বই হিসাবে এটি এর অবস্থানটি ধরে রেখেছে।

১৯০৮ সালে প্যারিসে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষয়িষ্ণু একটি অভিজাত পরিবারের সন্তান বুভোয়া শৈশব থেকে খুবই বুদ্ধিমান আর কৌতূহলী ছিলেন। ক্যাথলিক স্কুলইনস্টিটিট আডেলাইন ডেসির-এ তিনি শিক্ষাজীবন শুরু করেন, যেখানে তিনি ছিলেন ১৭ বছর অবধি। এখানেই তাঁর সাথে পরিচয় হয়েছিল প্রিয় বন্ধু জাজার সাথে, যার সাথে গভীর একটি আত্মিক সম্পর্ক তিনি গড়ে তুলেছিলেন। সেই বন্ধুত্বে হঠাৎ পরিসমাপ্তি ঘটে যখন জাজা ১৯২৯ সালে হঠাৎ করেই মারা যান, যদিও ডাক্তাররা মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করেছিলেন মেনিনজাইটিস, কিন্তু বুভোয়া বিশ্বাস করতেন তার বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে তার হৃদয় ভঙ্গ হবার কারণে, যখন জাজা তাঁর পরিবারের সাথে সংগ্রাম করেছিলেন পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্তে চাপিয়ে দেয়া একটি বিয়ের বিরুদ্ধে। জাজার বন্ধুত্ব আর মৃত্যু গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল বুভোয়াকে, প্রায়শই তিনি সেই অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, বিশেষ করে নারীদের প্রতি বুর্জোয়া সমাজের কঠোর নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে তাঁর সমালোচনাকেও যা প্রভাবিত করেছিল। শৈশব থেকে গভীরভাবে ধার্মিক ছিলেন তিনি, বিশেষ করে ক্যাথলিক স্কুল আর ধার্মিক মায়ের কারণে, তবে ১৪ বছর বয়সে বুভোয়া ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সংশয়গ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন অবশ্যই কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। মৃত্যু অবধি তিনি নিরীশ্বরবাদী ছিলেন। ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করার পরই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দর্শন পড়বেন ও পড়াবেন। সরবোনে ইতিহাস, দর্শন ও আরো একগুচ্ছ বিষয় পড়ার পর তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে সবচেয়ে কমবয়সী শিক্ষার্থী হিসাবে ফ্রান্সের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে সম্মানজনক সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় agrégation-এ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, এবং এভাবে ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণতম দর্শনের শিক্ষক হয়েছিলেন তিনি। ইকোলে নরমাল-এ পড়ার সময় সার্ত্রের সাথে দেখা হয়েছিল তাঁর এবং তাদের অদ্ভুত উন্মুক্ত সম্পর্কটি অব্যাহত ছিল ১৯৮০ সালে সার্ত্রের মৃত্যু অবধি। তাঁর নিজের মেধার যোগ্য সঙ্গী হিসাবে তিনি সার্ভেকে আবিষ্কার করেছিলেন, যদিও তিনি নিজে বলেছিলেন, কোনো-না-কোনোভাবে তারচেয়ে সেরাও, আর এটাই অনেককে ভুল ধারণা দিয়েছিল যে তিনি আসলে সার্ত্রের মতো মৌলিকতা ধারণ করেননা। বাকি জীবন তারা মূলত ‘এসেনসিয়াল’ ভালোবাসার যুগল ছিলেন, যখন একই সাথে তাদের সম্পর্কও ছিল উন্মুক্ত,যা সুযোগ করেছিল নিজেদের ইচ্ছামতো দুজনেরই বাড়তি বা কন্টিনজেন্ট সঙ্গী/সঙ্গিনীর সাথে সম্পর্ক রাখতে। তারা দুজনেই কখনো বিয়ে করেননি (যদিও ১৯৩১ সালে সার্ত্র তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন), দুজনে কোনো সন্তানও নেননি, এমনকি এক ঘরেও থাকেননি, অথচ আজীবন তারা পরস্পরের বৌদ্ধিক আর রোমান্টিক সঙ্গী হিসাবে জীবন কাটিয়েছিলেন।

শিক্ষক হিসাবে তাঁর পেশাগত জীবনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে ১৯৪৩ সালে যখন এক ছাত্রীর পরিবার থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অনৈতিকতা শেখানোর অভিযোগ এসেছিল। যদিও পড়াতে ভালোবাসতেন তিনি তবে আর শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যাননি। তিনি তাঁর জীবনের আরেকটি স্বপ্নকে লালন করার সুযোগ নিয়েছিলেন। শৈশব থেকে তিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন, নারীদের নিয়ে প্রথম ছোটগল্প সংকলন When Things of the Spirit Come Firstপ্রকাশকরা প্রত্যাখান করেছিলেন, যা ১৯৭৯ সালের আগে প্রকাশিত হয়নি। তবে তার, সার্ত্র এবং তাঁর ছাত্রী ওলগা কোসাকিভিচ-এর মধ্যে ত্রিভুজ সম্পর্কের একটি কল্পরূপ She Came to Stay প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৩ সালেই। সফল হয়েছিল এই বইটি। নাৎসি- দখলকৃত সময়টিকে বুভোয়া বলেছিলেন তাঁর সাহিত্যজীবনের মোরাল পর্ব। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সালে তিনি লিখেছিলেন TheBlood of Others, যা ফরাসি প্রতিরোধ আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্তিত্ববাদী উপন্যাস হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে তিনি তাঁর প্রথম দার্শনিক রচনা Pyrrhus et Cinéas প্রকাশ করেন, একই সময় প্রকাশিত হয় তার আরেকটি উপন্যাস All Men are Mortal এবং তার একটিমাত্র নাটক Who Shall Die? সাহিত্যিক হিসাবে খ্যাতি, তাঁর এবং সার্ত্রের সম্পর্কের সুপরিচিতি সবকিছুই এমন বিখ্যাত করেছিল যে খুব কম দার্শনিকই তাদের জীবদ্দশায় এই সুযোগ পান।

বুভোয়ার ভাবনার একটি বিষয় ছিল নিজের প্রতি, অন্যদের প্রতি, নির্যাতিত গোষ্ঠীর প্রতি কারো নৈতিক দায়িত্ব কী হতে পারে সেটি বিশ্লেষণ করা। তার শুরুর দিকের কাজ Pyrrhus et Cinéas (১৯৪৪) এই দায়িত্বটিকে দেখেছিল অস্তি ত্ববাদের কাঠামো ব্যবহার করে, এমনকি যখন কিনা সার্ত্র নিজেই সেটি ব্যবহার করতে শুরু করেননি। এই প্রবন্ধটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ফ্রান্সে সাড়া জাগিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অন্ধকার পর্বটি থেকে মুক্তি পাবার একটি উপায়ের আশা জাগিয়ে। মূলত এটি কথোপকথন, এপিরুসের প্রাচীন রাজা পিরুস এবং তার প্রধান উপদেষ্টা সিনিয়াসের মধ্যে। প্রতিবারই যখন পিরুস দাবি করেন অন্য কোন্ রাজ্য তিনি জয় করবেন, সিনিয়াস তাকে জিজ্ঞাসা করতেন জয় করার পর তিনি কী করবেন। অবশেষে পিরুস দাবি করেন যে তিনি বিশ্রাম নেবেন তার সব পরিকল্পনা পূর্ণ করে; উত্তরে সিনিয়াস তাকে বলেন, এখনই তাহলে বিশ্রাম নিচ্ছেন না কেন? সুতরাং তার এই প্রবন্ধটি ছিল মূলত কাজের উদ্দেশ্য নিয়ে একটি অনুসন্ধান, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবনাটি কেন সেটি আমাদের আদৌ করা উচিত। এই কাজটির সাথে সার্ত্রের Being and Nothingness-এর খুব নিকট সম্পর্ক আছে। একটি নৈর্ব্যক্তিক পৃথিবীতে ব্যক্তিস্বাধীনতার কাঠামোটি সার্ত্রের being-for-itself এবং being-in-itself এর মধ্যে দ্বন্দ্বের কাছাকাছি। কিন্তু সার্ত্র থেকে ভিন্নভাবেই বুভোয়ার স্বাধীনতা দাবি করে পৃথিবীর অন্য স্বাধীন সত্তাদের প্রতি নৈতিক বিবেচনাপূর্ণ আচরণ খুবই গুরুতত্বপূর্ণ। আমাদের বাইরের পৃথিবীর প্রায়শই আমাদের নিষ্পেষণ করে এমন একটি নৈর্ব্যক্তিক বাস্তবতা হতে পারে, কিন্তু বুভোয়া মনে করতেন অন্যরা আমাদের মৌলিক স্বাধীনতা আমাদের সামনে উন্মোচন করতে পারে। নৈতিকতা নিশ্চিত করতে পারে এমন কোনো ঈশ্বরের অনুপস্থিতিতে, নৈতিক আচরণের মাধ্যমে অন্যদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার দায়িত্বটি পড়ে ব্যক্তির উপরে, আর সেই সম্পর্কের জন্যে দরকার পৃথিবীর প্রতি সক্রিয় একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যা আমাদের স্বাধীনতাকে প্রকাশ করে যেমন, তেমনি অন্য মানুষদের মধ্যে সেই স্বাধীনতাকে অনুপ্রাণিত করে। কারণ মানুষ হয়ে ওঠা মানে আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রেষ্ঠতা দিয়ে প্রদত্ত পৃথিবীটাকে নতুন করে সৃষ্টি করা, আর নিষ্ক্রিয় হওয়া মানে, সার্ত্রের উদ্ভাবিত শব্দ যদি ব্যবহার করি, ব্যাড ফেইথ নিয়ে বেঁচে থাকা। এই প্রবন্ধটিতে বুভোয়া স্বাধীনতা, এবং প্রতিটি মুহূর্তে সচেতনভাবে নিজেকে শনাক্ত করা নিয়ে এতই ভেবেছিলেন যে তিনি দাসত্ব, প্রভুত্ব, নির্যাতন ও আনুগত্য ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে ভেবেছিলেন; তাঁর মতে এই ধরনের সম্পর্কগুলো হচ্ছে অন্যদের সাথে সম্পর্কেরই পরিণতি। এর ফলে সৃষ্ট অসমতা সত্ত্বেও তিনি দাবি করেছিলেন যে আমরা কখনোই কারো জন্যে অথবা কারো বিরুদ্ধে কিছু করে দিতে পারি না। আমরা কখনোই অন্যদের হয়ে কিছু করতে পারি না, প্রতিটি মানুষ কেবল তার নিজের জন্য দায়ী। তবে, তারপরও আমরা নৈতিকভাবে বাধ্য অন্যদের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে। অস্তিত্ববাদী দর্শনের একটি সাধারণ ভাবনাকে প্রতিধ্বনিত্ব হতে দেখি, এমনকি নীরব থাকা অথবা অন্যদের সহায়তা করা থেকে বিরত থাকাও নিজস্ব সিদ্ধান্তে নেয়া। অন্যার্থে স্বাধীনতাকে আমরা কখনোই এড়াতে পারব না। কিন্তু তাসত্ত্বেও বুভোয়া সেই ধারণাটি গড়ে তুলেছিলেন যে অন্যদের স্বাধীন হবার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়া থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আমরা অন্যদের প্রতি আমাদের নৈতিক দায়িত্বটিকে অস্বীকার করছি। অন্যদের ছাড়া, আমাদের সব কাজই অর্থহীনতার ঝুঁকির মুখে থাকে। তবে অন্যরা, যারা নিজেরাও স্বাধীন, আমাদের কর্ম আমাদের সীমাবদ্ধ অস্তিত্বকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে। এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই যা আমাদের মানা উচিত, আমাদের পরিকল্পনা ঝুঁকি আর কিছু অনিশ্চয়তাসহ আমাদের সম্পাদন করতে হবে, তবে তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই ভঙ্গুরতাই নৈতিকতার সত্যিকারের সম্ভাবনাগুলোর সামনে আমাদের উন্মুক্ত করে দেয়।

তাঁর The Ethics of Ambiguity (১৯৪৭) নানাভাবে একই ধারণাগুলোরই সম্প্রসারণ। এখানে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন আমাদের অস্তিত্বের আকস্মিকতার বিষয়টিকে, কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে আমাদের অস্তিত্বের, আর সেকারণে পূর্বনির্ধারিত কোনো মানবিক মূল সার বা এসেন্স নেই বা মানদণ্ড নেই। গুরুত্বপূর্ণভাবে, বুভোয়া সেই ধারণাটিকে আরো বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেন যে মানব-স্বাধীনতার বাস্তবায়নের জন্যে দরকার অন্যদেরও স্বাধীনতা। তিনি তাঁর যুক্তি শুরু করেছিলেন মানব পরিস্থিতির সেই ট্র্যাজিক অবস্থাটি প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে আমরা স্বতঃস্ফূর্ত সহজাত তাড়না হিসাবে স্বাধীনতাকে অনুভব করি এবং যেটিকে নিষ্পেষিত করে রাখে পৃথিবীর ভার, যা আমাদের উপর তার প্রভাব বিস্ত রি করে রাখে এমনভাবে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, যা আমরা নিজেরা বাছাই করিনা। সেকারণে নৈতিকভাবে বাঁচতে হলে আমাদের অবশ্যই এই অনিশ্চয়তা (ambiguity) থেকে না-পালিয়ে এটি অবশ্যই সেটিকে গ্রহণ করে নিতে হবে। এখানে বুভোয়া সহানুভূতিশীল ছিলেন, যদিও অস্তিত্ববাদী নৈতিকতায় ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সবার উপরে রাখা হয়, কিন্তু ব্যক্তি সবসময়ই সমাজের অংশ এবং সেকারণে পৃথক অস্তিত্বগুলো আবশ্যিকভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে প্রতিটি কাজই অন্য মানুষ দ্বারা পূর্ণ পৃথিবীতে ঘটে এবং সেকারণে অন্য মানুষদেরও প্রভাবিত করে। The Ethics of Ambiguity বইটিতে অন্য দার্শনিকদের ব্যতিক্রম বুভোয়া শৈশবের একটি বিশ্লেষণও যুক্ত করেছিলেন, যেখানে তিনি প্রস্তাবনা করেন যে ইচ্ছাশক্তি অথবা স্বাধীনতা সময়ের সাথে বিকশিত হয় বা গড়ে ওঠে। এভাবে একটি শিশুকে নৈতিক হিসাবে বিবেচনা করা যাবে, কারণ অতীত ও ভবিষ্যতের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনো কাজকে শুধুমাত্র বোঝা যাবে সময়ের সাথে এর পরিণতি বিবেচনা করে। এছাড়াও কোনো একটি শিশুর পরিস্থিতি আমাদের সেটি দেখার সুযোগ দেয় যা বুভোয়া বলেছিলেন, attitude of seriousness যেখানে মূল্যবোধগুলো দেয়া হয়, বাছাই করা হয়না, এর কারণে প্রতিটি মানুষই একসময় শিশু ছিলেন সেই গম্ভীর দৃষ্টিভঙ্গিটি হচ্ছে ব্যাড ফেইথের সবচেয়ে প্রচলিত একটি রূপ।

বুভোয়া সন্দেহাতীতভাবেই ‘পরিস্থিতি’ বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছিলেন অসাধারণভাবে। সার্ত্রের প্রস্তাবনায় কারো পরিস্থিতি হচ্ছে শুধুমাত্র সেটাই যা স্বতঃস্ফূর্ত স্বাধীনতার শক্তিকে অতিক্রম করতে হবে। অবশ্যই কারো পরিস্থিতি একটি সীমানা, কিন্তু এটি অতিক্রম করার সীমানা। বুভোয়া, তবে শনাক্ত করেছিলেন যে কিছু পরিস্থিতি এমন যে সেটি অতিক্রম করা যায়না। যেমন তিনি বলেছেন নির্যাতিত মানুষরা, যেমন ক্রীতদাস এবং বহু নারী যারা বেঁচে থাকে শিশুসুলভ একটি জগতে যেখানে মূল্যবোধ, প্রথা, ঈশ্বর এবং আইন সবকিছু তাদের প্রদান করা হয় স্বাধীনভাবে বাছাই করার কোনো সুযোগ না দিয়ে। তাদের পরিস্থিতিটি সংজ্ঞায়িত করে বাইরের ক্ষমতাকাঠামো। যেহেতু তাদের উপর সেই ক্ষমতাটি কাজ করে, তাদের সীমাবদ্ধতা, বহুক্ষেত্রেই অতিক্রম করা সম্ভব না, কারণ এমনকি তাদের অস্তিত্বই তাদের জানা নেই। অন্যার্থে তাদের পরিস্থিতি পৃথিবীর প্রাকৃতিক নিয়মের মতোই। এভাবে ক্রীতদাস ও নারীদের রহস্যময়তায় আবৃত করে বিশ্বাস করানো হয় যে তাদের ভাগ্য প্রকৃতি-নির্দেশিত। এবং তিনি ব্যাখ্যা করেন যে যেহেতু আমরা প্রকৃতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারিনা, শোষক শোষিতকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে তাদের পরিস্থিতি এখন যেমন, তেমন কারণ তারা প্রাকৃতিকভাবে নিম্নমানের ও ক্রীতদাসসুলভ। এভাবে শোষক শোষিতকে ধোঁকা দেয় তাদের স্বাধীনতা সম্বন্ধে অজ্ঞতায় রেখে, এভাবে তারা তাদের বিদ্রোহকে প্রতিরোধ করে। একারণে তিনি বলেন আমাদের দাবি করা সম্ভবনা যে তারা ব্যাড ফেইথে বসবাস করছে, তাদের আমরা বিচার করতে পারব যখন তারা সেই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসবে। শুধুমাত্র সত্যিকারের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বোঝে যে কারো নিজের জন্য স্বাধীনতার দরকার অন্যদের স্বাধীনতা। একা কিছু করা অথবা অন্যদের জন্য কোনো ভাবনা ছাড়া কাজ করা স্বাধীনতা নয়। বুভোয়া ব্যাখ্যা করেছিলেন No project can be defined except by its interference with other projects, সেকারণে যদি আমার কোনো প্রোজেক্ট অন্যদের সাথে মুখোমুখি হয় যারা দাসত্বে বন্দি, আক্ষরিকার্থে অথবা রহস্যময়তা আর সংশয়ের দ্বারা, তাহলে আমিও সত্যিকারভাবে স্বাধীন নই। উপরন্তু যদি আমি সক্রিয়ভাবে যারা স্বাধীন নয় তাদের সাহায্য না করি, আমি তাদের নির্যাতন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার অপরাধে অপরাধী।

বেশিরভাগ দার্শনিকের মতে তার সেরা কাজটি হচ্ছে একটি বৈপ্লবিক ম্যাগনাম ওপাস The Second Sex, দুটি খণ্ডে যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে (যার প্রথম সন্দেহজনক ইংরেজি অনুবাদটি ছিল বইটির একটি সংক্ষিপ্ত মূল যা দুটি খণ্ডে বিভক্ত করে প্রকাশ করা হয়েছিল)। বইটি তাৎক্ষণিকভাবেই সাড়া জাগিয়েছিল পক্ষে বিপক্ষে। বইটি এত বিতর্কিত ছিল যে ভ্যাটিকান চার্চ সেটিকে তাদের নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় যুক্ত করেছিল। যেসময় বুভোয়া বইটি লিখেছিলেন, নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নারীদের নিয়ে দর্শন প্রকৃতার্থে তেমন কিছু হয়নি। ব্যতিক্রম অল্পকিছু বই ছাড়া, যা নারীদের উপর পদ্ধতিগতভাবে সামাজিক নির্যাতনের কথা ঐতিহাসিক ও আধুনিক দুই সময়ের প্রেক্ষিতে প্রায় কখনোই শোনা যায়নি। এর গবেষণার ব্যাপ্তি এবং কেন্দ্রীয় অন্তর্দৃষ্টির গভীরতার ভিত্তিতে দ্য সেকেন্ড সেক্স আজও দর্শন, নারীবাদ আর উওমেন স্টাডি বিষয়ে ভিত্তিমূলক বই হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। দ্য সেকেন্ড সেক্স-এর মূল ধারণাটি আবর্তিত হয়েছে যে- বিষয়টিকে ঘিরে সেটি হলো, পুরুষের অপর অংশ (Other half) পরিণত হবার মাধ্যমে পুরুষদের সাথে নারীরা ‘দীর্ঘমেয়াদি’ শোষণের একটি সম্পর্কে বন্দী। নারীর পরিস্থিতি নিয়ে তার এই বহুমাত্রিক গবেষণায় তিনি দেখেছিলেন যে নারীদের পুরুষরা সংজ্ঞায়িত করছে ‘আদার’ (Other) হিসাবে এবং যেখানে পুরুষ ভূমিকা নিচ্ছে ‘সেলফের’ (Self)। তিনি বলেন যে এটি আবশ্যিক নয়, প্রসঙ্গক্রমে ঘটেছে। পুরুষ হচ্ছে সাবজেক্ট, এবং নারী হচ্ছে অন্য বা আদার। বইটি দুটি মূল ধারণায় বিভক্ত। প্রথম বইটি নারী সম্বন্ধে বহু বাস্তব তথ্য ও পুরাণ বিশ্লেষণ করেছে বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে : জৈববৈজ্ঞানিক-বৈজ্ঞানিক, মনোবিশ্লেষণী, বস্তুবাদী, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক ও নৃতাত্ত্বিক। প্রতিটি অনুসন্ধানে বুভোয়া সতর্ক ছিলেন এমন কোনো দাবি না-করার জন্যে যে, কোনোটাই যথেষ্ট নয় পুরুষের অপর হিসাবে ও তাদের পরবর্তীতে শোষণ ব্যাখ্যা করার জন্যে। তবে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেরই অবদান আছে নারীকে অপর লিঙ্গ হিসাবে সার্বিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য। যেমন জীববিজ্ঞান আর ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, নারী কিছু প্রাকৃতিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা লব্ধ হতে হয়; গর্ভধারণ, বুকের দুধ আসা, মাসিক ইত্যাদি যার সাথে পুরুষরা পরিচিত নয়, এবং এটাই নারীদের পরিস্থিতিটিকে অনেক বেশি ভিন্ন করেছে। তবে এইসব শারীরবৃত্তীয় ঘটনা কোনোভাবেই সরাসরি নারীকে পুরুষের অধীনস্থ করেনি, কারণ জীববিজ্ঞান বা ইতিহাস শুধুমাত্র নিরপেক্ষ কোনো পর্যবেক্ষকের প্রস্তাবিত বাস্তব সত্য নয় বরং সবসময়ই কোনো একটি পরিস্থিতির অংশ এবং যেখান থেকে এটি ব্যাখ্যা করা যায়। তিনি স্বীকার করেন যে মনোবিশ্লেষণ আর ঐতিহাসিক বাস্তবতাবাদ নারীদের যৌন, পারিবারিক ও বস্তুগত জীবন নিয়ে অনেক অন্তর্দৃষ্টির যোগান দিয়েছে, কিন্তু সার্বিক চিত্রটি ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মনোবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এটি চয়েস বা নির্বাচনের বাস্তবতাকে অস্বীকার করেছে, ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোর অস্তিত্ববাদী গুরুত্বকে অস্বীকার করেছে বস্তুগত পরিস্থিতিতে সরলীকৃত করে। তিনি দাবি করেন যে এইসব বিশ্লেষণেই নারীসংক্রান্ত সেই মিথটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে : Eternal Feminine, এই মিথটি সংযুক্ত হয়েছে নারীদের নিয়ে অন্য বহু মিথের সাথে (যেমন মা, কুমারী, মাতৃভূমি, প্রকৃতি ইত্যাদির মিথ) নারীদের একটি অসম্ভব আদর্শের ফাঁদে আটকে রাখতে, ভিন্ন ভিন্ন নারীদের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি আর স্বকীয়তাকে অস্বীকার করে। বাস্তবিকভাবে যে Eternal Feminine এর আদর্শ অসম্ভব প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে, কারণ এই মিথের নানা প্রকাশ পরস্পর বিরোধী; যেমন, ইতিহাস দেখিয়েছে জীবনের সুরক্ষাকারী মা হিসাবে তার প্রতিনিধিত্বকারী ঘটনার বিপরীতে একই পরিমাণ কাহিনী আছে যেখানে সে মৃত্যুর বার্তাবাহী। এই স্ববিরোধিতা, যা মানুষ অনুভব করে জন্ম নেয়া ও মৃত্যুবরণ করা, সেটি মায়ের উপর প্রক্ষেপিত হয় যেখানে সে দুটোর জন্যে দায়ভার গ্রহণ করে। এভাবে মা হিসাবে নারী একই সাথে ঘৃণ্য এবং ভালোবাসায় সিক্ত, এবং এককভাবে মা এই স্ববিরোধিতার মধ্যে বন্দি। এই পরিস্থিতি সব নারীপুরাণে আমরা দেখি, যেখানে নারীকে বাধ্য করা হয় অস্তিত্বের দায়ভার গ্রহণ করার জন্যে।

দ্য সেকেন্ড সেক্স-এর দ্বিতীয় বইটি শুরু হয়েছে বুভোয়ার সেরা প্রস্তাবনাটি দিয়ে: One is not born, but rather becomes a woman বা জন্ম নয়, বরং একজন নারী হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে বুভোয়া সেই দাবিকে বিনষ্ট করেছিলেন যা দাবি করে feminine হয়েই নারীদের জন্ম হয় (আর সেটি কোনো সংস্কৃতি বা সময় যেভাবে সংজ্ঞায়িত করে।) বরং নারী সেভাবে তৈরি হয়ে ওঠে সামাজিক দীক্ষা ও অনুশাসনে। নানা ধরনের বিবরণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করে, দ্বিতীয় বইটির প্রথম খণ্ড শৈশব থেকে কোনো নারীর জীবনকে অনুসরণ করে তার শিক্ষা, তার বয়ঃসন্ধিকাল ও পরিশেষে সমকামী ও যৌনজীবনের সূচনা (যদি তার কিছু থাকে) অবধি। প্রতিটি স্তরেই বুভোয়া প্রদর্শন করেছিলেন কীভাবে নারীরা বাধ্য হয় তাদের নিজস্ব উৎকর্ষ ও আত্মগত স্বকীয়তার দাবি পরিত্যাগ করে ধীরে ধীরে আরো বেশি কঠোর, নিষ্ক্রিয়, বিচ্ছিন্ন ভূমিকা স্বীকার করে নিতে, যা পুরুষের সক্রিয় আর আত্মগত দাবির অধীনস্থ। নারীর নিষ্ক্রিয়তা ও বিচ্ছিন্নতাকে তিনি নাম দেন তার পরিস্থিতি আর তার যৌক্তিকতা। তিনি স্ত্রী, মা এবং যৌনকর্মীদের ভূমিকাগুলো বিশ্লেষণ করেছিলেন দেখাতে যে কীভাবে নারীরা, তাদের কাজ ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে তাদের উৎকর্ষর সীমানা অতিক্রম করার বদলে শিশুর জন্ম ও প্রতিপালন, সংসার ও পুরুষের কামবাসনার যৌনপাত্র হয়ে একঘেয়ে জীবন বেছে নেয়। কারণ তিনি মনে করতেন অস্তিত্ববাদী বিশ্বাসে সবাই স্বাধীন (লিঙ্গ বিবেচ্য নয়), তিনি কখনোই দাবি করেননি যে পুরুষরা সফল হয়েছে নারীর স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে বা তাকে তার আত্মগত ধারণার সংশ্লিষ্টতায় শুধুমাত্র একটি বস্তুতে পরিণত করতে। বরং তাদের সব পরিস্থিতির মধ্যে স্বাধীন সত্তা থাকে। যদিও আমরা অবশ্য দাবি করতে পারব না অন্য অংশ বা আদার হিসাবে তার ভূমিকা অবশ্যই তার দোষ, তেমনি আমরা আরো বলতে পারব না তার এই অধীনস্থতার জন্য সে পুরোপুরিভাবে নির্দোষ। তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যাড ফেইথের প্রতি বহু সম্ভাব্য দৃষ্টিভঙ্গি আছে যেখানে পূর্বনির্মিত নানা মূল্যবোধ আর বিশ্বাস তার দায়িত্বকে এড়িয়ে যায় অস্তিত্ব। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করেন এমন বহু নারী একই কাজের জন্য অপরাধী এবং সেভাবেই তারা কোনো একটি উপায়ে নিজেদের পরাধীন করে রাখার প্রক্রিয়ায় ষড়যন্ত্রকারীদের সহায়ক হয়ে ওঠেন, কারণ এই পরিস্থিতি আপাত সুবিধা বহন করে আনে বলে তাদের মনে হয় এবং এটি যে দায়িত্বের প্রতিশ্রুতি দেয় সেখান থেকে মুক্তিও তারা অনুসন্ধান করেন।

বুভোয়া নারীদের বিশেষ কৃত্রিম অসত্য দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করেছিলেন। Narcissist, Woman in Love এবং The Mystic;, এই তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীরা তাদের স্বাধীনতার মূল চালিকাশক্তিটাকে অস্বীকার করে কোনো বস্তুতে সেটিকে নিমজ্জিত করার মাধ্যমে: প্রথম পরিস্থিতিতে বস্তুটি সে নিজেই, দ্বিতীয়টিতে, তার ভালাবাসার পাত্র, এবং তৃতীয়টিকে কোনো চূড়ান্ত কিছু অথবা ঈশ্বর। বুভোয়া তার কাজটি শেষ করেন বেশকিছু দাবি উত্থাপন করে যা নারীর মুক্তি ও তার স্বকীয়তাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্যে আবশ্যক। প্রথমত, তিনি দাবি করেন নারীদের অনুমতি দিতে সব ঝুঁকি, বিপদ আর অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও তার নিজের স্বাধীন কাজ দ্বারা নিজের উৎকর্ষের সীমা অতিক্রম করার প্রচেষ্টা করতে। এমনভাবে যে আধুনিক নারী, চিন্তায়, সিদ্ধান্তে, কাজে, সৃষ্টিতে পুরুষের সমান বলে দাবি করতে পারে। এবং পুরুষদের নিচু করার প্রচেষ্টার বদলে তিনি নিজেকে তাদের সমান হিসাবে ঘোষণা দেবেন। নারীদের সমতা নিশ্চিত করতে, তিনি সামাজিক কাঠোমো পরিবর্তন করার কথা বলেন, যেমন সর্বজনীন শিশু প্রতিপালন ব্যবস্থা, সমান শিক্ষা, জন্মনিরোধক এবং বৈধ গর্ভপাতের সুযোগ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, পুরুষের উপর থেকে নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি। বিবাহে যেকোনো প্রকৃত চয়েসের মতো, সক্রিয়ভাবে নির্বাচন করতে হবে সবসময় নয়তো সেটি হবে স্বাধীনতা থেকে পালিয়ে গতিহীন একটি প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটে চলা। নারীদের পুরুষদের মতো সব কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনায় সমান অধিকার থাকার দাবি করার বিষয়টি বুভোয়াকে প্রথাগত উদারনীতিবাদ ও নারীবাদের সেকেন্ড ওয়েভে জায়গা করে দিয়েছে। তিনি নারীর সমান অধিকার দাবি করে আইন, সামাজিক প্রথা, শিক্ষায় পরিবর্তন আনার দাবি করেছিলেন। তবে তার দ্য সেকেন্ড সেক্স মূলত ধারণ করে সেই মৌলিক অস্তি ত্ববাদী বিশ্বাসটি, যে প্রতিটি মানুষ, তাদের লিঙ্গ, শ্রেণী, বয়স নির্বিচারে অনুপ্রাণিত হতে হবে স্বাধীন হবার কারণে এর সাথে আসা ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করার জন্যে। এর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে শুধুমাত্র তাকালে চলবে না, বরং সেই পরিস্থিতিতে থাকা একক ব্যক্তির উপর নজর দিতে হবে যে তার অস্তিত্বের অস্পষ্টতার মধ্যে অস্তিত্বের সংগ্রামে লিপ্ত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *