অধ্যায় ৩৬ : বুহ!/ হুররে! – আলফ্রেড জুল (ফ্রেডি) আয়ার
কেউ কোনো অর্থহীন কথা বলছে কিনা সেটি যদি জানার কোনো উপায় থাকত খুব চমৎকার একটি ব্যাপার হতো তাই না? তাহলে আপনার আর বোকা বনে যাবার দরকার পড়ত না। আপনি সবকিছুকে পৃথক করতে পারতেন, যা-কিছু আপনি শুনেছেন বা পড়েছেন, সেখানে কোটি অর্থবহ আর কোন্গুলো অর্থহীন। কোনো অর্থহীন কিছুর পিছনে আপনার সময় অপচয় করার কোনোই দরকার পড়ত না। দার্শনিক এ. জে. আয়ার (১৯১০-১৯৮৯) অবশ্য বিশ্বাস করতেন তিনি একটি উপায় উদ্ভাবন করেছেন যা সেটি করতে পারে, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন Verification Principle (ভেরিফিকেশন প্রিন্সিপাল)। ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে ভিয়েনা সার্কেল নামে পরিচিত প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের একটি গোষ্ঠীর সাথে সম্মেলন শেষ করার পর তিনি অক্সফোর্ডে ফিরে এসেছিলেন, যেখানে তিনি দর্শনের প্রভাষক ছিলেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি একটি বই লিখেছিলেন যা ঘোষণা করেছিল দর্শনের ইতিহাসের বেশিরভাগ অংশই অর্থহীন সব ধারণায় পূর্ণ, কমবেশি মূল্যহীন, কোনো কাজেই যা আসবে না। ১৯৩৬ সালে তিনি সেই বইটি প্রকাশ করেন, Language, Truth and Logic, এটি সেই বিশেষ আন্দোলনের অংশ ছিল যা পরিচিত logical positivism, যে আন্দোলন বিজ্ঞানের জয়গান করেছিল মানুষের শ্রেষ্ঠতম একটি অর্জন হিসাবে। লজিকাল পজিটিভিজম আর লজিকাল এমপিরিসিজম, দুটোই তৈরি করেছিল neopositivism, পশ্চিমা দর্শনের যে-আন্দোলন চেষ্টা করেছিল দার্শনিক আলোচনাগুলোকে বৈধ করতে এটিকে এমপিরিকাল বিজ্ঞানের মাধ্যমে যাচাই করে দেখতে, যার মূলে ছিল verificationism; জ্ঞানের এই তত্ত্বটি দাবি করে শুধুমাত্র যে প্রস্তাবনাগুলো আমরা যাচাই করতে পারব এমপিরিকাল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে, শুধুমাত্র সেগুলোই কগনিটিভ বা অবধারণগতভাবে বা বোধের স্তরে অর্থবহ। উদ্দেশ্য ছিল দর্শনকে একটি নতুন বৈজ্ঞানিক দর্শনে রূপান্তর করা যা অস্পষ্ট ভাষা আর অপ্রমাণযোগ্য দাবির সংশয়গুলো ঝেড়ে ফেলে দিতে পারে। বার্লিন ও ভিয়েনা-ভিত্তিক দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞরা এটি প্রস্তাবনা করেছিলেন ১৯২০ দশকের শেষাংশে।
মেটাফিজিক্স বা অধিবিদ্যা হচ্ছে একটি শব্দ যা ব্যবহার করা হয় এমন কোনো বাস্তবতাকে অধ্যয়নের ক্ষেত্র হিসাবে যে-বাস্তবতাগুলোর অবস্থান আমাদের ইন্দ্রিয়ানুভূতির সীমানার বাইরে, এমনকিছু যা কান্ট, শোপেনহাউয়ার আর হেগেল বিশ্বাস করতেন। আয়ারের জন্য অবশ্য মেটাফিজিক্স ছিল নোংরা শব্দ। তিনি এর বিরুদ্ধে ছিলেন। আয়ারের আগ্রহ ছিল যুক্তি অথবা আমাদের ইন্দ্রিয়ানুভূতি দিয়ে জানা যায় সেইসব বিষয়গুলোর প্রতি। কিন্তু মেটাফিজিক্স প্রায়ই সাধারণ বোধের সীমানা অতিক্রম করে সেই বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে, যা আমরা বৈজ্ঞানিক বা যৌক্তিক ধারণা দিয়ে অনুসন্ধান করতে পারি না। কিন্তু আয়ার মনে করতেন, এর মানে হচ্ছে, এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই, এটি তাই বর্জন করা উচিত। বিস্ময়কর নয় Language, Truth and Logic অনেককেই ক্ষুব্ধ করেছিল। অক্সফোর্ডের অধিকাংশ প্রবীণ দার্শনিক এটি একদম পছন্দ করেননি, আয়ারের জন্য চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল পরে। কিন্তু প্রথাগত চিন্তাকে নাড়া দেয়ার কাজটি দার্শনিকরা করছেন হাজার বছর ধরেই, যে-প্রথাটি শুরু হয়েছিল সক্রেটিসের সাথে। এখনও বিখ্যাত দার্শনিকদের লেখা সরাসরি আক্রমণ করে বই লেখাকে বেশ সাহসী কাজ হিসাবে মনে করা হয়।
কোনো একটি বাক্য অর্থপূর্ণ, না অর্থহীন সেটি বোঝার জন্য আয়ার-এর উপায় হচ্ছে এমন: যে-কোনো একটি বাক্য নিন এবং দুটি প্রশ্ন করুন:
(১) সংজ্ঞানুযায়ী কি এটি সত্য?
(২) এটি কি এমপিরিকালি বা পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণযোগ্য?
আর যদি এটি কোনোটাই না হয় তাহলে এটি অর্থহীন। এটাই তার অর্থপূর্ণতা যাচাই করার দ্বিমুখী পরীক্ষা। শুধুমাত্র সেই প্রস্তাবনাগুলো যা সংজ্ঞানুযায়ী সত্য অথবা পরীক্ষা অথবা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণযোগ্য সেগুলো দার্শনিকদের কাজে আসতে পারে। কিছুটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে এখানে। সংজ্ঞানুযায়ী কোনোকিছু সত্য এমন বাক্যের উদাহরণ, যেমন All ostriches are birds (সব অস্ট্রিচরাই পাখি) বা All brothers are male (সব ভাইরাই পুরুষ)। ইমানুয়েল কান্টের ভাষায় এগুলো হচ্ছে অ্যানালিটিক স্টেটমেন্ট (analytic statements), আপনার প্রয়োজন নেই অনুসন্ধান করা যে অস্ট্রিচরা সব পাখি কিনা, কারণ সেটা অস্ট্রিচদের সংজ্ঞার অংশ। এবং অবশ্যই আমাদের কোনো নারী ভাই থাকতে পারে না, আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে কেউ সেটা কখনো আবিষ্কার করতে পারবে না, যদি-না কোনো একটি পর্যায়ে তাদের লিঙ্গ পরিবর্তিত হয়। সে বাক্যগুলো সত্যি সংজ্ঞানুযায়ী তারা যে-শব্দগুলো আমরা ব্যবহার করছি সেই শব্দটি কী বোঝাচ্ছে তা বের করে আনে। কোনো একটি পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রমাণযোগ্য বাক্য (কান্টের ভাষায় সিনথেটিক স্টেটমেন্ট), এর ব্যতিক্রম, আমাদের সত্যিকারের জ্ঞান প্রদান করতে পারে। কোনো একটি বাক্যকে এভাবে প্রমাণযোগ্য হতে হলে কোনো পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ থাকতে হবে, যা কিনা দেখাতে পারে এটি সত্য না মিথ্যা। যেমন যদি কেউ বলেন ‘সব ডলফিন মাছ খায়’, আমরা কিছু ডলফিন নিয়ে তাদের মাছ খেতে দিয়ে দেখতে পারি তারা সেগুলো খায় কিনা। আমরা যদি একটি ডলফিন আবিষ্কার করি যা কখনোই মাছ খায় না, তাহলে আমরা জানব যে এই বাক্যটি মিথ্যা। সেটি তারপরও প্রমাণযোগ্য বাক্য হবে আয়ারের মতে, কারণ তিনি verifiable শব্দটি দুটি অর্থেই বুঝিয়েছেন, verifiable আর falsifiable; এমপিরিকালি প্রমাণযোগ্য বাক্য হচ্ছে সব factual statements, এই পৃথিবী যেমন তারা সেই পৃথিবীর ব্যাপারে কথা বলছে। অবশ্যই কোনো উদাহরণ থাকতে পারে যা এটিকে সমর্থন বা মিথ্যা প্রমাণ করে। বিজ্ঞান হচ্ছে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্যে আমাদের হাতে আছে এমন সবচেয়ে সেরা উপায়।
যদি কোনো বাক্য সংজ্ঞানুযায়ী সত্য কিংবা পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণযোগ্য না হয় (মিথ্যা প্রমাণ), তাহলে সেটি আয়ার দাবি করেন অর্থহীন। ব্যাপারটা ঠিক এরকমই স্পষ্ট। আয়ারের দর্শনের এই অংশটি ধার করা হয়েছে ডেভিড হিউমের কাছ থেকে। হিউম অর্ধেক গুরুত্বের সাথে প্রস্তাব করেছিলেন যে, আমাদের সব দর্শনের বই পুড়িয়ে ফেলা উচিত যারা এই পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি, কারণ সেখানে মায়া আর কূটতর্ক ছাড়া আর কিছুই নেই। হিউমের ধারণাগুলোর উপর আয়ার নতুন করে কাজ করেছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রেক্ষাপটে। সুতরাং যদি আমরা এই বাক্যটি নিই : Some philosophers have beards (কিছু দার্শনিকদের দাড়ি আছে), এটা বেশ স্পষ্টই সংজ্ঞানুযায়ী সত্য নয়, কারণ একটি দার্শনিক সংজ্ঞার এটি অংশ নয় যে তাদের কারো কারো অবশ্যই দাড়ি থাকতে হবে। কিন্তু এটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণযোগ্য, কারণ এটি হচ্ছে এমন কিছু যা আমরা যদি চাই প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারব। আমাদের শুধু বেশকিছু দার্শনিকদের দিকে তাকাতে হবে। আমরা যদি এমন কিছু দার্শনিক পাই যাদের দাড়ি আছে, যেমন খুবই সম্ভাবনা আছে তেমন কিছু পাবার, তাহলে আমরা উপসংহারে আসতে পারি এই বাক্যটি সত্যি। অথবা যদি, বহু শত দার্শনিকদের দিকে তাকিয়ে আমরা যদি একজনকেও না পাই দাড়িসহ, তাহলে উপসংহারে আসতে পারি ‘কিছু দার্শনিকদের দাড়ি আছে’ বাক্যটি সম্ভবত মিথ্যা, যদিও আমরা নিশ্চিত না পৃথিবীর সব দার্শনিককে পরীক্ষা করে দেখার আগ অবধি। সত্য অথবা মিথ্যা, যে- কোনোভাবেই এই বাক্যটি অর্থপূর্ণ। এবার এটাকে তুলনা করুন এমন কোনো বাক্যের সাথে My room is full of invisible angels that leave no trace (আমার ঘর ভর্তি অদৃশ্য ফেরেস্তদারা আছে যারা তাদের উপস্থিতির কোনো চিহ্নই রেখে যায়না); সেটিও সংজ্ঞানুযায়ী সত্য নয়। কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে কি সেটি প্রমাণ করা যেতে পারে? মনে হতে পারে যে প্রমাণ করা যেতে পারে না। এইসব অদৃশ্য চরিত্রগুলোকে কল্পনাযোগ্য কোনো উপায় নেই শনাক্ত করার যদি তারা আসলেই তাদের অস্তিত্বের কোনো চিহ্ন না রাখে। আপনি তাদের ছুঁতে পারবেন না, গন্ধ পাবেন না, তাদের পায়ের ছাপ নেই, তারা কোনো শব্দ করেনা। সুতরাং বাক্যটি অর্থহীন ছাড়া আর কিছু না, যদিও এটি দেখলে মনে হয়, এর কোনো অর্থ হতে পারে। এটি ব্যাকরণগতভাবে শুদ্ধ একটি বাক্য, কিন্তু পৃথিবী সম্বন্ধে কোনো প্রস্তাবনা হিসাবে, এটা না সত্য না মিথ্যা, এটি আসলেই অর্থহীন। এটি বুঝতে বেশ কঠিন মনে হতে পারে। My room is full of invisible angels that leave no trace মনে হয় কিছু বোঝাচ্ছে। কিন্তু আয়ারের মূল বক্তব্যটি ছিল, এটি মানবজ্ঞানে কোনো অবদান রাখছে না, যদিও এটা শুনতে কাব্যিক মনে হতে পারে অথবা কোনো কাহিনি নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারে।
আয়ার শুধু মেটাফিজিক্সকে আক্রমণই করেনি: নৈতিকতা ও ধর্ম দুটোই তার আক্রমণের নিশানা ছিল। যেমন, তার একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জিং উপসংহার ছিল যে নৈতিক বিচারিক প্রক্রিয়া আক্ষরিকভাবে অর্থহীন। মনে হতে পারে খুবই অদ্ভুত একটি প্রস্তাবনা। কিন্তু পরিণতি এমনই হয় যদি আপনি কোনো নৈতিক প্রস্তাবনার উপর তার দ্বিমুখী পরীক্ষার আক্রমণ চালান।আপনি যদি বলেন Torture is wrong, আপনি যা করছেন, তিনি ভাবতেন, তাহলো এমন কিছু বলার সমতুল্য Torture, boo! আপনি বিষয়টি সম্বন্ধে আপনার ব্যক্তিগত আবেগগুলো প্রকাশ করছেন, এমন কোনো প্রস্তাবনা করার বদলে, যা সত্যি কিংবা মিথ্যা হতে পারে। এর কারণ Torture is wrong সংজ্ঞানুযায়ী সত্যি নয়। এছাড়া এমনকিছু নয় যা আমরা কখনোই সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারব একটি প্রস্তাবনা হিসাবে। কোনো পরীক্ষা নেই যা আপনি করতে পারেন, যা দিয়ে বিষয়টি নিয়ে কোনো উপসংহারে পৌছাতে পারবেন। তিনি বিশ্বাস করতেন এটি এমনকিছু যা উপযোগবাদীরা, যেমন জেরেমি বেনথাম ও জন স্টুয়ার্ট মিল হয়তো বিতর্ক করতেন, কারণ হয়তো এর ফলে সৃষ্ট আনন্দের মাত্রা দিয়ে তারা এটি পরিমাপ করতে পারতেন। সেকারণে, আয়ারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এটি পুরোপুরিভাবে অর্থহীন এমনকিছু বলা যে Torture is wrong, কারণ এটি এমন একধরনের বাক্য যা কোনোদিনও সত্যি কিংবা মিথ্যা প্রমাণিত হবে না। আপনি যখন বলবেন Compassion is good, আপনি যা করছেন তা হলে আপনি যা অনুভব করছেন সেটাই প্রকাশ করছেন, এটি হচ্ছে এমন কিছু বলারমতো Compassion, Hooray, বিস্ময়কর নয়, আয়ারের নৈতিকতার তত্ত্ব, যা পরিচিত emotivism নামে, সেটিকে প্রায়শই বর্ণনা করা হয় Boo! /Hooray! তত্ত্ব হিসাবে। কিছু মানুষ মনে করেন যে আয়ার হয়তো বলতে চাইছেন নৈতিকতার কোনো ভূমিকা নেই, এবং আপনি যা- কিছু বাছাই করতে পারবেন আপনার ইচ্ছামতো করার জন্য। কিন্তু তিনি আসলেই সেটা বোঝাতে চাননি। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে আমরা কোনো অর্থবহ আলোচনা করতে পারব না মূল্যবোধ হিসাবে তাদের আলোচনায় প্রবেশ করিয়ে। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করতেন আমাদের কী করা উচিত সেই সংক্রান্ত বেশিরভাগ বিতর্কে, যেখানে বাস্তব সত্য আলোচনা করা হয়েছে এবং সেগুলো পরীক্ষা কিংবা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণযোগ্য।
Language, Truth and Logic বইটির আরেকটি অধ্যায়ে, আয়ার সেই ধারণাগুলোকে আক্রমণ করেছিলেন যা দাবি করে ঈশ্বর নিয়ে আমরা অর্থবহ কোনো আলোচনা করতে পারি। তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে God exists বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে এই প্রস্তাবনাটি যেমন সত্য না, তেমনি মিথ্যাও না। আবারো, তিনি অনুভব করেছিলেন আক্ষরিক অর্থহীনতার বিষয়টিকে। এর কারণ এটি সত্য না সংজ্ঞানুযায়ী (যদি কিছু মানুষ, সেইন্ট আনসেল্মকে অনুসরণ করে অনটোলজিকাল যুক্তি ব্যবহার করে দাবি করেছিলেন, আবশ্যিকভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকতে হবে); এবং এমন কোনো পরীক্ষা নেই যা দিয়ে আপনি তার অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা প্রমাণ করতে পারবেন, কারণ তিনি ডিজাইন থেকে নেয়া আর্গুমেন্টটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সুতরাং আয়ার একজন ঈশ্বরবাদীও (যিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন) না অথবা একজন নিরীশ্বরবাদীও (যিনি বিশ্বাস করেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই) না। বরং তিনি ভাবতেন God exists হচ্ছে ঐসব অর্থহীন বাক্যগুলোর আরো একটি। কিছু মানুষ এই অবস্থানের নামকরণ করেছেন igtheism, সুতরাং আয়ার একজন igtheist, সেই বিশেষ শ্রেণির মানুষ যারা ভাবেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই সেই বিষয়ে সব আলোচনাই পুরোপুরি অর্থহীন। তাসত্ত্বেও, আয়ার তার জীবনের প্রায় শেষদিকে একটি বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন, যখন তার একটি প্রায়-মৃত্যু-নিকটবর্তী অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যখন খাবার সময় মাছের একটি কাঁটা তার শ্বাসনালিতে ঢুকে তার প্রায় শ্বাসরোধ করে ফেলেছিল, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। প্রায় চার মিনিটের জন্য তার হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়েছিল, সেই সময় তিনি একটি লাল আলো, দুজন কথোপকথনরত মাস্টার অব ইউনিভার্সের একটি সুস্পষ্ট ভিশন দেখেছিলেন। এই ভিশনটি তাকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করায়নি, বরং এটি তাকে প্ররোচিত করেছিল মৃত্যুর পর মানুষের মন কিংবা চেতনা টিকে থাকতে পারে কিনা এই বিষয়ে তার একটি নিশ্চিত ধারণাকে প্রশ্ন করতে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আয়ারের লজিক্যাল পজিটিভিজম নিজেই তার ধ্বংসের জন্যে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল প্রতিপক্ষের হাতে। মনে করা হয় তত্ত্বটি নিজেই তার নিজের বানানো পরীক্ষাটি পাস করাতে পারেনি। প্রথমত, খুব সুস্পষ্ট নয় যে সংজ্ঞানুযায়ী তত্ত্বটি সত্য; দ্বিতীয়ত, এমন কোনো পর্যবেক্ষণ নেই যা এটি সত্য কিংবা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবে। সুতরাং এর নিজের মানদণ্ডে এটি অর্থহীন। যারা দর্শনে আগ্রহী হয়েছেন তাদের জীবন কীভাবে কাটানো উচিত সেই সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে, তাদের জন্য আয়ারের দর্শনের তেমন উপকারিতা নেই।