ঋগ্বেদ ১০।০৮৭

ঋগ্বেদ ১০।০৮৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৮৭
রাক্ষসনিধনকারী অগ্নি দেবতা। পাযু ঋষি।

১। রাক্ষসনিধনকারী বলবান্ সুবিস্তারিত বন্ধুস্বরূপ অগ্নিকে আহুতিযুক্ত করিতেছি। গৃহে গমন করিতেছি। অগ্নি যজ্ঞ সহযোগে তীক্ষ্ণ ও প্রজ্জ্বলিত হইয়া দিবারাত্র আমাদিগকে শত্রুদিগের হস্ত হইতে রক্ষা করুন(১)।

২। হে জাতবেদা! লৌহের ন্যায় দৃঢ় দণ্ড ধারণপূর্বক রাক্ষসদিগকে শিখাদ্বারা স্পর্শ কর। প্রজ্বলিত হইয়া জিহ্বাদ্বারা মূঢ়দেবতা, অর্থাৎ অপ দেবতাদিগকে আক্রমণ কর। মাংসভোজী রাক্ষসদিগকে ছেদন করিয়া মুখ মধ্যে ধারণপূর্বক চর্বণ কর ।

৩। হে দন্তদ্বয়ধারী অগ্নি! হিংসাশীল ও তীক্ষ্ণ হইয়া দুই দিকেই দন্ত বসাইয়া দাও। হে শোভাময়! আকাশে উঠিয়া যাও। রাক্ষসদিগকে আক্ৰমণদ্বার তাড়না কর।

৪। হে অগ্নি! যজ্ঞদ্বারা বাণগুলিকে নত করিয়া এবং বাণের অগ্রভাগ বজ্ৰদ্বারা সংযুক্ত করিয়া ঐ সকল অস্ত্রদ্বারা রাক্ষসদিগের হৃদয়ে আঘাত কর, উহাদিগের পার্শদ্বয়বৰ্ত্তী বাহু সকল ভঙ্গ করিয়া দাও।

৫। হে অগ্নি! রাক্ষসের চর্ম বিদীর্ণ কর। প্রাণবধকারী বজ্র শীঘ্র উহাকে নিধন করুক। হে জাতবেদা! উহার ভিন্ন ভিন্ন দেহসন্ধি ছেদন কর। চ্ছেদন করা হইলে মাংসাশী, পশুমাংস লোভী হইয়া উহার নিকটে গমন করুক।

৬। হে জাতবেদা অগ্নি! যেখানেই তুমি রাক্ষসকে দেখ, সে দণ্ডায় মান থাকুক, অথবা ইতস্তত বিচরণ করুক, আকাশে থাকুক, অথবা পথে গমন করুক, তুমি তীক্ষ্ণবাণ ক্ষেপণপূর্বক তাহাকে বিদ্ধ কর।

৭। হে জাতবেদা! আক্রমণকারী রাক্ষসের হস্ত হইতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঋষ্টিনামক অস্ত্রধারা রক্ষা কর। হে অগ্নি! উজ্জ্বল মূর্তি ধারণ করিয়া সর্বাগ্রে আমমাংসভোজীদিগকে বধ কর । এই সকল পক্ষী তাহাকে ভোজন করুক।

৮। হে অগ্নি! বলিয়া দাও, কোন রাক্ষস এই যজ্ঞের বিঘ্ন করিতেছে, হে অভিযুবা অগ্নি! কাষ্ঠদ্বারা প্রজ্বলিত হইয়া তুমি সেই রাক্ষসকে আক্রমণ কর। তুমি মনুষ্যদিগের উপর তোমার কৃপাময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া থাক, সেই দৃষ্টিতে ঐ রাক্ষসকে দমন কর।

৯। হে অগ্নি! তোমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিদ্বারা এই যজ্ঞ রক্ষা কর, এই যজ্ঞ ধনের অনুকূল; হে শুভ চিত্রধারী! এই যজ্ঞ সম্পন্ন কর। হে মনুষ্য দর্শনকারী! তুমি উজ্জ্বল হইয়া রাক্ষসদগকে নিধন কর, তোমাকে যেন রাক্ষসেরা পরাভব করিতে না পারে।

১০। হে মনুষ্য দর্শনকারী! রাক্ষসদিগের বিষয়ে সতর্ক হও, মনুষ্যদিগকে দৃষ্টি কর। রাক্ষসের তিন মন্তক হেন কর। শীঘ্র উহার পার্শ্ব দেশ ছেদন কর। ঐ রাক্ষসের তিনটি চরণ ছেদন কর।

১১। হে অগ্নি! যে রাক্ষস অসত্যদ্বারা সত্যকে নষ্ট করে, সেই রাক্ষস তিনবার তোমার বন্ধনসীমার মধ্যে আগমন করুক, অর্থাৎ দগ্ধ হউক! হে জাতদেবা! শিখাদ্বারা তাহাকে স্পর্শ করিয়া স্তবকারীর সমীপেই ইহাকে ভাঙ্গিয়া ফেল।

১২। রাক্ষস খুরতুল্য নখের ঘা সাধুদিগকে আঘাত করে, সেই রাক্ষসের প্রতি তুমি দৃষ্টি প্রয়োগ করিয়া থাক, শব্দদ্বারা রাক্ষসের প্রতি এক্ষণে সেই দৃষ্টি প্রয়োগ কর। অথর্ব নামক ঋষির ন্যায় তুমি সত্য ধ্বংসকারী নির্বোধকে দিব্য তেলের দ্বারা দগ্ধ করিয়া ফেল।

১৩। হে অগ্নি! দেখ, স্ত্রীপুরুষে পরম্পর গালি দিতেছে, দেখ চীৎকার করিতে করিতে কটু কথা কহিতেছে। অতএব মনে ক্রোধোদয় হইলে যে বাণ ক্ষেপণ করা হয়, তারা রাক্ষসদিগের হৃদয় বিদ্ধ কর, কারণ ঐ সকল কটু কথা প্রয়োগ করা রাক্ষসদিগের প্রবর্তনাতে ঘটে।

১৪। উত্তাপের দ্বারা রাক্ষসদিগকে বধ কর; হে অগ্নি! বলের দ্বারা রাক্ষসকে নিধন কর। শিখাদ্বারা সেই মূঢ় নির্বোধ অপদেবতাদিগকে ধবংস কর, উজ্জ্বল হইয়া সেই প্রাণসংহারকারীদিগকে নষ্ট কর।

১৫। দেবতাগণ অন্য পাপ নষ্ট করিয়া দিন। অতি বিরস দুৰ্বাক্য সকল সেই রাক্ষসের দিকে গমন করুক। বাণগণ সেই বাক্যচোর, অর্থাৎ মিথ্যাবাদী ব্যাক্ষসকে মৰ্ম্মস্থানে আনীত করুক। রাক্ষস বিশ্বব্যাপী অগ্নির বন্ধনে পতিত হউক।

১৬। যে রাক্ষস নরমাংস সংগ্রহ করে, অথবা অশ্ব প্রভৃতি পশুদিগের মাংস সংগ্রহ করে, যে হত্যা করিবার অযোগ্য গাভীর দুগ্ধ হরণ করে, হে অগ্নি নিজ বলে তাহাদিগের মস্তক ছেদন করিয়া দাও।

১৭। গাভীর যে দুগ্ধ এক বৎসর ধরিয়া সঞ্চয় হয়, হে মনুষ্য দর্শনকারী অগ্নি! রাক্ষস যেন সেই দুগ্ধ পান না করে। হে অগ্নি! যে রাক্ষস সেই অমৃত তুল্য দুগ্ধপানের প্রয়াসী হয়, সে পুনরাবর্তী হইলে শিখাদ্ধারা তাহার মর্ম বিদ্ধ কর।

১৮। রাক্ষসগণ গাভীদিগের যে দুগ্ধ পান করে, উহা যেন তাহাদিগের বিষতুল্য হয়, সেই দুষ্টাশয়দিগকে ছেদন করিয়া অদিতির নিকট বলিদান দাও। সূৰ্য্যদেব ইহাদিগকে উচ্ছিন্ন করুন। তৃণলতাদির যেঅসার পরিত্যজ্য অংশ আছে, রাক্ষসেরা তাহাই গ্রহণ করুক।

১৯। হে অগ্নি! ক্রমাগত রাক্ষসদিগকে মারিয়া ফেল, যুদ্ধে রাক্ষসেরা যেন তোমার উপর জয়ী না হয়, আমমাংসভোজী রাক্ষসদিগকে সমূলে ধবংস কর, তাহারা যেন তোমার দিব্য অস্ত্র হইতে মুক্তি লাভ না করে।

২০। হে অগ্নি! তুমি আমাদিগকে দক্ষিণে, উত্তরে, পশ্চিমে ও পূর্বে রক্ষা কর। তোমার অতি উজ্জ্বল, অবিনাশী, অতি উত্তপ্ত শিখা আছে, তাহারা পাপাত্মা রাক্ষসকে ভস্মীভূত করুক।

২১। হে দীপ্ত অগ্নি! তুমি কবি, অর্থাৎ কাৰ্য্যকুশল, অতএব ক্রিয়া কৌশলের দ্বারা আমাদিগের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম রক্ষা কর। হে বন্ধু অগ্নি! আমি তোমার সখা, তোমার জরা নাই, কিন্তু আমি যেন দীর্ঘ আয়ু ও বৃদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত হই। তুমি অমর, আমরা মৃত্যুশীল, আমাদিগকে রক্ষা কর।

২২। হে অগ্নি! বলের পূরণকর্তা, বুদ্ধিমান, তোমার মুর্তি দেখিলেই ভীত হইতে হয়, তুমি নিত্য নিত্য রাক্ষসদিগকে বধ কর, তোমাকে বিশিষ্ট রূপে ধ্যান করি।

২৩। হে অগ্নি! বিঘ্নকারী রাক্ষসদিগকে বিষের যারা, তীক্ষ্ণ শিখার দ্বারা এবং ঋষ্টি নামক উত্তপ্ত অস্ত্রের দ্ব: দগ্ধ কর।

২৪। হে অগ্নি! যে রাক্ষসগণ স্ত্রীপুরুষে কোথায় কি আছে, দেখিয়া বেড়ায়, তাহাদিগকে দগ্ধ কর। হে বুদ্ধিমান! তুমি দুর্ধর্ষ, তোমাকে আমি স্তবের দ্বারা উত্তেজিত করিতেছি, তুমি জাগ্রত হও।

২৫। হে অগ্নি! তোমার নিজ তেজের দ্বারা রাক্ষসের তেজঃ সর্বত্র নষ্ট করিয়া দাও, যাতুধান রাক্ষসের বল বীৰ্য ভাঙ্গিয়া দাও।

————

(১) এ সূক্তটী সমস্তই রাক্ষসদিগের বধ সম্বন্ধে। রাক্ষসগণ আমমাংস খায়, গরুর দুগ্ধ চুরি করে, আকাশ পৃখিবীতে বিচরণ করে, মনুষ্যের হানি করে, এইরূপ বিশ্বাস ছিল।