ঋগ্বেদ ০৯।০৬২

ঋগ্বেদ ০৯।০৬২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৬২
পবমান সোম দেবতা। জমদগ্নি ঋষি।

১। এই দেখ সোমরসগুলি সমস্ত সৌভাগ্য আমাদিগকে দিবেন বলিয়া পবিত্রের নিকট শীঘ্র শীঘ্র উৎপাদিত হইতেছেন।

২। এই সকল অতি তেজস্বী সোমরস যাবতীয় দুষ্কর্ম নষ্ট করিতেছেন, আমাদিগকে সন্তান সন্ততি ও অশ্ব দিতে মনস্থ করিয়াছেন এবং আমাদিগকে চমৎকার বস্ত্রাদি দিতেছেন।

৩। এই সকল সোমরস আমাদিগের নিমিত্ত এবং গোধনের নিমিত্ত চমৎকার অন্নবিধান করিতে করিতে আমাদিগের স্তুতিবাক্য গ্রহণ করিতেছেন।

৪। পর্বতোৎপন্ন সোম আনন্দের জন্য নিষ্পীড়িত হইলেন এবং জলমধ্যে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইলেন। শ্যেনপক্ষীর ন্যায় দ্রুতবেগে আপন স্থানে গিয়া উপবেশন করিলেন (১)।

৫। যে নিৰ্ম্মল খাদ্যদ্রব্যকে দেবতারা প্রার্থনা করেন, তিনি সোম, পথ প্রদর্শনকারী ঋত্বিকেরা তাহাকে নিষ্পীড়নপূর্বক জলে শোধন করেন, যজ্ঞ শেষে গোধন তাহার আস্বাদন গ্রহণ করেন।

৬। অনন্তর অনুষ্ঠানকর্তা ঋত্বিকের যজ্ঞস্থলে সেই সোমের আনন্দকর রসকে অমরত্ব লাভের জন্য সুশোভিত করেন; যেমন লোকে ঘোটককে সুশোভিত করিয়া থাকে।

৭। হে সোম! তোমার যে সমস্ত সুরস ধারা উপদ্রব নিবারণের জন্য উৎপাদিত হইয়াছে, তৎসহকারে পবিত্রে যাইয়া উপবেশন কর ।

৮। হে সোম! তুমি মেষলোমের মধ্য দিয়া নির্গত হইয়া ইন্দ্রের পানের জন্য পাত্রে পাত্রে যাইয়া স্থান গ্রহণ কর।

৯। হে সোম! তুমি অতি সুস্বাদু হইয়া ক্ষরিত হও। অঙ্গিরার সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম সামগ্রী ও ঘৃত দুগ্ধ আহরণ করিয়া দাও।

১০। এই দেখ বহুদর্শী সোমরস পাত্রে স্থাপিত হইয়াছেন, ক্ষরিত হইতেছেন এবং জলমধ্যস্থ খাদ্যদ্রব্যকে আন্দোলিত করিয়া আপনার সন্নিধান জানাইয়া দিতেছেন।

১১। এই যে সোম, ইনি ধন বর্ষণকারী, তাহাই ইহার একমাত্র কাৰ্য্য, ইনি রাক্ষসদিগকে সংহার করেন এবং দাতা ব্যক্তিকে অশেষ ধন দিয়া থাকেন।

১২। হে সোম! তুমি অতি প্রচুর ধন ক্ষরণ করিয়া দাও। গো, অশ্ব সকলি দাও। এমন ধন দাও, যাহাতে সকলের উল্লাস হয়, যাহা সকলেই পাইতে বাঞ্ছা করে।

১৩। এই দেখ, মনুষ্যেরা সোমকে সেচন করিতেছেন, ইহাকে শোধন করা হইতেছে, ইহার যশ গান করা হইতেছে, কারণ ইনি অত্যন্ত কার্যক্ষম।

১৪। এই সোম অশেষ প্রকারে রক্ষা করেন, বিস্তর ধন দান করেন, ইনি লোকের নির্মাণ কর্তা, ইহার ক্রিয়াশক্তি অদ্ভুত, ইনি আনন্দের বিধাতা; ইলের জন্য ক্ষরিত হইতেছেন।

১৫। এই সোম জন্ম গ্রহণপূর্বক নানা স্তুতিবাক্য লাভ করিয়া ইন্দ্রের পানের জন্য যেরূপ পক্ষী আপন কুলায়ে স্থান গ্রহণ করে, সেইরূপ যথাযোগ্য পাত্রে সংস্থাপিত হইতেছেন।

১৬। যখন পথ প্রদর্শনকারী ঋত্বিকগণ সোমকে নিষ্পীড়িত করেন, তিনি পাত্রে পাত্রে উপবেশন করতঃ যেন রণভূমিতে প্রবল বেগে অগ্রসর হইতে থাকেন।

১৭। ঋত্বিকগণ সেই সোমকে ঋষিদিগের রথে ঘোটকের ন্যায় যোজনা করিতেছেন; সেই রথের তিন পৃষ্ঠ, তিন স্থান উন্নত, সপ্তছন্দ তাহার রজ্জু। এই রূপ রথে যোজনা করিলে দেবতাদিগের নিকট যাওয়া যায়(২)।

১৮। হে সোম নিষ্পীড়নকারিগণ! সেই সোম দ্রুতগামী অশ্ববৎ, তিনি ধন স্পর্শ করেন, অর্থাৎ আনিয়া দেন; যুদ্ধে যাইবার জন্য তাঁহাকে সজ্জিত কর।

১৯। সোম নিষ্পীড়িত হইয়া কলসের মধ্যে যাইতেছেন, সৰ্ব্বপ্রকার সৌভাগ্যলক্ষ্মী আমাদিগকে আনিয়া দিতেছেন এবং বিপক্ষে গোযুথ মধ্যে বীরের ন্যায় দণ্ডায়মান হইয়াছেন।

২০। হে সোম! মনুষ্যগণ তোমার সেই মধুময় রসের গুণ কীর্তন করিতে করিতে দেবতাদিগের আনন্দ বর্ধন করিবার জন্য দোহন করিতেছেন।

২১। দেবতারা যাহার নাম শুনিতে ভাল বাসেন, যাহার আস্বাদন অতি মধুর, হে ঋত্বিকগণ! সেই সোমরসকে দেবতাদিগের নিমিত্ত পবিত্রের উপর রাখিয়া দাও।

২২। ঋত্বিকগণ এই সকল সোমরস উৎপাদন করিয়াছেন, ইহাদের গুণ কীৰ্ত্তন হইতেছে, ইহারা প্রচুর অন্ন বিতরণ করিবে, ইহাদিগের শক্তি অতি চমৎকার ও আনন্দপ্রদ।

২৩। হে সোম! যে তুমি শোধন কালে গব্য ক্ষীরাদির সহিত মিশ্রিত হইয়া ভক্ষণের উপযোগী হইয়া থাক, সেই তুমি এক্ষণে অন্নদান করিতে করিতে ক্ষরিত হও।

২৪। হে সোম। আমি জমদগ্নি, তোমার স্তব করিতেছি। তুমি আমাদিগকে সর্বপ্রকার প্রশস্ত খাদ্যদ্রব্য ও গোধন আহরণ করিয়া দাও।

২৫। হে সোম! তুমি শ্রেষ্ঠ বস্তু। যেমন আমরা তোমার স্তুতিবাক্য উচ্চারণ করি, যেমন আমরা নানাবিধ কবিতা তোমার বিষয়ে রচনা করি, তেমনি তুমি ক্ষরিত হও।

২৬। হে সোম! তুমি শ্রেষ্ঠ, তুমি ব্ৰহ্মাণ্ডকে কাঁপাইয়া থাক। তুমি আমাদিগের স্তুতিবাক্য গ্রহণপূর্বক আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করিয়া দাও।

২৭। হে সোম! তোমার মহিমাতেই এই সকল ভুবন সুস্থির হইয়া আছে। এই সমস্ত নদী তোমার দিকেই ধাবিত হইতেছে।

২৮। যেমন স্বর্গের বৃষ্টি অবাধে পতিত হয়, তদ্রুপ, হে সোম! তোমার ধারা সমস্ত শুক্লবর্ণ পবিত্রের দিকে ধাবিত হইতেছে।

২৯। তোমরা ইন্দ্রের নিমিত্ত প্রচুর পরিমাণ সোম প্রস্তুত কর, কারণ ইহার দ্বারা বলের পুষ্টি, ধনের লাভ এবং আহারের আহরণ হইয়া থাকে।

৩০। বিবিধ কাৰ্য্যোপযোগী সত্যস্বভাব সোম ক্ষরিত হইতে হইতে পবিত্রে গিয়া বসিলেন এবং স্তবকর্তা ব্যক্তিকে বলবীৰ্য্য দিতে লাগিলেন।

————

(১) সোমরস পাত্রে ঢালার সহিত ও শ্যেনপক্ষীর উড়িয়া আসার সহিত, অনেক স্থানে তুলনা করা হইয়াছে। এইরূপ উপমা হইতে কি শ্যেনপক্ষীকর্তৃক সোম আহরণ সম্বন্ধীয় বৈদিক উপাখ্যান উৎপন্ন হইয়াছে? এই সুক্তের ১৫ ঋক দেখ।

(২) সায়ণ বলেন, তিন পৃষ্ঠ বলিতে তিন বার নিষ্পীড়ন অর্থাৎ চোয়ান। আর তিন স্থান উন্নত ইহার অর্থ তিন বেদ।