ঋগ্বেদ ০৯।০৬৯

ঋগ্বেদ ০৯।০৬৯
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৬৯
পবমান সোম দেবতা। হিরণ্যস্তব ঋষি।

১। যেরূপ ধনুকের সহিত বাণের যোজনা করা হয়, তদ্রুপ ইন্দ্রের উদ্দেশে আমরা স্তুতিবাক্য যোজনা করিতেছি। যেরূপ বৎস মাতার স্তনের সহিত সংসৃষ্ট হয়, তদ্রুপ ইন্দ্রের সহিত আমরা সোমরস সংসৃষ্ট করিতেছি। যেরূপ প্রচুর দুগ্ধধারা দিতে দিতে গাভী সম্মুখে আসে, তদ্রুপ ইন্দ্র আসিতেছেন। ইন্দ্রের সময়ও সোমরস দেওয়া হইয়া থাকে।

২। ইন্দ্রের উদ্দেশে স্তুতিবাক্য যোজনা করা হইতেছে, আনন্দকর সোম সেচন করা হইতেছে, তাঁহার মুখ মধ্যে সোমরসের আনন্দকর ধারা ঢালিয়া দেওয়া হইতেছে। এই সোমরস ক্ষরিত হইয়া চতুর্দিকে বিস্তৃত হন এবং যেমন উত্তম ধনুর্ধারীর হস্ত হইতে বাণ নিক্ষিপ্ত হইয়া শীঘ্র যথাস্থানে যাইয়া থাকে, তদ্রুপ এই সুমধুর সোমরস মেষলোমের দিকে যাইতেছে।

৩। সোমরস যে জলের সহিত মিশ্রিত হন, সেই জল তাহার বধূ তুল্য। তিনি সেই বধূর সহিত মিলিত হইবার জন্য মেষচৰ্ম্মের সর্বভাগে ক্ষরিত হইতেছেন। বৃক্ষলতাদি উদ্ভিদগণ পৃথিবীর সন্তান স্বরূপ। যিনি পুণ্যকর্মের অনুষ্ঠান করেন, সেই ব্যক্তির জন্য হরিতবর্ণ সোমরস পৃথিবীর সন্তানদিগকে শিথিল অর্থাৎ ফলবান্ করিয়া দেন। সোমরস মদিরার ন্যায় লোককে মত্ত করেন। তিনি যজ্ঞকালে পাত্রে পাত্রে গমন করিতেছেন। যেরূপ মহিষ আপনার শৃঙ্গ শাণিত করে, সোমরস যেন তদ্রুপ করিতেছেন।

৪। বৃষ শব্দ করিতেছে, গাভীগণ তাহার দিকে দৌড়িয়া যাইতেহি। দেবীরা দেবের ভবনে উপস্থিত হইতেছে। অর্থাৎ সোমরসকে দেখিয়া আমাদিগের স্তুতিবাক্য আপনা হইতে নির্গত হইতেছে। এই সোমরস শুভ্রবর্ণ মেষলোম অতিক্রম করিয়া গেলেন এবং উজ্জ্বল কবচের ন্যায় আপনার শরীরকে দুগ্ধাদির দ্বারা আচ্ছাদিত করিলেন।

৫। হরিতবর্ণ অমর সোমরস শোধিত হইবার সময় এরূপ বস্ত্র পরিধান করিলেন, যাহা বিনা যত্নে শুভ্র হইয়া আছে, অর্থাৎ দুগ্ধের সহিত মিশ্রিত হইলেন। পরে তিনি আকাশের উপরিভাগে, পাপ নষ্ট হয়, এরূপশোধন করিবার জন্য সূৰ্য্যদেবকে সংস্থাপন করিলেন। সেই সূর্যের আলোকে দ্যুলোক ও ভূলোক আচ্ছাদিত হইয়া গেল।

৬। এই সকল সোমরস সূর্যের কিরণের ন্যায় উজ্জ্বল, ইহারা ইতস্তত ক্ষরিত হইতেছে, ইহারা লোকদিগকে মদমত্ত করে এবং তাহাদিগের নিদ্রা উপস্থিত করিয়া দেয়, ইহারা পাত্রে পাত্রে বিস্তৃত হইতেছে, ইহারা মিলিত হইয়া বিস্তারিত বন্ত্রের চতুর্দিকে যাইতেছে। ইহারা ইন্দ্র ব্যতীত আর কোন দেবতার জন্য ক্ষরিত হয় না।

৭। ঋত্বিকগণ যখন সোমকে নির্গলিত করিল, তখন নদীর জল যেমন নিম্নাভিমুখে গমন করে, তদ্রুপ মত্ততাকারী সোমরসগুলি নিম্নাভিমুখে যাইতে লাগিল। হে সোমরস! আমাদিগের ভুবনে দ্বিপদ, চতুষ্পদ সকলকে কুশলে রাখ, আমাদিগের গৃহে যেন খাদ্য দ্রব্য ও সন্তান সন্ততির অভাব না হয়।

৮। হে সোম! তুমি এইরূপে ক্ষরিত হও, যাহাতে আমরা ধন সম্পত্তি এবং সুবর্ণ এবং ঘোটক এবং গাভী এবং যব এবং সন্তানসন্ততি প্রাপ্ত হই (১)। তোমরাই আমার পিতৃতুল্য, তোমরা স্বর্গের মস্তকস্বরূপ এবং আমাদিগকে অন্ন দিবার জন্য প্রস্তুত আছ।

৯। এই সমস্ত হরিতবর্ণ সোমরস ইন্দ্রের দিকে যাইতেছে, যে প্রকার রথ সমস্ত যুদ্ধাভিমুখে যাইয়া থাকে। ইহারা নিষ্পীড়িত হইয়া মেষলোমময় পৰিত্ৰকে অতিক্রম করিতেছে এবং যুবা হইয়া বৃষ্টি উপস্থিত করিতেছে।

১০। হে সোমরস! অতি সুস্বাদু ও নির্মল হইয়া মহীয়ান ইন্দ্রের নিমিত্ত ক্ষরিত হও এবং বিপক্ষদিগকে পরাভব কর। যে তোমাকে স্তব করে, তাহাকে উত্তম উত্তম ধন দান কর। হে দ্যুলোক ও ভূলোক! তোমরা উত্তম উত্তম বস্তু দিয়া আমাদিগকে অনুগ্রহ কর।

————

(১) সন্তানসন্ততি এবং সুবর্ণ, ঘোটক, গাভী ও যব তৎকালে সংসার সুখের প্রধান উপকরণ ছিল; ঋষিগণ তৎকালে সংসারী ছিলেন।