ঋগ্বেদ ০৯।০৯৭

ঋগ্বেদ ০৯।০৯৭
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৯৭
পবমান সোম দেবতা। বসিষ্ঠ ঋষি।

১। সুবর্ণের দণ্ড এই সোমকে আহ্লাদিত করিল; তারা শোধিত হইয়া ইনি আপনার রস দেবতাদিগের নিকট আনয়ন করিলেন। যেরূপ ইনি কোন পুরোহিত যজমানের ধনধান্যসম্পন্ন সুনিৰ্ম্মিত ভবনে যান, তদ্রূপ পুনঃ নিষ্পীড়িত হইয়া শব্দ করিতে করিতে পবিত্রের চতুর্দিকে যাইতেছেন।

২। তুমি যুদ্ধের উপযোগী উত্তম উত্তম বস্তু পরিধান করিয়াছ; তুমি মহাকবি, অনেক প্রকার বর্ণনা পাঠ করিতেছ, তুমি শোধিত হইতেছ, দুই ফলকের উপর বিস্তারিত হও। তুমি পণ্ডিত এবং যজ্ঞের বিষয়ে সতর্ক ও সাবধান।

৩। সেই যে সোম, যিনি পৃথিবীতে সকল যশস্বী অপেক্ষা অধিক যশস্বী, তিনি আমাদিগের জন্য মেষলোমময় উচ্চস্থানস্থিত পবিত্রে শোধিত হইতেছেন। তুমি শোধিত হইতে হইতে শব্দ কর, আগমন কর। তোমরা সর্বদা আমাদিগকে বাক্যের দ্বারা রক্ষা কর।

৪। তোমরা গান ধর। এস দেবতাদিগকে অর্চনা করি। বিপুল অর্থ লাভের জন্য সোমকে প্রেরণ কর। তিনি দৈবকর্মনিষ্ঠ, তিনি সুস্বাদু হইয়া ক্ষরিত হইতেছেন, কলসের মধ্যে বসিতেছেন।

৫। সোম দেবতাদিগের বন্ধুত্ব লাভ করিতে করিতে উৎপাদন করিবার জন্য সহস্র ধারায় ক্ষরিত হইতেছেন। মনুষ্যগণ তাহাকে স্তব করিতেছে, তিনি আপনার পূর্বতন স্থান গ্রহণ করিতেছেন, বিশিষ্ট সৌভাগ্য লাভের জন্য তিনি ইন্দ্রের নিকট গেলেন।

৬। হে উজ্জ্বল! স্তবকর্তাকে ধন দিবার জন্য এস। যুদ্ধের জন্য তোমার উৎপাদিত মত্ততা ইন্দ্রকে প্রাপ্ত হউক। রথে আরোহণপূর্বক দেবতাদিগের সহিত যাও, অন্ন লইয়া এস। তোমরা সকলে স্বস্তিবচনের দ্বারা আমাদিগকে রক্ষা কর।

৭। উশনার ন্যায় কবির রচনা উচ্চারণ করিতে করিতে এই দেব সোম দেবতাদিগের জন্ম বৃত্তান্ত কহিতেছেন। ইহার ব্রত অতিমহৎ, ইনি সাধুদিগেরই বন্ধু, ইনি পবিত্রতার উৎপাদক, ইনি শব্দ করিতে করিতে বরাহ গতিতে আসিতেছেন।

৮। সোমরসের অভিষেকগুলি হংসের ন্যায় যজ্ঞগৃহ মধ্যে বেগে প্রবেশ করিল, কারণ দীপ্তিশালী সোমদেব উপস্থিত। বন্ধুগণ সেই দুৰ্ধর্ষ তেজস্বী বাদ্যবাদনকারী সোমকে একত্রে মিলিত হইয়া বর্ণনা করিতেছে।

৯। তিনি যশস্বী পুরুষের ন্যায় বেগে চলিয়াছেন। তিনি অবলীলাক্রমে ক্রীড়া করিতেছেন, গাভীগণ তাহার সঙ্গে যাইতে পারে না। তিনি তীক্ষ্ণ সঞ্চালনকারী বৃষের ন্যায় আপনার কলেবর স্ফীত করিতেছেন, সেই সরল স্বভাবসোম দিবারাত্র উজ্জ্বল হইয়া থাকেন।

১০। গাভীদুগ্ধে পরিপুষ্ট হইয়া ঘোটকের ন্যায় সোম ক্ষরিত হইতেছেন। তিনি ইন্দ্রের বলাধান এবং মত্ততা উৎপাদন করিতেছেন। তিনি রাক্ষস সংহার এবং বিপক্ষ পরাভব করিতেছেন, তিনি বলশালী রাজা, তিনি সর্বপ্রকার কাম্যবস্তু উৎপাদন করেন।

১১। মধুর ন্যায় সুস্বাদু ধারাযুক্ত হইয়া প্রস্তরফলকে নিষ্পীড়িত সোম মেষলোমের মধ্য দিয়া ক্ষরিত হইতেছেন। তিনি ইন্দ্রের সহিত বন্ধুত্ব করিতেছেন। তিনি নিজে দেবতা, অন্যান্য দেবতার মত্ততা উৎপাদন করিতেছেন।

১২। সোমদেব শোধিত হইতে হইতে আমাদিগের প্রিয়বন্ত দিবার জন্য ক্ষরিত হইতেছেন। তিনি দেবতাদিগের নিকট আপনার রস লইয়া যাইতেছেন। যে কালের যে ধৰ্ম্মকর্ম সকলই তিনি সম্পন্ন করেন। উচ্চস্থানস্থিত মেষলোমময় পবিত্রের উপর দশ অঙ্গুলি তাহাকে লইয়া গেল।

১৩। রসবর্ষণকারী উজ্জ্বল লোহিত বর্ণধারী সোম শব্দ করিয়া উঠিলেন। গাভীদিগকে শব্দ করাইতে করাইতে তিনি দ্যুলোকে ও ভূলোকে গমন করেন। ইন্দ্রের বজ্রের ন্যায় তাহার শব্দ শুনা যাইতেছে। তিনি আমাদিগের এই স্তুতিবাক্যের প্রতি কর্ণপাত করিতে করিতে যুদ্ধে যাইতেছেন।

১৪। হে রসশালী সোম! দুগ্ধসহযোগে তুমি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়াছ। তুমি তোমার সুমধুর অংশু চালাইতে চালাইতে আসিতেছ। তুমি অবিচ্ছিন্ন ধারা রূপে ক্ষরিত হইয়া আসিতেছ। আমরা ইন্দ্রের উদ্দেশে তোমাকে সেচন করিতেছি।

১৫। তুমি মত্ততার উৎপাদনকারী, মত্ততার জন্য ক্ষরিত হও। জলবর্ষণকারী মেঘকে আপনার নিয়মের বশীভূত কর। তোমাকে চতুর্দিকে সেচন করা হইয়াছে, তুমি উজ্জ্বলবর্ণ ধারণপূর্বক গোধন লাভের নিমিত্ত আগমন কর ।

১৬। আমাদিগের এই সকল স্তব গ্রহণ কর, আমাদিগের সুগম পথ করিয়া দাও; আমাদিগকে নানা প্রকার কামবস্তু দিতে দিতে প্রকাণ্ড কলসের মধ্যে ক্ষরিত হও; আমাদিগের চতুর্দিকে অনিষ্ট সমস্ত মুদ্গরের ন্যায় নিবারণ কর। উচ্চস্থানস্থিত মেষলোমময় পবিত্রের উপর ধারার আকারে আগমন কর ।

১৭। তুমি আমাদিগের জন্য দিবালোক হইতে এরূপ বৃষ্টি আনিয়া দাও, যাহা শীঘ্র এবং প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত হইয়া আমাদিগের কল্যাণ বিধান করে এবং সত্বর ফল দান করে। হে সোম! পৃথিবীস্থিত এই সকল বায়ুপ্রেমাস্পদ পুত্রের ন্যায় ইহাদিগকে অন্বেষণ করিতে করিতে তুমি আগমন কর।

১৮। আমি পাপে পরিবেষ্টিত, আমার পাপের বন্ধন মোচন করিয়া দাও। শোধিত হইতে হইতে তুমি আমাকে সরল পথ দেখাইয়া দাও এবং বলশালী কর। হে সোম! যখন তোমাকে প্রস্তুত করে, তখন তুমি ঘোটকের ন্যায়শব্দ করিইয়াছিলে। হে দেব! এই ব্যক্তির এই গৃহ রহিয়াছে, তুমি আগমন কর।

১৯। দেবতাবৰ্গে সমাকীর্ণ এই যজ্ঞে মত্ততার জন্য তোমার সেবা করা হইতেছে। তুমি উচ্চস্থানস্থিত মেষলোমময় পবিত্রের উপর ধারার আকারে গমন কর। তুমি সহস্রধারা ধারণপূর্বক সুন্দর গন্ধবিশিষ্ট হইয়া অবারিত বেগে উপস্থিত হও, যেহেতু তোমাকে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের নিমিত্ত অন্ন আহরণ করিয়া দিতে হইবে।

২০। যেরূপ ধাবন ক্ষেত্রে রশ্মি মোচন করিয়া দিলে এবং রথে যোজিত না থাকিলে ঘোটকেরা দ্রুতবেগ ধাবিত হয়, তদ্রূপ এই সমস্ত শুভ্রবর্ণ উজ্জ্বল সোমরস ধাবিত হইতেছে, পান করিবার জন্য তোমরা নিকটবর্তী হও।

২১। হে সোম! এই দেবসমাগমে তুমি উজ্জ্বল রসের আকারে পাত্রে পাত্রে ক্ষরিত হও, সোম আমাদিগকে প্রচুর পরিমাণে কাম্যবস্তু এবং ধন এবং বীরপুত্রপৌত্র প্রদান করুন।

২২। যেই মাত্র ভক্তিপূর্ণ অন্তঃকরণ হইতে স্তুতিবাক্য নির্গত হয়, অথবা যেই মাত্র অতি চমৎকার যজ্ঞীয় দ্রব্য অনুষ্ঠান কাল আহরণ করা হয়, অমনি গাভীর দুগ্ধ সাভিলাষে সেমের দিকে যাইয়া থাকে, তিনি তৎকালে কলসের মধ্যে অবস্থিতি করিতেছেন এবং তিনি যেন উহাদিগের প্রেমাস্পদ স্বামীর তুল্য।

২৩। এই স্বর্গলোকবাসী সুপণ্ডিত সোম, যিনি দাতাদিগকে দান করেন এবং বদান্য ব্যক্তিদিগের শ্রীবৃদ্ধি সম্পাদন করেন, তিনি যজ্ঞের নিমিত্ত যর্জ্ঞীয় রস সেচন করিতেছেন। ইনি ধৰ্মকাৰ্য্যের সহায়স্বরূপ, ইনি বলশালী রাজার তুল্য, দশ অঙ্গুলী ইহাকে প্রচুর পরিমাণে প্রস্তুত করিয়াছে।

২৪। সতর্ক সাবধান সোম দেবতাদিগের রাজা, ইনি পবিত্র ধারার আকারে ক্ষরিত হইতেছেন, ইনি দেবতা ও মনুষ্যবর্গ, এই দুই বর্গের নিমিত্ত দুই প্রকারে আগমন করেন। ইনি সকল ধনের অধিপতি, সুন্দররূপে অনুষ্ঠিত যজ্ঞের অনুষ্ঠানকল্পে ইনি সহায়তা করিতেছেন।

২৫। অন্নদান করিবার জন্য, ইন্দ্র এবং বায়ুর জন্য, যজ্ঞের সময় সেই সোম ঘোটকের ন্যায় আসিতেছেন। সেই তুমি আমাদিগকে প্রচুর পরিমাণে নানা প্রকার অন্ন দান কর। তুমি শোধিত হইতে হইতে আমাদিগের নিমিত্ত ধন আনিয়া দাও।

২৬। এই যে সমস্ত সোমরস দেবতাদিগের তৃপ্তি বিধানের উদ্দেশে যাহাদিগকে সেচন করা হইতেছে, তাহারা আমাদিগের গৃহ, সন্তানসন্ততি সমাকীর্ণ করিয়া দিন। তাহারা স্তব প্রাপ্ত হইয়া যজ্ঞের উপযোগী হইতেছেন, তাহারা তাবৎ লোকের কামনীয়, তাহারা হোমকর্তা পুরোহিতদিগের ন্যায় দেবতার পূজা করেন, তাহাদিগের তুল্য আনন্দ বিধানকারী কেহই নাই।

২৭। হে দেব! দেবতারা তোমাকে পান করেন; এই দেবতা সমাকীর্ণ যজ্ঞে ক্ষরিত হও, প্রচুররূপে তোমার পান হইবেক। যুদ্ধে যেন আমরা বলশালী ও বিপক্ষ পরাভবকারী হই; তুমি শোধিত হইতে হইতে দ্যুলোক ও ভূলোককে আমাদিগের পক্ষে শুভকর করিয়া দাও।

২৮। ধারার সহিত মিলিত হইয়া, তুমি অশ্বের ন্যায় শব্দ করিলে, তুমি ভয়ানক সিংহের ন্যায়, তুমি মানস অপেক্ষাও অধিক বেগশালী। অতি সরল যে সকল প্রাচীন পথ আছে, সেই পথ দিয়া আমাদিগের সুখ ও মনের প্রসন্নতার জন্য ক্ষরিত হও।

২৯। দেবতাদিগের জন্য উৎপন্ন হইয়া ইহার শতধারা প্রস্তুত হইল। কবিরা সহস্র প্রকারে সেই সমস্ত ধারার শোধন করিতেছেন। হে সোম! স্বর্গের গুপ্তধন তুমি ক্ষরণ করিয়া দাও; তুমি প্রকাণ্ড ধন সঞ্চয়ের অগ্রে অগ্রে গিয়াথাক।

৩০। স্বর্গীয় পদার্থের ন্যায় তাহার ধারাসৃষ্ট হইল, দিনের অধিপতির ন্যায় সেই পণ্ডিত মিত্র দেবতার নিকটে যাইতেছেন। যেরূপ পুত্র নানা প্রকারে পিতার উপকার করে, তদ্রুপ তুমি এই ব্যক্তিকে সর্বত্র জয়ী কর।

৩১। তোমার মধুময় ধারাসমস্ত প্রস্তুত করা হইল, পরে তুমি মেষলোম অতিক্রমপূর্বক শোধিত হইলে। হে ক্ষরণশীল! তুমি দুগ্ধের আধারে গেলে; তুমি উৎপন্ন হইয়া স্তুতিবাক্যের দ্বারা সূর্যকে প্রীত করিলে।

৩২। হে শুভ্রবর্ণ সোম! তুমি যজ্ঞের পথে শব্দ করিতে করিতে অমৃতের আধারের ন্যায় শোভা পাইতেছ। তুমি মত্ততার জন্য ইন্দ্রের উদ্দেশে ক্ষরিত হইতেছ। তোমার স্তবের জন্য কবিদিগের বাক্য স্ফূৰ্ত্তি হইতেছে।

৩৩। হে সোম! তুমি আকাশবিহারী সুপর্ণ (১), নিম্নদিকে দৃষ্টিপাত কর। দেবতাদিগের সমাগমস্থানস্বরূপ এই যজ্ঞের কার্যে আপনার ধারাগুলি বিস্তারিত করিতেছ। সোমের আধারভূত কলসের মধ্যে প্রবেশ কর। শব্দ করিতে করিতে সূর্যের কিরণে গমন কর।

৩৪। সোম বহনকর্তা, তিনি তিন প্রকার বাক্য উচ্চারণ করেন। সেই সকল শব্দই যজ্ঞানুষ্ঠানের আশ্রয়স্বরূপ ও স্তোতার অনুষ্ঠানের উপযোগী। যেরূপ গাভীগণ সম্ভাষণ করিতে করিতে বৃষের দিকে যায়, তদ্রূপ স্তুতিবাক্যগুলি সাভিলাষে সোমের দিকে যাইতেছে।

৩৫। নব প্রসুত গাভীগণ সোমের কামনা করে, বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ স্তবের দ্বারা সোমের সম্ভাষণ করেন। সোম প্রস্তুত হইতে হইতে ঘৃতাদি সংযোগে শোধিত হইতেছেন। ত্রিষ্টুভছন্দঃ সোমকে স্তব করিতেছে।

৩৬। হে সোম! তোমাকে সেচন করা হইতেছে। তুমি শোধিত হইয়া ক্ষরিত হও, যাহাতে আমাদিগের কল্যাণ হয়, উচ্চস্বরে রব করিতে করিতে ইন্দ্রের দেহ মধ্যে প্রবেশ কর। স্তবের বৃদ্ধি কর, স্তব বিস্তারিত কর।

৩৭। সাবধান, সতর্ক, বুদ্ধিমান সোম শোধিত হইয়া যজ্ঞস্থলে স্তবের সহিত ভিন্ন ভিন্ন পান পাত্রে উপবেশন করিলেন। প্রধান প্রধান সুনিপুণ পুরোহিতগণ আদরের সহিত দুই দুই জন করিয়া তাহার গুণকীর্তন করিতেছে।

৩৮। তিনি শোধিত হইয়া যেন সূর্যের নিকটবর্তী হইলেন, তিনি দ্যুলোক ও ভূলোককে আপন জ্যোতিতে পরিপূর্ণ করিলেন। তাহার বন্ধুগণ যেন তার সাহায্য প্রাপ্ত হন; যেরূপ কেহ কোন কাৰ্য্য করিলে তাহাকে বেতন দেওয়া হয়, তদ্রুপ তিনি যজ্ঞকর্তাকে ধন দেন।

৩৯। তিনি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়া শ্রীবৃদ্ধি সম্পাদন কয়েন; রসসেচনকারী সেই শোধিত হইয়া আপনার জ্যোতিঃদ্বারা আমাদিগকে রক্ষা করিলেন। তাঁহার আশ্রয় পাইয়া অশেষ জ্ঞানসম্পন্ন আমাদিগের পূর্বপুরুষগণ পর্বত হইতে গাভী আহরণ করিয়াছিলেন ।

৪০। রসের সমুদ্রস্বরূপ সেই সোম প্রথমেই সৃষ্ট হইয়া শব্দ করিলেন, তিনি সর্বভূতের রাজা, তাহা হইতে প্রজা বৃদ্ধি হয়। রসবর্ষণকারী জ্যোতির্ময় সোম নিষ্পীড়িত হইবার সময় উচ্চস্থানস্থিত মেষলোমময় পবিত্রের উপর সাতিশয় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইলেন।

৪১। বিপুলমূৰ্ত্তি সোম মহৎ কাৰ্য্য করিয়াছেন, তিনি দেবতাদিগের নিকট প্রচুর বৃষ্টি চাহিয়া লইলেন। তিনি ক্ষরিত হইয়া ইন্দ্রের বলাধান করিলেন, সূৰ্য্যের ঔজ্জ্বল্য উৎপাদন করিলেন।

৪২। হে সোম! ক্ষরণকালে তুমি যজ্ঞকাৰ্য্য ও অন্নের জন্য ইন্দ্রকে মত্ত কর, মিত্র ও বরুণ এবং বায়ুকে মত্ত কর। মরুদগণের জলকে মত্ত কর, হে সোম দেব! সকল দেবতাকে মত্ত কর। দ্যুলোক ও ভূলোককে মত্ত কর ।

৪৩। সরল পথে তুমি ক্ষরিত হও, পাপ নষ্ট কর। শত্ৰুদিগের বেগের বাধা দাও। গাভীর দুগ্ধ ও জলকে আশ্রয় কর। তুমি ইন্দ্রের সখা, আমরা তোমার সখা।

৪৪। তুমি মধুর ভান্ডার ক্ষরণ করিয়া দাও, ধনের প্রস্রবণ এবং সন্তান সস্ততি ও ধন ক্ষরণ করিয়া দাও। তুমি ক্ষরিত হইয়া ইন্দ্রের রসনায় সুস্বাদু হও, আকাশ হইতে আমাদিগকে ধন আহরণ করিয়া দাও।

৪৫। সোম ধারার আকারে নিষ্পীড়িত হইলেন, তিনি ঘোটকের ন্যায় গমনকারী, তিনি নদীর ন্যায় সবেগে নিম্নের দিকে গেলেন। তিনি শোধিক হইয়া জলের আধারে বসিলেন, তিনি জল ও দুগ্ধে মিশ্রিত হইলেন।

৪৬। এই সেই বুদ্ধিমান সোম পাত্রে পাত্রে ক্ষরিত হইতেছেন, ভক্তের দিকে যাইতে তাঁহার বিশেষ ত্বরা আছে। তিনি সকল দিক দেখেন, তিনি প্রধান, তাহার তেজই যথার্থ। দৈবকৰ্ম্মনিষ্ঠ ব্যক্তিদিগের মূর্তিমান অভিলাষের ন্যায় তাহার সৃষ্টি হইয়াছে।

৪৭। এই সোম চিরাভ্যস্ত ভক্ষ্যদ্রব্যের সহিত শোধিত হইতেছেন, দুগ্ধদোহনকারিণী কন্যার জ্যোতিঃ ইহার নিকট অন্তর্ধান হইয়া যাইতেছে। যেরূপে হোমকর্তা পুরোহিত সভায় গমন করেন সেইরূপে ইনি জল ও দুগ্ধ ও নিজ রস এই ত্রিমিশ্রিত মূর্তি ধারণপূর্বক শব্দ করিতে করিতে জলের মধ্যে যাইতেছেন।

৪৮। হে সোমদেব! তুমি প্রধান, তুমি ফলকদ্বয় হইতে অতি সুস্বাদু হইয়া জলের মধ্যে ক্ষরিত হও। শোধিত হইয়া তোমার রস মধুবৎ, যজ্ঞ তোমারই; তুমি সূর্য্যদেবের ন্যায়, তোমার স্তবই যথার্থ।

৪৯। শোধিত হইয়া স্তব লইতে লইতে বায়ুর পানের নিমিত্ত যাও, মিত্র ও বরুণের দিকে যাও; মানস তুল্য বেগশালী নরের দিকে যাও; বৃষ্টি বর্ষণকারী রথারূঢ় বজ্রধারী ইন্দ্রের দিকে যাও।

৫০। তুমি এস, সেই সঙ্গে উত্তম উত্তম পরিধানীয় বস্ত্র আনয়ন কর, তুমি শোধিত হইতেছ, অনায়াসে দোহন করা যায়, এই প্রকার গাভী লইয়া আইস। মনের আহ্লাদদায়ী প্রচুর সুবর্ণ লইয়া আইস এবং রথযুক্ত অশ্ব আনয়ন কর।

৫১। স্বর্গীয় নানাবিধ সম্পত্তি আমাদিগের দিকে লইয়া এস। শোধিত হইতেছ, সর্ব প্রকার পৃথিবীর ধন আহরণ কর। যাহাতে আমরা জমদগ্নির ন্যায় ঋষিজনোচিত ধন প্রাপ্ত হই, সেইরূপ আইস।

৫২। এই প্রকারে ক্ষরিত হইয়া এই সমস্ত ধন আনিয়া দাও। আমাদিগের স্তবে ও হোমে অধিষ্ঠান কর। তোমার নিষ্পীড়নফলক বায়ুর ন্যায় আন্দোলিত হইয়া ভক্তব্যক্তিকে যেন তোমার সর্বজন কামনীয় রস দান করে।

৫৩। বিখ্যাত ব্যক্তির বিখ্যাত তীর্থে তুমি এইরূপে ক্ষরিত হও। যেরূপ পরিপক্ক ফলপূর্ণ বৃক্ষকে কম্পিত করিয়া লোকে ফল পাতিত করে, তদ্রুপ সোম ষষ্টিসহস্র বিপক্ষের নিকট ধন হরণ করিলেন (২)।

৫৪। ঐ সোমের এই দুটী বিষয় মহৎ ও সুখকর, অর্থাৎ রস সেচন ও স্তুতি পাঠ ইহাতেই তাহার তেজ বৃদ্ধি হয়। শত্ৰুদিগকে তিনি ভূমিশায়ী করিলেন এবং তাড়াইয়া দিলেন। হে সোম! শত্ৰুদিগকে দূরীভূত কর। যাহারা অগ্নিহোত্রের অনুষ্ঠান না করে, তাহাদিগকে দূরীভূত কর।

৫৫। তিন খানি বিস্তারিত পবিত্রের মধ্য দিয়া তুমি আসিয়া থাক, শোধিত হইয়া তুমি একটা আধারের দিকে যাও। তুমি ধনস্বরূপ, তুমি দাতাকে দান কর, তুমি যজ্ঞকর্তাদিগের পক্ষে ইন্দ্রের স্বরূপ।

৫৬। এই বুদ্ধিমান সৰ্ব্বজ্ঞ সোম ক্ষরিত হইতেছেন, ইনি বিশ্ব ভুবনের রাজা,ইনি যজ্ঞের সময় আপন রসের ধারা চালাইয়া দেন, ইনি মেষলোমের মধ্য দিয়া বাহির হইয়া যাইতেছেন।

৫৭। বিপুল মূৰ্ত্তি দুর্ধর্ষ কবিগণ সোমকে আস্বাদন করিতেছেন এবং শকুনিপক্ষীর ন্যায় কবিতার পদ উচ্চারণ করিতেছেন। পণ্ডিতেরা দশ অঙ্গুলী দ্বারা তাহাকে চালাইয়া দিতেছেন। তিনি জলের রসের সহিত আপনার মূর্তি মিশ্রিত করিতেছেন।

৫৮। হে ক্ষরণশীল সোম! তোমার সাহায্যে আমরা যেন যুদ্ধে কাৰ্যদক্ষ হইতে পারি। অতএব মিত্র ও বরুণ ও অদিতি ও সিন্দু ও পৃথিবী ও দ্যুলোক ইহারা আমাদিগের পূজা গ্রহণ করুন।

————

(১) গগনবিহারী সুপর্ণের সহিত সোমের তুলনা।

(২) ৫৩ ও ৫৪ ঋকে অনার্য্যবর্বরদিগের উল্লেখ।