ঋগ্বেদ ০৯।০৭০

ঋগ্বেদ ০৯।০৭০
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৭০
পবমান সোম দেবতা। রেণু ঋষি।

১। যৎকালে সোমরস যজ্ঞদিগের সহিত বৃদ্ধি পাইলেন, তৎকালে তাঁহার জন্য পূৰ্ব্বপরম্পরাগত যজ্ঞ মধ্যে একুশটি ধেনু, একুশটি গাভী দুগ্ধ দোহন করিয়া দিল, তিনি চারটি জলপাত্রে শোধনের নিমিত্ত প্রবেশপূর্বক জলপাত্রগুলিকে সুশোভিত করিলেন।

২। তিনি নির্মল জল অন্বেষণ করিতে করিতে আপন কার্যের দ্বারা দ্যুলোক ও ভূলোককে পৃথক করিয়া দিলেন। যখন সোমদেবের স্থানকে খাদ্য যুক্ত করা হইল, তখন তিনি আপনার মহত্ব গুণে উজ্জল জলের মধ্যে বিস্তৃত হইয়া পড়িলেন।

৩। সোমরসের ঔজ্জ্বল্য অবিনাশী ও অক্ষয় হউক, তাহারা স্থাবর, জঙ্গম এই দুই প্রকার বস্তু রক্ষাপ্রাপ্ত হউক। সেই ঔজ্জ্বল্যদ্বারা তিনি আমাদিগকে বলবান্ ও ধনবান্ করেন। নিস্পীড়নের অব্যবহিত পরেই তাঁহারউদ্দেশে স্তুতিপাঠ হইতে লাগিল।

৪। সেই সোমরস কৰ্ম্মক্ষম দশ অঙ্গুলির দ্বারা শোধিত হইতেছেন, তিনি আকাশ পথে অবস্থিতি করিতেছেন। তিনি মনুষ্যবর্গ এবং দেবতাবর্গ এই উভয়ের উপকারের জন্য বৃষ্টির উদ্দেশে যজ্ঞাদি অনুষ্ঠানকে নিৰ্বিঘ্নেসম্পন্ন করেন।

৫। তিনি শোধিত হইয়া ইন্দ্রের বল বৃদ্ধি করিবার জন্য দ্যুলোক ও ভূলোকের মধ্যে সংস্থাপিত হইয়া চতুর্দিকে যাইতেছেন। তিনি বৃষ্টির কারণ, তিনি আপন প্রতাপে দুৰ্ম্মতি লোকদিগকে ক্লেশ দিয়া থাকেন, তিনিযোদ্ধার ন্যায় শত্রুদিগকে যুদ্ধার্থ আহ্বান করেন।

৬। তিনি আপনার জননীর স্বরূপ দ্যুলোক ও ভূলোককে দর্শন করিয়া গো বৎসের ন্যায় শব্দ করিতে করিতে আসিতেছেন, তিনি বায়ুগণের ন্যায় শব্দ করিতেছেন। তাহার কাৰ্য অতি চমৎকার, তিনি দেখিলেন যে, জলই লোকদিগের যথার্থ উপকারী, অতএব তিনি সর্বাগ্রে জলই বিতরণ করিলেন, তাঁহার বাঞ্ছা যে, তিনি প্রশংসা প্রাপ্ত হন।

৭। সোম যেন একটি ভয়ঙ্কর বৃষভ, তাহাকে যখন কলসের মধ্যে ঢালা হয়, তখন তাহার যে দুই ধারা বিগলিত হইতে থাকে, তাহাই যেন তাহার দুই শৃঙ্গ, সতর্ক সাবধান সোম আপনার বল বৃদ্ধি করিবার জন্য সেই দুই শৃঙ্গ শাণিত করিতে করিতে শব্দ করিতেছেন। তিনি তাহার আধারস্বরূপ সুগঠন কলসের মধ্যে উপবেশন করিতেছেন, গো চৰ্ম্ম এবং মেষচর্ম তাহাকে শোধন করিতেছেন।

৮। হরিতবর্ণ সোমরস যখন নিৰ্ম্মল হইয়া ক্ষরিত হয়, তখন মেষলোমময় উন্নত শোধন যন্ত্রে তাঁহাকে কর্মিষ্ঠ ঋত্বিকগণ নিশ্চলভাবে সংস্থাপন করেন। সোমের সহিত দধি, দুগ্ধ ও জল মিশ্রিত হইয়া তাহাকে বিবিধ উপকরণ সম্পন্ন করে, এই রূপে তিনি মিত্র ও বরুণ ও বায়ু এই তিন দেবতার সেবনীয় হন।

৯। হে সোম! তুমি অভিলাষ পূরণকৰ্ত্তা, তুমি দেবতাদিগের পানের জন্য ক্ষরিত হও, তুমি ইন্দ্রের প্রীতিকর পানপাত্রে প্রবেশ কর, আপদ বিপদ আমাদিগকে আক্রমণ না করিতে করিতে উহাদিগের হস্ত হইতে আমাদিগকে পরিত্রাণ কর। যে ব্যক্তি পথ জানে, সে অবশ্যই জিজ্ঞাসাকারী ব্যক্তিকে পথ বলিয়া দেয়, অর্থাৎ সেইরূপ তুমি আমাদিগকে বলিয়া দেও।

১০। যেমন ঘোটককে চালাইলে সে যুদ্ধাভিমুখে ধাবমান হয়, তদ্রুপ তুমি কলসের দিকে ধাবমান হও। যেমন বিচক্ষণ ব্যক্তি নৌকা যোগে নদী পার হয়, তদ্রূপ তুমি আমাদিগকে বিপদ পার করিয়া দেও। বীর পুরুষের ন্যায় যুদ্ধ করিয়া আমাদিগের শত্রুবর্গকে সংহার কর।