ঋগ্বেদ ০৯।০৭২

ঋগ্বেদ ০৯।০৭২
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৭২
পবমান সোম দেবতা। হরিমন্ত ঋষি।

১। হরিতবর্ণ সোমরসকে শোধন করা হইতেছে, ঘোটকের ন্যায় তাঁহাকে যোজনা করা হইতেছে, তিনি কলসের মধ্যে ক্ষীর দুগ্ধাদির সহিত মিশ্রিত হইতেছেন, তিনি যখন শব্দ করেন, তখন তাহাকে স্তব করে। যে ব্যক্তি উত্তমরূপ স্তব করে, তাহার কামনা তিনি পূর্ণ করেন।

২। যখন সোমরস ইন্দ্রের উদর অর্থাৎ কলসের মধ্যে স্থাপিত হন, কিংবা যখন সুগঠন বাহুবিশিষ্ট ব্যক্তিগণ আপনাদিগের দশ অঙ্গুলিদ্বারা তাহার সুমধুর ও প্রীতিকর রস শোধন করিতে থাকে, তখন অনেক বুদ্ধিমান্ লোক এক বাক্যে তাহার গুণ কীৰ্ত্তন করেন।

৩। এই সোমরস ক্রমাগত দুগ্ধাদির সহিত মিশ্রিত হইতেছেন, ইনি এ প্রকার শব্দ করিতেছেন, যে সূর্যের কন্যা শুনিয়া আলাদ পাইতেছেন(১)। গুণকীৰ্ত্তনকারী ব্যক্তি পরিতোষপূৰ্ব্বক ইহার গুণকীর্তন করিতেছেন। ইনি দুই হস্তে দশ অঙ্গুলির সহিত মিশ্রিত হইতেছেন।

৪। এই যে সোমরস, যিনি প্রস্তরদ্বারা নিষ্পীড়িত হইয়া মনুষ্যদিগের কর্তৃক যজ্ঞস্থানে চালিত হন, যিনি গাভীগণের প্রেমাস্পদ স্বামীস্বরূপ, অর্থাৎ বৃষের ন্যায় শব্দ করেন, যিনি অতি প্রাচীন, যাঁহাকে উপযুক্ত ঋতুর সময় সংগ্রহ করা হইয়াছে, যিনি অনেক কৰ্ম্ম সিদ্ধ করেন এবং মনুষ্যদিগের যজ্ঞানুষ্ঠানের উপযোগী হন, হে ইন্দ্র! সেই নিৰ্ম্মল সোমরস তোমার জন্য ধারারূপে ক্ষরিত হইতেছে।

৫। হে ইন্দ্র! এই সোমরস ধারারূপে নিষ্পীড়িত হইয়া মনুষ্যের দুই হস্তে চালিত হইয়া তোমার আহারের জন্য ক্ষরিত হইতেছে। তুমি ইহার বলে বলবান হইয়া সকল কার্য সম্পন্ন কর এবং যজ্ঞস্থানে দর্পযুক্ত শত্ৰুদিগকে পরাভব কর। যেমন পক্ষী বৃক্ষে উপবেশন করে, তদ্রুপ সোম নিষ্পীড়নোপযোগী দুই প্রস্তর ফলকের উপর উপবেশন করেন।

৬। কর্মদক্ষ, সুনিপুণ, বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ এই সোমকে নিষ্পীড়িত করেন, তিনি শব্দ করিতে করিতে প্রচুর পরিমাণে নির্গত হইয়া বিস্তর কাৰ্য্য সিদ্ধ করেন, তখন দুগ্ধ ক্ষীর প্রভৃতি অনেক প্রকার বস্তু এবং নানাবিধ স্তুতিবাক্য একত্র মিলিত হইয়া যজ্ঞ স্থানে সোমরসের গমনাগমন প্রাপ্ত হন।

৭। এই সোমরস পৃথিবীর মধ্য স্থানস্বরূপ, প্রকাণ্ড আকাশমণ্ডলের আধারস্বরূপ, ইনি জলের তরঙ্গ মধ্যে এবং নদীর মধ্যে সিক্ত হইয়া থাকেন, ইনি ইন্দ্রের বজ্রের স্বরূপ, ইনি বৃষের ন্যায়, ইনি তাবৎ ধন আহরণ করিয়া দেন, ইনি মাদকতা শক্তিবিশিষ্ট হইয়া লোকদিগের সুখের জন্য চমৎকারভাবে ক্ষরিত হয়েন।

৮। হে সুন্দর কর্মকারী সোমরস! তুমি পার্থিব শরীরধারী লোকদিগের জন্য শীঘ্র শীঘ্র ক্ষরিত হও, যে তোমার আন্দোলন করিতে করিতে স্তব করে, তাহাকে ধন দান কর। আমাদিগের গৃহমধ্যস্থিত সম্পত্তি হইতে আমাদিগকে বঞ্চিত করিও না, আমরা যেন অশেষবিধ সম্পত্তি লাভ করিতে পারি।

৯। হে সোমরস! তুমি আমাদিগকে শতসহস্র পরিমাণে ঘোটক ও অন্যান্য পশু ও সুবর্ণ বিতরণ কর, তুমি আমাদিগকে বৃহৎ বৃহৎ দুগ্ধবতী গাভী ও খাদ্যদ্রব্য আনিয়া দেও, তুমি ক্ষরিত হইতে হইতে উপস্থিতহইয়া আমাদিগের গুণগাণ গ্রহণ কর।

————

(১) ১।১১৬।১৭ ঋকের টীকা দেখ।