ঋগ্বেদ ০৯।০৬১

ঋগ্বেদ ০৯।০৬১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৬১
পবমান সোম দেবতা। অঙ্গিরাগোত্রীয় অমহীয়ু ঋষি।

১। হে সোম! তুমি সেই রস ধারণপূর্বক ইন্দ্রের পানের নিমিত্ত ক্ষরিত হও। যে রসের প্রভাবে নবনবতি সংখ্যক শত্রুপুরি যুদ্ধের সময় ধ্বংস হইয়াছিল।

২। যে রসের প্রভাবে এক দিনের মধ্যে শম্বর নামক শত্রু সত্যকৰ্মা দিবোদাস রাজার বশতাপন্ন হইল, তদনন্তর সেই প্রসিদ্ধ তুৰ্ব্বসু ও যদু বশতাপন্ন হইল।

৩। হে সোম! তুমি অশ্ব বিতরণ কর্তা, তুমি অশ্ব ও গোধন ও সুবর্ণ আমাদিগের নিমিত্ত বর্ষণ কর। প্রভূত খাদ্যদ্রব্য বিতরণ কর।

৪। তুমি যখন ক্ষরিত হইয়া পবিত্ৰকে আর্দ্র করিতে থাক, তখন আমাদিগের সখাস্বরূপ হও, ইহাই প্রার্থনা করি।

৫। তোমার যে সকল তরঙ্গ ধারাস্বরূপে বহমান হইয়া পবিত্রের চতুর্দিকে ক্ষরিত হয়, তাহাদিগের দ্বারা আমাদিগকে সুখী কর ।

৬। হে সোম! তুমি সমস্ত জগতের প্রভু। তুমি নিষ্পীড়িত হইয়া আমাদিগকে প্রচুররূপে ধন, জন, ও অন্ন বিতরণ কর।

৭। নদীগণ এই সোমের মাতা। দশ অঙ্গুলি মিলিত হইয়া ইহাকে শোধন করে। ইনি অদিতি সন্তান দেবতাদিগের সহিত মিলিত হয়েন।

৮। এই নিষ্পীড়িত সোম পবিত্রের উপর যাইয়া ইন্দ্রের সহিত, বায়ুর সহিত এবং সূৰ্য্য কিরণের সহিত মিলিত হইতেছেন।

৯। হে সোম! তুমি মধুর রস ও সুন্দর রূপ ধারণপূর্বক ভগ নামক দেবতার জন্য এবং পূষা, বায়ু ও মিত্র বরুণের জন্য ক্ষরিত হও।

১০। তোমার যে অন্ন সঞ্চয়, তাহা উর্ধ্বলোকে, স্বর্গলোকে থাকে, তোমার অতি প্রবৃদ্ধ সুখকরী শক্তি এবং তোমার প্রভুত অন্ন পৃথিবী ভোগ করে।

১১। এই সোমের সাহায্যে আমরা মনুষ্যদিগের সকল খাদ্য দ্রব্য উপার্জন করি এবং ভাগ করিবার ইচ্ছা হইলে ভাগ করিয়া লই।

১২। হে সোম! তুমি অন্নদাতা, অতএব আমাদিগের আরাধ্য ইন্দ্র ও বায়ুগণ ও বরুণদেবের উদ্দেশে ক্ষরিত হও।

১৩। সেই যে সোম, যাহাকে উত্তমরূপে প্রস্তুত করিয়া স্থানে স্থানে রাখা হইয়াছে এবং ক্ষীর প্রভৃতি সংযোগে সুস্বাদু করা হইয়াছে, যাহাকে পান করিলে শত্রুদিগকে পরাজয় করা যায়, ইন্দ্রাদি দেবগণ সেই সোমের দিকে যাইতেছেন।

১৪। যে সোম ইন্দ্রের হৃদয়গ্রাহী, তাহাকেই আমাদিগের স্তুতিগীতিগণ উত্তমরূপে সংবর্ধনা করুক। যেরূপ বহুক্ষণ স্তনপান না করাইলে জননীগণের স্তন স্ফীত হইয়া উঠে, তখন সন্তানকে পাইলে তাহার পরম সমাদরে গ্রহণ করেন। তদ্রূপ স্তুতিগণ সোমকে চাহে।

১৫। হে সোম! তুমি আমাদিগের গোধনকে নিরুপদ্রব কর। প্রচুর অন্ন বিতরণ কর। চমৎকার বারি বর্ষণ কর।

১৬। সোম ক্ষরিত হইতে হইতে এক বিশ্বব্যাপী প্রকাণ্ড জ্যোতিঃপুঞ্জ আবির্ভূত করিলেন, উহা আশ্চৰ্য্যরূপে আকাশময় বিস্তারিত হইল।

১৭। হে জ্যোতির্ময় সোম! তুমি ক্ষরিত হইতেছ, তোমার সেই আনন্দকর রস অবাধে মেষলোমের দিকে যাইতেছে।

১৮। হে সোম! তোমার অতি প্রবৃদ্ধ দীপ্তিশালী রস ক্ষরিত হইয়া সমস্ত ব্ৰহ্মাণ্ডকে দীপ্যমান করিয়া দৃষ্টিগোচর করিয়া দিতেছে।

১৯। হে সোম! তোমার যে রস দেবতাদিগের সংসর্গ বাঞ্ছা করে এবং রাক্ষসদিগকে ধ্বংস করিয়া থাকে, যাহা আনন্দ বিধান করে এবং সর্ব লোকের প্রার্থনীয় হয়, সেই রদ ধারণপূর্বক তুমি ক্ষরিত হও।

২০। হে সোম! তুমি বিপক্ষ শ্ৰেণীস্থ বৃত্রকে বধ করিয়াছ, প্রতিদিন অন্ন বিভাগ করিয়া দাও। তুমি গোধন বিতরণকারী এবং অশ্ব প্রদানকর।

২১। হে সোম! তুমি সুস্বাদু ক্ষীরাদির সহিত মিশ্রিত হইয়া সত্বর আপন স্থান গ্রহণপূর্বক দীপ্তিশালী হও; যেমন শ্যেনপক্ষী দ্রুতবেগে যাইয়া আপন স্থানে উপবেশন করে।

২২। হে সোম! যখন বৃত্র তাবৎ জলভাণ্ডার রোধ করিয়া রাখিয়াছিল, সেই সময়ে ইন্দ্রের বৃত্র সংহারস্বরূপ ব্যাপারের সময় তুমি ইন্দ্রকে রক্ষা করিয়াছিলে। সেই তুমি এক্ষণে ক্ষরিত হও।

২৩। হে ধন বর্ষণকারী সোম! আমরা যেন বীরপুত্র সহকারে সমস্ত ধন জয় করিয়া লই। তুমি শোধিত হইতে হইতে আমাদিগের স্তুতিবাক্যসমূহের উন্নতি বিধান কর।

২৪। হে সোম! তোমার রক্ষায় রক্ষিত হইয়া আমরা যেমন বিপক্ষদিগকে খণ্ড খণ্ড করিয়া নিধন করি। হে সোম! আমাদিগের সৎকর্মের সময় তুমি সতর্ক থাক।

২৫। এই সোম ক্ষরিত হইতেছেন; ইনি হিংসকদিগকে নষ্ট করিতেছেন, ইনি ব্যয়কুণ্ঠ কৃপণদিগকে নষ্ট করিতেছেন, ইনি ইন্দ্রের নিকট যাইতেছেন।

২৬। হে ক্ষরৎ সোম! প্রচুর ধন আমাদিগকে দাও; হিংসকদিগকে ধবংস কর; আমাদিগকে ধন, জন ও যশ বিতরণ কর।

২৭। হে সোম! যখন তুমি শোধন হইতে হইতে আমাদিগকে ধন দান করিতে উদ্যত হও, যখন খাদ্যদ্রব্য দিতে উদ্যোগ কর, তখন শত শত হিংসক শত্রু মিলিত হইয়াও তোমার কিছুই করিতে পারে না।

২৮। হে সোম! তুমি নিষ্পীড়িত হইয়া ধন বর্ষণ করিতে করিতে ক্ষরিত হও; দেশ মধ্যে আমাদিগকে যশস্বী কর; সকল শত্রু নিধন কর।

২৯। হে সোম! আমরা এক্ষণে তোমার বন্ধুত্ব লাভ করিয়া তোমার অন্নে পুষ্ট হইয়া যুদ্ধার্থ সমাগত বিপক্ষদিগকে যেন পরাজয় করিতে পারি।

৩০। হে সোম! বিপক্ষ সংহারের জন্য তোমার যে সকল সুশাণিত ভয়ঙ্কর অস্ত্রশস্ত্র বিদ্যমান আছে, তৎসহকারে আমাদিগকে পরাজয়রূপ অযশ হইতে রক্ষা কর।