ঋগ্বেদ ০৯।০৭১

ঋগ্বেদ ০৯।০৭১
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৭১
পবমান সোম দেবতা। ঋষিত ঋষি।

১। দক্ষিণা দান করা হইতেছে, সোমরস প্রবল বেগে কলসের মধ্যে যাইতেছেন, তিনি সতর্ক হইয়া হিংসাকারী রাক্ষসদিগের হস্ত হইতে ভক্তদিগকে রক্ষা করিতেছেন, তিনি বিশ্বব্যাপী আকাশ মধ্যে বৃষ্টির জল সঞ্চয় করিতেছেন, তিনি দ্যুলোক ও ভূলোকের অন্ধকারস্বরূপ মলিনতা শোধন করিবার জন্য সূর্যের আলোক বিস্তারিত করিতেছেন।

২। শত্রুবর্গের শোষনকারী সোমরস বিলক্ষণ শব্দ করিতে করিতে বিপক্ষ সংহারক যোদ্ধার ন্যায় আসিতেছেন, আপনার অসূর্য্য প্ৰতাপ প্রদর্শন করিতেছেন, তিনি জরা পরিত্যাগ করিতেছেন, পানীয় দ্রব্যস্বরূপ হইয়া কলসের মধ্যে যাইতেছেন, বিস্তারিত মেষচৰ্ম্মের উপর আপনার নির্মল মূৰ্ত্তি সংস্থাপন করিতেছেন।

৩। প্রস্তরের দ্বারা এবং দুই হস্তের দ্বারা নিষ্পীড়িত হইয়া সোমরস ক্ষরিত হইতেছে, তাহার ভাব ভঙ্গী যেন বৃষের ন্যায়। তাহার গুণ গান করিলে তিনি আকাশ পথে সৰ্ব্বত্র গমন করেন। তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন, পাত্রে পাত্রে মিলিত হন, তাহাকে স্তব করিলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন, জলের সহিত মিশ্রিত হন এবং দেবতারা যে যজ্ঞে আপ্যায়িত হন, সেই যজ্ঞে তিনি পূজিত হন।

৪। মাদকতা শক্তিধারী সোমরসগণ সেই ইন্দ্রকে সেচন করিতেছেন, যিনি স্বর্গলোকে বাস করেন, যিনি মেঘদিগকে সঞ্চয় করেন, তিনি বিপক্ষের অট্টালিকা ধ্বংস করেন, যাহার জন্য উৎকৃষ্ট ভক্ষণকারী গাভীগনআপনাদিগের উন্নত উধোভার হইতে অতি চমংকার দুগ্ধ প্রচুর পরিমাণে দিইয়া থাকে ।

৫। দুই হস্তের দশ অঙ্গুলি মিলিত হইয়া যজ্ঞস্থানের সন্নিহিত প্রদেশে সোমরসকে রথের ন্যায় চালাইয়া দেয়। যৎকালে স্তুতি পাঠকারী ঋত্বিকগণ সোমরসের আধার সংস্থাপন করেন, তখন তিনি তার দুগ্ধের সহিত মিশ্রিত হন এবং পাত্রে পাত্রে গমন করেন।

৬। যেমন শ্যেনপক্ষী আপন কুলায়ে প্রবেশ করে, তদ্রূপ দীপ্তিশালী সোমরস সুগঠিত সুবর্ণময় আধারে প্রবেশ করেন। সেই প্রীতিপ্রদানকারী সোমরসকে স্তব করিতে করিতে যজ্ঞ স্থানে প্রেরণ করা হয়। এই পূজনীয় সোমরস ঘোটকের ন্যায় দেবতাদের নিকট গমন করেন।

৭। এই দীপ্তিশালী সুচতুর সোমরস বিশেষরূপে জলসিক্ত হইয়া শূন্য পথে কলসের মধ্যে পতিত হন। ইনি মনোবাঞ্ছা পূর্ন করেন। ইহাকে তিন বার নিষ্পীড়িত করা হইয়াছে। ইনি স্তবের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও শব্দ করিতে থাকেন, ইনি নানা পাত্রে এবং কলসে কলসে যাতায়াত করেন, ইনি প্রতিদিন প্রভাত কালে শব্দ করিতে করিতে শোভমান হয়েন।

৮। এই সোমরসের সেই যে মূর্তি, যাহা যুদ্ধস্থানে অবস্থিতিপূৰ্ব্বক বিপক্ষদিগকে পরাভব করে, তাহা জাজ্বল্যমান রূপ ধারণ করিতেছেন। জলের সহিত মিশ্রিত হইয়া নৈবেদ্য সহকারে দেবতাদিগের নিকট যাইতেছে, সুন্দর স্তব প্রাপ্ত হইতেছে এবং দুগ্ধ ইত্যাদির সহিত মিশ্রিত হইতেছে।

৯। যেরূপ বৃষ গাভীর দলের সহিত মিলিত হইবার সময় শব্দ করিতে থাকে, তদ্রুপ এই সোমরস শব্দ করে। ইহারই প্রভাবে সূর্যের প্রভা আকাশে স্থাপিত হয়, ইনি গগনবিহারী পক্ষীর ন্যায় পৃথিবীর দিকে দৃষ্টিপাত করেন, ইনি সৎকৰ্ম্ম অনুষ্ঠানদ্বারা প্রজাদিগের তত্ত্বাবধান করেন।