ঋগ্বেদ ০৯।০৬৮

ঋগ্বেদ ০৯।০৬৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৬৮
পবমান সোম দেবতা। বৎস ঋষি।

১। সুমধুর সোমরসগুলি ইন্দ্রের উদ্দেশে প্রবাহমান হইতেছে, তাহারা যেন দুগ্ধদায়িনী গাভীর ন্যায়। গাভীগণ হম্বা রব করিতে করিতে কুশের উপর উপবেশনপূর্বক অতি পরিক্ষার দুগ্ধ দান করিতেছে।

২। সেই সোমরস শব্দ করিতে করিতে এবং লতাবর্গকে শিথিল করিতে করিতে হরিতবর্ণ ধারণপূর্বক সুস্বাদ হইতেছে এবং পৰিত্রের মধ্য দিয়া মহাবেগে নির্গত হইয়া শত্রুগণকে সংহার করিতেছে এবং ধন বিতরণ করিতেছে।

৩। মত্ততা উৎপাদক যে সোম পরস্পর সংলগ্ন ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডল এই দুই যুগল ভুবন নির্মল করিলেন, যিনি অক্ষয় দুগ্ধদ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইলেন, যে দুগ্ধ তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছিল, যিনি প্রকাণ্ড অসীম দুই ভুবন পৃথক্ করিয়াছেন, যিনি অগ্রসর হইতে হইতে অক্ষয় বল ধারণ করিলেন।

৪। সেই মেধাবী পুরুষ আপনার দুই জননীর মধ্যে ভ্রমণ করিতে করিতে জল সমস্ত সঞ্চালন করিতে করিতে আহারদ্বারা আপন স্থান আপ্যায়িত করিতেছেন। মনুষ্যগণ ঘনীভূত সোমরসকে যবের সহিত মিশ্রিত করিলেন, তিনি অঙ্গুলিদিগের সমাগম প্রাপ্ত হইতেছেন এবং তাবৎ প্রাণীকে রক্ষা করিতেছেন।

৫। সুচতুর বুদ্ধিদ্বারা ক্রিয়াকুশল সোম জন্ম গ্রহণ করেন, তিনি জল হইতে উৎপন্ন, বিশেষ যত্নের সহিত তাঁহাকে রক্ষা করা হইয়াছে। সেই দুই জন একবারেই যৌবনাবস্থা প্রাপ্ত হইয়া জন্ম গ্রহণ করিল। তাহাদিগের একটা গুহার মধ্যে সংস্থাপিত আছে, আর একটী প্রকাশ পাইতেছে।

৬। বুদ্ধিমান্ লোকগণ সেই আনন্দকর সোমের রূপ চিনিতে পারেন, যাহাকে শ্যেনপক্ষী অতি দূরবর্তী স্থান হইতে আহরণ করিয়াছিল, তাহাতেই এক্ষণে উহা খাদ্যদ্রব্যস্বরূপ হইয়াছে। সেই সোমকে জলের মধ্যেশোধন করে, তাহাতে উহার বৃদ্ধি হয়, সে অতি চমৎকার ও তেজস্বী ও প্রশংসার যোগ্য হয়।

৭। হে সোম! দুই হস্তের দশ অঙ্গুলি মিলিত হইয়া তোমাকে মেষলোমের উপর শোধন করিতেছে, তুমি নিষ্পীড়নের দ্বারা ঋষিদিগের কর্তৃক উৎপাদিত হইয়াছ, শোধনকালে তোমার উদ্দেশে নানা প্রকার স্তব পাঠ করা হইতেছে, তুমি পাত্রে পাত্রে সংস্থাপিত হইয়াছ। যাহারা দেবতাদিগের নাম লইয়া থাকে, তোমার কাৰ্য এই যে, তুমি তাহাদিগকে অন্ন বিতরণ কর।

৮। যখন সোমরস চমৎকাররূপে পাত্রে পাত্রে গমনপূর্বক উহার মধ্যে উত্তমরূপে অবস্থিত হয়, তখন তাহার উদ্দেশে মনোমত স্তব পাঠ করিয়া থাকে। এই সোমরস অতি মধুর ধারার আকারে আকাশ হইতে পতিত হইয়া জলের সহিত মিশ্রিত হয়, ইহার সাহায্যে শত্রুর সম্পত্তি জয় করিয়া লওয়া যায়, ইনি দেবতার ন্যায় অমর, ইহার প্রভাবে উত্তমরূপ বচন রচনা করা যায়।

৯। এই যে সোমরস ইনি আকাশ হইতে পতিত হইয়া জলের সহিত মিশ্রিত হইতেছেন, ইনি ক্ষরিত হইয়া কলসের মধ্যে স্থান গ্রহণ করিতেছেন, ইনি প্রস্তরের দ্বারা নিষ্পীড়িত হইয়া দুগ্ধাদি সহযোগে সুস্বাদু হইতেছেন, আর যাহা কামনা করা যায় এবং যাহা প্রীতিকর, ইনি সেইরূপ বস্তুই আনিয়া দিতেছেন।

১০। হে সোমরস! তোমাকে সেচন করিতেছি, তুমি আমাদিগের জন্য নানা প্রকার খাদ্যদ্রব্য আহরণ করিতে করিতে ক্ষরিত হও। আর সেই যে দ্যুলোক ও ভূলোক যাহারা কাহাকেও দ্বেষ করেন না, তাহাদিগকে আমরা আহ্বান করি। হে দেবতাবর্গ আমাদিগকে ধনসম্পত্তি এবং কর্মক্ষম সন্তান প্রদান কর।