ঋগ্বেদ ০৯।০৬৫

ঋগ্বেদ ০৯।০৬৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৬৫
পবমান সোম দেবতা। বরুণের পুত্র ভৃগু ঋষি। অথবা ভৃগুতনয় জমদগ্নি ঋষি।

১। অঙ্গুলি গুলি যেন কয় ভগিনী, যেন তাহারা পরস্পর স্বসম্পর্কীয় কয়েকটী স্ত্রীলোক, সোম যেন তাহাদিগের স্বামী(১)। এই কয়েকটা স্ত্রীলোক অতিশয় কাৰ্যকুশল, ইহারা তাহাদিগের বলশালী মাননীয় স্বামীকে চালাইতেছে, ইহাদের বাসনা এই যে সোমরস ক্ষরিত হয়।

২। হে সোম! তুমি উজ্জ্বলভাবে ক্ষরিত হও, তুমি ঔজ্জ্বল্য গুণে সকল দেবতার শ্রেষ্ঠ। সর্বপ্রকার ধনসম্পত্তি আহরণ করিয়া দাও।

৩। হে সোম! তোমাকে উত্তমরূপ স্তব করা হইয়াছে, দেবতাদিগের আরাধনাপূর্বক বৃষ্টি উপস্থিত কর। তোমার ক্ষরণের দ্বারা যেন আমরা উত্তমরূপ অন্ন লাভ করি।

৪। হে সোম! তুমি আপন ঔজ্জ্বল্যে উজ্জ্বল, আমরা সৎকর্মানুষ্ঠান উপলক্ষে তোমাকে আহ্বান করিতেছি, কারণ তুমি অভিলষিত ফল বর্ষণ করিয়া থাক।

৫। হে সোম! তোমার অস্ত্রশস্ত্র অতি চমৎকার, তুমি আনন্দ বিধান করিতে করিতে এই ভাবে ক্ষরিত হও, যাহাতে আমাদিগের লোকবল হইতে পারে। তুমি সুচারুরূপে এই স্থানে আগমন কর।

৬। যৎকালে দুই হতে তোমাকে শোধন করা হয় এবং সেই সঙ্গে তোমার উপর জল সেচন করা হয়; তৎকালে তুমি কাষ্ঠময় পাত্রে স্থাপিত হইয়া পরে তৎসংসৃষ্ট অন্যান্য পাত্রে গমন কর।

৭। হে ঋত্বিকগণ! যেরূপ ব্যশ্বঋষি গান করিয়াছিলেন, তদ্রুপ তোমরা সোমের উদ্দেশে গান আরম্ভ কর, কারণ তিনি অতি প্রধান এবং চতুর্দিকেই তাহার দৃষ্টি।

৮। সেই সোম শত্রুবর্গের নিবারণকর্তা, তাহা হইতে মধুর রস নির্গত হয়, ইন্দ্রের পানের জন্য সেই হরিতবর্ণ রস প্রস্তরফলকের দ্বারা নিষ্পীড়িত হয় ।

৯। হে সোম! তুমি ঈদৃশ বলশালী, তোমার বন্ধুত্ব আমরা প্রার্থনা করিতেছি, আমাদিগের বাসনা যে সর্ব প্রকার ধনসম্পত্তি জয় করি।

১০। হে অভিলষিত ফলবর্ষণকারী সোম! তুমি ইন্দ্রের আনন্দ বিধান করিতে করিতে ধারারূপে ক্ষরিত হও। তোমার ক্ষমতার দ্বারা যেন আমরা সকল ধন লাভ করি।

১১। হে সোম! তুমি ভূলোক, দ্যুলোক এ উভয়ের ধারণকর্তা এবং স্বর্গের দিকেই তোমার দৃষ্টি। তোমাকে আমি বলশালী জানিয়া যুদ্ধ অভিমুখে প্রেরণ করিতেছি।

১২। হে সোম! এই অঙ্গুলিদ্বারা আমি তোমাকে স্পর্শ করিতেছি, তুমি হরিতবর্ণ আকারে ধারারূপে ক্ষরিত হও। তোমার সখাকে যুদ্ধের দিকে পাঠাইয়া দাও ।

১৩। হে সোম! তুমি সকল দিক দর্শন কর। আমাদিগের জন্য প্রচুর আহার আনিয়া দাও এবং আমরা কোন্ পথে যাইব তাহা দেখাইয়া দাও।

১৪। হে সোম! কলসগুলিকে স্তব করা হইয়াছে। অতএব তুমি ইন্দ্রের পানের জন্য ধারারূপে প্রবলবেগে উহার মধ্যে প্রবেশ কর।

১৫। তোমার যে সুতীক্ষ্ণ ও আনন্দকর রস, তাহা প্রস্তরফলক দ্বারা নিষ্পীড়িত হইয়া থাকে। তুমি দর্পহারী হইয়া ক্ষরিত হও।

১৬। এই যে সোম ইহাকে স্তব করা হইতেছে, ইনি আকাশের দিকে যাইবার জন্য রাজার ন্যায় মনুষ্যের প্রতি যাইতেছেন।

১৭। হে সোম! আমাদিগের রক্ষার জন্য আমাদিগকে শতশত গোধন ও ঘোটক এবং উত্তম উত্তম সম্পত্তি আনয়ন করিয়া দাও।

১৮। হে সোম! দেবতাদিগের পানের জন্য তোমাকে নিষ্পীড়ন করা হইয়াছে, তুমি আমাদিগকে উজ্জ্বলরূপ এবং বিপক্ষ পরাভবকারী তেজঃ প্রদান কর।

১৯। হে সোম! যেমন শ্যেনপক্ষী আপন কুলায়ে উপবেশন করে, তদ্রুপ তুমি তেজঃপুঞ্জ মূর্তি ধারণপূর্বক এবং শব্দ করিতে করিতে কলসের মধ্যে প্রবেশ কর(২)।

২০। এই সোমরস জলের সহিত মিশ্রিত হইয়া ইন্দ্র, বায়ু এবং বরুণ এবং অন্যান্য দেবতা ও বিষ্ণুর উদ্দেশে চলিয়াছেন।

২১। হে সোম! আমাদিগের সন্তানবৰ্গকে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ কর এবং এইরূপে ক্ষরিত হও, যাহাতে আমরা সহস্র প্রকার ধন সম্পত্তি প্রাপ্ত হই।

২২। যে সকল সোমরস অতি দূরদেশে, কিংবা অতি সন্নিহিত দেশে প্রস্তুত হইয়াছে, কিংবা যে সকল সোম শৰ্য্যণাবৎ(৩) নামক সরোবরে প্রস্তুত হইয়াছে।

২৩। কিংবা যে সকল সোম আর্জীকদেশে, কিংবা কৃত্বদেশে, কিংবা সরস্বতী প্রভৃতি নদীর মধ্যে, কিংবা পঞ্চজনের মধ্যে প্রস্তুত হইয়াছে(৪)।

২৪। সেই সমস্ত সোম উজ্জ্বলভাবে ক্ষরিত হইতে হইতে নভোমণ্ডল হইতে বৃষ্টি আনয়ন করিয়া দিন এবং আমাদিগকে লোকবল প্রদান করুন।

২৫। এই যে সোম যিনি দেবতাদিগের সংসর্গ কামনা করেন, জমদগ্নি তাহাকে স্তব করিতেছেন, তিনি চালিত হইয়া গোচর্মের উপর ক্ষরিত হইতেছেন।

২৬। যেরূপ অশ্বদিগকে জলমধ্যে লইয়া গিয়া তাহাদিগের গাত্র শোধন করিয়া দেয়, তদ্রূপ এই সকল শুভ্রবর্ণ সোমরসগুলি ক্ষীর প্রভৃতি বস্তুর সহিত মিশ্রিত হইয়া খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করিতে করিতে জলের মধ্যে শোধিত হইতেছেন।

২৭। হে সোম! যখন তোমাকে নিস্পীড়ন করা হয়, তখন চতুঃপার্শ্ববর্তী ঋত্বিকেরা দেবতাদিগের উদ্দেশে তোমাকে প্রেরণ করেন। তুমি উজ্জ্বলভাবে ক্ষরিত হও।

২৮। হে সোম! তোমার সেই যে প্রভাব, যাহা সকলকে সুখী করে, যাহা ধনসম্পত্তি আনিয়া দেয়, শত্রু হইতে রক্ষা করে এবং সকল লোকের প্রার্থনীয় হয়, আমরা তাহা কামনা করিতেছি।

২৯। সেই বল আমাদিগকে মদমত্ত করে, সকলেই তাহা কামনা করে। তাহা বুদ্ধিমান ব্যক্তির ন্যায় এবং জ্ঞানী ব্যক্তির ন্যায় রক্ষা করে এবং সকলেই তাহা প্রার্থনা করে।

৩০। আমরা তোমার নিকট ধন ও জ্ঞান প্রার্থনা করিতেছি। হে সৎকর্মকারী সোম! আমরা তোমার নিকট সন্তানসন্ততি প্রার্থনা করিতেছি, যেহেতু তুমি সকলকে রক্ষা কর এবং বিস্তর লোকে তোমাকে প্রার্থনা করে।

————

(১) সোমরসের কলসে প্রবেশের সহিত শ্যেনপক্ষীর কুলায় প্রবেশের উপমা, এটা ঋষিগণের বড় মনোগত উপমা।

(২) শর্য্যণাবতী নদীর উল্লেখ আমরা পুর্বেই পাইয়াছি।

(৩) আর্জীকীয়া আধুনিক বেয়ানদী, পঞ্চজন অর্থে সিন্ধুর পঞ্চশাখা তীরস্থ জনপদের (আধুনিক পাঞ্জাব প্রদেশের) অধিবাসী এইরূপ অনুমান হয়। “Five tribes”—Muir.