১৪৪. সুভন্দ্রার সহিত অর্জ্জুনের ইন্দ্রপ্রস্থে গমন ও পঞ্চ পাণ্ডবের পুত্রোৎপত্তি

অনন্তর অর্জ্জুন প্রভাসতীর্থে গিয়া।
দ্বাদশ বৎসর শেষ তথায় বঞ্চিয়া।।
তবে পুনঃ কতদিন রহি দ্বারাবতী।
ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরিলেন সুভদ্রা সংহতি।।
যুধিষ্ঠির-চরণে করেন প্রণিপাত।
ধর্ম্ম আশীর্ব্বাদ দেন শিরে দিয়া হাত।।
কুন্তী ভীমে প্রণমেন পার্থ সবিনয়ে।
আশীর্ব্বাদ দেন দুই মাদ্রীর তনয়ে।।
দ্রৌপদীকে সম্ভাষিতে অন্তঃপুরে যান।
পার্থে হেরিয়া কৃষ্ণার জাগে অভিমান।।
অধোমুখে রহিলেন অতি ক্রোধমন।
কতক্ষণ থাকি পার্থ বলেন বচন।।
কহ প্রিয়ে কি হেতু হও অভিমানিনী।
কেন না সম্ভাষ মোরে পাঞ্চাল নন্দিনী।।
দ্বাদশ বৎসর অন্তে হইল মিলন।
ইহাতে অপ্রিয় হেন না বুঝি কারণ।।
দ্রৌপদী বলিল, পার্থ নিদয় শরীর।
হেথা হৈতে গেলে মোর চিত্ত নহে স্থির।।
মোর স্থানে তোমার কি আর প্রয়োজন।
যথায় যাদবী তথা করহ গমন।।
শুনিয়া কহেন পার্থ হইয়া লজ্জিত।
তুমি হেন কহ দেরি না হয় উচিত।।
তোমা বিনা অর্জ্জুনের কে আছে সংসারে।
লক্ষ স্ত্রী হলেও তুমি সবার উপরে।।
আমরা যে পঞ্চ ভাই সকলি তোমার।
ভদ্রা হেতু কর ক্রোধ না বুঝি বিচার।।
শুনিয়া দ্রৌপদী মনে হইলা উল্লাস।
প্রিয়বাক্য দুই জনে হইল সম্ভাষ।।
আইলেন কত দিনে রাম-নারায়ণ।
নানারত্ন সঙ্গেতে অনেক দাসীগণ।।
অশ্ব হস্তী ধেনু বৃষ বিবিধ যৌতুক।
কৃষ্ণে দেখি ধর্ম্মরাজ পরম কৌতুক।।
আলিঙ্গন শিরোঘ্রাণ লৈয়া দুইজনে।
অন্যান্যে সম্ভাষা করিলেন প্রীতমনে।।
কতদিন পরে তবে পাণ্ডবের প্রীতে।
বলভদ্র যান কৃষ্ণ রহেন তথাতে।।
তবে কতদিনে ভদ্রা হৈল গর্ভবতী।
পরম সুন্দর পুত্র প্রসবিল সতী।।
দ্বিতীয় চন্দ্রের জ্যোতি অঙ্গের বরণ।
রূপেতে করিলে আলো সকল ভুবন।।
রূপেতে বীর্য্যেতে হৈল জনক-সমান।
দ্বিজগণ নাম দিল করি অনুমান।।
অভিবন মনোহর সুন্দর শরীর।
মন্যুমান ক্রোধপর অতিশয় বীর।।
সে কারণ অভিমন্যু দিল তার নাম।
পশ্চাৎ কহিব যত তার গুণগ্রাম।।
দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র পঞ্চজন হৈতে।
সবাই সমান হৈল রূপেতে গুণেতে।।
অনুমান করি নাম দিল দ্বিজগণ।
প্রতিবিন্ধ্য নাম হৈল ধর্ম্মের নন্দন।।
সুতসোম নাম বৃকোদর-সুত হৈল।
শ্রুতকর্ম্মা বলি নাম পার্থ সুতে দিল।।
শতানীক নাম হৈল নকুল-নন্দন।
সহদেবসুত নাম হৈল শ্রুতসেন।।
এই পঞ্চ নাম ধরে পঞ্চের সন্তান।
রূপ গুণ বল বীর্য্যে জনক সমান।।
পাণ্ডবের বংশবৃদ্ধি হইল এমত।
দেখি সবে পুত্রমুখ হৈল আনন্দিত।।
ভারত শ্রবণে কিছু না থাকে আপদ।
দুঃখ শোক দূর হয় বাড়য়ে সম্পদ।।
কাশীরাম দাস কহে, শুন সারোদ্ধার।
ইহা বিনা সংসারেতে সুখ নাহি আর।।
সুধাময় ভারত শ্রীব্যাসদেব রচিল।
এতদূরে আদিপর্ব্ব সমাপ্ত হইল।।