১২২. শ্রীকৃষ্ণের সহিত ইন্দ্রের যুদ্ধ

অস্ত্রে অস্ত্রে দুই জনে মজিল বিরোধে।
উপেন্দ্রাণী দেখিয়া ইন্দ্রাণী বলে ক্রোধে।।
কহ না ভারতি, কেন এত গর্ব্ব তোর।
আসিয়াছ লইতে ভূষণ পুষ্প মোর।।
মর্য্যাদা থাকিতে আগে যাহ বাহুড়িয়া।
যথা ছিল পারিজাত তথায় রাখিয়া।।
বামন হইয়া চাহ ধরিতে চন্দ্রমা।
দিব প্রতিফল আজি, ভাঙ্গিব গরিমা।।
সত্যভামা বলে, শচী মিছে কর গর্ব্ব।
পরাক্রম তোমার জানি যে আমি সর্ব্ব।।
শাশুড়ীর কুণ্ডল নরক নিল বলে।
নারিলা আনিতে তাহা বলি আখণ্ডলে।।
ছারখার কৈল স্বর্গ সে অসুর-পতি।
রাখিবারে নাহি পারিল তোমার পতি।।
মারিয়া সে নরকে ভাঙ্গিয়া তার পুরী।
অদিতির কুণ্ডল আনিয়া দিল হরি।।
পারিজাত পুষ্পে তোর কোন্ অধিকার।
মথনে জন্মিল পুষ্প, বিভাগ সবার।।
তুমি পুষ্প ভূষণ করিবা একা কেনে।
দেখি আজি লৈয়া যাব রাখহ কেমনে।।
সতী শচী দোঁহাকার শুনিয়া কোন্দল।
মুখে বস্ত্র দিয়া হাসে দেবতা সকল।।
আনন্দ-লহরীতে নারদ-মুনি হাসে।
শুনি পুরন্দর কাঁপে অতিশয় রোষে।।
উপেন্দ্র ইন্দ্রের যুদ্ধ হয় দেবধামে।
ত্রিভুবন চমৎকার দোঁহার সংগ্রামে।।
নানা অস্ত্র দুইজন করেন প্রহার।
পৃথিবীর মধ্যে পড়ে উল্কার আকার।।
দর্পক-জয়ন্ত-যুদ্ধ কি দিব তুলন।
শরজালে দুই জন ছাইল গগন।।
সাত্যকি তুলিল ধনু গরুড় উপর।
তার সহ জয়দেব করয়ে সমর।।
খগেন্দ্রে গজেন্দ্রে যুদ্ধ না যায় বর্ণন।
গর্জ্জনে বধির হৈল ত্রৈলোক্যের জন।।
দশন-শুণ্ডেতে গজ গরুড়ে প্রহারে।
গরুড়-গজেন্দ্র-শুণ্ড নখেতে বিদারে।।
গরুড়ের নখাঘাতে গজেন্দ্র অস্থির।
খণ্ড খণ্ড হৈলা, বহে সর্ব্বাঙ্গে রুধির।।
না পারিল শূন্যেতে রহিতে গজবর।
অজ্ঞান হইয়া পড়ে পর্ব্বত উপর।।
সর্ব্বাঙ্গে রুধির বহে, কম্পে কলেবর।
পড়িল মাতঙ্গরাজ ভূমির উপর।।
হস্তীর চাপনে গিরি অর্দ্ধ গেল তল।
পর্ব্বত উপরে স্থির হৈল আখণ্ডল।।
ইন্দ্র বলে, কৃষ্ণ গর্ব্ব না করিহ তুমি।
সমরেতে ন্যূন হৈয়া নাহি পড়ি আমি।।
বাহন অস্থির হৈল গরুড়-আঘাতে।
তুমি আমি চল যুদ্ধ করিব ভূমিতে।।
ইন্দ্র বাক্য শুনি হাসি বলে ভগবান।
যথায় তোমার ইচ্ছা যাব সেই স্থান।।
পুনরপি মুখামুখি হিইল সমর।
যত অস্ত্র এড়ে ইন্দ্র, কাটে দামোদর।।
সর্ব্ব অস্ত্র ব্যর্থ হয়, মনে পেয়ে লাজ।
অতি ক্রোধে বজ্র প্রহারিল দেবরাজ।।
গোবিন্দ বলেন তবে গরুড়ের প্রতি।
বজ্র-অস্ত্র হাতে লইয়াছে সুরপতি।।
সদুর্শনে এইক্ষণে তিল তিল করি।
মুনি-বাক্য ব্যর্থ হবে, এই হেতু ডরি।।
ইহার উপায় তুমি কর খগেশ্বর।
এক পক্ষ দেহ ফেলি বজ্রের উপর।।
ঠোঁটেতে উপাড়ি পক্ষ গরুড় ফেলিল।
পক্ষ চূর্ণ করি বজ্র বাহুড়ি চলিল।।
একবার বিনা বজ্র আর নাহি চলে।
দেখিয়া বিস্ময় অতি হৈল আখণ্ডলে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।