০৪২. দময়ন্তীর নল বারণ

স্বয়ম্বর উপনীত যত রাজগণ।
যথাযোগ্য আসনেতে বসে সর্ব্বজন।।
কুশে শীলে রূপে গুণে একই প্রকার।
বিবিধ রতন অঙ্গে শোভে সবাকার।।
সিংহগ্রীব গজস্কন্ধ গমনে সিন্ধুজ।
পঞ্চমুখ ভুজঙ্গ সদৃশ ধরে ভুজ।।
তবে বিদর্ভের রাজা শুভক্ষণ দিনে।
দময়ন্তী আনাইল সভা বিদ্যমানে।।
দেখিয়া মোহিত হৈল সব রাজগণ।
দৃষ্টিমাত্র হরিলেক সবাকার মন।।
যত যত মহারাজ আছিল সভায়।
চিত্রের পুত্তলি প্রায় একদৃষ্টে চায়।।
নল বিনা বৈদর্ভীর অন্যে নাহি মন।
কোথায় আছেন নল করে নিরীক্ষণ।।
এক স্থানে দেখে ভৈমী সভার ভিতর।
নলের আকার পঞ্চ পুরুষ সুন্দর।।
আকারে নলের সম, নাহি কিছু ভেদ।
দেখি দময়ন্তী চিত্তে করে বড় খেদ।।
পঞ্চজন নল দেখি, বরিব কাহারে।
হৃদয়ে করিল চিন্তা বঞ্চিল অমরে।।
দেবতা মানব মূর্ত্তি কভু এক নয়।
তথাপি দেব মায়ায় সব এক হয়।।
উপায় না দেখি ভৈমী বিচারিল মনে।
করযোড়ে স্তুতিবাদ করে দেবগণে।।
তোমরা যে অন্তয্যামী জানহ সকল।
পূর্ব্বে হংসমুখে আমি বরিয়াছি নল।।
প্রসন্ন হইয়া সবে মোরে দেহ বর।
জ্ঞাত হয়ে পাই আমি আপন ঈশ্বর।।
সত্যেতে সংসার বর্ত্তে আমি যদি সতী।
তোমা সবা মধ্যে যেন চিনি নিজ পতি।।
বৈদভীর মনোভাব জানি দেবগণ।
আপন আপন চিহ্ন করান দর্শন।।
অনিমেষ নয়ন, স্বেদাম্বুহীন কায়া।
অম্লান কুসুম অঙ্গে, নাহি অঙ্গচ্ছায়া।।
বৈদর্ভী জানিল তবে এ চারি অমর।
নল নরপতি দেখে ভূমির উপর।।
হৃষ্টা হয়ে শীঘ্রগতি মালা দিল গলে।
দেবতা গন্ধর্ব্ব সবে সাধু সাধু বলে।।
তবে নল নরপতি প্রসন্ন হইয়া।
দময়ন্তী প্রতি বলে আশ্বাস করিয়া।।
যাবৎ শরীরে মম থাকিবেক প্রাণ।
তাবৎ ধরিব তোমা প্রাণের সমান।।
নলেরে বৈদর্ভী তবে করিল বরণ।
দেখিয়া সন্তুষ্ট হৈল যত দেবগণ।।
তুষ্ট হয়ে ইষ্টবর দিল চারিজন।
অলক্ষিত বিদ্যা দিল সহস্রলোচন।।
অমৃত দিলেন তবে জলের ঈশ্বর।
যথায় চাহিবে জল পাবে নরবর।।
অগ্নি বলে, যাহা ইচ্ছা করিবে রন্ধন।
বিনা অগ্নি রন্ধন হইবে ততক্ষণ।।
প্রাণীবধ বিদ্যা দিল সূর্য্যের নন্দন।
অস্ত্র তূণ ধনু দিয়া করিল গমন।।
নিবর্ত্তিয়া স্বয়ন্বর সবে গেল ঘর।
দময়ন্তী লয়ে গেল নল নৃপবর।।
দময়ন্তী বিনা রাজা অন্যে নাহি মতি।
কুতূহলে ক্রীড়া করে যেন কাম রতি।।
বহু যজ্ঞ সমাধিল, কৈল বহু দান।
পুণ্যবলে নাহি কেহ নলের সমান।।
মহাভারতের কথা পরম পবিত্র।
আরণ্যকে অনুপম নলের চরিত্র।।