২৭. পাণ্ডবসভায় শ্রীকৃষ্ণের আগমন ও ‍পাণ্ডবগণের সসৈন্যে কুরুক্ষেত্রে গমন

মুনি বলে অবধান করহ রাজন।
সভা করি বসিয়াছে ভাই পঞ্চ জন।।
হেনকালে উপনীত হন নারায়ণ।
কৃষ্ণে দেখি সসম্ভ্রমে উঠে পঞ্চ জন।।
বসিতে আসন দিয়া জিজ্ঞাসেন তাঁয়।
কি কার্য্য করিলে কৃষ্ণ কুরুর সভায়।।
বিবরিয়া সব কথা কহ নারায়ণ।
এত শুনি হাসিমুখে কহে জনার্দ্দন।।
অতি বড় নরাধম রাজা দুর্য্যোধন।
কাহারো বচন না শুনিল কখন।।
তোমার বিভাগ দিতে সবে বুঝাইল।
কারো বাক্য দুর্য্যোধন কর্ণে না শুনিল।।
অবশেষে আমি বহু কহিলাম তায়।
তথাপি উচিত ভাগ নাহি দিতে চায়।।
পঞ্চখানি গ্রাম কহিলাম ছাড়ি দিতে।
শুনিয়া আসন ত্যাজি উঠিল ক্রোধেতে।।
মহাদন্তে গর্জ্জি দর্পে কহিল সভায়।
সাবধানে শুন কৃষ্ণ কহি যে তোমায়।।
তীক্ষ্মসূচি অগ্রে ভূমি আচ্ছাদয়ে যত।
বিনা যুদ্ধে পাণ্ডবেরে নাহি দিব তত।।
নিশ্চয় হইবে যুদ্ধ না যায় খণ্ডন।
ইহার বিধান তবে করহ রাজন।।
এতেক শুনিয়া তবে পাণ্ডুর নন্দন।
ক্রোধেতে অবশ অঙ্গ, কাঁপে ঘনে ঘন।।
ক্ষণে ক্রোধ নিবারিয়া কহেন রাজন।
মৃত্যুপথ দুর্য্যোধন করিল সৃজন।।
শুন ভীম ধনঞ্জয় সহদেব বীর।
শুনহ নকুল আর সাত্যকি সুধীর।।
পাঞ্চাল নৃপতি ধৃষ্টদ্যুন্ন মহাশয়।
জয়সেন আদি যত ভোজের তনয়।।
যুদ্ধের সময় হৈল স্থির কর বুদ্ধি।
সাবধানে কর সবে মম কার্য্যসিন্ধি।।
শুনি অঙ্গীকার করিলেন বীরগণ।
প্রাণপণে তব আজ্ঞা করিব পালন।।
কণ্ঠেতে যাবৎ প্রাণ সবার আছয়।
তাবৎ করিব যুদ্ধ, শুন মহাশয়।।
বীরগণ-বাক্য তবে শুনি নরপতি।
সহদেবে ডাকি আজ্ঞা দিল মহামতি।।
শুভক্ষণ দেখ ভাই, যাব কুরুক্ষেত্র।
সৈন্যগণে সাজিবারে বলহ একত্র।।
সহদেব বলে, রাজা আজি শুভক্ষণ।
পঞ্চমী দিবস আজি নক্ষত্র উত্তম।।
আজি যাত্রা করিবারে হয়ত উচিত।
আজ্ঞা কৈলে করি যত সৈন্য সমাহিত।।
এত শুনি আজ্ঞা দেন ধর্ম্মের নন্দন।
সৈন্য সেনাপতি শীঘ্র করহ সাজন।।
পাইয়া রাজার আজ্ঞা চারি সহোদর।
সৈন্য সেনাপতিগণ সাজিল বিস্তর।।
পঞ্চ কোটি সহস্র শতেক মহারথী।
লক্ষ কোটি শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ সাজে সেনাপতি।।
কোটি কোটি অশ্ব আর পত্তি অগণন।
সাত অক্ষৌহিণী সেনা করিল সাজন।।
ঘটোৎকচ বীর আসে পেয়ে সমাচার।
দুকোটি রাক্ষস হয় যার পরিবার।।
চতুরঙ্গ দলে সৈন্য সাজে আগণন।
এই মত পাণ্ডুসৈন্য করিল সাজন।।
শূন্যে দেবগণ করে জয় জয় ধ্বনি।
অতি শুভক্ষণে চলে পাণ্ডব বাহিনী।।
তিন দিনে আসে পথ শতেক যোজন।
কুরুক্ষেত্রে উত্তরিল পাণ্ডুপুত্রগণ।।
গড় দেখি পঞ্চ ভাই হইলেন প্রীত।
যুদ্ধের সামগ্রী দেখিলেন অপ্রমিত।।
আত্মবর্গ যত আসে রাজ-রাজেশ্বরে।
সাত্যকিরে বলে, অভ্যর্থনা করিবারে।।
সাত্যকি চলিল আজ্ঞামাত্র বিচক্ষণ।
সমাবেশ করি ক্রমে সব সৈন্যগণ।।
যথাযোগ্য বসিতে সবারে দিল স্থিতি।
নানা দ্রব্য উপহার দিল মহামতি।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীদাস কহে, সদা শুনে পুণ্যবান।।