১২৬. সত্যভামার ব্রতারম্ভ

রোপিলেন পুষ্পরাজ সত্যভামা-দ্বারে।
নানা রত্নে মূল বান্ধিলেন তরুবরে।।
শত শত রবি শশী যেন করে শোভা।
পৃথিবী যুড়িয়া তার দীপ্ত কৈল আভা।।
উপরে বান্ধেন চান্দ দিয়া রত্নবাস।
তার তলে কৃষ্ণসহ করেন বিলাস।।
হেনকালে আগত নারদ মুনিবর।
দেখি সত্যভামা স্তব করেন বিস্তর।।
নারদ বলেন, দেবী কি করি বাখান।
না হইবে, নাহি হয়, তোমার সমান।।
দেবের দুর্ল্লভ যেই পুষ্প পারিজাত।
তোমার দুয়ারে রোপিলেন জগন্নাথ।।
এক্ষণে করহ দেবি ইহার যে কাজ।
অবহেলে হইবে তোমার ব্রতরাজ।।
যে ব্রত করিলে হয় সোহাগে আগুলি।
জন্ম জন্ম করিবা গোবিন্দে লইয়া কেলি।।
ব্রহ্মাণ্ড দানের ফল পায় এই ব্রতে।
বিখ্যাত তোমার যশ হইবে জগতে।।
এ ব্রত করিয়াছিল পুলোমা-নন্দিনী।
সোহাগে আগুলি হৈল ইন্দ্রের ইন্দ্রানী।।
পর্ব্বত-নন্দিনী পূর্ব্বে এই ব্রত করি।
শিবের অর্দ্ধাঙ্গ হইলেন মহেশ্বরী।।
আর কৈল স্বাহা দেবী অগ্নির গৃহিণী।
যার ফলে হইল অগ্নির সোহাগিনী।।
শুনি সত্যভামা ধরে মুনির চরণে।
প্রভু মোরে সেই ব্রত করাহ এক্ষণে।।
নারদ বলেন, লহ কৃষ্ণ-অনুমতি।
শ্রীকৃষ্ণ নহেন যে কেবল তব পতি।।
নাহি জান দেবী তুমি এ ব্রত-বিধান।
বৃক্ষেতে বান্ধিয়া দিতে হৈবে স্বামীদান।।
সত্যভামা বলে, হেন কহ কেন মুনি।
মোরে বিরোধিবে হেন কে আছে সতিনী।।
করিব গোবিন্দে দান, যে বিধি আছয়।
কৃষ্ণে জিজ্ঞাসিব, ইথে কি আছে সংশয়।।
মুনি বলে, তবে আর বিলম্বে কি কাজ।
শীঘ্র কেন আরম্ভ না কর ব্রতরাজ।।
এক লক্ষ ধেনু চাহি, ধান্য লক্ষ পৌটী।
দক্ষিণা সামগ্রী কর স্বর্ণ লক্ষ কোটি।।
বসন ভূষণ দান ষোড়শ বিধান।
অশ্ব রথ গজ বৃষ যত রত্নযান।।
নারদের বাক্যমত সব আয়োজন।
শুভদিনে করিলেন ব্রত আরম্ভন।।
গোবিন্দেরে একান্তে কহেন সমাচার।
হাসিয়া সতীরে কৃষ্ণ করেন স্বীকার।।
নিমন্ত্রিয়া আনেন যতেক মুনিগণ।
পৃথিবীর মধ্যে বৈসে যতেক ব্রাহ্মণ।।
করিল ব্রতের সজ্জা যে ছিল বিহিত।
বৈসেন নারদ মুনি হৈয়া পুরোহিত।।
পারিজাত বৃক্ষেতে বান্ধিয়া হৃষীকেশে।
সভ্যভামা বসিলেন হাতে তিল কুশে।।
রুক্মিণী প্রভৃতি ষোল-সহস্র রমণী।
অভিমানে সবাকার চক্ষে বহে পানি।।
সত্যভামা করিলেন দান জগন্নাথ।
স্বস্তি বলি নারদ নিলেন হাতে হাত।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীদাস কহে সদা শুনে পুণ্যবান।।