১১৪. হস্তিনায় পাণ্ডবগণকে আনিতে বিদুরের পাঞ্চালে গমন

মুহূর্ত্তেক বিদুর বিলম্ব না করিল।
বহু রত্ন-ধন লৈয়া পাঞ্চালে চলিল।।
একে একে সবাকারে সম্ভাষি বিদুর।
কুন্তী কৃষ্ণা দর্শনে যাইল অন্তঃপুর।।
দ্রৌপদীরে তুষিল অনেক অলঙ্কারে।
নানা রত্নে বিভূষিল পঞ্চ সহোদরে।।
বিদুরে দেখিয়া বড় হরিষ দ্রুপদ।
সূর্য্যের উদয়ে যেন ফুটে কোকনদ।।
পঞ্চ ভায়ে দেখিয়া বিদুর মহাশয়।
আনন্দে নয়ন-জলে ভাসিল হৃদয়।।
বিদুর-চরণে প্রণমিল পঞ্চজন।
কুশল জিজ্ঞাসা কৈল যত বন্ধুগণ।।
বিদুর কহিল যত কুশল সংবাদ।
একে একে করিল সবারে আশীর্ব্বাদ।।
বিদুরে লইয়া গেল দ্রুপদ রাজন।
মিষ্টান্ন পলান্নে তাঁরে করান ভোজন।।
ভোজনান্তে সর্ব্বলোক বসিল সভাতে।
দ্রুপদে বিদুর তবে লাগিল কহিতে।।
পাণ্ডবে বরিল রাজা তোমার নন্দিনী।
বড় আনন্দিত হৈল ধৃতরাষ্ট্র শুনি।।
তোমা হেন বন্ধু রাজা বড় ভাগ্যে পায়।
সে কারণে সম্ভাষিতে পাঠায় আমায়।।
বহু কহিলেন ভীষ্ম গঙ্গার নন্দন।
তোমা সহ সম্বন্ধেতে প্রীত হৈল মন।।
প্রিয়সখা তোমারে জানায় আলিঙ্গন।
পুনঃপুনঃ বলিলেন নিজে গুরু দ্রোণ।।
বহুদিন নাহি দেখি পাণ্ড-পুত্রগণে।
সবাই উদ্বিগ্ন বড় এই সে কারণে।।
গান্ধারী প্রভৃতি যত কুরু-কুল-নারী।
দেখিবারে উতরোল তোমার কুমারী।।
পাণ্ডবেরা বহুদিন ত্যাজিল আবাস।
বহুদিন নাহি বন্ধগণের সম্ভাষ।।
আমারে ত এইমত কহে নরপতি।
লইতে পাণ্ডবগণে আপন বসতি।।
দ্রুপদ বলিল, ভাগ্য আমার আছিল।
কুরু মহাবংশ সহ কুটুম্বিতা হৈল।।
যা বল বিদুর সেই মোর মনোনীত।
পাণ্ডবের নিজগৃহে যাইতে উচিত।।
জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্র জনক-সমান।
তাঁর সেবা পাণ্ডবের হয় ত বিধান।।
ভয় আছে তথা, যদি হেন কর মনে।
তোমা সবা বিরোধিবে বল কোন্ জনে।।
তথাপিহ নহে আর হস্তিনায় স্থিতি।
খাণ্ডবপ্রস্থেতে গিয়া করহ বসতি।।
দ্রুপদের বচন শুনিয়া পঞ্চজন।
মাতৃসহ বিদায় হলেন ততক্ষণ।।
রথে চড়ি চলিলেন দ্রৌপদী সংহতি।
হস্তিনানগরে যান বিদুর সহিত।।
পাণ্ডব বরিল রাজা তোমার নন্দিনী।
বড় আনন্দিত হৈল ধৃতরাষ্ট্র শুনি।।
তোমা হেন বন্ধু রাজা বড় ভাগ্যে পায়।
সে কারণে সম্ভাষিতে পাঠায় আমায়।।
বহু কহিলেন ভীষ্ম গঙ্গার নন্দন।
তোমা সহ সন্বন্ধেতে প্রীত হৈল মন।।
প্রিয়সখা তোমারে জানায় আলিঙ্গন।
পুনঃপুনঃ বলিলেন নিজে গুরু দ্রোণ।।
বহুদিন নাহি দেখি পাণ্ডু-পুত্রগণে।
সবাই উদ্বিগ্ন বড় এই সে কারণে।।
গান্ধারী প্রভৃতি যত কুরু-কুল-নারী।
দেখিবারে উতরোল তোমার কুমারী।।
পাণ্ডবেরা বহুদিন ত্যজিল আবাস।
বহুদিন নাহি বন্ধুগণের সম্ভাষ।।
আমারে ত এইমত কহে নরপতি।
লইতে পাণ্ডবগণে আপন বসতি।।
দ্রুপদ বলিল, ভাগ্য আমার আছিল।
কুরু মহাবংশ সহ কুটুম্বিতা হৈল।।
যা বল বিদুর সেই মোর মনোনীত।
পাণ্ডবের নিজগৃহে যাইতে উচিত।।
জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্র জনক-সমান।
তাঁর সেবা পাণ্ডবের হয় ত বিধান।।
ভয় আছে তথা, যদি হেন কর মনে।
তোমা সবা বিরোধিবে বল কোন্ জনে।।
তথাপিহ নহে আর হস্তিনায় স্থিতি।
খাণ্ডবপ্রস্থেতে গিয়া করহ বসতি।।
দ্রুপদরে বচন শুনিয়া পঞ্চজন।
মাতৃসহ বিদায় হলেন ততক্ষণ।।
রথে চড়ি চলিলেন দ্রৌপদী সংহতি।
হস্তিনানগরে যান বিদুর সহিত।।
পাণ্ডব হস্তিনা আসে শুনি প্রজাগণ।
বাল বৃদ্ধ যুবা ধায় দর্শন কারণ।।
লজ্জা ভয় ত্যজি ধায়কুলের যুবতী।
ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটে যায় নারী গর্ভবতী।।
পাণ্ডবেরে দেখিতে করয়ে হুড়াহুড়ি।
যষ্টি ভর করিয়া চলিল যত বুড়ী।।
পঞ্চ ভাই গেলেন যেখানে জ্যেষ্ঠতাত।
একে একে তাঁহারে করেন প্রণিপাত।।
কুন্তীসহ অন্তঃপুরে গিয়া যাজ্ঞসেনী।
একে এক সম্ভাষেন কৌরব-রমনী।।
তবে ধৃতরাস্ট বলে ভাই পঞ্চজনে।
হস্তিনা বসতি তব নহে সুশোভন।।
খাণ্ডবপ্রস্থেতে যাহ পঞ্চ সহোদর।
অর্দ্ধ রাজ্য ভোগ কর ইন্দ্রের সোসর।।
শুনিয়া যুধিষ্ঠির করিলেন স্বীকার।
খাণ্ডবপ্রস্থেতে সবে কৈল আগুসার।।
পাণ্ডবের আগমন জানি যদুবর।
বলভদ্র সনে যান হস্তিনা-নগর।।
ধৃতরাষ্ট্র যে বলিল পাণ্ডবের প্রতি।
খাণ্ডবে রহিতে কৃষ্ণ দেন অনুমতি।।
বলভদ্র জনার্দ্দন পঞ্চ সহোদর।
শুভক্ষণে করিলেন আরম্ভ নগর।।
প্রাচীর হইল উচ্চ আকাশ সমান।
চতুর্দ্দিকে গড়খাই সমুদ্র প্রমাণ।।
উচ্চ উচ্চ মন্দির করিল মনোরম।
কিবা সে অমরাবতী ভোগবতী সম।।
প্রাচীর উপরে সব অস্ত্র পূর্ণ কৈল।
ভক্ষ্য ভোজ্য পদাতিক প্রজাগণ থুল।।
কুবের ভাণ্ডার জিনি পূরাইল ধন।
শুক্লবর্ণ সব গৃহ বিচিত্র শোভন।।
বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ ক্ষত্র বৈশ্যজাতি।
নগরের মধ্যস্থলে করিল বসতি।।
পাঠক লেখক বৈদ্য চিকিৎসক জন।
সূত্রধর বণিক জাতি আর শূদ্রগণ।।
বসিল সকল লোক নগর-ভিতরে।
পাণ্ডব-নগরবাসী ইন্দ্রে নাহি ডরে।।
স্থানে স্থানে নগরে রোপিল বৃক্ষগণ।
পিপ্পলী কদম্ব আম্র পনস কানন।।
জম্বীর পলাশ তাল তমাল বকুল।
নাগেশ্বর কেতকী চম্পক রাজফুল।।
পাটলি বদরী বেল করবী খদির।
পারিজাত আমলকী পর্কটী মিহির।।
কদলী গুবাক নারিকেল সুখর্জ্জুর।
নানাবর্ণে বৃক্ষ শোভে যেন সুরপুর।।
স্থানে স্থানে খোদাইল দীঘি পুষ্করিণী।
জলচর পক্ষিগণ সদা করে ধ্বনি।।
দ্বিতীয় ইন্দ্রের পুর দেখি সুশোভন।
ইন্দ্রপ্রস্থ নাম রাখিলেন নারায়ণ।।
পাণ্ডবেরে স্থাপি তথা হলধর হরি।
বিদায় হইয়া যান দ্বারকা নগরী।।
পাণ্ডবের রাজ্য প্রাপ্তি দারিদ্র্য খণ্ডন।
আদিপর্ব্ব ভারত ব্যাসের বিরচিত।
পাঁচালি প্রবন্ধে কাশীরাম গায় গীত।।