১০৫. দ্রুপদ-রাজপুরে পাণ্ডবদিগকে আনয়ন

শুনিয়া দ্রুপদ রাজা আনন্দিত মনে।
উঠি বসি রাত্রি পোহাইল জাগরণে।।
পূর্ব্বভিতে দেখি রাজা অরুণ-উদয়।
পুরোহিত-দ্বিজে কহে করিয়া বিনয়।।
কুম্ভকার-শালে তুমি যাহ শীঘ্রগতি।
পরিচয় লহ, তারা হয় কোন্ জাতি।।
রাজার পাইয়া আজ্ঞা চলিল ব্রাহ্মণ।
ব্রাহ্মণে দেখিয়া প্রণমিল পঞ্চজন।।
যুধিষ্ঠিরে চাহিয়া বলয়ে দ্বিজমণি।
সত্যশীল শ্রেষ্ঠ তুমি, বুঝি অনুমানি।।
যাহা জিজ্ঞাসিব নাহি করিবা ভণ্ডন।
পরিচয় হচ্ছে তোমা দ্রুপদ-রাজন।।
দ্রুপদ-রাজার এই মানস আছিল।
দ্রৌপদী কুমারী তাঁর যে দিনে জন্মিল।।
কুরুবংশে পাণ্ডুরাজা সখা প্রিয়তর।
তাঁর পুত্রে কন্যা দিব, চিন্তিল অন্তর।।
গৃহদাহে মাতা সহ মৈল পঞ্চ ভাই।
সবে এই কথা কহে, প্রত্যয় না যাই।।
ব্যাস সহ যুক্তি করি লক্ষ্য কৈল পণ।
বিনা পার্থ বিন্ধিতে নারিবে অন্য জন।।
এই হেতু মনে বড় আছয়ে সন্দেহ।
কে তুমি, কাহার পুত্র, পচিয় দেহ।।
ধর্ম্ম কহে, পরিচয়ে কোন্ প্রয়োজন।
জাতির নির্ণয় নাহি লক্ষ্য কৈলে পণ।।
সেই পণে এই কন্যা আনিল জিনিয়া।
এক্ষণে কি কাজ জাতি বর্ণ জিজ্ঞাসিয়া।।
পুরোহিত বলে, তাহা কে লঙ্ঘিতে পারে।
পরিচয় দিয়া প্রীত করহ রাজারে।।
যুধিষ্ঠির বলে, গিয়া কহ নৃপবরে।
হীনজাতি জন কি বিন্ধিতে লক্ষ্য পারে।।
শুনি পুরোহিত গিয়া দ্রুপদে কহিল।
পরিচয় না পাইয়া নৃপতি চিন্তিল।।
পুত্রগণ সহ তবে বিচার করিয়া।
ছয়খান রথ তবে দিল পাঠাইয়া।।
পুত্রে পাঠাইল আগুসরি লইবারে।
রথ লইয়া ধৃষ্টদ্যুন্ন গেল তথাকারে।।
চিহ্ন জানিবারে পথে থুইল রাজন।
পাশাক্রীড়া বেদবিদ্যা পুরাণ পঠন।।
ধান্য যব নানা শস্য রাখে দুই ভিতে।
ধনুকাটি নানা অস্ত্র তূণের সহিতে।।
নট নটী নৃত্য করে, বন্দীগণে গান।
চারিভিতে সুসজ্জিত অশ্ব গজ যান।।
রথ লৈয়া ধৃষ্টদ্যুম্ন গেল শীঘ্রগতি।
সবিনয়ে বলে তবে ধর্ম্মরাজ প্রতি।।
পাঠাইল নরপতি পরম আদরে।
কৃষ্ণা সহ পঞ্চ ভাই চল তথাকারে।।
ধর্ম্মরাজ শুনিয়া বিলম্ব না করিয়া।
পঞ্চ ভাই পঞ্চ রথে চড়িলেক গিয়া।।
এক রথে কৃষ্ণা সহ ভোজের নন্দিনী।
বাজিল বিবিধ বাধ্য সুমঙ্গল ধ্বনি।।
দুই ভিতে নানারত্ন থুইল রাজন।
কারু ভিতে না চাহিল ভাই পঞ্চ জন।।
বিচারে জানিল যত পাত্র মিত্রগণে।
সামান্য নয় এই ভাই পঞ্চজনে।।
তাঁহাদের কর্ম্ম দেখি সবার বিস্ময়।
লোকে বলে ছদ্ম দ্বিজ মনুষ্য এ নয়।।
যথায় দ্রুপদ ভূপ রত্ন-সিংহাসনে।
বেষ্টিত হইয়া যত পাত্র মিত্রগণে।।
তথা আসি উপস্থিত ভাই পঞ্চজন।
উঠিয়া আপনি রাজা কৈল সম্ভাষণ।।
কুন্তী সহ দ্রৌপদীরে অন্তঃপুরে নিল।
নারীগণ হুলুধ্বনি করিতে লাগিল।।
মহাভারতের কথা শ্রবণে মঙ্গল।
কাশীরাম কহে, লভে ভারতের ফল।।