১৪০. অভিমানে দুর্য্যোধনের স্বদেশ যাত্রা ও অর্জ্জুনের সহিত সুভদ্রার বিবাহ

তবে রাজা দুর্য্যোধন সর্ব্ব সৈন্য লৈয়া।
যাদব-সৈন্যের মধ্যে উত্তরিল গিয়া।।
শুনিল নিলেন পার্থ সুভদ্রা হরিয়া।
মহাক্রোধে দুর্য্যোধন উঠিল গর্জ্জিয়া।।
হে কৃপ, হে পিতামহ আচার্য্য বিদুর।
সাক্ষাতে দেখহ কর্ম্ম তনয় পাণ্ডুর।।
যে কন্যা নিমিত্ত রাম আনিলেন মোরে।
দেখহ দুষ্টের কর্ম্ম হরিল তাহারে।।
মোর দোষাদোষ সব জ্ঞাত হৈলা সবে।
এক্ষণে মারিব, দেখ কে রাখে পাণ্ডবে।।
কর্ণ বলে, মহারাজ বসি দেখ তুমি।
আজ্ঞা দিলে অর্জ্জুনে বান্ধিয়া আনি আমি।।
শুনি আজ্ঞা দিল তারে গান্ধারী-নন্দন।
শীঘ্র ধায় কর্ণ বীর লোহিত-লোচন।।
বৃকোদর বলে, কোথা যাস্ সূতসুত।
অর্জ্জুনে ধরিতে যাস্ বড়ই অদ্ভুত।।
সুরাসুর যক্ষ যারে না পারে সমরে।
তাহারে ধরিতে যাস্, লজ্জা নাহি করে।।
আরে মুখ দুরাচার এত অহঙ্কার।
এমত প্রতিজ্ঞা কর অগ্রেতে আমার।।
মম হস্তে রহে যদি তোমার জীবন।
তবে পার্থ সহ তুমি কর গিয়া রণ।।
এত বলি লাফ দিয়া পড়িল ধরণী।
গদা ফিরাইয়া যান যেন চক্রপাণি।।
বিদুর বলিল, তাত শুন দুর্য্যোধন।
পার্থ সহ দ্বন্দ্বে কি তোমার প্রয়োজন।।
বরণ করিয়া তোমা আনিল যে জন।
তাঁর ঠাঁই আগে গিয়া জিজ্ঞাস কারণ।।
সে যেমন কহিবে, করিবে সেই রীত।
পার্থ সহ কলহ তোমার অনুচিত।।
ভীষ্ম দ্রোণ বলিলেন এই সুবিচার।
যে আনিল, তাঁর ঠাঁই জান একবার।।
অনেক করিয়া দ্বন্দ্ব করিল বারণ।
দ্বারাবতী চলিল নৃপতি দুর্য্যোধন।।
হেনকালে উপনীত হইল সাত্যকি।
মধুর কোমল ভাষে পার্থে বলে ডাকি।।
ক্রোধ ত্যজ ধনঞ্জয়, কি হেতু আক্রোশ।
না জানিয়া শিশু সব করিয়াছে দোষ।।
তোমার সহিত দ্বন্দ্ব কৈল না জানিয়া।
রাম কৃষ্ণ মন্দ বলিলেন তা শুনিয়া।।
এ কারণে শীঘ্রগতি পাঠালেন মোরে।
প্রবোধিয়া তোমারে বাহুড়ি লইবারে।।
একত্র বসিয়া যত বৃঞ্চি-ভোজগণ।
সুভদ্রাকে তোমারে করিবে সমর্পণ।।
সাত্যকির এতেক বিনয় বাক্য শুনি।
ত্যজিয়া সংগ্রাম শান্ত হৈলেন ফাল্গুনি।।
দুর্য্যোধন শুনি অভিমানেতে রহিল।
সসৈন্যে আপন দেশে বাহুড়ি চলিল।।
তবে পার্থ দারুকে করিয়া কৃতাঞ্জলি।
সবিনয়ে কহিতে লাগিল মহাবলী।।
যথা কৃষ্ণ তথা তুমি ইথে নাহি আন।
করিলাম অপরাধ, ক্ষম মতিমান।।
দারুক কহিল, পার্থ কৈল বড় কর্ম্ম।
বন্ধন এ নহে মম, রক্ষা কৈলে ধর্ম্ম।।
তুমি যদি আমারে না করিতে বন্ধন।
কোন্ লাজে দেখাতাম রামেরে বদন।।
এই মত লহ মোরে সাক্ষাতে তাঁহার।
নহিলে রামের ক্রোধ হইবে অপার।।
অর্জ্জুন বলেন, ইহা না হয় উচিত।
তোমার বন্ধনে কৃষ্ণ হবেন কুপিত।।
চিত্তে করিবেন রাম কপট বন্ধন।
এত বলি মুক্ত করি দিলেন তখন।।
তবে যত যদুগণ সন্তুষ্ট হইয়া।
লইল অর্জ্জুন বীরে আদর করিয়া।।
ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য্য বিদুর সুমতি।
ভূরিশ্রবা সোমদত্ত বাহ্লীক প্রভৃতি।।
সর্ব্ব সৈন্য লৈয়া ভীম অর্জ্জুনের আগে।
পশ্চাৎ যাদব কাম আদি বীরভাগে।।
আগুসারি লইলেন দেব নারায়ণ।
হুলাহুলি দিল যত যদুনারীগণ।।
রত্নময় আসনে দোঁহারে বসাইয়া।
বেদ-অনুসারে তবে করাইল বিয়া।।
বসুদেব করিলেন ভদ্রা সম্প্রদান।
যতেক যৌতুক দিল নাহি পরিমাণ।।
ভারতের পুণ্যকথা শুনে পুণ্যবান।
পৃথিবীতে নাহি সুখ ইহার সমান।।