১২৩. মহাদেবের যুদ্ধক্ষেত্রে আগমন

গোবিন্দ ইন্দ্রের রণ নাহি অবসান।
ত্রিলোকের লোক শব্দে হয় হতজ্ঞান।।
দেখিয়া নারদ মুনি হইয়া চিন্তিত।
ক্ষীরোদে কশ্যপ-স্থানে গেলেন ত্বরিত।।
নারদ বলেন, আছ কশ্যপ কি কাজে।
প্রমাদ পাড়িল তব পুত্র দেবরাজে।।
অজ্ঞান হইয়া করে কৃষ্ণ সহ রণ।
না মারেন কৃষ্ণ, তেঁই জীয়ে এতক্ষণ।।
দেবরাজ পরাক্রম করিলেন সব।
নিজ অস্ত্র অদ্যাপি না ছাড়েন মাধব।।
সুদর্শন যদ্যপি ছাড়েন নারায়ণ।
কাটিবেন ইন্দ্রেরে রাখিবে কোন্ জন।।
শুনিয়া কশ্যপ মুনি চিন্তান্বিত হন।
কেমনে দোঁহার দ্বন্দ্ব হৈবে নিবারণ।।
দোঁহার মধ্যস্থ শিব বিনা অন্যে নারে।
এত চিন্তি কশ্যপ করেন স্তুতি হরে।।
কশ্যপের স্তবে তুষ্ট হয়ে ত্রিলোচন।
যুদ্ধ-স্থানে গেলেন করিতে নিবারণ।।
খগেন্দ্রে উপেন্দ্র ও গজেন্দ্রে ইন্দ্ররাজ।
যোগীন্দ্র বৃষেন্দ্রারূঢ় দাঁড়াইল মাঝ।।
হরিরে কহেন হর, কর অবধান।
তব সহ সমরে কি ইন্দ্র বলবান।।
দেবরাজ করি তুমি করিলা স্থাপিত।
এক্ষণে নিগ্রহ তারে না হয় উচিত।।
গোবিন্দ বলেন, ইন্দ্র স্বর্গভোগ করে।
এক পারিজাত বৃক্ষ না দেয় আমারে।।
স্বতন্ত্র তাহার উপার্জ্জিত নহে ফুল।
ক্ষীরোদ মথিয়া পায় সুরাসুর-কুল।।
মথনের দ্রব্যে সবাকার ভাগ আছে।
বিশেষে বামন আমি, জন্ম তার পাছে।।
ঐরাবত উচ্চৈঃশ্রবা স্বর্গে যত সুখ।
সকল ইন্দ্রের ভূষা আমি সে বিমুখ।।
একমাত্র পারিজাত বৃক্ষ আমি মাগি।
উচিত কি তার দ্বন্দ্ব করা ইহা লাগি।।
গোবিন্দের মুখে শুনি এতেক বচন।
ইন্দ্রস্থানে চলিলেন দেব পঞ্চানন।।
গিরীশ বলেন, ইন্দ্র হইলা অজ্ঞান।
না জানহ নারায়ণ পুরুষ-প্রধান।।
তাঁর সহ কর দ্বন্দ্ব নাহিক কল্যাণ।
মম বাক্যে সুরপতি কর সমাধান।।
পারিজাত চাহে যদি যদু-বংশপতি।
পুষ্প দিয়া সম্প্রীত করহ সুরপতি।।
ইন্দ্র বলে, পশুপতি কর অবধান।
ঐরাবত উচ্চৈঃশ্রবা আদি যে বাহন।।
শচী বজ্র পারিজাত নন্দন-কানন।
ইহাতে ইন্দ্রত্ব মম স্বর্গের ভূষণ।।
পারিজাত লৈবে যদি দৈবকী-কুমার।
স্বর্গেতে ইন্দ্রত্ব মোর কি রহিল আর।।
মহেশ বলেন, হরি খর্ব্ব অবতারে।
তোমার কনিষ্ঠ ভাই অদিতি-উদরে।।
কনিষ্ঠের ভাগ মাগিলেন নারায়ণ।
দেহ পুষ্পরাজ দ্বন্দ্ব হৌক নিবারণ।।
ইন্দ্র বলে, তব বাক্য না করিব আন।
আমার কনিষ্ঠ ভাই যদি ভগবান।।
জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠে যেমন আছে ব্যবহার।
তাহা না করিয়া কেন করে অত্যাচার।।
না করিয়া মান্য মোরে লয়ে যায় বলে।
বলে নিল বলিয়া ঘুষিবে ভূমণ্ডলে।।
এত শুনি কহে শিব গোবিন্দে চাহিয়া।
ক্রোধ ত্যজ যদুনাথ আমারে দেখিয়া।।
অজ্ঞানে হইল মত্ত দেব সুরপতি।
সেই হেতু করে যুদ্ধ তোমার সংহতি।।
আপন ইন্দ্রত্ব তুমি দিয়াছ উহারে।
বিবিধ উৎপাতে রাখিয়াছ বারে বারে।।
আপন অর্জ্জিত যদি বিষবৃক্ষ হয়।
কাটিতে আপন হস্তে সমুচিত নয়।।
পারিজাত পুষ্প লয়ে যাহ, বাধা নাই।
মান্য করি লহ ইন্দ্রে, হয় জ্যেষ্ঠ ভাই।।
আমার বচন দেব করহ পালন।
শিব-বাক্য স্বীকার করেন নারায়ণ।।
গেলেন গোবিন্দে লয়ে শিব ইন্দ্র-স্থানে।
প্রণাম করেন হরি কনিষ্ঠ-বিধানে।।
হৃষ্ট হয়ে দেবরাজ কৃষ্ণে কোল দিয়া।
পারিজাত-বৃক্ষ দিল নিয়ম করিয়া।।
যাবৎ থাকিয়া তুমি অবনী-মণ্ডলে।
তাবৎ থাকিবে পুষ্প আসিবেক কালে।।
এত বলি দেবরাজ স্বর্গেতে চলিল।
সত্যভামা পানে চাহি ইন্দ্রাণী হাসিল।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম কহে, সাধু সদা করে পান।।