১১৮. সুভদ্রা ও অর্জ্জুনের বিবাহ হেতু সত্যভামার দূতীয়ালী

তবে নিশাকালে সত্রাজিতের নন্দিনী।
একান্তে কহেন কান্তে ভদ্রার কাহিনী।।
তোমার ভগিনী ভদ্রা ত্যজিবেক প্রাণ।
তার হেতু আপনি করহ অবধান।।
যতক্ষণ দেখিয়াচে পার্থের বদন।
তিল এক নাহি ছাড়ে আমার সদন।।
বলে মোরে অর্জ্জুনেরে দেহ পতি করি।
নহে নারী-বধ দিব তোমার উপরি।।
গোবিন্দ বলেন, আমি ভাবিতেছি মনে।
আসিয়াছে অর্জ্জুন এখানে বহুদিনে।।
কোন্ ধনে সন্তোষ করিব অর্জ্জুনেরে।
ভাল হৈল, সুভদ্রারে দান দিব তারে।।
করাইব বিবাহ দোঁহার যে প্রকার।
আজি নিশা তুমি বোধ করাহ ভদ্রার।।
সত্যভামা বলে, নহে বিলম্বের কথা।
আজি নিশা পার্থ বিনা মরিবে সর্ব্বথা।।
গোবিন্দ বলেন, যে আমার সাধ্য নয়।
কর গিয়া যেমনে সঙ্কট নাহি হয়।।
সত্যভামা বুঝি তবে কৃষ্ণের সম্মতি।
লৈয়া যান সুভদ্রায় যথা পার্থ রথী।।
দুয়ার করিয়া বন্ধ কনক-কপাটে।
শুইয়া আছেন পার্থ রত্নময় খাটে।।
অর্জ্জুন অর্জ্জুন বলি ডাকিলা শ্রীমতী।
কে তুমি বলিয়া জিজ্ঞাসেন মহামতি।।
সত্যভামা বলিলেন সত্রাজিত-সুতা।
ঘুচাও কপাট, কিছু আছে গুপ্তকথা।।
অর্জ্জুন বলেন, হৈল অর্দ্ধেক রজনী।
এক রাত্রে আইলেন কি হেতু আপনি।।
যদি কার্য্যে ছিল তব, পাঠাইলে দূতে।
আজ্ঞামাত্র তথায় যাইতাম অগ্রেতে।।
ইহা না করিয়া তুমি আইলা আপনি।
যে আজ্ঞা করিবা, কাল করিব তখনি।।
সত্যভামা বলেন, যে দূত-কর্ম্ম নয়।
সে কারণে আইলাম তোমার আলয়।।
তোমার কষ্টের কথা শুনিয়া শ্রবণে।
না হইল নিদ্রা মম, মহাতাপ মনে।।
এক ভার্য্যা প্ঞ্চ ভাই কি সুখে নিবস।
যেই হেতু দ্বাদশ বৎসর বনবাস।।
সেই হেতু আইলাম হৃদয়ে বিচারি।
আমি দিব পরমা সুন্দরী এক নারী।।
অর্জ্জুন বলেন, এত স্নেহ কর মোরে।
পালিব সকল আজ্ঞা গোবিন্দ-গোচরে।।
সত্যভামা বলিলেন, বিলম্বে কি কাজ।
গান্ধর্ব্ব-বিবাহ কর রজনীর মাঝ।।
পার্থ বলিলেন, কহ অদ্ভুত এ কথা।
কেবা সে সুন্দরী হয় কাহার দুহিতা।।
না জানিয়া না শুনিয়া তদন্ত তাহার।
বিবাহ করিতে বল কেমন বিচার।।
সত্যভামা বলিলেন, খুলুন্ দুয়ার।
আনিয়াছি কন্যা, দেখ চক্ষে আপনার।।
যদুকুলে জন্ম কন্যা প্রথম যৌবনী।
বিদ্যুৎবরণী রূপে ত্রৈলোক্যমোহিনী।।
অর্জ্জুন বলেন, একি আমার শকতি।
বলভদ্র জনার্দ্দন যদুকুল-পতি।।
তাঁদের অজ্ঞাতে আমি লইব যাদবী।
লজ্জা দিতে মোরে চাহ কিগো মহাদেবী।।
দেবী বলিলেন, ইহা বলিব কেমনে।
মন বান্ধিয়াছে কৃষ্ণা ঔষধের গুণে।।
পাঞ্চালের কন্যা জানে মহৌষধি-গাছ।
এক তিল পঞ্চ স্বামী নাহি ছাড়ে পাছ।।
যে লোভে নারদ-বাক্য করিলা হেলন।
দ্বাদশ বৎসর ভ্রমিতেছ বনে বন।।
ইহাতে তোমার লজ্জা কিছু নাহি ভয়।
কি মতে করিবা বিভা দ্রৌপদীর ভয়।।
পার্থ বলিলেন, দেবী না নিন্দ দ্রৌপদী।
ত্রিজগৎ-জনে খ্যাত তব মহৌষধি।।
ষোলশত-সহস্র যে অষ্ট পাটরাণী।
সবা হৈতে কোন্ গুণে তুমি সোহাগিনী।।
অপুত্রা কি রূপহীনা হীনকুল-জাত।
রুক্মিণী প্রভৃতি কন্যা পাটরাণী সাত।।
ঔষধের গুণে হরি তোমারে ডরান।
তোমার সাক্ষাতে চক্ষে অন্যে নাহি চান।।
দিব্যরত্ন বসন ভূষণ অলঙ্কার।
যেখানে যা পান কৃষ্ণ, সকলি তোমার।।
অন্য জনে দিলে তুমি পরাণ না ধর।
কহ মহাদেবী ইহা কোন্ গুণে কর।।
রুক্মিণীরে দেন কৃষ্ণ এক পারিজাত।
তাহাতে করিলে যাহা, জগতে বিখ্যাত।।
জন্মেজয় জিজ্ঞাসেন, মুনির সদনে।
কহ শুনি পারিজাত হরণ কেমনে।।
কি হেতু হইল দ্বন্দ্ব রুক্মিণী সহিত।
শুনিবারে ইচ্ছা হয় ইহার চরিত।।
মহাভারতের কথা অমৃতের ধার।
কাশী কহে, ইহা বিনা সুখ নাহি আর।।