১৩৮. বলরামের নিকট অর্জ্জুনের রণজয় সংবাদ

সসৈন্যে বাহির হইলেন বলরাম।
হেনকালে দূত আসি করিল প্রণাম।।
ঊর্দ্ধশ্বাসে কহে বার্ত্তা কান্দিতে কান্দিতে।
আর রক্ষা নাহি প্রভু অর্জ্জুনের হাতে।।
সুভদ্রা চালায় রথ না পাই দেখিতে।
কখন আকাশে উঠে, কখন ভূমিতে।।
কখন লুকায় মেঘে, ক্ষণে শূন্য মাঝে।
নর্ত্তক খঞ্জন প্রায় ঘন ফেরে তেজে।।
দক্ষিণ বামেতে রথ বায়ুবেগে ছুটে।
ক্ষণে ক্ষণে থাকি সূর্য্যমণ্ডলেতে উঠে।।
যুদ্ধ করে পার্থ সব সৈন্যের সম্মুখে।
কোন্ ঠাঁই থাকে, তাঁকে কেহ নাহি দেখে।।
নানা বর্ণে ধনঞ্জয় অস্ত্রগণ ফেলে।
অগ্নি-অস্ত্রে কোথায় পোড়ায় দাবানলে।।
কোনখানে বায়ুতে ফেলায় সৈন্যগণ।
কোথাও ভুজঙ্গ অস্ত্র করে বরিষণ।।
কোনখানে জলবৃষ্টি, শীতে কাঁপে তনু।
কোনাখানে শরজালে না দেখি যে ভানু।।
সেই সে সবারে মারে, কেহ তারে নারে।
যতেক মারিল সৈন্য কে কহিতে পারে।।
তার যুদ্ধ দেখিয়া হইল চমৎকার।
বার্ত্তা দিতে পাঠাইল যতেক কুমার।।
মুষলী বলেন, দূত কহ সত্যকথা।
এমত তুরগ রথ পাইল সে কোথা।।
দূত বলে, যাদবেন্দ্র কহিবারে ভয়।
গোবিন্দের রথোপরে সুগ্রীবাদি হয়।।
সারথি দারুক বান্ধা আছে বসি রথে।
সুভদ্রা চালায় রথ দেখিনু সাক্ষাতে।।
দূতমুখে বলভদ্র শুনি এত কথা।
ভূমিতলে বসিলেন হেঁট করি মাথা।।
ক্রোধেতে সর্ব্বাঙ্গে পড়য়ে কালঘাম।
যদুগণে চাহিয়া বলেন বলরাম।।
গোবিন্দ যে করয়ে আমার অপমান।
আপন সারথি দিল অশ্ববয় যান।।
অর্জ্জুনের কি শক্তি যে হেন কর্ম্ম করে।
না বুঝিয়া দোষী আমি করি অর্জ্জুনেরে।।
আমার সম্মুখে কহে কপট বচন।
কোন্ লাজে লোকে আমি দেখাব বদন।।
দুর্য্যোধনে ডাকাইনু বিবাহ কারণ।
অধিবাস হেতু বসিয়াছে দ্বিজগণ।।
এত বলি অধোমুখে বসিলেন রাম।
হেনকালে আইলেন নবঘনশ্যাম।।
ভূমে পড়ি বলদেবে করেন প্রণাম।
ক্রোদে না চাহেন নারায়ণে বলরাম।।
গোবিন্দ বলেন, কেন ক্রোধ কর স্বামী।
তব পদে কোন অপরাধ করি আমি।।
উগ্রসেন বলে তুমি করিলা কুকর্ম্ম।
ভদ্রা নিতে পার্থে বল, নহে এই ধর্ম্ম।।
নিজ রথ তুরঙ্গ সারথি দিলা তারে।
তোমারে না দিয়া দোষ দিব আর কারে।।
গোবিন্দ বলেন, ইহা জানে সর্ব্বজন।
সেই রথে চাড়ি পার্থ ভ্রমে অনুক্ষণ।।
কিমতে জানিব সে সুভদ্রা লবে হরি।
নর-মায়া বুঝিবারে নাহি আমি পারি।।
ইথে অকারণে প্রভু আমারে আক্রোশ।
ভদ্রা যদি বাহে রথ, দারুকে কি দোষ।।
কহ সত্য পুনঃ দূত দারুকের কথা।
কিরূপে দারুক আছে অর্জ্জুনের সেথা।।
দূত বলে, দারুক আপন বশে নাই।
বন্ধন করিয়া তারে রাখিল গোঁসাই।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেন, শুন যতেক যাদব।
এই কথা বুঝহ করিয়া অনুভব।।
আদিপর্ব্ব ভারত বিচিত্র উপাখ্যান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।