১৩৭. যাদবগণের অর্জ্জুনের পশ্চাদ্ধাবন

গদ শাম্ব চারুদেষ্ণ সাত্যকি সারণ।
চালাইয়া দিল রথ পবন-গমন।।
না পলাও, শুন পার্থ ডাকে যদুগণ।
শুনিয়া দারুক প্রতি বলয়ে অর্জ্জুন।।
ফিরাও দারুক রথ ডাকে ক্ষত্রগণে।
না দিয়া প্রবোধ তারে যাইব কেমনে।।
দারুক বলিল, পার্থ কহ কি অদ্ভুত।
গোবিন্দ অধিক দেখি গোবিন্দের সুত।।
অপ্রমিত পরাক্রম ত্রৈলোক্যে অজেয়।
দেখ পাছে আসে যেন সমুদ্র-প্রলয়।।
ইহা সব সহ যুদ্ধ না হয় উচিত।
সময় বুঝিয়া যুঝি আছে ক্ষত্রনীত।।
এ কর্ম্মে আমার শক্তি নহে কদাচন।
পলাইতে যথা চাহ বলহ এক্ষণ।।
যথা আজ্ঞা কর রথ লইব সত্বর।
ইন্দ্রপ্রস্থে লইব কিম্বা ইন্দ্রের নগর।।
কুবের বরুণ যম ইন্দ্রের সদনে।
যথায় কহিবা, রথ লইব এক্ষণে।।
কেবল না পারি আমি রথ ফিরাইতে।
কিমতে করাব যুদ্ধ যাদব সহিতে।।
কৃষ্ণপুত্রে প্রহারিবে চড়ি এই রথে।
মম শক্তি নহিবে তুরগ চালাইতে।।
পার্থ বলে, দারুক এ নহে ব্যবহার।
যুদ্ধ হেতু ডাকে বীর পশ্চাতে আমার।।
নহে ক্ষত্রধর্ম্ম আমি যাইব ছাড়িয়া।
বিশেষ আমার পাছে আইল তাড়িয়া।।
হেন অপযশ মম ঘুষিবে ভুবেনে।
শৃগালের প্রায় যাব কি কাজ জীবনে।।
কৃষ্ণপুত্র অথবা আপনি কৃষ্ণ আইসে।
কিম্বা যুধিষ্ঠির ভীম সমরে প্রবেশে।।
যুদ্ধ হেতু মোরে যে ডাকিবে ক্ষত্র হৈয়া।
যেই হৌক সংগ্রাম করিব বাহুড়িয়া।।
নিশ্চয় জানিনু তুমি যদু-কুলহিত।
নারিবে সারথি-কর্ম্ম করিতে উচিত।।
অবিশ্বাস তোমাতে বিশেষে রণস্থলী।
ফেলাহ প্রবোধবাড়ি ছাড় কড়িয়ালী।।
চালাইব রথ আমি করিব সমর।
এত বলি বাড়ি কড়িয়ালি নিল কর।।
পাশ-অস্ত্রে দারুকেরে রাখিয়া বন্ধনে।
বান্ধিলেন রথস্তম্ভে আপন দক্ষিণে।।
এক পদে কড়িয়ালি আর পদে বাড়ি।
ধনুর্গুণ টঙ্কারি রহিলেন বাহুড়ি।।
ভদ্রা বলে, মহাবীর এত কষ্ট কেনে।
আজ্ঞা কর আমারে চালাই অশ্বগণে।।
এই রথে সত্যভামা রুক্মিণীর সঙ্গে।
তিনপুর ভ্রমণ করিনু কত রঙ্গে।।
স্নেহে মোরে সত্যভামা সঙ্গে করি লয়।
সারথি হইয়া আমি চালাতাম হয়।।
আমার নৈপুণ্য দেখি দেব দামোদর।
ধন্য ধন্য বলি প্রশংসিলা বহুতর।।
আজ্ঞা কর, রথ চালাইব কোন্ পথে।
এত বলি কড়িযালি বাড়ি নিল হাতে।।
চালাইয়া দিল রথ বায়ুবেগে চলে।
না দেখিতে গেল রথ আদিত্যমণ্ডলে।।
তথা হৈতে চালাইয়া দিল হয়বর।
রথের চঞ্চল গতি অতি মনোহর।।
বিদ্যুৎবরণী ভদ্রা পার্থ জলধর।
বিদ্যুতের প্রায় পশে মেঘের ভিতর।।
দৃষ্টিমাত্রে যতেক যাদব বীরগণ।
মূর্চ্ছা হৈয়া রথেতে পড়িল সর্ব্বজন।।
অনেক মারেন সেনা পার্থ ধনুর্দ্ধর।
কোটি কোটি রথী পড়ে, অসংখ্য কুঞ্জর।।
রক্তে নদী বহে, সব রক্তেতে সাঁতারে।
কাল-রূপ দেখি পার্থে ভঙ্গ দিল ডরে।।
কামদেব সারণ বিচারি মনে মন।
রামের নিকটে দূত করিল প্রেরণ।।
অমৃত-সমান মহাভারতের কথা।
শ্রবণে পঠনে ঘুচে পাপ তাপ ব্যথা।।