১৩৯. বলরামের সহিত শ্রীকৃষ্ণের কথোপকথন

পুনরপতি কহে দূত করি যোড়হাত।
কি কারণে নিঃশব্দে রহিলা যদুনাথ।।
আজ্ঞা দেহ, আমি এবে করিব কি কাজ।
বার্ত্তা হেতু পাঠাইল কুমার-সমাজ।।
কামদেব মহাবীর যাদব-প্রধান।
তিন লোক মধ্যে যার অব্যর্থ সন্ধান।।
তিল তিল গেল কাটা শর ধনুর্গুণ।
এক গুটি নাহি অস্ত্র শূন্য হৈল তূণ।।
শাম্ব গদ সারণ যতেক বীর আর।
যাদবে অক্ষত তনু নাহিক কাহার।।
কাহার নাহিক ধ্বজ, কাহার সারথি।
কাহার নাহিক রথ, নাহিক পদাতি।।
কাহার নাহিক অস্ত্র, কারো ধনুর্গুণ।
সবারে করিল জয় একাকী অর্জ্জুন।।
পাঠাইয়া দেহ অস্ত্র রথ অশ্ব আর।
আপনি চলহ কিম্বা দৈবকী-কুমার।।
মোর বাক্য শুন প্রভু দেখিনু স্বচক্ষে।
নারিবে অর্জ্জুনেরে কুমারগণ পক্ষে।।
স্নেহেতে অর্জ্জুন নাহি মারে শিশুগণে।
সেই হেতু এতক্ষণ জীয়ে সর্ব্বজনে।।
গোবিন্দ বলেন, আমি জানি অর্জ্জুনেরে।
যুদ্ধে তারে জিনে হেন না দেখি সংসারে।।
ইন্দ্র যম কুবের বরুণ পঞ্চানন।
অর্জ্জুনে জিনিবে হেন নাহি কোন জন।।
কি করিবে তাহারে এ সব শিশুগণে।
যা কহিলা সত্য, পার্থ নাহি মারে প্রাণে।।
তাহার সহিত দ্বন্দ্ব না হয় উচিত।
অর্জ্জুন ত নাহি কিছু করে অবিহিত।।
ক্ষত্রিয়ের ধর্ম্ম আছে শাস্ত্রের গোচরে।
বলেতে বিবাহ করে প্রশংসা তাহারে।।
তাই কহি কিবা দোষ কৈল ধনঞ্জয়।
আপন ভগিনী কর্ম্ম দেখ মহাশয়।।
অর্জ্জুনে তাহার যদি নাহি ছিল মন।
তবে কেন তার অশ্ব চালায় এক্ষণ।।
না জানে কি ধনঞ্জয় তোমার মহিমা।
এক্ষণে ভাঙ্গিতে পার তাহার গরিমা।।
কিন্তু পার্থে জীয়ন্তে না ধরিতে পারিবা।
অনেক করিলে শক্তি প্রাণেতে মারিবা।।
সুভদ্রা না জীবে তবে, ত্যজিবে জীবন।
কহ দেব ইথে হৈবে কি কর্ম্ম সাধন।।
এক্ষণে আমার এই মত মহাশয়।
সবাকার মত যদি তব আজ্ঞা হয়।।
প্রিয়ম্বদ একজন যাক আপনার।
প্রিয়বাক্যে ফিরাউক কুন্তীর কুমার।।
এক্ষণে আনিয়া তারে করাহ বিবাহ।
সংপ্রীতে সুভদ্রা তুমি তারে সমর্পহ।।
সকল মঙ্গল হৈবে, লোকেতে সম্মান।
মম চিত্তে ইহা বিনা নাহি লয় আন।।
কৃষ্ণের এতেক বাক্য শুনি হলধর।
ক্রোধ সম্বরিয়া তবে করিলা উত্তর।।
আমারে কি আর জিজ্ঞাসহ অকারণ।
করহ আপনি, তব যাহা লয় মন।।
যাহা চিত্তে করিয়াছ তাহাই হইবে।
তুমি যে কহিবা তাহা অন্য কে করিবে।।
আপনি সাত্যকি তুমি করহ গমন।
আনহ অর্জ্জুনে কহি মধুর বচন।।
এত বলি সাত্যকিরে পাঠাইয়া দিল।
ততক্ষণে রথে চড়ি সাত্যকি চলিল।।
আদিপর্ব্বে ভারত বিচিত্র উপাখ্যান।
কাশীদাস কহে, সাধু সদা করে পান।।