ঋগ্বেদ ০৯।০৭৮
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৭৮
ঋষি ও দেবতা পূর্ববৎ।
১। এই শোভাধারি সোমরস শব্দ করিতে করিতে ক্ষরিত হইতেছেন, ইনি জলের সহিত মিশ্রিত হইয়া স্তুতিবাক্য গ্রহণ করিতেছেন। ইহার যে সমস্ত অসার অংশ থাকে, মেষলোমময় পবিত্র বস্ত্রের দ্বারা তাহা ধরিয়ারাখে। এইরূপে শোধিত হইয়া ইনি দেবতাদিগের নিকট গমন করেন।
২। হে বিচক্ষণ, সুপণ্ডিত সোমরস! ঋত্বিকেরা তোমাকে ইন্দ্রের উদ্দেশে ঢালিয়া দিতেছেন, তুমি জলের সহিত মিশ্রিত হইতেছ। তোমার যাইবার অন্য বিস্তর পথ বিদ্যমান রহিয়াছে। যখন তুমি প্রস্তরফলকে অবস্থিত থাক, তখন তোমার সহস্র সহস্র হরিতবর্ণ কিরণ নির্গত হয়।
৩। আকাশবিহারিণী কয়েক জন অপসরা(১) আসিয়া মধ্যে উপবেশন পূর্বক সুপণ্ডিত সোমরসকে প্রস্তুত করিল। যাহাতে যজ্ঞের গৃহ অভিষিক্ত হইয়া যায়, তাহারা তাহাকে এইরূপে চালাইয়া দিতেছে এবং ইনি যখন ক্ষরিত হন, ইহার নিকট অক্ষয় সুখ যাচ্ঞা করিতেছে।
৪। সোমের প্রভাবে আমরা গাভী জয় করি, রথ, সুবর্ণ, পরম সুখ সকলি জয় করি, আমরা জল জয় করি এবং নানাবিধ বস্তু উপার্জন করি। ইনি মাদকতাশক্তিযুক্ত, ইহার তুল্য সুস্বাদু বস্তু আর কিছুই নাই, ইহার রস অতি চমৎকার, ইহার বর্ণ লোহিত, ইনি সুখের উৎপত্তিস্থান, এতাদৃশ এই সোমরসকে দেবতারা পান করিবার জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন।
৫। হে সোমরস! তুমি ক্ষরিত হইয়া আমাদিগের নিকট আগমন কর এবং পূর্বোক্ত সমস্ত সম্পত্তি আমাদিগের যথার্থ কর। কি দূরে, কি নিকটে আমাদিগের সকল শত্রু নষ্ট কর। আমাদিগকে সুবিস্তীর্ণ পথ প্রদান কর এবং সমস্ত ভয় নষ্ট কর।
————
(১) পৌরাণিক অপ্সরা কাহাকে বলে, তাঁহা আমরা জানি, কিন্তু ঋগ্বেদের অপ্সরা কী?
পন্ডিতবর গোলডষ্টুকর বিবেচনা করেন যে, সূর্য্যদ্বারা আকৃষ্ট জলীয় বাষ্প মেঘরূপ ধারণ করিলে তাঁহাকেই প্রথমে অপ্সরা কহিত। “Personifications of the vapours which are attracted by the sun and form into mist or clouds.”—Quoted in Muir’s Sanscrit Texts, vol. V. (1884), p. 345. কিন্তু অপ্সরার প্রথম কল্পনা যাহাই হউক, ঋগ্বেদ রচনার পূর্বেই অপ্সরাগণ সুন্দরী রমণী এরূপ বিশ্বাস উৎপন্ন হইয়াছিল।