ঋগ্বেদ ০৯।০৭৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৭৩
পবমান সোম দেবতা। পবিত্র ঋষি।
১। যাহার দ্বারা সোমরস নিষ্পীড়িত হন, সেই দুই খানি প্রস্তরফলক যেন যজ্ঞের সৃক্বস্বরূপ নিষ্পীড়নের সময় সোমরসের ধারাগুলি সেই দুই সৃ্ক্বকে (অর্থাৎ ওষ্ঠ প্রান্তকে) প্রতিধ্বনিত করে। সোমরসগুলি যজ্ঞস্থানে উপস্থিত হয়। সেই অসুর(১) সোমরস হইতেই দেবতা ও মনুষ্যদিগের বিহারার্থ তিন ভুবনের নির্মাণ হইয়াছে। সেই সোমই যথার্থ। তাহাকে রাখিবার জন্য যে চারটি স্থালী প্রস্তুত করা হয়, সে চারিটি স্থালী নৌকারস্বরূপ হইয়া সৎকৰ্ম্মানুষ্ঠানকারী ব্যক্তিকে পার করিয়া দেয়।
২। প্রধান প্রধান ঋত্বিকগণ সকলেই মিলিত হইয়া সুন্দররূপে সোমরসকে প্রেরণ করিতেছেন; তাহারা নানাবিধ ফল লাভের উদ্দেশে জলের মধ্যে সোমরসকে আন্দোলন করিতেছেন। তাঁহারা অতি চমৎকার স্তব পাঠ করিতে করিতে মাদকতা শক্তিযুক্ত সোমরসের ধারার দ্বারা ইন্দ্রের তেজঃ বর্ধিত করিতেছেন, যেহেতু ইন্দ্রের তেজঃ বৃদ্ধি হইলে তাহাদিগের মনে প্রীতি হয়।
৩। যাহাদিগের পবিত্র আছে, তাহারা বাক্যের চতুর্দিকে উপবেশন করেন। ইহাদিগের প্রাচীন পিতার ব্রত রক্ষা করেন। প্রকাণ্ড সমুদ্রকে বরুণ আচ্ছাদন করিলেন। পণ্ডিতেরাই ভিন্ন ভিন্ন আধারে আরম্ভ করিতে পারেন(২)।
৪। তাহারা সহস্রধারা বর্ষণকারী আকাশে অবস্থিত হইয়া নিম্নের দিকে শব্দ করিতেছে, আকাশের উচ্চ প্রদেশে জিহ্বাতে মধুধারণপূর্বক পরস্পর পৃথকরূপে তাহারা অবস্থিতি করে। ইহার শীঘ্রগামী, সার সমস্ত একবারও চক্ষু উন্মীলন করে না। তাহারা পদে পদে পরস্পর মিলিত হইয়া পাপীদিগকে পাশবদ্ধ করে।
৫। পিতা এবং মাতার উপর অধিষ্ঠানপূর্বক সাহারা শব্দ করিয়াছিল, তাহারা গুণকীর্তন লাভ করিয়া দীপ্তি পাইতে পাইতে অধার্মিক লোকদিগকে দগ্ধ করে। সে কৃষ্ণবর্ণ চর্মকে ইন্দ্র দেখতে পারেন না(৩) তাহার ক্ষমতাবলে সেই কৃষ্ণবর্ণ চর্মকে ভূলোক ও দ্যুলোক হইতে দূর করিয়া দেয়।
৬। তাহারা শ্লোক উত্তেজনা করিতে করিতে এবং সাতিশয় বেগধারণ পূর্বক পুরাতন স্থানে অধিষ্ঠান হইয়া শব্দ করিয়াছিল। যাহাদিগের চক্ষু নাই ও কর্ণ নাই, তাহারা সত্যের পথ পরিত্যাগ করিল। দুষ্কর্মান্বিতলোকে কখন উত্তীর্ণ হয় না।
৭। সোম শোধন করিবার যে আধার, যাহা হইতে সহস্রধারা নিপতিত হয়, তাহা যখন বিস্তারিত হইল, তখন বিদ্বান কবিগণ বাক্য উচ্চারণ করিতে লাগিলেন। ইহাদিগের মধ্যে যে সারভূত পদার্থ আছে, তাহা রুদ্র এবং অন্ন দাতা এবং দ্বেষহীন, তাহাদিগের গতি সুন্দর, দৃষ্টি সুন্দর, সকলের প্রতি তাহাদিগের চক্ষু।
৮। তিনি সত্যের রক্ষাকর্তা, উত্তম কাৰ্যকারী, কখন ছলনা করেন না। তিনি হৃদয় মধ্যে তিন পবিত্র সংস্থাপন করিলেন। তিনি বিদ্বান, তাবৎ ভুবন দৃষ্টি করেন। যাহারা সংকৰ্ম্মে অনাবিষ্ট, যাহারা ব্রতের অনুষ্ঠান করেন না, তিনি তাহাদিগকে বিনাশ করেন।
৯। বরুণের জিহ্বার অগ্রভাগে তাহার ক্ষমতাবলে সৎকর্মের সুত্র পবিত্রের উপর বিস্তারিত হইল। পণ্ডিতেরাই তাহার চতুঃপার্শ্বে পরিবেষ্টৎপূর্বক উপবেশন করেন। যাহারা সৎকৰ্ম্ম অনুষ্ঠানে অপারক হয়, তাহারা অধোগামী হয়।
————
(১) “অসুর” শব্দ এই সমস্ত অষ্টকে ছয়বার ব্যবহৃত হইয়াছে, যথা—
৯ মন্ডলের ৭৩ সূক্তের ১ ঋকে অসুর শব্দ সোম সম্বন্ধে
ঐ ,, ৭৪ ,, ৭ ,, ,, ,, ,, ,,
ঐ ,, ৯৯ ,, ১ ,, ,, ,, ,, ,,
১০ ,, ১০ ,, ২ ,, ,, ,, স্বর্গধারীদেব ,,
ঐ ,, ১১ ,, ৬ ,, ,, ,, পুরোহিত ,,
ঐ ,, ৩১ ,, ৬ ,, ,, ,, যজ্ঞ ,,
অসুর শব্দের পৌরাণিক অর্থে ঐ শব্দ একবারও ব্যবহৃত হয় নাই।
(২) এই ঋকের অর্থ অস্পষ্ট। সায়ণের কষ্টকল্পনা অবলম্বন না করিয়া কেবল অক্ষরার্থ মাত্র এস্থলে সন্নিবেশিত হইল। ইহার পরের কয়েকটা সূক্তেরও অর্থ স্পষ্ট নহে।
(৩) এই স্থানে এবং পরের কয়েকটী ঋকে বোধ হয় যজ্ঞ বিরোধী কৃষ্ণচর্ম বর্বরদিগের উল্লেখ আছে।