ঋগ্বেদ ০৯।০৬৩
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ৯ম মণ্ডল সূক্ত ৬৩
পবমান সোম দেবতা। কশ্যপগোত্রীয় নিধ্রুব ঋষি।
১। হে সোম! বলাধায়ক প্রচুর ধন ক্ষরণ কর এবং আমাদিগকে অশেষ খাদ্য আনিয়া দাও।
২। হে সোম! তোমার তুল্য আনন্দ দাতা কেহ নাই। তুমি আহার দাও, বল ও পুষ্টি প্রদান কর এবং ইন্দ্রের জন্য পাত্রে পাত্রে উপবেশন কর।
৩। নিষ্পীড়িত হইয়া সোমরস ইন্দ্রের জন্য এবং বিষ্ণুর জন্য ক্ষরিত হইলেন। বায়ু যেন তাঁহার মধুর রস প্রাপ্ত হয়েন।
৪। এই সকল পিঙ্গলবর্ণ সোমরস জলের ধারাতে উৎপাদিত হইয়াছেন এবং দ্রুতবেগে রাক্ষসদিগের দিকে যাইতেছেন।
৫। ইহারা ইন্দ্রের সংবর্ধনা করে, বৃষ্টি আনয়ন করে, সর্বপ্রকার মঙ্গল বিধান করে, আর দানকুণ্ঠ কৃপণদিগের সর্বনাশ করে ।
৬। এই সমস্ত সোমরস নিষ্পীড়িত হইয়া পিঙ্গলবর্ণ ধারণপূর্বক ইন্দ্রের প্রতি যাইবার জন্য আপন স্থান প্রাপ্ত হইতেছে।
৭। হে সোম! সেই ধারাসহকারে ক্ষরিত হও, যাহাদ্বারা মনুষ্যকুলের হিতের জন্য বৃষ্টির জল বর্ষণপূর্বক সূর্যের দীপ্তি উজ্জল করিয়াছিলে।
৮। শোধনকালে সোম আকাশে গতিবিধির জন্য, মনুষ্যের হিতের জন্য সূর্যের অশ্ব যোজনা করিতেছেন।
৯। অপিচ। সোম ইন্দ্রের নাম উচ্চারণপূর্বক দশদিকে গতিবিধির জন্য সূর্যের অশ্ব যোজনা করিলেন।
১০। হে স্তবকারীগণ! তোমরা ইন্দ্রের উদ্দেশে এবং বায়ুর উদ্দেশে আনন্দ বিধাতা নিষ্পীড়িত সোমকে এই স্থান হইতে লইয়া মেষলোমে সেচন কর।
১১। হে ক্ষরৎ সোম! হিংসক শত্রু যে ধন নষ্ট করিতে না পারে, এরূপ শত্রুর দুর্লভ ধন আমাদিগকে দান কর।
১২। গোধন ও অশ্ব সহস্ৰসংখ্যক ধন আমাদিগকে বিতরণ কর এবং বলবীৰ্য্য ও খাদ্যদ্রব্য বিতরণ কর।
১৩। সূৰ্য্যদেবের ন্যায় দীপ্তিশালী সোম প্রস্তরফলকদ্বারা নিষ্পীড়িত হইয়া কলসের মধ্যে রস স্থাপন করিতে করিতে ক্ষরিত হইতেছেন।
১৪। এই সমস্ত শুক্লবর্ণ সোমরস জলধারাসহকারে আর্য্যদিগের গৃহে গোধন ও খাদ্যদ্রব্য বর্ষণ করিতেছেন।
১৫। বজ্রধারী ইন্দ্রের নিমিত্ত নিষ্পীড়িত হইয়া সোমরসগুলি দধি সংযোগে সুস্বাদু হইয়া পবিত্র অতিক্রমপূৰ্ব্বক ক্ষরিত হইতেছেন।
১৬। হে সোম! তোমার যে রস দেবতাগণের পক্ষে যৎপরোনাস্তি সুখকর ও আনন্দবিধাতা হয়, তুমি সেই মধুরতম রস ধারণপূর্বক ধন দান করিবার জন্য পবিত্রে গমন কর।
১৭। মনুষ্যরা সেই সোমকে শোধন করিতেছেন, যিনি হরিতবর্ণ ও তেজোযুক্ত এবং জলের সহিত মিশ্রিত হয়েন এবং যিনি ইন্দ্রের আমোদ বৃদ্ধি করেন।
১৮। হে সোম! তুমি সুবর্ণ ও অশ্ব ও ধন, জন বিতরণ করিতে করিতে ক্ষরিত হও। তুমি গোধন ও খাদ্যদ্রব্য আহরণ কর।
১৯। যেরূপ যুদ্ধকালে, তদ্রুপ এই ক্ষণে তেজোযুক্ত সোমকে মেষলোমের উপরি সেচন কর, কারণ সোম ইন্দ্রের নিকটে অতি মধুর।
২০। যাঁহারা আপনাদিগের রক্ষা প্রার্থনা করেন, সেই বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ শোধনযোগ্য সোমরসকে অঙ্গুলিদ্বারা শোধন করেন। সোম শব্দ করিতে করিতে দ্রব মুর্তিতে ক্ষরিত হয়েন।
২১। বুদ্ধিমানেরা সেই বৃষ্টি বিধাতা জলসেচনকারী সোমকে অঙ্গুলি সহযোগে ও স্তুতি পাঠ করিতে করিতে এবং জলধারা দিতে দিতে সরাইয়া দেন।
২২। হে দীপ্তিশীল সোম! ক্ষরিত হও। তোমার মদ ক্রমাগত ইন্দ্রকে স্পর্শ করুক। তোমার শক্তি বায়ুতে গিয়া আরোহণ করুক।
২৩। হে ক্ষরৎ সোথ! তুমি শত্রুর বিপুল সমস্ত ধন নিঃশেষে নষ্ট করিয়া দাও। প্রিয় হইয়া তুমি কলসের মধ্যে প্রবেশ কর।
২৪। হে সোম! তুমি কর্মিষ্ঠ ও আনন্দবিধাতা। তুমি শত্রুদিগকে সংহার করিতে করিতে ক্ষরিত হও। দেবদ্বেষী লোককে অপদস্থ কর।
২৫। শুভ্রবর্ণ সোমরসগুলি ক্ষরিত হইতে হইতে এবং নানাবিধ স্তুতিবাক্য গ্রহণ করিতে করিতে উৎপাদিত হইলেন।
২৬। দ্রুতগামী শুভ্রবর্ণ সোমরসগুলি তাবৎ শত্ৰু সংহার করিতে করিতে ক্ষরিত হইলেন এবং উৎপাদিত হইলেন।
২৭। ক্ষরিত সোমগুলি স্বর্গলোক ও নভোমণ্ডল হইতে আনীত হইয়া পৃথিবীর উন্নত প্রদেশে উৎপাদিত হইলেন।
২৮। হে সুচাৰু কৰ্ম্মকারী সোম! তুমি ধারারূপে ক্ষরিত হইয়া তাবৎ রাক্ষস শত্ৰুদিগকে সংহার কর।
২৯। হে সোম! রাক্ষসদিগকে নষ্ট করিতে করিতে এবং শব্দ করিতে করিতে উজ্জ্বল ও উৎকৃষ্ট বল আমাদিগকে দান কর ।
৩০। হে সোম! যাবতীয় দিব্য বস্তু ও যাবতীয় পার্থিব সামগ্রী ও সর্ব প্রকার কাম্য পদার্থ আমাদিগকে দান কর।