বিপদসঙ্কেত – ৭

সাত

পরদিন সকাল। মার সঙ্গে ইউরোপা বুলভারে কেনাকাটা করছে টিনা। প্যারিসের কোন এক রাস্তার মত এটা, রঙবেরঙের বাড়ি-ঘর এখানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। বৃক্ষশোভিত বুলভারে এমুহূর্তে মাত্র অল্প ক’জন মানুষ, তবে তারা রক দ্য মল কনটেস্ট দারুণভাবে উপভোগ করছে।

রক মুভস নামের ব্যাণ্ডটির প্রধান দু’জন সদস্য ইওয়ান আর ফিয়োনা ট্যাফ্‌ট্, ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে এসেছে। মর্মরের করিডরের শেষ মাথা অবধি নাচতে-নাচতে চলে আসছে তারা, হাতে ধরা খুদে মাইক্রোফোনে গান গাইছে, ওদিকে ওদের দলের অন্যান্য সদস্যরা ঝুলন্ত ফুলের ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়ানো এক স্ট্রিট ল্যাম্পের নিচে বাজাচ্ছে।

গানের পালা সাঙ্গ হলে, টিনা মাকে হাত ধরে টেনে কাছের এক দোকানে ঢুকল।

‘জানো এটা কার দোকান? এডমনটন অয়েলার্সের এক হকি প্লেয়ারের। সে এখন হয়তো এখানে থাকতেও পারে।’

একাধিক স্পটলাইটের আলোয় চকচক করছে পালিশ করা অ্যালুমিনিয়ামের ছাদ। ডেনিম জ্যাকেট আর জিন্সগুলোও ঝলমল করছে স্পটলাইটের দীপ্তিতে।

‘জানো, মা, ওরা না পুরনো কাপড় কিনে জিন্স আর জ্যাকেট বানায়।’ কাউন্টারের পেছনে দাঁড়ানো রূপসী মেয়েটির উদ্দেশে স্মিত হাসল ও। ‘হাই, আমরা এখানে মার্কের সাথে লাঞ্চ করতে এসেছি।’

হেসে উঠল মেয়েটি।

‘তুমি চার নম্বর। তোমার আগে আরও তিনজন হত্যে দিয়ে পড়ে আছে।’ এবার মিসেস টার্নারের দিকে চেয়ে মৃদু হাসল মেয়েটি। ‘তবে আমি ওদেরকে দোষ দিই না।’

অয়েলার্স ইউনিফর্ম পরা এক অসম্ভব সুদর্শন হকি খেলোয়াড়ের পোর্ট্রেটের দিকে চাইলেন মিসেস টার্নার।

‘ছবি দেখেই বোঝা যায় মেয়েগুলোর কোন দোষ নেই। ওদের মাথা খারাপ হওয়ারই কথা।’

‘শুক্রবার রাতের ম্যাচটায় কি খেলবে ও?’ মেয়েটিকে প্রশ্ন করল টিনা।

‘না, উনি পুবের এক সেলিব্রিটি গল্ফ টুর্নামেন্টে গেছেন।’

‘ইস।’ পেছনে সাদা সাটিনের এক বিড়ালছানা সেলাই করা জ্যাকেট গায়ে চাপাল টিনা। ‘খেলাটা হেভি জমবে, মা। এডমনটন আর ক্যালগ্যারি, দু’দল থেকে অল্প কয়েকজন করে নেবে, সঙ্গে কিছু স্থানীয় সম্ভাবনাময় প্লেয়ার।’

মল-এ ফিরে এক জুয়েলারি শপের জানালায় উঁকি দিল ওরা, অনেকগুলো খুদে সোনার হৃদয় নিয়ে এক কণ্ঠহার আর হীরের এক আংটি দেখে রীতিমত মুগ্ধ হলো।

‘যার-তার পক্ষে এসব কেনা সম্ভব নয়, মিসেস টার্নার বললেন। এরজন্যে টাকার গাছওয়ালা মানুষ লাগবে।’

’কিংবা যার অনেক ক্রেডিট কার্ড আছে।’ টিনা কাছের এক দোকানের জানালায় গিয়ে দাঁড়াল। এক ম্যানিকিনের পরনে হাতে বোনা চমৎকার এক সোয়েটার। ‘ওই বোমা দুটোর কোন একটা ফাটলে কী হত ভাবতে পার, মা?’

‘আরেকবার বোমাতঙ্ক দেখা গেলেই কিন্তু সোজা বাড়ি ফিরব আমরা।’

‘ওহ, মা!’

‘তোর এখানে ভাল লাগছে জানি, কিন্তু আমি নার্ভাস হয়ে পড়ছি। ভুলে যাস না আমাদের সাথে কিশোর আর রাজন আছে, বাই চান্স কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ওদের অভিভাবকদের কী জবাব দেব আমরা? আর ওই স্কুবা ডাইভারের কথাটা ভাব, সে ডুবে মরতে পারত! তোর বাপের সাথে এব্যাপারে কথা বলব আমি।’

অদূরে, দু’জন লোককে পিতলের রেইলগুলো মুছতে দেখল টিনা। কিশোর বলেছিল এগুলো ঘষার জন্য লোক আছে, সারাদিন একাজই করে। কী দারুণ আকর্ষণীয় এই মল, অথচ মাঝপথে ওদেরকে হয়তো ঘরে ফিরতে হতে পারে।

‘মা, মেলোডি আন্টির জন্য কিন্তু এখনও কোন গিফ্‌ট্ কেনা হয়নি। ঝটপট কিনে ফেলা দরকার।

.

স্মিত হাসলেন মিসেস টার্নার।

‘মন খারাপ করিস না। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। চলে যাবই এমন সিদ্ধান্ত তো হয়নি।’

এক জানালায় চোখ গেল টিনার।

‘ওয়াও, মা, ওই যে! মেলোডি আন্টির জন্যে পারফেক্ট গিট্।’ স্পটলাইটের নিচে ঢিমেতালে ঘুরছে স্ফটিকের ছোট্ট এক পিয়ানো, রঙিন আলোর রশ্মিতে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে ওর। শশব্যস্তে দোকানে ঢুকল টিনা, তারপর দামটা জেনে তারচেয়েও দ্রুততর গতিতে বেরিয়ে এল।

‘বাদ দে, তোর পছন্দটা কিন্তু ভাল ছিল,’ সান্ত্বনা দিয়ে বললেন মিসেস টার্নার।

.

রিঙ্কের কাছে, কটা সিঁড়ির ওপর থেকে চোখ নামিয়ে চেয়ে, কয়েক তলা নিচে বেশ কিছু বেঞ্চি দেখল ওরা। লোকজন পায়ে স্কেট গলাচ্ছে, তবে ক্লিফকে দেখল না টিনা।

‘ও আইস ড্যান্সার, জানই তো।’

ওর মা মুচকি হাসলেন।

‘হ্যাঁ, অনেকবার শুনেছি। মেয়ের চুলে হাত রাখলেন ‘সময় কীভাবে যে উড়ে যায়! আমার ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে! মাঝে-মাঝে মনে হয় আবার যদি ডায়াপার পরা তোকে হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে বড় হতে দেখতাম!’

‘ডায়াপার? মা, মানুষজন শুনে ফেলবে তো!’ টিনা সিঁড়ির দিকে চাইল, আশঙ্কা করছে ক্লিফ এই বুঝি রিহার্সাল থেকে ওপরে উঠে আসে। ‘মা, ভুলে যেয়ো না আমার বয়স ষোলো। তুমি যে কী সব বল না!’

হাসতে হাসতে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে গেল মা-মেয়ে। অবিকল ভিন দেশের সরু কোন রাস্তা যেন ওটা, দোকানগুলোয় থরে থরে সাজানো ম্লান সবুজ যসম পাথরের ড্রাগন, চকচকে শব্দন্ত নিয়ে বাঘ আর খোদাই করা হাতি বিশালকায় প্রাণীটির এত ছোট মূর্তি আগে দেখেনি ওরা। এছাড়া বিভিন্ন বুথে বিক্রি হচ্ছে শুগার বেবি মিনি-ডৌনাট, মল-এর স্যুভনিয়ার এবং গোল্ড রাশ আমলের পোশাকে ছবি তোলার সুযোগ।

‘মা, জ্যোতিষী!’ এক বুথের উদ্দেশে তর্জনী তাক করল টিনা। ‘ক্লিফের সাথে আমার ডেটের ব্যাপারে জেনে আসিগে!’

চাপ দাড়িওয়ালা এক যুবক ওকে নিজের টেবিলে স্বাগত জানাল, তারপর ব্যাখ্যা করে বলল কারও হাত দেখা তার মন পড়ার শামিল।

‘রেখাগুলো ঠিক মানচিত্রের মত। তোমাকে জানাব কী লেখা ওখানে।’

দু’মিনিটের জন্য চোখ বুজল ওরা, মুখে টু শব্দটি নেই। এবার যুবক টিনার তালুজোড়া পরখ করল।

‘তোমার হেডলাইন বলছে তুমি কৌতূহলী। এই ট্রাইডন্টের অর্থ খ্যাতি, বিত্ত আর সম্মান, যদি নিজের হৃদয়কে অনুসরণ করে চল আরকী। কিন্তু এখানে,’ বলে, একটি রেখায় আঙুল রাখল, ‘বিভ্রান্তি দেখতে পাচ্ছি।’

‘বোমাগুলোর কথা বলছেন তো? ঠিকই বলেছেন। সত্যিই আমি ওব্যাপারে বিভ্রান্ত।’

মাথা নাড়ল যুবক।

‘ইদানীং তোমার মধ্যে নেতিবাচক শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আমি সেই বিভ্রান্তির কথাই বলছি।’

‘তারমানে মল-এ এমন কারও সাথে আমার পরিচয় হয়েছে যে ভাল মানুষ নয়? কে সে?’

‘তা বলা সম্ভব নয়।’

‘কী ঘটতে চলেছে?’

স্মিত হাসল গণক।

‘আমি ভবিষ্যৎ বক্তা নই।’

রেখা পড়ে চলল সে, কিন্তু টিনা আর ধৈর্য ধরতে পারছে না। পরে, মার সঙ্গে লাঞ্চ সেরে, এক ঝরনায় কয়েন ফেলার জন্য থামল ও।

‘ঝড়ের কালো মেঘের ঘনঘটা। আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।’

‘ভয় নেই, ঝড়ের কালো মেঘ তোকে ছুঁতে পারবে না, মা। এটা ইনডোর সিটি, ভুলে গেছিস?’

‘ঝড় তো নানারকমের হয়।’

বুরবো স্ট্রিটে ঢুকে শুশাইন চেয়ারগুলোর দিকে চাইল টিনা, কিন্তু সুসান নেই। ছোট্ট এক সাইন বলছে: বন্ধ। রাস্তার দূর প্রান্তে জনা দুয়েক লোক আলাপ করছে, কিন্তু অন্ধকার ছাদের তলায় মিটমিট করে জ্বলা বাতিগুলোর নিচে আর কারও আনাগোনা নেই।

‘কেমন একঘেয়ে লাগছে,’ বলল টিনা। ‘কিছু খাওয়া দরকার।’

এক ক্যাফের বাইরে ছোট এক টেবিল বেছে নিল মা-মেয়ে। ওদেরকে মেনু দেয়া হলো। মিসেস টার্নার তাঁর খাবার বাছাই করে প্রশ্ন করলেন, ‘লরেলি তোর ডেট ঠিক করেছে, না?’

‘হ্যাঁ। ওর বয়ফ্রেণ্ড ক্লিফকে চেনে।’

‘ওর বয়স সতেরো। তোর চেয়ে মাত্র এক বছরের বড়।’

‘চিন্তার কিছু নেই, মা, আমি ওর সাথে পালাচ্ছি না! এটা নিছকই সামান্য এক ডেট, তাছাড়া লরেলি আর ওর বয়ফ্রেণ্ড তো আমাদের সাথে থাকছেই।’

‘তুই যেরকম ছটফট করছিস তাতে এটাকে সামান্য ব্যাপার মনে হচ্ছে না,’ বলে মেয়ের হাত চাপড়ে দিলেন মিসেস টার্নার। ‘শুধু একটা কথা মনে রাখবি যাকেই পছন্দ করিস না কেন সে যেন তোর যোগ্য হয়।’

‘সময়টা দারুণ কাটবে, মা। আমরা গ্যালাক্সিল্যাণ্ডে যাচ্ছি, তারপর লাঞ্চ সেরে ওয়াটারপার্ক।

‘লরেলিকে আমার পরিণত মেয়ে মনে হয়েছে। সেটা কি ওর গানের জন্যে?

‘মনে হয়। ব্যাণ্ডের সাথে তো অনেক জায়গায় ট্র্যাভেল করে ও, তবে ইউনিভার্সিটিতেও পড়ে।’

‘এডমনটনে?’

‘হ্যাঁ, পরিবারের সাথে থাকে। তারাও প্রচুর ট্র্যাভেল করে। ওর বাবার নাকি স্কটল্যাণ্ড খুব প্রিয়।’

‘ভাল।’ মিসেস টার্নার অপেক্ষা করলেন ওয়েট্রেস যতক্ষণ টিনার অর্ডার না নিল, এবার বললেন, ‘আমার জন্যে ঝিনুক।’

‘ঝিনুক?’ মার দিকে চাইল টিনা। ‘ঠাট্টা করছ?’

‘ঠাট্টা নয়। তাছাড়া তুই নিজেও পিইআই-এ ঝিনুক খেয়েছিস।’

‘একটা মাত্র। ওটাই প্রথম ওটাই শেষ।’ একটা গ্লাস নাড়াচাড়া করে টিনা বলল, ‘আমি চাই লরেলি জিতুক।’

‘একটা কান্ট্রি ব্যাণ্ড এই রক দ্য মল কনটেস্টে এল কেন?’

‘কে. ডি. ল্যাঙের গান শোননি? লরেলির গলাও ঠিক একই রকম।’

‘ও, আমার আসলে এখন আর ওভাবে গান-বাজনা শোনা হয় না তো।’

‘লরেলি একদিন হয়তো বড় স্টার হতে পারবে, তবে একটা সমস্যা আছে।’

‘কী সমস্যা?’

‘ওর ম্যানেজার। মিস্টার হাটন ভদ্রলোক। উনি ওর ক্যারিয়ারটা খুব স্লো করে দিচ্ছেন। গর্ডন বলে লরেলির এখন ন্যাশভিলে পারফর্ম করার কথা। ওর সিজার সালাদের দিকে চেয়ে রইল মুহূর্তখানেক, তারপর বুরবো স্ট্রিটের উদ্দেশে দৃষ্টি মেলে দিল টিনা। ‘ওই যে, মিস্টার হাটন। লুইস প্যাটেনের সাথে কথা বলছেন। উনি হয়তো ওই স্কুবা স্টোরটার কাস্টোমার।’

‘দেখে তো তা মনে হয় না।’

‘মানুষের চেহারা দেখে কি আর তার মন বোঝা যায়?’

ক’মিনিট পরে, লুইস প্যাটেন হাঁটা দিল মল-এর দিকে এবং মি. হাটন অ্যাভেনিউ বরাবর হেঁটে এলেন। চোখ তুলে চাইলেন যে ব্যালকনিটিতে প্রথম বোমাটি আবিষ্কার হয়, তারপর নুড়ি বিছানো পথে এক নিউ অর্লিন্স ট্যাক্সি পার্ক করা রয়েছে দেখে নিয়ে, শেষমেশ লক্ষ করলেন টিনাকে। এবার ধীর পায়ে রাস্তা পেরিয়ে এলেন ভদ্রলোক, দৃষ্টিনিবদ্ধ টিনার দিকে।

তোমাকে আগেও দেখেছি।’

‘হ্যাঁ, লরেলির সাথে। মার সঙ্গে মি. হাটনের পরিচয় করাল টিনা, তিনি ভদ্রলোককে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানালেন।

‘বেশ, তবে অল্প সময়ের জন্যে। ডাউনটাউনে লরেলির রিহার্সাল আছে, আমাকে এখুনি যেতে হবে। কফির অর্ডার দিয়ে, মৃদু হাসলেন টিনার উদ্দেশে। ‘জায়গাটা খুব সুন্দর, তাই না?’

‘নিঃসন্দেহে। তবে লোকজনের ভিড় থাকলে আরও জমজমাট লাগে।’

‘হুম, মনে হচ্ছে বোমার ঘটনায় ব্যবসার ওপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, কিন্তু মিস্টার কুপার টাকার কুমির, তিনি ঠিকই টিকে যাবেন। আমি তাঁর সাথে নেভিতে ছিলাম। তারপর তিনি ফার্নিচারের ব্যবসায় গেলেন এবং এখন তো দামি-দামি দোকানের মালিক আর আমি গেলাম গান-বাজনার লাইনে।’ নিজের জুতোয় এক গর্ত দেখালেন তিনি। ‘এটাই আমার জীবনের গল্প, তবে সব কিছুই এখন থেকে ঠিকঠাক চলবে বলে আশা করছি।’

‘লরেলির কারণে?’ মিসেস টার্নারের প্রশ্ন।

‘হ্যাঁ। ওর যাকে বলে গোল্ডেন ভয়েস, মিসেস টার্নার, এবং এর অর্থ শেষমেশ আমার সামনে সুবর্ণ সুযোগ। আমি অন্যান্য আরও শিল্পীর সাথে কাজ করেছি, তবে তারা খ্যাতির চূড়ায়

উঠে দ্রুতই নিভে গেছে, একটা হিট গান দিয়েই খতম। লরেলি যখন টপে উঠবে তখন ওর ফাউণ্ডেশনটা সলিড থাকবে। বহুদিন টিকবে ও।’ প্লাস্টিকের এক কাঠি দিয়ে তাঁর কফি নেড়েচেড়ে, আচমকা ওটা কট করে ভেঙে ফেললেন মি. হাটন। কারও- কারও ধারণা আমি লরেলির উপযুক্ত ম্যানেজার নই। তারা চায় ও যেন রাতারাতি নাম কামায়, সাড়া ফেলে দেয় চারদিকে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে ওটা সম্পূর্ণ ভুল পরামর্শ।’

‘আমি আপনার সাথে একমত, মিস্টার হাটন, বললেন মিসেস টার্নার।

‘বিশ্বাস করুন, মিসেস টার্নার, লিখে রাখুন, লরেলি টপে উঠবে এবং সেটা আমার ফর্মুলায়।’

.

লাঞ্চের পর টিনা মাকে নিয়ে ডলফিন শো-এ গেল। ওখানে আসনের কোন কমতি নেই, কিন্তু দর্শক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হাতে গোনা মাত্র ক’জন। জলাধারের সবুজ পানিতে দোকানপাটের ঝলমলে সাইনের প্রতিফলন, কাঁচের দেয়াল দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে পুলের পানি। জলের তলায় ডলফিনদের সাঁতরাতে দেখা যাচ্ছে, খেলা করছে ওরা সূর্যের আলো গায়ে মেখে, তারপর শক্তি সঞ্চয় করে ঢেউয়ের ওপরে বিশাল বিশাল সব লাফ দিচ্ছে।

মি. কুপার শো দেখতে এসে যোগ দিলেন ওদের সঙ্গে।

‘গুড আফটারনুন,’ বলে, বসে পড়লেন। ‘দর্শক খুব কম আজ, তাই না? কর্তৃপক্ষ মাত্র একটা সাব রাইড দেবে ঠিক করেছে। সাগরে নিজেদের বার্থে দৃশ্যমান হলদে কনিং টাওয়ারগুলোর দিকে চাইলেন ভদ্রলোক। ‘কিন্তু তাতে আমার সকালের যাত্রা থামবে না।’

‘মানে?’

‘আমি সাবেক নেভি, মিসেস টার্নার। ব্যবসা করে বিপুল টাকা কামানোর কথা ভাবার আগে বহুবছর সাব-এ ছিলাম। এর প্রতি আমার দরদ কখনও হারায়নি, তাই ম্যানেজমেন্টের সাথে একটা সমঝোতায় এসেছি। রোজ সকালে মল খোলার আগে আমি একাই সাগর ভ্রমণে যাব। পানির তলার নিস্তব্ধ জগৎ‍ আমাকে সারা দিনের কাজের এনার্জি জোগাবে।’

‘বোমাবাজের ব্যাপারে কী ধারণা আপনার?’

‘খেপাটে লোক কোন সন্দেহ নেই। কী চায় ঈশ্বরই জানেন! বোমা পাতছে কিন্তু ফাটাচ্ছে না। স্কুবা অ্যাটাকের উদ্দেশ্যটা কী? সে চুপ করে আছে কেন? না কোন চিরকুট, না ফোনকল, না কোন দাবি-দাওয়া। আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।’

‘শীঘ্রি কিছু একটা ঘটবে, আমি নিশ্চিত।’

‘এলিসও কি সাব ভালবাসে?’ টিনা শুধাল।

‘সে আর বলতে। আমার মেয়ে সাগরতলে ডুব দিতে ভালবাসে। স্কুবা ডাইভিং ওর প্রিয় হবি।’

‘কিন্তু সাব কি পছন্দ করে?’

‘সাব-এর ব্যাপারে হয়তো অত উৎসাহী নয় ও, তবে আমি ওকে ট্রিপগুলোতে নিয়ে যাচ্ছি, শেখাচ্ছি কীভাবে যন্ত্রপাতিগুলো কাজ করে। আমি চাই ও ব্যবসায় আমাকে ফলো করুক।’ ক’মিনিট ডলফিনগুলোর দিকে স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে থেকে আরও বললেন, ‘কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে এলিস নিজের মন মত চলতে চায়। ক্যারিবিয়ানে অনেক সময় কাটিয়েছে তো, ওখানেই আবার ফিরতে চায়। আমি ওকে দোকান করে দেব, এব্যাপারে কখনওই তেমন আগ্রহী দেখিনি ওকে। এখন ও পালাতে চাইছে এই ধরাবাঁধা জীবন থেকে।’

‘বুঝলাম,’ মিসেস টার্নার বললেন। ‘আপনার নিশ্চয়ই মন খারাপ থাকে ইদানীং।’

‘হ্যাঁ, আর তাই এখানে এসেছি ডলফিনদের দেখতে। ওদের দেখলে মনটা ভাল হয়। আমার ধারণা স্যান ডিয়েগোর সি ওয়ার্ল্ডের চেয়ে আমাদের শো কোন অংশ কম নয়।’

এসময় এক পুলসাইড দরজা খুলে গেল এবং লিডিয়া ডি ভেগা এক লোকের পাশে উদয় হলো, টিনা যাকে আগে দেখেনি। ওয়েট সুটের ওপর পরা এন. ওয়াই. জেটস সোয়েটশার্টে লাগানো খুদে মাইক্রোফোনটা অন করে নিজের পরিচয় দিল ও।

‘আমার সাথে রয়েছেন আমাদের চিফ ট্রেইনার রেনে হিগুইতা। এই ডলফিনের জন্ম গালফ্ অভ মেক্সিকোয়। এই পুলে ওরা প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর বাঁচবে।’

‘ওয়াও।’ মার উদ্দেশে হাসল টিনা। ওদের সারা জীবন কাটবে এই ওয়েস্ট এডমনটন মল-এ, ভাবতে পারো?’

রেনে দর্শকদের ডলফিন নিয়ে নানান বৃত্তান্ত দিতে লাগলেন, জানালেন তাদের জীবন পদ্ধতি। ওদিকে, পুলের কিনারা ঘেঁষে শ্লথ পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে লিডিয়া, হঠাৎই স্ট্যাণ্ডের দিকে চাইতেই টিনাকে দেখল।

‘মনে পড়েছে-তুমি সেই মেয়ে যে স্পেশাল টুরের অনুরোধ করেছিলে। মেভিসের সাথে দেখা করবে এসো।’ টিনা পুলে পৌঁছলে ওকে কিছু বিশেষ নির্দেশ দেয়া হলো এবং তারপর লিডিয়া হাত ঘুরিয়ে ইশারা করতেই, আদর পেতে এক ডলফিন উঠে এল পানি থেকে।

‘ওয়াও,’ একটু পরে, উচ্ছ্বসিত টিনা তড়িঘড়ি মার কাছে ফিরল। কী অসাধারণ অভিজ্ঞতা- ওর গায়ের চামড়া রবারের মতন আর ও আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছে!’

মিসেস টার্নার জড়িয়ে ধরলেন ওকে।

‘ওরাও তোর মতই প্রাণবন্ত। তাই এই শো-টা দেখতে এত ভাল লাগে আমার।’

ডলফিনদের কিছু দৃষ্টিনন্দন কসরতের জন্য ওরা অল্প সংখ্যক দর্শকের কাছ থেকে তুমুল করতালি আর প্রশংসা পেল। পুল ঘিরে কাত হয়ে পাক খেয়ে, ধূসর ফ্লিপার দিয়ে পানিতে চাপড় মেরে শো শেষ করল বুদ্ধিমান প্রাণীগুলো।

‘ইস, আমি যদি ওদের ট্রেইনার হতে পারতাম!’ বলে হাসল টিনা। ‘ব্যাকস্টেজে কী আছে কে জানে।’

‘গেলেই জানতে পারবি। ও তো ডাকছে তোকে।’

খানিকক্ষণের মধ্যেই টুরের ব্যবস্থা হয়ে গেল। মিসেস টার্নার অবশ্য যেতে রাজি হলেন না।

‘উইনিপেগ থেকে কিছু পেপারওয়র্ক নিয়ে এসেছি, ওগুলো সারতে হবে। আমি বরং কাজ করিগে।’

‘তোমার মা-টা খুব ভাল, বলল লিডিয়া, এক ইনার পুলের দরজা খুলল। ‘কোন ডলফিনের মেডিকেল পরীক্ষার জন্য আমরা এটা ব্যবহার করি।’

‘আপনি কি ওদের সাথে সাঁতরান?’

‘যখনই সুযোগ পাই। ‘

‘কেমন লাগে?’

‘ডলফিন লাজুক প্রাণী। ওরা পাক খায়, দেখে, ওদের সাউণ্ড ওয়েভ য্যাপ করে। একটু পরে খেলায় মেতে ওঠে।‘

‘লিডিয়া, আপনাকে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি?’

‘করো। বলো কী জানতে চাও।’

‘গর্ডনের সাথে কি আপনার বাগদান হয়েছে?’

‘আমি শিয়োর নই। ও বিয়ের কথা বলেছে, কিন্তু এখন অবধি কোন আংটি কিংবা ঘোষণা দেয়নি। আমার পরিবার দিনকে দিন অস্থির হয়ে উঠছে। তারা বিয়ের পরিকল্পনা করতে চায়।’ হেসে উঠল ও। ‘আমি অতটা উদ্বিগ্ন নই, তবে অনিশ্চয়তা বড়ই অপছন্দ আমার।’

‘এর মধ্যে এলিসের ভূমিকা কী?’

‘ওকে ভয় পাই আমি। সম্ভবত ওর কারণেই এখন পর্যন্ত আমাকে আংটি পরায়নি গর্ডন।’

‘ও কি গর্ডনের প্রতি ইন্টারেস্টেড?’

‘তা তো বটেই। গাইড হিসেবে মল-এ কাজ শুরু করা প আমাদের স্কুবা ক্লাবে যোগ দেয় গর্ডন। আমরা ডেটিং শুরু তারপর ক্যারিবিয়ানে লম্বা ছুটি কাটিয়ে এলিস ফিরল। এবং গর্ডনকে একবার দেখামাত্রই ওর নতুন দোকানের ম্যানেজার করে নিল।’

‘গর্ডন কি ডেট করেছে এলিসের সাথে?’

‘না, তবে ও এমনিতেই মেয়ে ঘেঁষা। তাতে এলিস আরও হ পেয়েছে। আমি ভান করি তোয়াক্কা না করার, কিন্তু মনে- মনে ঠিকই কষ্ট পাই।’

আরেকটি রুমে মরা স্কুইড দিয়ে এক বালতি ভরল লিডিয়া

‘একটা কথা বলি। গর্ডনের এয়ার হোস চিরে দেয়ার ঘটনায় আমি ওর জন্যে উৎকণ্ঠায় পড়ে যাই। কিন্তু একটা ব্যাপার বারবার খোঁচাচ্ছে আমাকে।’

‘কী?’

‘আমার আর গর্ডনের স্কুবা আউটফিট হুবহু একই রকমের, এবং ওর ঠিক একটু আগেই ভাঙা জাহাজের মাঝে সাঁতরাই আমি।’ আয়ত, কালো চোখজোড়া মেলে টিনার দিকে চাইল ও। ‘আমার বিশ্বাস হামলাটা আমার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিল।’

.

দশ মিনিট পর। টিনা তখনও জেরা করছে, কিন্তু কোন প্রমাণ দিতে পারছে না লিডিয়া।

‘ওটা স্রেফ আমার অনুভূতি,’ বলল মেয়েটি। ‘তবে আমি নার্ভাস ফিল করছি।’

‘পুলিসকে জানিয়েছেন?’

‘হ্যাঁ। তারা লিখে নিয়েছে, ব্যস, এটুকুই।’

ধাতব ক’ধাপ সিঁড়ি ভেঙে নেমে এক করিডরে প্রবেশ করল দু’জনে, ওদের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এখানে অনেক ওপরে পাইপ আর এয়ার-কণ্ডিশনিং ডাক্ট। গোলমেলে এক পথ অনুসরণ করে নিচু ছাদ আর কংক্রিটের দেয়াল নিয়ে তৈরি উন্মুক্ত এক জায়গায় পৌঁছল ওরা। ওদের সামনে অতিকায় এক ট্যাঙ্ক, অশান্ত সাগরপৃষ্ঠের ওপরে ঢেউ গড়াচ্ছে।

‘আমার কেমন নার্ভাস লাগছে,’ বলল টিনা। ‘কোথায় এলাম আমরা?’

‘ভয় পেয়ো না, জায়গাটা পুরোপুরি নিরাপদ।’ ট্যাঙ্কের ওপরে এক মঞ্চে পা রাখল ট্রেইনার। এবার বালতির ভেতর হাত ভরে চারদিকে ছুঁড়ে দিতে লাগল মরা স্কুইড। নিমেষে যেন বিস্ফোরিত হলো পানি, তোলপাড় তুলে মোটা, লম্বা কতগুলো নাক ছিটকে এল সামনে, ওদের ক্ষুরধার দাঁত ছিঁড়ে ফালা ফালা করছে স্কুইডগুলোকে, সে সঙ্গে চিরছে পরস্পরের গায়ের চামড়া। লিডিয়া পানিতে মরা স্কুইড ফেলে চলেছে আর টিনা আতঙ্কমাখা চোখে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে দেখছে হিংস্র হাঙরগুলোকে।

‘আমি করিডরে যাই,’ বলল কোনমতে।

‘আচ্ছা।’

অবশেষে লিডিয়া যোগ দিল ওর সঙ্গে, মুখে খুশির হাসি।

‘এরা স্রেফ লেমন শার্ক, গ্রেট হোয়াইট না।’

‘তা হতে পারে, লিডিয়া, তবে এগুলোকে দেখেই আমার জান উড়ে গেছে।’

লিডিয়া আরেক বালতি খাবার জড় করল এবং ওরা ওপরতলায় উঠল মল-এর সান্তা মারিয়া ট্যাঙ্কের মাছেদের খাওয়াতে। সাগর ঘিরে রাখা রেইলিঙে দাঁড়িয়ে জলযানটির দিকে চাইল দু’জনে।

‘ওই দুই মাথাওয়ালা সাপটা আছে না?’ বো-র দিকে আঙুল নির্দেশ করল টিনা। ওটা সান্তা মারিয়ার জন্যে অলক্ষুণে।’

‘কিন্তু ওটাকে তো কখনওই ঝড়ের কবলে পড়তে হবে না।’

‘তারপরও সাপটা অলক্ষ্মী।’ ক্রো’য নেস্টের দিকে চোখ তুলল টিনা। ‘ভাবুন তো কোন এক স্প্যানিশ নাবিক যদি সময়ের ফাঁদ পেরিয়ে বর্তমানে চলে আসে! ওখান থেকে এই আধুনিক সময়ের দৃশ্য দেখে কী ভাববে সে?’

‘ও নতুন এক জগৎ আবিষ্কার করে চমকে যাবে,’ বলে হেসে উঠল লিডিয়া। ‘তোমার কল্পনাশক্তি আমার মতই দেখছি।’

গর্ডন লিডিয়ার সঙ্গে দেখা করতে অপেক্ষা করছিল। মেয়েরা সান্তা মারিয়া-র উদ্দেশে এগোল। গর্ডন চুমো খেল লিডিয়াকে, তারপর স্মিত হাসল টিনার দিকে চেয়ে।

‘বোমার তদন্ত কদ্দূর?’

‘খুব স্লো এগোচ্ছে।’

‘আমি অনেকটাই এগিয়েছি। একটা নাম পেয়েছি, তবে প্রমাণ দরকার আমার।’

‘কে সে?’

‘সরি, এখনই নয়। তবে শীঘ্রি জরুরী কিছু জানতে পারব আশা করছি।’

গর্ডনকে আলিঙ্গন করে ওর নীল চোখজোড়ায় চোখ রাখল লিডিয়া।

‘প্লিজ, গর্ডন, সাবধান। আমার ভীষণ ভয় করে।’

ওকে জড়িয়ে ধরে, টিনার উদ্দেশে চাইল গর্ডন।

‘তুমি একটু আগে হাঙরদের খাওয়া দেখতে গিয়েছিলে?’

‘হ্যাঁ, কিন্তু আপনি জানলেন কীভাবে?’

‘তোমার মুখ এখনও খড়ির মত ফ্যাকাসে। হাঙরগুলোকে আমিও ভয় পাই, কিন্তু লিডিয়া ওদের ভালবাসে। কোন কিছু সাঁতরাতে পারলেই হলো, ও ওটার জন্যে পাগল হয়ে যায়।’

সাব টানেলটার আঁধারময় প্রবেশপথটির দিকে চাইল টিনা। ‘স্টিলের ওই ক্যাটওয়াকটা কীসের জন্যে?’

‘ওটা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য বরাবর বিছানো। কোন সাব ওখানে আটকে গেলে যাত্রীরা কনিং টাওয়ার দিয়ে বেরোতে পারবে, তারপর ক্যাটওয়াক ধরে হেঁটে সোজা মল-এ পৌঁছবে।’

‘সুড়ঙ্গটা একনজর দেখা যায়?’

‘অবশ্যই।’

অন্ধকারে কণ্ঠস্বর রুদ্ধ শোনাল ওদের। এয়ার-কণ্ডিশনিং ডাক্ট থেকে শীতল বাতাস বইছে এবং কালো পানি এমুহূর্তে শান্ত। টিনা কল্পনায় এক সাবকে নিঃশব্দে পাশ কাটাতে দেখল, ওটার কনিং টাওয়ারে কমলা আলো ঝলসাচ্ছে।

‘একটা কথা ভাবছি…’

‘কী?’ লিডিয়া জানতে চাইল।

‘মানে…ধরুন কোন সাব যদি এখানে থামে? যে কেউই কনিং টাওয়ার থেকে আলগোছে নেমে, স্কুবা গিয়ার পরে পানিতে নামতে পারে। মল-এর কেউ জানবেও না।’

‘কিন্তু কেউ অমন করতে যাবে কেন?’

‘জানি না। মনে হলো তাই বললাম আরকী।’

সুড়ঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে সান্তা মারিয়া-র উদ্দেশে চলল ওরা। টিনা ডেক-এ পা রাখতেই এক খণ্ড মেঘ সূর্যটাকে গ্রাস করল, ফলে জলযানটার ওপরে কালচে ছায়া পড়ল। শিউরে উঠল টিনা, অন্যরা ওর সঙ্গে যোগ দিতেই হাঁফ ছাড়ল। সূর্য মেঘের আড়াল ফুঁড়ে বেরোল, কিন্তু শীঘ্রি ওরা এক মই বেয়ে তরতর করে নেমে গেল আরও জমাটবাঁধা অন্ধকারে।

‘এটা সান্তা মারিয়া-র হোল্ড, লিডিয়া জানাল, এক নগ্ন বাতি জ্বালল। হলদেটে আলোয় রুক্ষ কাঠের তক্তার মেঝে আর নিচু ছাদটা দেখা গেল। চারধারে ছায়া-আবছায়া খেলা করছে। ওদের নিচে, লুকানো আলোয় আলোকিত এক ট্যাঙ্ক, সবুজ ফার্ন ভেদ করে যেখানে সাঁতরাচ্ছে উদ্ভট সব মাছ।

‘দারুণ জায়গাটা! কী ঠাণ্ডা!’

‘সান্তা মারিয়া মল-এর এয়ার-কণ্ডিশনিং সিস্টেমের সাথে কানেক্টেড।’

‘গ্রুপারগুলো দেখতে কী বিটকেল রে, বাবা! মা ছাড়া আর কেউ ওদেরকে সুন্দর বলবে না।’

‘আর স্টিংরেগুলো? আমি একটাকে আদর করেছি।’

‘আমি করব না, বাবা।’ ট্যাঙ্কের কাঁচের দেয়ালের দিকে চাইল টিনা। ওপাশে সাগর, তাই না?’

মাথা ঝাঁকাল লিডিয়া।

‘সাব-এর যাত্রীরা মাছ দেখতে পায়।’

‘গতকালই সাব-এ চড়েছি আমি।’ টিনা ইতস্তত করল, তারপর বলল, ‘সাব-এ মিস্টার কুপার ছিলেন। এলিসও।’

গর্ডনকে খুঁটিয়ে জরিপ করল ও, তবে এলিসের নাম শুনে কোন ভাবান্তর হলো না তার। ট্যাঙ্কের দিকে মনোযোগ লোকটার, এক গ্রুপারকে তার এলাকা টহল দিতে দেখছে। কিন্তু লিডিয়া ঘুরে চাইল টিনার উদ্দেশে।

‘তুমি এলিসের কথা বললে,’ বলল ও। ‘জানো, আমি এখনই ভাবছিলাম ওকে ডুয়েলে চ্যালেঞ্জ জানাব। পানির তলায় লড়ব দু’জনে। স্পিয়ারগান নিয়ে।

‘তুমি এখনও হিংসে কর ওকে?’ গর্ডন প্রশ্ন করল।

‘করলেও ওটা কখনও প্রকাশ পায়নি ভেবেছিলাম।’ লিডিয়া চোখ তুলে চাইল গর্ডনের দিকে। ‘ইন্টারেস্টিং ডুয়েল হবে, কী বল?’

ওর ঠোঁটে হাসি, তবে তা চোখ ছোঁয়নি।