অপয়া ক্যামেরা – ২১

একুশ

ছাত্র-ছাত্রী আর টিচাররা সবাই আতঙ্কিত আর্তচিৎকার জুড়ল। কোন-কোন বাচ্চা ধপ করে হাঁটু গেড়ে বসে চোখ ঢেকে ফেলেছে। কানে তালা লাগানো শব্দে চিৎকার-চেঁচামেচি হচ্ছে চারদিকে।

পড়তে শুরু করতেই, হাত বাড়িয়ে ডাইভিং বোর্ডের কোনাটা দু’হাতে চেপে ধরেছে রয়।

হ্যাঁ! পতনটা ঠেকাতে পেরেছে ও।

শ্বাস নিতে পারছি না, খিল ধরে গেছে প্রতিটা মাংসপেশীতে। স্রেফ চেয়ে চেয়ে দেখছি বোর্ডের একপাশ থেকে ঝুলছে ও।

কতক্ষণ থাকতে পারবে এভাবে?

‘ধরে থাকো!’ সেল ফোন হাতে এক শিক্ষক চিৎকার করে বললেন। ‘এখুনি সাহায্য আসছে!’

উপলব্ধি করলাম আর কোন উপায় নেই। মইয়ের তলায় দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি। বুক ভরে শ্বাস টেনে আঁকড়ে ধরলাম রেইলিং।

পাজোড়ায় বল পাচ্ছি না, ওদুটো থরথর করে কাঁপছে রীতিমত। পাত্তা না দিয়ে নিজেকে টেনে তুলতে লাগলাম। ধাপের পর ধাপ ভাঙছি।

‘আমি আসছি।’ চেঁচিয়ে বললাম। ‘রয়-ধরে থাকো!’

এত চেঁচামেচির মধ্যে আমার কথাগুলো ও শুনতে পেয়েছে কিনা জানি না।

আরেকটা ধাপ বাইলাম…আরও একটা…

শেষমেশ পাটাতনের কাছে উঠে এলাম। ডাইভিং বোর্ডের কোনা চেপে ধরে রয়েছে রয়ের আঙুলগুলো।

হামাগুড়ির ভঙ্গিতে বসে পড়লাম।

‘ধরে থাকো, রয়!’

বুকের ভেতরে ধড়াস ধড়াস করছে, আঁকড়ে আসছে হৃৎপিণ্ড। গুড়ি মেরে মঞ্চে উঠে এলাম।

একপাশ দিয়ে ঝুঁকে শক্ত করে চেপে ধরলাম রয়ের কবজি দুটো।

‘ধরেছি!’ চেঁচালাম। ‘দোল খাইয়ে পা তুলে আনো ডাইভিং বোর্ডে।’

রয় সজোরে শরীর দোলাল। এক পায়ের পাতা ঠুকে গেল বোর্ডে-তারপর পড়ে গেল আবার।

জোরাল ঝাঁকি খেলেও কবজি ঠিকই আঁকড়ে ধরে রইলাম ওর।

আবারও চেষ্টা চালাল ও। এবার একটা পা এলোপাতাড়িভাবে উঠে এল বোর্ডের ওপর।

সর্বশক্তিতে টানছি। হ্যাঁ! এখন এক পা নিরাপদে উঠে এসেছে বোর্ডে।

‘আরেকটু, রয়…আর অল্প একটু…’

আবার টানলাম। হ্যাঁ! পেরেছি। ওকে টেনেহিঁচড়ে তুলে আনলাম বোর্ডের কিনারে।

আরেক টানেই নিরাপদে ওপরে চলে আসবে ও। আর একবার… আবারও টানলাম ওকে, গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে টানছি।

এতটাই জোরে টেনে ফেলেছি, ভারসাম্য হারালাম।

‘নাআআআআ!’ পড়ে যাচ্ছি টের পেতেই তীক্ষ্ণ আর্তচিৎকার বেরোল আমার গলা চিরে।

মনের মধ্যে খেলে গেল ভাবনাটা: ভুতুড়ে ক্যামেরাটারই জয় হলো শেষ পর্যন্ত!