বিপদসঙ্কেত – ১২

বারো

ফেস্টিভ্যাল সুপারমল!

বিশাল সব ব্যানারে বড়-বড় হরফে উৎসব অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। গর্ডন ব্যাগলি ধরা পড়ায় মল-এ প্রচুর লোক জড় হয়েছে। তাদের মাথার ওপরে, দোকানপাটের বাইরে, করিডরে, সবখানে ঝুলছে নানারকমের ব্যানার।

ওয়াটারপার্কে টাঙানো হয়েছে সবচাইতে বড় ব্যানারগুলোর একটি। ওখানে প্রতিবার সার্ফস আপ ঘোষণা আসার সঙ্গে-সঙ্গে শোনা যাচ্ছে হর্ষোৎফুল্ল বাচ্চাদের চেঁচামেচির শব্দ। এই উৎসবে বিনা টিকিটে উপভোগের সুযোগ পেয়ে, হৈ-হুল্লোড় আর বিরাট সব স্পিকার থেকে আসা গান-বাজনার শব্দে রীতিমত মাতোয়ারা ওয়াটারপার্ক।

স্কাই স্ক্রিমারে সব প্রতিযোগীকে পরাজিত করে চলেছে রাজন। কিশোর আর টিনা নিচে দাঁড়িয়ে দেখছে, বর্তমান রানার আপ অনন্ত রহমানের পাশ দিয়ে ন’তলা উঁচু থেকে পড়ে

যাচ্ছে রাজন। ওর প্রতিদ্বন্দ্বী নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়া পিপের মতন দ্রুতগতিতে নিচে পড়লেও, তা যথেষ্ট নয়।

‘ও আবারও জিতেছে!’

রাজন পুল থেকে সাঁতরে এসে বত্রিশ পাটী দাঁত বের করে হাসল।

‘আমার একটা আবেদন আছে,’ উঠে এসে বলল। ‘এই ওয়াটারফ্লাইডের নাম রাখা হোক-রাজন ড্রপ।’

‘তোর যা কপাল তাতে এটা মোটেও অসম্ভব নয়, বিড়বিড় করে আওড়াল কিশোর।

পরে, ও আর টিনা অনন্তর সঙ্গে ওয়াটারপার্ক ত্যাগ করল, উৎসবের সময় ওদেরকে লাগেজ আনলিমিটেডে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ছেলেটি।

‘উৎসবের বড় একটা ইভেন্ট হচ্ছে ভিনদেশী ঐতিহ্যবাহী রান্না। আমি কারি রাঁধছি। তোমরা একটু চেখে দেখো।’

‘অবশ্যই,’ বলল টিনা।

‘বাঙালিরা কারি রান্নায় সিদ্ধহস্ত। লণ্ডনের রেস্তোরাঁগুলো তো আমাদেরই দখলে। এখন অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছি আমরা,’ গর্বভরে বলল কিশোর।

করিডরগুলো পর্যটক, খদ্দের আর উৎসুক জনতার ভিড়ে ভিড়াক্কার। সঙেরা মজা করছে মানুষজনের সঙ্গে, এক জাগলার কতগুলো চকচকে ছোরা ঘোরাচ্ছে। আরেকখানে, এক মহিলা তার তোতাপাখিকে দিয়ে তিন ভাষায় কথা বলাচ্ছে, ওদিকে তার স্বামীর সিলটা রবারের ভেঁপুতে সুর তুলেছে।

দারুণ উপভোগ করছে কিশোর আর টিনা, রঙচঙে করে সাজানো এক ঠেলাগাড়ি থেকে সমব্রেরো হ্যাট তুলে নিয়ে পরে দেখছে, এসময় ভিড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন টিনার বাবা-মা।

‘আমরা ফুল ফ্যাদম ডাউন-এ যাচ্ছি,’ মি. টার্নার বললেন। ‘এলিস আমাদেরকে ইনডোর সাগরে স্কুবা ট্রেনিং দেবে। তোমরা ওর কাছ থেকে বিদায় নেবে এসো।’

‘ইস, এখান থেকে চলে যেতে হবে ভাবতেই মন খারাপ লাগছে,’ ব্যথিত শোনাল কিশোরের কণ্ঠ। ‘মলটা অসাধারণ।

লুইস প্যাটেনকে স্কুবা শপের নতুন ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার খুশির সীমা নেই।

‘ওই গর্ডন লোকটার সাথে কিছুতেই বনিবনা হত না আমার,’ বলল সে টার্নার দম্পতিকে। ‘এই ছেলে-মেয়ে দুটোর কারণে আমি এখনও বেঁচে আছি। আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ, বাছারা।’

ঠিক এমনিসময় স্টোরেজ রুম থেকে বেরিয়ে এল এলিস তাকেও আনন্দিত দেখাচ্ছে।

‘আবারও সুন্দর মুখের ধোঁকায় বোকা বনেছি আমি! আমার এখন থেকে বাবার পরামর্শ মেনে চলা উচিত।’

‘আপনি কি ক্যারিবিয়ানে ফিরে যাবেন?’

‘এখনই নয়, হয়তো কখনওই নয়। বাবাকে ছেড়ে থাকতে পারব না আমি।’

‘ওঁর সাথে সকালের সাব ভ্রমণে যাবেন?’ টিনার প্রশ্ন।

‘অবশ্যই। এটা বাবার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

‘আপনাকে আগেও সার-এ দেখেছি। খুব খুশি মনে গেছেন মনে হয়নি।’

‘মনের ভেতর থেকে কে যেন বলছিল এই বোমার ঘটনাগুলোর সাথে গর্ডনের যোগসাজশ আছে। আমার আসলে আগেই পুলিসকে জানানো উচিত ছিল, কিন্তু হাতে কোন প্রমাণ তো ছিল না।’

‘আমার কাছে ছিল,’ বলল টিনা। ‘কিন্তু আমি ওটা এমনকী খেয়ালও করিনি।’

‘তারমানে?’

‘গর্ডন বলেছিল ও সি ওয়ার্ল্ডের কাছে এক রেস্তোরাঁয় ম্যানেজারি করত। পরে জানতে পারি ওটা স্যান ডিয়েগোতে, আপনার বাবা যেখান থেকে ওর প্রেমিকাকে কেড়ে নেন।

এলিসকে বিদায় জানিয়ে, ওরা তড়িঘড়ি জনাকীর্ণ মল ভেদ করে বিশেষ ডলফিন প্রদর্শনী দেখতে গেল। বিপুল দর্শক জমায়েত হয়েছে, বুদ্ধিমান প্রাণীগুলো অপূর্ব নৈপুণ্য আর কলাকৌশল দেখিয়ে আবারও মন জয় করছে তাদের। পরে লিডিয়া ডি ভেগার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মিলল ছেলে-মেয়েদের।

‘গর্ডনের অপকর্মের জন্যে খুব খারাপ লাগছে,’ বলে মুচকি হাসল লিডিয়া। ‘কিন্তু আমি এখনও ভালবাসায় বিশ্বাসী। আমি ইতালিয়ান! আমরা আশাবাদী জাতি, সহজে নিরাশ হই না।’

‘ভাগ্যিস আপনাকে কোন বিপদে পড়তে হয়নি,’ বলল টিনা।

‘হ্যাঁ, কপাল ভাল বেঁচে গেছি।’ কিশোরের উদ্দেশে চাইল ও। ‘লাগেজ স্টোরে তোমার জন্যেই ওই বদমাশটা ধরা পড়েছে। বোমার ঘটনার সাথে কি ওর কোন সম্পর্ক আছে?’

মাথা নাড়ল কিশোর।

‘না, ও এসবে জড়িত নয়।’

‘তারপরও মস্তান ছোকরাটা গ্রেপ্তার হওয়ায় খুশি আমি।’ অদূরে, মি. কুপার এবং আরও কয়েকজন ফেস্টিভ্যাল সাবমেরিন রাইডের জন্য যাত্রী তুলছেন। শিটের মাঝে ডক থেকে হেঁটে এলেন তিনি।

‘এই যে, মানিকজোড়।’ তাঁকে নিরাপদে মুক্ত করার জন্য আবারও ধন্যবাদ জানালেন ওদেরকে, তারপর আরও বললেন, ‘সাবটার কমাণ্ড হারিয়ে ভয়ানক অপমান বোধ করেছি আমি।’

‘কিন্তু আপনি আর কী-ই বা করতে পারতেন,’ বলল কিশোর। ‘ওটা যখন সুড়ঙ্গে ঢোকে আপনি জানবেন কী করে গর্ডন ইতিমধ্যেই এয়ার-কণ্ডিশনিং ডাক্ট দিয়ে ঢুকে আপনার অপেক্ষায় ঘাপটি মেরে বসে আছে?’

‘কিন্তু ওভাবে আচমকা আমাকে চমকে দেয়ার ব্যাপারটা একদমই মানতে পারছি না।’

‘কিছু করার তো ছিল না। আপনি বাধা দেয়ার আগেই কনিং টাওয়ার দিয়ে চেতনানাশক গ্যাসের ক্যানিস্টারটা ফেলে দেয় লোকটা। তাছাড়া ওর মত আপনার পরনে তো আর স্কুবা আউটফিট ছিল না, কাজেই মুখোশ আর এয়ার সাপ্লাইয়ের সুবিধেটুকু তো আপনি পাননি।’

‘তা ঠিক। আমার জানাই ছিল না আমার মেয়ে আমারই ঘোর শত্রুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না স্রেফ বদলা নিতে সেই স্যান ডিয়েগো থেকে আমার পিছু নিয়ে এখান অবধি এসেছিল লোকটা।’ মি. কুপার এইমাত্র জনতার ভিড় থেকে বেরিয়ে আসা এক দল হাস্যোজ্জ্বল মানুষকে সাদরে বরণ করলেন। ‘কিশোর, টিনা, এই মল যে পরিবার বানিয়েছে তাঁদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই এসো। বহু বছর আগে ওঁরা কানাডায় এসে মন্ট্রিয়লে সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন, তারপর পশ্চিমে আসেন সুপারমল তৈরির স্বপ্ন নিয়ে।’

‘আপনারা নিঃসন্দেহে সফল, বলল কিশোর। ‘দুনিয়ার সব কিশোর-কিশোরীদের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা আর ধন্যবাদ!’

‘আমার তরফ থেকেও,’ বলল -টিনা।

বন্ধুভাবাপন্ন, হাসিখুশি পরিবারটির সঙ্গে ওরা কথা বলছে, মি. কুপার বললেন, ‘তোমার ভাই রাজন কোথায়? ও বলছিল ও নাকি বিদেশী খাবারের ভক্ত। আমি ফেস্টিভ্যালের জন্যে বিশেষ এক ডিশের ব্যবস্থা করেছি কিনা: হ্যাগিস। ‘

‘সেটা আবার কী?’

‘স্কটল্যাণ্ডের ঐতিহ্যবাহী খাবার। ভেড়ার পেটের চামড়ার ভেতর নাড়িভুঁড়ি রান্না। খুবই টেস্টি।’

‘তাই!’ ঢোক গিলল কিশোর। ‘রাজন সবই খায়, তবে…’

‘ওকে আমার পক্ষ থেকে দাওয়াতটা দিয়ে দিয়ো কিন্তু। আর তোমরা দু’জন তো আসবেই।’

‘ধন্যবাদ, মি. কুপার… মানে, না, ধন্যবাদ!’

.

একটু পরেই, কিশোর আর টিনা ঢুকল-লস্‌ অভ ফান স্টাফ নামে এক দোকানে। বিশেষ এক উপহার কিনে, দ্রুত বুরবোঁ স্ট্রিটে ফিরল রক দ্য মল কনটেস্টে কে জিতেছে জানতে। পথে রাজন যোগ দিল ওদের সঙ্গে, এবার ওরা লরেলির ম্যানেজার মি. হাটনের দেখা পেল।

ভিড়ের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ঘোষণাটির জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি, পরনে সেই সেকেলে সুট, তবে পায়ে নতুন জুতো।

‘এগুলো সৌভাগ্যের জন্যে, ব্যাখ্যা করলেন কেন জুতো পাল্টেছেন। ‘মনেপ্রাণে চাই লরেলি জিতুক। এর মধ্যেই ওর প্রথম রেকর্ডের জন্যে স্টুডিয়ো বুক করেছি।’

‘কিন্তু,’ বলল টিনা, ‘আপনি না সবসময় বলেন ও এখনও পরিণত নয়?’

‘আমি ও নিয়ে আবার ভেবেছি। ও গ্রেট ট্যালেন্ট এবং ওকে আমি আটকে রাখতে চাই না। আমার ধারণা লরেলি বড় আসরে নিজেকে ভালভাবেই মেলে ধরতে পারবে।’

‘বাহ, চমৎকার!’ ভদ্রলোকের উদ্দেশে স্মিত হাসল টিনা। ‘মনে আছে সেদিন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল, আমার মা ছিল সাথে? আপনি লুইস প্যাটেনের সাথে কথা বলছিলেন। উনি হারিয়ে যাওয়ার পর ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছি আমি।’

‘বেশ কয়েক বছর আগে সাবেক আসামীদের পুনর্বাসনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলাম। লুইস তাদের একজন, প্রায়ই দেখা হত ওর সাথে, এই… সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা জানার জন্যে। ওর দোকানে বোমা পাওয়া গেলে চিন্তিত হয়ে পড়ে ও, ভাবে অতীত রেকর্ডের কারণে ওকেই দোষী ভাবা হবে। কিন্তু এখন তো সব চুকেবুকে গেছে, দেখবে ও খুব ভালভাবেই স্কুবা শপটা সামলাবে।’

এসময় ওপরে আরও কিছু মানুষ হাজির হলে, সব কটা চোখ চলে গেল ক্যাফে অর্লিন্সের ব্যালকনিতে। ইন্সপেক্টর উইন্টার ঈগল মাইক্রোফোনে বললেন, ‘প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর নাম ঘোষণার জন্যে এটা সেরা জায়গা। প্রথম বোমাটা এখানেই আবিষ্কার হয় এবং তারপর মলটা কেমন ঝিমিয়ে পড়ে। এখন আবার সবার মুখে হাসি, এবং আজকের এই বিশাল ইভেন্টের সামান্য অংশীদার হতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’ পাশে দাঁড়ানো অন্যদের দিকে চাইলেন তিনি। ‘প্রতিযোগিতার বিজেতার নাম যিনি ঘোষণা করবেন তিনি আমাদের সবার কাছেই বিশেষভাবে সম্মানিত একজন অতিথি। তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পেয়ে আমি যারপরনাই রোমাঞ্চিত। ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, আপনাদের সামনে উপস্থিত হচ্ছেন কার্ল মিলার।’

হর্ষধ্বনি আর শিসের শব্দে কান পাতা দায়, সোনালীচুলো আইস হকি তারকা মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াল।

‘ঘোষণাটা দেয়ার সুযোগ পেয়ে আমি গর্ব বোধ করছি! প্রতিযোগিতার বিজয়ীর কাছ থেকে ভবিষ্যতেও আমরা অনেক ভাল-ভাল গান পাব আশা করি। আমাদের বিজয়ী এডমনটনের মেয়ে, সফলতার সোপানে যে পা রেখেছে: লরেলি।’

ও ব্যালকনিতে এলে হাততালি আর চিৎকার-চেঁচামেচিতে কানে তালা লাগার জোগাড় হলো সবার। জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ছে, মুখের চেহারা টকটকে লাল মেয়েটির, এবার মাইক্রোফোনের সামনে গেল।

‘আজকের এই সাফল্যের জন্যে আমি অনেকের কাছে কৃতজ্ঞ, কিন্তু তাঁদের মধ্যে বিশেষ একজন আছেন।’ বিরতি নিয়ে কিশোর আর টিনার উদ্দেশে চাইল মেয়েটি। ‘তাঁর নাম মিস্টার হাটন, যিনি দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যানেজার।’

জনতার তুমুল করতালির মধ্যে, লরেলির দিকে চেয়ে মৃদু হাসলেন মি. হাটন। একটু পরে, লরেলির হাতে শিরোপা তুলে দেয়া হলে, রাজন ঘুরে দাঁড়াল চলে যাওয়ার জন্য।

‘আমি যাই।’

‘দাঁড়া, রাজন, কিশোর বলল। ‘মিস্টার কুপার তোকে বিশেষ এক ভোজের দাওয়াত দিয়েছেন।’

ভিনদেশী উদ্ভট খাবারটির বর্ণনা শুনে রাজন বলল, ‘শুনতে কেমন লাগলেও, আমি চেখে দেখতে চাই।’

‘গুড লাক! তবে আমরা রাতে ম্যাকডোনাল্ডে যাচ্ছি, কুপার- এ নয়।’

.

মাঝরাত পেরিয়েছে অনেকক্ষণ, রাজন ওর বিছানায় নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। বেহুঁশ ছেলেটা টেরই পেল না, কখন ওর আর কিশোরের কামরার মাঝের দরজাটা আলগোছে খুলে গেল। মুহূর্তখানেক দাঁড়িয়ে রইল ছায়ামূর্তি, অবিশ্বাসী কানে শুনল শব্দের তীব্রতার মাত্রা, এবার রহস্যময় আগন্তুক ঝটপট তার কাজ সারল।

.

পরদিন সকাল। টার্নার দম্পতি তাঁদের সুটকেস গোছাচ্ছেন। কিশোর আর টিনা গোছগাছ সেরে সোফায় বসে রহস্য উপন্যাস পড়ছে। হঠাৎই রোমান সুইটের দরজাটা দড়াম করে খুলে গেল এবং রাজন কামরায় প্রবেশ করল টলমল পায়ে।

‘হ্যাগিস খেয়ে আমি শেষ!’ করুণ আর্তনাদ ছাড়ল।

মি. টার্নার ধীরেসুস্থে উল্টো ঘুরলেন, ভাবলেন এটা রাজনের নতুন কোন চালাকি বুঝি। এবার আতঙ্ক মাখা চোখে চেয়ে রইলেন।

‘একী! এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেল না! আস্ত একটা ঝামেলা!’

বাথরুমের আয়নায় দৌড়ে গেল রাজন।

‘ওগুলো এখনও আছে! ভেবেছিলাম এটা স্রেফ দুঃস্বপ্ন! হ্যাগিস আমার এই হাল করে ছেড়েছে! হায়, আল্লাহ!’ আয়নার দিকে যথাসম্ভব ঝুঁকে পড়ে, দু’চোখের ওপরে বাদুড়ের উল্কি দেখল একদৃষ্টে, গালজোড়ায় জ্বলজ্বল করছে দুটো মাকড়সা, আর চিবুকে কুণ্ডলী পাকানো খুদে এক সাপের উল্কি। ‘মনে হচ্ছে আমি ডাকাতদলের সদস্য!

‘প্রথম বোমাটা আবিষ্কারের ঠিক আগে,’ রাজনকে বলল টিনা, ‘মল-এ লট্স্ অভ ফান স্টাফ নামে এক দোকানে অনেক মজার মজার জিনিস দেখি আমি। এই নাও আমার ম্যাপ-দোকানটা খুঁজে নিয়ে কীভাবে মুছবে ওগুলো জেনে এসোগে।’ হাতঘড়ি দেখল ও। তবে যা করার শীঘ্রি। এখুনি কিন্তু এয়ারপোর্ট রওনা হব আমরা।’

আর্তচিৎকার ছেড়ে রাজন বেচারা ছুটল সুইট থেকে, ‘রাজন ড্রপ’-এ গড়া নিজেরই রেকর্ড ভেঙে ফেলতে মরিয়া ও!

***