অপয়া ক্যামেরা – ২০

বিশ

রয়কে উঠতে দেখে পুলের ছেলে-মেয়েরা আঙুল দেখিয়ে হৈ-চৈ আরম্ভ করল। মইয়ের ধাতব ধাপগুলোতে ওর জুতোর শব্দ হচ্ছে। প্রতিটা আওয়াজ কানে বাজছে আমার।

মি. লয়েড দৌড়ে এলেন আমার কাছে। চেপে ধরলেন আমার কাঁধ।

‘মুসা, এসব কী?’ জবাব চাইলেন। ‘তোমার বদলে রয় কেন?’

দীর্ঘশ্বাস পড়ল আমার।

‘সে অনেক কথা, স্যর।’

মি. লয়েড আমাকে আরও প্রশ্ন করতে চাইছিলেন। কিন্তু আমি ঘুরে দাঁড়ালাম রয়কে দেখতে। অর্ধেকটা পথ উঠে গেছে ও, ধীর অবিচলিত পায়ে মই বাইছে।

রয় ওখানে নিরাপদই থাকবে, নিজেকে বললাম। অপয়া ক্যামেরাটা তো ওর পড়ে যাওয়ার ছবি তোলেনি। কাজেই ও পড়বে না।

মাটিতে দাঁড়িয়ে থেকে, আশা করছি অলক্ষুণে ক্যামেরাটার অশুভ জাদুর প্রভাব কাটাতে পারব আমি।

এই মহা পরিকল্পনাটাই মনে-মনে ছকেছিলাম।

আমি ডাইভিং বোর্ডে না উঠলে, আমার পতনের সম্ভাবনাও নেই। ক্যামেরাটার ভুতুড়ে জাদুকে পরাজিত করতে পারছি এভাবে। সত্যি হতে দিচ্ছি না ওটার ভবিষ্যদ্বাণীকে।

রয় পাটাতনে পা রাখতেই পুলের বাচ্চারা সব চুপ হয়ে গেল। রেইলিঙে ঝুঁকে পড়ে একটা ক্যামেরা তাক করল ও।

‘সবাই শোনো!’ চিৎকার ছাড়লেন মি. লয়েড। ‘তোমরা রয়ের দিকে তাকিয়ে হাসো। নোড়ো না। ও ওখান থেকে সবাইকে কভার করতে পারবে।

মইয়ের গোড়া থেকে চোখ তুলে রয়কে দেখলাম। অনেক উঁচুতে, ধাতব রেইলের বিপরীতে নিজেকে স্থির রাখতে চাইছে ও।

মুখের কাছে হাতের চোঙা বানিয়ে রয়ের উদ্দেশে চেঁচালেন মি. লয়েড।

‘তিন পর্যন্ত গুনলেই… এবার পুলের ছেলে-মেয়েদের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন।

‘সবাই হাসো! রয়ের দিকে তাকিয়ে হাসো।’

রয়ের যেমন স্বভাব। ও কি মি. লয়েডের তিন পর্যন্ত গোনার জন্য অপেক্ষা করার বান্দা? ডাইভিং বোর্ডে পা রাখল। তারপর ক্যামেরা বাগিয়ে ধরে একের পর এক ছবি নিতে লাগল।

ডাইভিং বোর্ডের কিনারায় হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে ছেলে- মেয়েদের কাছাকাছি হতে চাইল রয়। এবার আরেকটু সামনে ঝুঁকল।

টের পেলাম দম বন্ধ হয়ে গেছে আমার।

ও পড়বে না, বললাম নিজেকে। ছবিটায় আমার পতন দেখিয়েছে ভুতুড়ে ক্যামেরা রয়ের নয়।

ধীরে-ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়লাম।

রয় ক্যামেরা পাল্টে আরও ডজনখানেক ছবি নিল।

এবার ডাইভিং বোর্ডের কোনায় দাঁড়াল।

‘সবাইকে ধন্যবাদ!’ নিচে দাঁড়ানো সবার উদ্দেশে চেঁচাল। ‘হাততালি লাগবে না-পয়সা ফেলো!’

বাচ্চারা হেসে উঠল, গোঙাল এবং পাল্টা নানা কথা বলতে লাগল ওকে উদ্দেশ্য করে। ফুরফুরে মেজাজে সবাই।

এবং তারপর আবারও সেই চিরাচরিত রয়। জনতাকে স্যালুট ঠুকে বাউ করবে সিদ্ধান্ত নিল ও।

চোখ বুজে ফেললাম। তাকানোর সাহস নেই। ও কি পড়ে যাচ্ছে?

না।

চোখ মেলে দেখি, মইয়ের দিকে চলেছে ও। আমার উদ্দেশে মুচকি হাসল। হাত নাড়ল।

এবার চরকির মতন ঘুরে গেল নিচের সমাবেশের দিকে আরেকবার তাকাবে বলে। এবং তখনই ভারসাম্যটা হারাল।

‘খাইছে, ও পড়ে যাচ্ছে!’ আর্তনাদ ছাড়লাম আমি।